৫৯ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ১৭ ভাদ্র, ১৪২৮
১ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরোধী শান্তি সংহতি দিবস নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত রাজ্যে
যুদ্ধবিরোধী শান্তি ও সংহতি দিবসে কলকাতায় মার্কিন প্রচার দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ বামপন্থী দলগুলির। রয়েছেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী শান্তি ও সংহতি দিবস কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে। সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দলগুলির ডাকে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই দিনটি পালনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুনিয়া জুড়ে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নেওয়া হলো জেলায় জেলায়।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোলান্ড আক্রমণের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই ঘটনাকে স্মরণে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারেও বিশ্বজুড়েই পালিত হয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরোধী শান্তি ও সংহতি দিবস। এরাজ্যে বামপন্থী দলগুলির উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন দুপুরে কলকাতায় জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে মার্কিন প্রচার দপ্তরের সমানে পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয় বামপন্থী দলগুলোর উদ্যোগে।
এখানে দুপুর দু’টো থেকে তিনটে পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে বিক্ষোভ সমাবেশে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, বিশ্ব শান্তির পক্ষে সবচেয়ে বড়ো শত্রু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। যুদ্ধের মাধ্যমে তারা চায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্য হলো এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় অভ্যন্তরীণ বিরোধ তৈরি করতে। ভিয়েতনামে তারা কলঙ্কজনক নিপীড়ন চালিয়েছে। মানবতার পক্ষে বিপজ্জনক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। অথচ ভারত সরকার আমেরিকার ছোটো শরিক হতে চাইছে। আফগানিস্তানের ঘটনা নিয়ে ভারত সরকার চুপ করে বসে আছে। বড়ো দাদা আমেরিকা কী করে সেদিকে তাকিয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদী। আমরা বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত করছি।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ফ্যাসিবাদের উত্থানের সময়ের থেকে সাম্রাজ্যবাদ এখন আরও সংহত। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদ থাবা বসাচ্ছে। তার প্রতিরোধও হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এরাজ্যের নানা দলমতের বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ।
সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য মোদী সরকারকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘নমস্তে ট্রাম্প’ কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীই ভারতে করোনার প্রকোপ প্রথম বাড়িয়েছেন। আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার ভারতের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তাই দেশের ভেতরে জনগণের জীবন-জীবিকার জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলতে না পারলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে শক্তিশালী করা যাবে না।
বিক্ষোভসভায় আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য বলেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারও সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে চলছে। এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম না করে মানুষের অধিকার রক্ষার এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে জোরদার করা যাবে না।
সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি বলেন, সাম্রাজ্যবাদ মানেই পুঁজিবাদী শোষণ কায়েম রেখে বিশ্বে দলখদারিত্ব রাখার কৌশল, যা মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
বিক্ষোভ সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, এসইউসিআই(সি) নেতা অশোক সামন্ত, আরসিপিআই নেতা মিহির বাইন প্রমুখ।
এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে এছাড়াও যোগ দেন সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, আভাস রায়চৌধুরী, রামচন্দ্র ডোম, মিনতি ঘোষ, পলাশ দাশ, অনাদি সাহু, কল্লোল মজুমদার সহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দ।
যুদ্ধবিরোধী মিছিল হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়।
এদিন কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। হাওড়া জেলায় বামফ্রন্ট ও বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দিবস উদ্যাপিত হয়। এদিন হাওড়া ময়দানের বঙ্গবাসী মোড়ে জেলা বামফ্রন্টের ডাকে এক সভায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই তীব্র করার আহ্বান জানান সিপিআই(এম) নেতা দীপক দাশগুপ্ত, সিপিআই’র চন্দ্রশেখর ঝা, ফরওয়ার্ড ব্লকের তাপস খাঁড়া, আরএসপি’র দেবব্রত ঘোষ প্রমুখ।
হুগলি জেলা জুড়েও এদিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দিবস পালিত হয়েছে। এদিন চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ, সিপিআই’র চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য, আরএসপি’র মৃন্ময় সেনগুপ্ত, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রণব ঘোষ প্রমুখ। কোন্নগরেও এদিন সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে মিছিল ও সভা হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১৭টি স্থানে মিছিল-সভায় শামিল হন বহুমানুষ। মেদিনীপুর শহরে বামফ্রন্টের ডাকে দীর্ঘ মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে। জেলার মহকুমা শহর খড়্গপুর, ঘাটাল সহ খড়্গপুর গ্রামীণ, ডেবরা, সবং, দাঁতন, মোহনপুর, দাসপুর, শালবনী, বেলদায় যুদ্ধবিরোধী মিছিল হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলোর ডাকে চার মহকুমায় সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মিছিল, সভা হয়। এগরা, মহিষাদল ও রামনগরে মিছিল হয়েছে। মেচেদায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন পার্টির জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। কাঁথি বাসস্ট্যান্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা হিমাংশু দাস।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে এদিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সভা-মিছিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বারাসত, বারাকপুর, বনগাঁ, বেলঘরিয়া, বসিরহাট, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম, বাগুইআটি, রাজারহাট, বিধাননগরে মিছিল এবং কয়েকটি জায়গায় সভা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বারুইপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় মিছিল হয়েছে।
নদীয়া জেলায় বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলির ডাকে কৃষ্ণনগরে দৃপ্ত মিছিল হয়েছে। মিছিল শেষে পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া চাকদহ, রানাঘাট, নাকাশিপাড়া, তেহট্টতেও মিছিল এবং সভা হয়েছে।