৫৯ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ১৭ ভাদ্র, ১৪২৮
স্মরণে-শ্রদ্ধায় কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী
কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর স্মরণসভায় বলছেন বিমান বসু।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রয়াত কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর স্মরণসভা ২৯ আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন শ্রীরামপুরে রবীন্দ্র ভবনে আয়োজিত স্মরণসভায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু তাঁর দীর্ঘদিনের লড়াই-আন্দোলনের সাথি অনুজ কমরেডকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, যে আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী কমিউনিস্ট কার্যকলাপ পরিচালনা করেছেন, তা অনুসরণ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য, পার্টির হুগলি জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর জীবনাবসান হয়েছে ৩১ জুলাই। কলকাতায় মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন তিনি। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাঁর বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সংযোগ গড়ে ওঠে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন এবং বিপিএসএফ’র নেতৃত্বে উঠে আসেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী শ্রীরামপুর কলেজেও দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। তিনি হুগলি জেলার শিক্ষক আন্দোলনে, অধ্যাপক আন্দোলনে এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণআন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এদিনের স্মরণসভায় প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক সহ গণআন্দোলনের নানা অংশের অগণিত কর্মী, সমর্থক এসেছিলেন প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁদের উপস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
বিমান বসু প্রয়াত কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তাঁর মৌলানা আজাদ কলেজ, প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন উজ্জ্বল, মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং একজন পূর্ণাঙ্গ কমিউনিস্ট হয়ে ওঠার সব গুণাবলিই তাঁর মধ্যে ছিল। আজকের প্রজন্মকে যে কথা মাথায় রাখতে হবে তা হলো, ভালো কমিউনিস্ট হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত হলো ভালো মানুষ হয়ে ওঠা। চিন্তার ঐক্য, ইচ্ছার ঐক্যের মধ্য দিয়েই যে কজের ঐক্য গড়ে ওঠে, তা শিখিয়ে গেছেন কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরী।
স্মরণসভায় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, মার্কস লিখেছিলেন, এমন পেশা বেছে নিতে হবে যার মাধ্যমে আমরা মানবসমাজে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে পারব। যাতে মৃত্যুর পরেও অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করা যায়। কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর জীবনাবসানের দিন এবং আজকের স্মরণসভাতেও অগণিত মানুষ এসেছেন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে, ভালোবাসা জানাতে, এমন একটি জীবন বেছে নিতে আমরা সকলেই চাইব। কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীর ভাবনায়, লেখায় কাজের মধ্যে একটি বিষয়ই জাগরূক ছিল - কেমন হবে আগামী মানবসমাজ।
কমরেড সুদর্শন রায়চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, রাজনীতির পার্থক্য থাকলেও তিনি ছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসের মানুষ হলেও তাঁর জীবন সবার কাছেই অনুস্মরণীয়।
এদিনের স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির জেলা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। তিনি শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেত্রী মিতালি কুমার, সিপিআই’র চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল সাহা, আরএসপি’র মৃন্ময় ভট্টাচার্য, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের চৈতালী সেন এবং প্রয়াত নেতার স্ত্রী ও মহিলা আন্দোলনের নেত্রী মীনা রায়চৌধুরী প্রমুখ।
স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত কমরেডের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সিপিআই(এম) নেতা শান্তশ্রী চ্যাটার্জি, রূপচাঁদ পাল, তড়িৎ তোপদার, শমীক লাহিড়ী, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান, শুভঙ্কর সরকার সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং প্রয়াত নেতার স্ত্রী-পুত্র সহ পরিবারের সদস্যরা।
সভার সূচনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের হুগলি জেলার শিল্পীরা। ‘আন্তর্জাতিক’-এর মধ্য দিয়ে স্মরণসভা শেষ হয়।