৬০ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৪ আগস্ট, ২০২৩ / ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩০
বাংলা থেকে মণিপুর - আরএসএস’র চোখে কত দূর?
দেবেশ দাস
মণিপুর জ্বলছে। দুই মণিপুরি কুকি সম্প্রদায়ের মহিলাকে নগ্ন করে ঘোরানোর পর তাঁদের গণধর্ষণ করা হয়েছে। তার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ঘটনা ঘটার ৭৬ দিন পর। এই ৭৬ দিন ধরে সরকার কিছু জানত না? যেখানে ঘটেছে, সেখানেই তখন পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছিল। পুলিশ জানায়নি উপরমহলে? থানায় এফআইআর তো হয়েছিল, গ্রেফতার হয়নি কেন? দুই ধর্ষিতা মহিলার এফআইআর যে পুলিশ অফিসার নিয়েছিল, তাকে বদলি করা হলো কেন? এই বদলিতে এটা কি বোঝা যাচ্ছে না যে, সরকার শুধু জানত না, ঘটনার প্রতি সরকারের মদত ছিল?
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মণিপুর দিনে দিনে অশান্ত হয়েছে কেন? ২০২২ সালে দ্বিতীয়বার জিতে আসার পর তা আরও বেড়েছে। আরএসএস দীর্ঘদিন মণিপুরে বিভেদের বীজ বুনে যাচ্ছে। শুধু মণিপুর নয়, সারাদেশেই মেহনতি মানুষ যাতে ঐক্যবদ্ধ না থাকতে পারে, তার জন্য একের বিরুদ্ধে আরেকজনকে লাগিয়ে দাও - প্রথমত ধর্মের নামে, তারপর জাতিতে জাতিতে। আর এইভাবেই এগিয়ে যাও হিন্দু রাষ্ট্রের পথে। মণিপুর একটি ছোটো রাজ্য, এখন আনুমানিক মাত্র ৩২ লক্ষ মানুষ সেখানে বাস করে, কলকাতা শহর থেকেও কম। তার মধ্যেই জাতিদাঙ্গায় খুন হয়ে গেছে অন্তত দেড়শ মানুষ। যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, সেরকম আরও ঘটনা হয়ত কতো হয়েছে, যার ভিডিয়ো কেউ তোলেনি, বা তুললেও প্রচার করতে পারেনি, কারণ খবর যাতে না ছড়ায় সেই কারণে ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। আর এখন তো এসব ভিডিয়ো যাতে না বেরোয় সরকার তার ওপর কড়া নজর রেখেছে।
২০১২ সালে মণিপুর বিধানসভার নির্বাচনে ৬০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১টি আসন। ২০১৭ সালে আরএসএস’র প্রচেষ্টায় সেই আসনসংখ্যা দাড়ায় ২১টিতে, সবচেয়ে বড়ো দল হিসাবে কংগ্রেস ২৮টি আসন পেলেও সরকার গড়ে বিজেপি অন্যান্যদের সাথে নিয়ে; অর্থ, ভয়, লোভ দেখিয়ে দল ভাঙানোতে বিজেপি তো ওস্তাদ, বিশেষত অমিত শা-র পারদর্শিতা এই ব্যাপারে দেখবার মতো। রাজ্যে ও কেন্দ্রে একই সরকার চাই - বিজেপি’র এই ডাবল ইঞ্জিনের মডেল যে কী মারাত্মক তা মণিপুর দেখলে বোঝা যায়। যেখানে বিজেপি’র ডাবল ইঞ্জিন চলেছে, সেখানে আরএসএস’র জাতিতে-জাতিতে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে বিভেদ আনা নানা সুবিধা; রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার দুই-ই একযোগে কাজ করতে পারে। দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলির কাহিনি আপনি উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে পাবেন। ডাবল ইঞ্জিনের মহিমা!
সংবাদপত্রে বেরিয়েছে, মণিপুরে রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন অমিত শা। তিনি নিশ্চয়ই জেনেছিলেন কী কী আক্রমণ চারিদিকে সংঘটিত হয়েছে। আসলে তিনি কী দেখতে গিয়েছিলেন মণিপুরে? যে বিভেদের বীজ মণিপুরে আরএসএস বুনে আসছিল, তার চাষ কতদূর হলো, সেটাও কি দেখতে যাননি? নাকি আসলে সেটাই দেখতে গিয়েছিলেন? আদিবাসী কুকি জনজাতি যারা মূলত খ্রিস্টান, তাদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অন্তর্গত মেইতি জাতিকে উসকানো আরএসএস’র কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আরএসএস’র ঘোষিত তিন শত্রু - কমিউনিস্ট, মুসলমান ও খ্রিস্টান।
দাঙ্গা হয়তো একদিন থেমে যাবে মণিপুরে। কিন্তু জাতিতে জাতিতে যে বিদ্বেষের বীজ আরএসএস বুনেছে, তা রয়ে যাবে বহুদিন। আর সেটাই আরএসএস’র মূল লাভ। এমনকী বিজেপি তাতে মণিপুরে থাকল, কী না থাকল তার চেয়েও বেশি লাভ ওখানে জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ বেশি ছড়ালে।
যে বিষবৃক্ষের চাষ আরএসএস মণিপুরে করেছে, সে চাষ পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গকেও একদিন মণিপুর বানাতে চায় আরএসএস। বড়ো রাজ্য বলে অসুবিধা হয়। ছোটো রাজ্য হলে গোল-পাকানো সুবিধা। আরএসএস রাজ্যগুলিকে ছোটো ছোটো করতে চায়, পশ্চিমবঙ্গকেও। রাজ্যগুলি ভাগ বিজেপি’র আমলে হয়েছে ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আলাদা রাজ্যের দাবি উঠছে, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দাবি তোলার পিছনে আছে আরএসএস। সামনে থেকে বিজেপি কখনো বলতেও পারে যে সে রাজ্য ভাগ চাইছে না, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না, জনগণের মধ্যে বিভাজনের চেতনা ঢোকাতে নীরবে আরএসএস কর্মীরা সক্রিয়, উপযুক্ত সময়ে বিজেপি তার কাজটা করবে। আবার এটা ঠিক যে বিভিন্ন জায়গায় যে বিচ্ছিন্নতা ও বিভাজনের দাবি মানুষ করছে, সে সব জায়গায় মানুষ যে সমস্ত বঞ্চনার কথা তুলছেন, তার মধ্যে অনেক সময় বাস্তবতা আছে, যেগুলি দেখা হয়নি। সেই বাস্তবতাকে ভর করে তাকে নির্দিষ্ট পথে চালনা করে জাতিতে-জাতিতে বৈরিতা বাড়ানো আরএসএস’র উদ্দেশ্য।
বাম আমলে প্রতিবন্ধকতা ছিল আরএসএস’র বেড়ে ওঠার পক্ষে। আরএসএস স্বীকার করে যে, মমতার আমলে তারা অভূতপূর্বভাবে বাড়তে পেরেছে ও বাম শাসন একটা ‘আদর্শগত প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করেছিল তাদের উপর। [১] ২০১৩-২০১৯ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৩১টি মূল সংগঠন নিয়ে আরএসএস বাংলার মাটিতে কাজ করেছে, তাদের মধ্য আছে ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক, ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রতিবন্ধী, দলিত, আদিবাসী, খেলাধুলা, ইত্যাদি সংগঠন তো আছেই, আছে বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরঙ দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, শ্রী হরি সৎসঙ্গ সমিতি ইত্যাদি। [১] এরা কিন্তু কেউ বিজেপি’র অধীন নয়। এদেরকে পরিচালনা করে আরএসএস, বিজেপি নয়। এই সমস্ত সংগঠনের বাইরেও প্রয়োজনের তাগিদে প্রচুর সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে, যেমন মানবাধিকার রক্ষা মঞ্চ, সচেতন নাগরিক মঞ্চ, ইত্যাদি। [১]
২০১৯ সালের জুন মাসের হিসাব - পশ্চিমবঙ্গে মোট ৩,৫৬৭টি আরএসএস পরিচালিত একল বিদ্যালয়ে ৮৭,৭৬১ জন ছাত্রছাত্রী, গড়ে বিদ্যালয় প্রতি মাত্র ২৫ জন। [১] কম ছাত্রছাত্রী হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকার নজর বেশি দেওয়া সম্ভব। প্রায় একই সংখ্যায় আছে প্রাক্ প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র, যাকে আরএসএস বলে সংস্কার কেন্দ্র। দুর্গম স্থানে যেখানে সরকারি বিদ্যালয় নেই, বিশেষত আদিবাসীদের বাসস্থান এলাকায়, সেখানে জায়গায় জায়গায় এই ধরনের বিদ্যালয় ও শিক্ষাকেন্দ্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসীদের মধ্যে সংগঠনের প্রসার করা আরএসএস’র অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। একে তো রাষ্ট্রের ভূমিকায় আদিবাসীরা নানা দিক থেকে বঞ্চিত, বিজেপি’র আমলে সেই বঞ্চনা আরও বেড়েছে। ফলে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে, কিন্তু সেই ক্ষোভ যাতে দেশের শাসক শ্রেণির বিরোধিতার বদলে অন্য জাতির প্রতি উদ্দিষ্ট হয়, সেটাতেই আরএসএস’র নজর। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতিতে বলা আছে যে, কয়েকটি বিদ্যালয় নিয়ে এক জায়গায় একটি বিদ্যালয় গড়া হবে। স্বভাবতই, সেই বিদ্যালয়গুলি অনেকের কাছে দূর হয়ে যাবে, ফলে আরএসএস’র বিদ্যালয় প্রসারের সম্ভাবনা বাড়বে। আরএসএস’র এই সমস্ত বিদ্যালয় ও শিক্ষাকেন্দ্রে সাধারণ পড়াশোনার সাথে সাথে হিন্দুত্বের আদর্শে গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়। এর খরচও আসে বিদেশ থেকে।
আরএসএস সংগঠন ও তাদের লোকদের আপনি দৈনন্দিন বিজেপি’র কাজেকর্মে দেখতে পাবেন না, তারা বিজেপি’র হয়ে দেওয়াল লেখে না, মিছিল করে না। শুধু নির্বাচনের সময়ে তারা নিজের মতো করে বিজেপি’র হয়ে প্রচার করে, তাও যদি আরএসএস নির্দেশ দেয়, তবেই। নির্বাচনে নামা মানেই প্রকাশ্যে কাজ করা না, আরএসএস’র নির্দেশ মতো গোপনে কাজ করে যায়, ম্যান-টু-ম্যান যোগাযোগের মাধ্যমে। ফলে যতজনকে নির্বাচনে আমরা বিজেপি’র সাথে কাজ করতে দেখি, তার চেয়ে অনেক বেশি লোক গোপনে গোপনে বিজেপি’র হয়ে কাজ করে যায়।
আবার আরএসএস’র ঘোষিত রাজনৈতিক পার্টি বিজেপি, কিন্তু আরএসএস তার কর্মীদের বিজেপি’র হয়ে সবসময় নির্বাচনে নামতে বলবে তার কোনো মানে নেই। আরএসএস তার পক্ষেই কর্মীদের নামতে বলবে, সেই মুহূর্তে হিন্দুত্বের প্রসারে যে বেশি সাহায্য করতে পারবে অথবা তার হিন্দুত্বের প্রসারে যারা বাধা দেয়, তাদের হারাতে যে বেশি যোগ্য। এই ব্যক্তিটি বিজেপি’র নাও হতে পারে।
২০০৯ এবং ২০১১ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে একা লড়েছিল, কিন্তু বেশিরভাগ আসনেই তাদের প্রচার স্তিমিত করে রাখা হয়েছিল আরএসএস’র নির্দেশে, কারণ তা না হলে বামপন্থীদের হারাটা মসৃণ হয় না। লোকসভায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়ছে বিজেপি, আর এখানে ২০০৯ এবং ২০১১ সালে কংগ্রেসের সাথে তৃণমূলের জোট, তার বিরুদ্ধে আরএসএস প্রচারকে তীব্র করেনি। তাদের কর্মীরা মমতার হয়েই নীরবে কাজ করেছে, কারণ বামপন্থীদের হারাতে মমতা যোগ্যতম, আর মমতা জিতলেই আরএসএস’র প্রসার ঘটবে।
বিজেপি’র মধ্যেও তো আরএসএস’র লোকেরা আছে, তাদের কারো কারো মনে হতে পারে যে আরএসএস’র বিজেপি-কে মদত দেওয়া উচিত, অন্য দলকে নয়। কিন্তু তাদের কথা চূড়ান্ত নয়, সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন আরএসএস প্রধান, সেই সিদ্ধান্ত বিজেপি কর্মী, এমনকী বিজেপি’র মধ্যে কাজ করা আরএসএস কোনো কর্মীর ইচ্ছার বিরোধীও হতে পারে, ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে হয়েছেও। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ১৯৮৯ সালে। তখন রাজীব গান্ধীর সরকার চলছে। বোফর্স নিয়ে ব্যাপক গোলমাল। ভি. পি. সিং মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে গেছেন। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। নাগপুরে আরএসএস ভবনে হাজির হলেন বিজেপি নেতা এল কে আদবানি ও অটল বিহারী বাজপেয়ী। তাঁরা আরএসএস’রও কর্মী; আরএসএস প্রধানের কাছে এক আরজি নিয়ে গিয়েছিলেন - আরএসএস প্রধান যেন আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন না করেন। [২] প্রধান রাজি হননি, তিনি নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে তাঁর কর্মীদের নামিয়েছিলেন।
এখন যদি পর্যালোচনা করেন, তবে দেখবেন আরএসএস’র আদর্শ অনুযায়ী, প্রধানের সেদিনের সিদ্ধান্ত কত সময়োপযোগী ছিল। প্রধান তাঁর বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঠিকই খবর পেয়েছিলেন যে, রাজীব গান্ধী হারলে সরকারে আসবেন ভি. পি. সিং। দীর্ঘদিন ধরে আরএসএস ভি. পি. সিং-কে চেনে, হিন্দুত্বের শক্তির কাছে ভি. পি. সিং-এর চেয়ে রাজীব গান্ধী ভালো। হলোও তাই। সেই নির্বাচনে ভি. পি. সিং জিতে মণ্ডল কমিশনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চেয়ে হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেস ফেলে রেখেছিল ৯ বছর ধরে। ভি. পি. সিং-এর চেয়ে কংগ্রেস ভালো। অবশ্যই ভি. পি. সিং-কে ঠেকাতে ১৯৮৯ সালে বিজেপি’র চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল কংগ্রেস।
পশ্চিমবঙ্গেও একই অবস্থা। আরএসএস’র তিনটি শত্রুর একটি কমিউনিস্ট। বিজেপি জিতলে তো ভালোই, কিন্তু যদি সারা রাজ্যে, বা এমনকী কোনো বিধানসভা বা লোকসভা কেন্দ্রে যদি এমন হয় যে বাম-বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে বামেরা জিতে যায়, তবে তা আরএসএস’র পক্ষে বিপদ, তার চেয়ে তৃণমূলের জেতা ভালো। উদ্দেশ্যসাধনে বিজেপি’র চেয়ে বেশি যোগ্য তৃণমূল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে চায় বিজেপি, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যদি বামপন্থীরা সামনে চলে আসে তবে বিপদ।
আসল উদ্দেশ্য মানুষের বিভাজন বাড়ানো, হিন্দু রাষ্ট্রের পথে অগ্রসর হওয়া। মমতার বিভিন্ন মুসলিম মৌলবাদীদের মদত দেওয়া নিয়ে কোনো হিন্দুত্ববাদীর আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু তিনি তো দীঘাতে হিন্দুদের জন্য মন্দির করবেন বলেছেন, তৃণমুলের বিভিন্ন নেতা রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, পুরোহিত সম্মেলন, গণ উপনয়ন সংগঠিত করেছেন। আর মমতার জন্য যদি মুসলিম মৌলবাদীদের কাজকর্ম বাড়েও, তাতেও আরএসএস’র সুবিধা। যত মুসলিম মৌলবাদী কাজকর্ম বাড়বে তত আরএসএস’রও সুবিধা হবে হিন্দুত্বের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। মমতার সরকারে উপস্থিতি নানা দিক দিয়েই আরএসএস’র বেড়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক।
মণিপুরের ঢঙে পশ্চিমবঙ্গেও বিভাজনের খেলা খেলেই চলবে আরএসএস। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ স্লোগান তোলায় কমিউনিস্টরা তাই চক্ষুঃশূল। আরএসএস কর্তৃক এই বিভাজনে মমতা ব্যানার্জিরই বা কী অসুবিধা? তাছাড়া, তাঁরও তো এক নম্বর শত্রু কমিউনিস্টরাই।
সূত্রঃ
১) স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য, ‘মিশন বেঙ্গল’, হপার কলিন্স পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, ২০২১ (মুজফ্ফর আহ্মদ পুরস্কার প্রাপ্ত)
২) এ. জি. নুরানি, ‘দি আরএসএস - এ মিনাক টু ইন্ডিয়া’, লেফটওয়ার্ড বুকস, ২০১৯