৬০ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৪ আগস্ট, ২০২৩ / ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩০
বচ্ছরকাল - শেষ পর্ব
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
গত সপ্তাহে যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই শুরু করা যাক। নিয়ম সেটাই। কাম্য না হলেও ব্যাঙের মত লাফিয়ে লাফিয়ে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে নিয়ে যাওয়া মিডিয়ার কাজ হতে পারে। কারণ বিজেপি শাসনের বিগত ৯ বছরে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার প্রায় সবটাই যেভাবে ধীরে ধীরে গিলে ফেলা হয়েছে তাতে গণতন্ত্রের সাথে সাথে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেখানে এখন গোঁসাই থেকে চৌধুরী, লিয়াকত থেকে ঘোষেদের রাজত্ব। এই রাজ্যেই ‘সংবাদ প্রতিদিন’ নামক খবরের কাগজের অফিস থেকে নিয়ম করে শাসক দলের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন এক দলীয় মুখপাত্র। অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে গাল দিলে এইসব মিডিয়া বাবুদের ভীষণ গোঁসা হয়। যদিও ‘তাঁরা’ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, প্রেস ফ্রিডম ইন্ডেক্স-এ গত ৯ বছরে ১৪০ থেকে ১৬১-তে নামিয়ে আনার গুরুদায়িত্বে সরকারের পাশাপাশি তাঁরাও সমানভাবে অংশীদার। এসব কথা থাক। আলোচনায় ফিরি।
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র রক্ষা করার ঢোল বাজিয়ে ফেরা বিজেপি, গণতন্ত্রের প্রতি কতটা আস্থাশীল তার প্রমাণ ২০১৪ সালের পর থেকে দেশবাসী বারবার পেয়েছে। রাজ্যে রাজ্যে যে কোনো মূল্যে সরকার গঠনের উদগ্র বাসনায় কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কাই করা হয়নি। একের পর এক রাজ্যে ‘অপারেশন লোটাস’ করে নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া হয়েছে। তালিকাটা খুব ছোটো নয়। ২০১৬ থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনা এখনও চলছে। এই বিজেপি-ই ২০১৩ সালে কংগ্রেস মুক্ত ভারতের ডাক দিয়েছিল। যদিও ‘আচ্ছে দিন’-এর ফেরিওয়ালার সেই বক্তব্যের অর্থ তখন দেশের মানুষ সম্ভবত বুঝতে পারেননি। এখন প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় মানুষ বুঝেছেন, মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষমতা দখলের জন্য যা খুশি করা যায়। সেখানে নৈতিকতা, মূল্যবোধ নিতান্তই মূল্যহীন।
অপারেশন লোটাস পর্ব - ২০১৬
২০১৬ সালে অরুণাচল প্রদেশের ঘটনাই ধরা যাক। ৬০ সদস্য বিশিষ্ট বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ১১ আসনে। পিপলস পার্টি অফ অরুণাচল (পিপিএ) জয়ী হয় ৪৩ আসনে। যদিও পিপিএ-তে ভাঙন ধরিয়ে ৩৩ জন বিধায়ক যোগ দেন বিজেপি-তে এবং জনমতের তোয়াক্কা না করে সরকার গঠন করে বিজেপি।
২০১৬ সালেই উত্তরাখণ্ডে নির্বাচিত কংগ্রেস সরকারে টালমাটাল শুরু হয় ৮ দলীয় বিধায়ককে বরখাস্ত করার পর। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত দাবি করেন তাঁর সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। যদিও আস্থা ভোট গ্রহণের আগের দিন রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয় উত্তরাখণ্ডে। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে এই নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত সাহ নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেবার জন্য পরিকল্পিতভাবে দলবদলে উৎসাহ দিচ্ছেন।
অপারেশন লোটাস পর্ব - ২০১৭
এবার আসা যাক ২০১৭ সালে। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের পর ১৭ বিধায়ক নিয়ে একক বৃহত্তম দল হয় কংগ্রেস। বিজেপি জয়ী হয় ১৩ আসনে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ জন বিধায়কের সমর্থন। নিয়ম অনুসারে একক বৃহত্তম দলকে এক্ষেত্রে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হয়। যদিও সে সুযোগ পায়নি কংগ্রেস। তার বদলে কংগ্রেসের জোটসঙ্গী গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির সমর্থনে সরকার গঠন করে ফেলে বিজেপি।
যে মণিপুরের ঘটনায় এখন দেশজুড়ে শোরগোল, সেই মণিপুরে ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় কংগ্রেস। ৬০ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় ২৮ আসন পায় কংগ্রেস এবং ২১ আসন পায় বিজেপি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩১ আসন। কংগ্রেসের সরকার গঠনের দাবি জানানোর আগেই বিজেপি রাতারাতি ৪ এনপিপি, ৪ নাগা পিপলস ফ্রন্ট এবং ১ লোক জনশক্তি পার্টির বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করে ফেলে। রাজ্যপালের কাছে এই ৩০ বিধায়কের নাম জমা দিতে যাবার আগের মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে ১ কংগ্রেস বিধায়ক (শ্যাম কুমার) এবং ১ তৃণমূল বিধায়ক (রবীন্দ্র সিং) বিজেপি-কে সমর্থন জানান। মণিপুরে সেবার সরকার গঠন করে বিজেপি।
অপারেশন লোটাস পর্ব - ২০১৯
এবার ২০১৯। ২০১৮ সালে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে কংগ্রেস-জেডিএস জোট। মুখ্যমন্ত্রী হন এইচ ডি কুমারস্বামী। যদিও ২৩ জুলাই ২০১৯-এ সেই সরকারের পতন হয়। ১৬ কংগ্রেস এবং জেডিএস বিধায়কের ইস্তফায় সরকারের পতন ঘটে। ২৬ জুলাই ক্ষমতাসীন হয় বিজেপি। ইস্তফা দেওয়া বেশিরভাগ বিধায়ক পরবর্তীকালে বিজেপিতে যোগ দেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় অপারেশন লোটাসের।
এই বছরেরই নভেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে গিয়েও ব্যর্থ হয় বিজেপি। তড়িঘড়ি শপথ নিয়েও ইস্তফা দিতে বাধ্য হন বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। এরপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন কংগ্রেস-শিবসেনা-এনসিপি’র মহাবিকাশ আঘাদি জোটের পক্ষে উদ্ধব ঠাকরে। যদিও দীর্ঘ সময় পরে ২০২৩ সালে শিবসেনায় ভাঙন ধরিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার ফেলতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন শিবসেনার একনাথ শিন্ধে। এরপর এনসিপি-তেও ভাঙন ধরাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি।
অপারেশন লোটাস পর্ব - ২০২০
২০২০ সালের মার্চ মাস। ২০১৮ সালের নভেম্বরের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয় কংগ্রেস। যদিও ২০২০ সালে দেশে যখন কোভিড নিয়ে আতঙ্ক সেইসময় কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নেতৃত্বে ৬ মন্ত্রী সহ ২২ জন কংগ্রেস বিধায়কের বিদ্রোহে কমলনাথের ১৫ মাসের সরকারের পতন ঘটে। এরপরেই জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সহ প্রায় সব বিধায়কই বিজেপি-তে যোগ দেন। এবারও সরাসরি বিজেপি’র বিরুদ্ধে অপারেশান লোটাসের অভিযোগ আনে কংগ্রেস।
এই বছরেরই জুলাই মাসে রাজস্থানে অপারেশন লোটাস চালাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় বিজেপি। সেবার শচীন পাইলটের নেতৃত্বে ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়ক বিদ্রোহ করে। যদিও কংগ্রেস নেতৃত্বের দ্রুত হস্তক্ষেপে সে যাত্রা রক্ষা পায় অশোক গেহলটের কংগ্রেস সরকার। এবারও অপারেশন লোটাসের অভিযোগ আনা হয় কংগ্রেসের পক্ষে।
‘নারী শক্তিতে নতুন গতি’
এ তো গেল গণতন্ত্র রক্ষায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি তথা এনডিএ সরকারের ভূমিকা। এবার একটু ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’-এর দিকে আসা যাক। গত সংখ্যার লেখাতে যে পুস্তিকার কথা উল্লেখ করেছিলাম, সেই ‘৯ বছর, সেবা, সুশাসন, গরিব কল্যাণ’ নামক ১৫৬ পাতার বইয়ের ২৫ নম্বর পাতা থেকে শুরু হয়ে ৯ পাতার মধ্যে ধরা আছে তৃতীয় অধ্যায়, ‘নারী শক্তিতে নতুন গতি’। যে অধ্যায়ের শুরুতেই লেখা, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার গত ৯ বছরে ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় নারী শক্তিকে সামনে রেখেছে।’ ২০১৪ সালে এই বিজেপি’রই অনেক স্লোগানের মধ্যে একটা ছিল ‘বহুত হুয়া নারী পর ভার, আবকি বার মোদি সরকার।’
পুস্তিকার এই অধ্যায়ের শুরুতে বেশ কিছু পরিসংখ্যান দেওয়া আছে। যেখানে পুরুষ ও মহিলার অনুপাতে বলা আছে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২০২০-২১ (এনএফএইচএস-৫) অনুসারে ২০২৩ সালে ভারতে প্রতি ১০০০ পুরুষের অনুপাতে মহিলার সংখ্যা ১০২০। যেটা বলা নেই তা হলো অধিকাংশ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এই অনুপাত উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে গুজরাট (৯৬৫), হরিয়ানা (৯২৬), মধ্যপ্রদেশ (৯৭০), মহারাষ্ট্র (৯৬৬) এবং খোদ দিল্লিতে এই সংখ্যা ৯১৩।
৯ বছর মানে অনেকটা সময়। ‘প্রচারদাস’ বাবু এই বিষয়ে যা যা দাবি করেছেন তার কতটা সত্যি আর কতটা নয়, তা বিতর্কের বিষয়। কারণ তথ্য পরিসংখ্যান আর প্রধানমন্ত্রীর প্রচার ও ভাষণের মধ্যে কোনও মিল নেই। মোদি সরকারের প্রথম পর্বের শেষ লগ্নে, ২০১৯ সালে এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছিল ২০১৮ সালে দেশে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন, যার মধ্যে ৮৮ লক্ষ ছিলেন মহিলা। যার ৬৫ লক্ষ মহিলা গ্রামে বসবাস করেন এবং ২৩ লক্ষ শহরাঞ্চলে। এটা শুধুমাত্র এক বছরের হিসাব।
‘দ্য ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশন’ বা এনএসএসও-র পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১১-১২ সালে দেশে শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৯.৭ শতাংশ। যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.৩ শতাংশ। উল্লেখযোগ্যভাবে শহরাঞ্চলে ২০১১-১২ সালে এই হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ সালে হয় ১৯.৮ শতাংশ। এই তথ্যের সঙ্গেই পুরুষ ও মহিলাদের মজুরির ক্ষেত্রে বৈষম্যও চোখে পড়ার মতো। তথ্য অনুসারে, গ্রামীণ ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকদের গড় মজুরি যেখানে দিন প্রতি ৩৯৩ টাকা সেখানে মহিলা কর্মীদের গড় মজুরি ২৬৫ টাকা। শহরাঞ্চলে পুরুষ কর্মীদের গড় মজুরি যেখানে দিন প্রতি ৪৮৩ টাকা সেখানে মহিলাদের গড় মজুরি ৩৩৩ টাকা।
মহিলাদের ওপর হিংসার পরিসংখ্যানটা আরও ভয়ংকর। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো জানাচ্ছে, ২০১১ সালে সারা দেশে মহিলাদের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত হিংসার ঘটনা ছিল ২,২৮,৬৫০। ২০১৬ সালে এই ঘটনা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৩৮,৯৫৪, বৃদ্ধি ২৬.৩৫ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,২৮,২৭৮ বা প্রায় ৮৭ শতাংশ। এটা শুধুমাত্র নথিভুক্ত ঘটনার হিসাব। এর বাইরে কত ঘটনাই তো ঘটে যা শেষ পর্যন্ত নথিভুক্ত হয়ে ওঠে না বা মহিলারা করতে পারেন না।
অতি সম্প্রতি রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার জানিয়েছেন, “২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশে নিখোঁজ হয়েছেন ১০,৬১,৬৪৮ জন মহিলা, যাদের বয়স ১৮ বা তার বেশি। পাশাপাশি, ২,৫১,৪৩০ জন নাবালিকাও ওই সময়ে নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৯ সালে ৮২,০৮৪ জন নাবালিকা ও ৩,৪২,১৬৮ জন পূর্ণবয়স্ক মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২০ সালে ৭৯,২৩৩ জন নাবালিকা এবং ৩,৪৪,৪২২ জন মহিলা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২১ সালে নাবালিকা এবং মহিলা নিখোঁজ হয়েছে যথাক্রমে ৯০,১১৩ এবং ৩,৭৫,০৫৮ জন।’’ অর্থাৎ শুধুমাত্র শেষ যে ৩ বছরের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ওই সময় দেশে নিখোঁজ মহিলা ও নাবালিকার সংখ্যা প্রায় ১৩.১৩ লক্ষ। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তিন বছরে নিখোঁজ হওয়া মহিলাদের তালিকায় মধ্যপ্রদেশের পরেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা থেকে ওই সময় মোট ১,৯৩,৫১১ জন নিখোঁজ হয়েছে, যার মধ্যে ১,৫৬,৯০৫ জন মহিলা এবং ৩৬,৬০৬ জন নাবালিকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে মহারাষ্ট্র। এই সময়ের মধ্যে যেখানে ১,৭৮,৪০০ জন মহিলা এবং ১৩,০৩৩ জন নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছে। ওড়িশায় তিন বছরে ৭০,২২২ জন মহিলা ও ১৬,৬৪৯ জন নাবালিকা নিখোঁজ হয়েছে এবং ছত্তিশগড় থেকে ৪৯,১১৬ জন মহিলা এবং ১০,৮১৭ জন কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে।
দেশের বিজেপি সরকারের ‘নারী শক্তিতে নতুন গতি’ প্রচারের ধাপ্পাকে দেশ, বিশ্বের সামনে সম্ভবত পুরোপুরি উলঙ্গ করে দিয়েছে মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা। কেন্দ্রীয় সরকার যে বিষয়ে মুখ লুকোতে চাইলেও বা অন্য রাজ্যের উদাহরণ টেনে সেই ঘটনা ঢাকতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই নৃশংস হিংসার ভিডিয়োতে দেখা গেছে একদল উন্মত্ত জনতা দুই মহিলাকে নগ্ন করে টেনে হিঁচড়ে খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি গত ৪ মে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপকপি জেলায় ঘটেছে বলে দাবি করেছে এক সংগঠন। যার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে ঘটনার ৭৭ দিন পর। যদিও এই ঘটনায় বিরোধীদের লাগাতার প্রতিবাদ, সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার পরেও এখনও মুখ না খুলে নিজেদের অবস্থানে অনড় আছে ‘বহুত হুয়া নারী পর ভার’ কিংবা ‘উত্তর পূর্ব - অগ্রগতি’ স্লোগান তোলা কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
শেষ ৯ বছরের ১০৮ মাসে ভারতকে তিলে তিলে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লেখা এত অল্পে শেষ হবার নয়। এককথায় বলতে গেলে, বিগত ৯ বছরে ভারতের সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধানের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র মানুষে মানুষে লড়িয়ে দেওয়া এবং একের পর এক জনবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া এই সরকার আর কিছুই করেনি। এই অপশাসন, কুশাসনের হাত থেকে দেশবাসী মুক্ত না হলে আগামীদিনের পরিস্থিতি হয়তো ফ্যাসি জমানাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাই এবার পাখির চোখ হোক লোকসভা নির্বাচন - অত্যাচারী সরকারের পতন।