৫৯ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ১৭ ভাদ্র, ১৪২৮
সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ’র জীবনাবসান
বন জঙ্গল প্রকৃতি ও জঙ্গলের মানুষ যাঁর কলমে প্রাণময় হয়ে উঠত সেই প্রকৃতিপ্রেমী সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ গত ২৯ আগস্ট, রবিবার প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী প্রখ্যাতা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ কয়েক বছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন। পরিবারে দুই কন্যা বর্তমান।
গত এপ্রিল মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসার পর করোনামুক্ত হয়ে তিনি বাড়িও ফিরেছিলেন। কিন্তু করোনা পরবর্তী নানা শারীরিক সমস্যা তাঁকে কাবু করে দেয়। আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
দেশ-বিদেশের বন-জঙ্গল, পশুপাখী, বনের মানুষের সঙ্গে তাঁর ছিল নিবিড় ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। গল্প, উপন্যাসে সেই অন্তরঙ্গতা মূর্ত হয়ে ভাষা পেত, যা বাংলা সাহিত্যকে অনবদ্য সুষমামণ্ডিত করেছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘জঙ্গলমহল’। এরপর ‘কোমাগর’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘আয়নার সামনে’, ‘মাধুকরি’, ‘বাতিঘর’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ ইত্যাদি জনপ্রিয় উপন্যাস তিনি সৃষ্টি করে গেছেন। ‘ঋজুদা’ এবং ‘ঋভু’র মতো চরিত্র আকৃষ্ট করেছে শিশু-কিশোরদের। প্রয়াত সাহিত্যিক রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং পুরতনী টপ্পা গানেও পারদর্শী ছিলেন।
সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমাদের একজন ভালোবাসার মানুষ চলে গেলেন। অনেকদিন ধরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে ওঁর পরিচয়, যাওয়া আসা, কথাবার্তা। আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে উনি একটা আলাদা ঘরানা তৈরি করেছিলেন। ওঁর সমস্ত লেখার ভাবনার কেন্দ্রে রেখেছিলেন প্রকৃতিকে। এরাজ্যের জঙ্গল এলাকা, গাছপালা, ফুলফল এইসব ওঁর লেখায় গভীরভাবে চিত্রিত। শেষের দিকে অসুস্থ অবস্থায় আর লিখতে পারছিলেন না। তারপরে নিজের মতো চলে গেলেন। আমরা পরিচিতজনেরা, ওঁর পাঠকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলাম।’’ সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘‘বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কথাকার তথা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বুদ্ধদেব গুহর প্রয়াণে আমরা শোকাহত। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির মধ্যেই।’’ শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সভাপতি পবিত্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়।
শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রয়াত বুদ্ধদেব গুহ’র বাড়িতে গিয়ে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, মহিলা নেত্রী রমলা ভট্টাচার্য, মীরা ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পক্ষে সুজয়কৃষ্ণ চক্রবর্তী প্রমুখ। কেওড়াতলা শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন রবীন দেব, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তী প্রমুখ।