৫৮ বর্ষ ১৬শ সংখ্যা / ৪ ডিসেম্বর ২০২০ / ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
নতুন কৃষি আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
লক্ষ লক্ষ কৃষকের উত্তাল সমাবেশের ঘোষণা
সিঙ্ঘু বর্ডারে বিক্ষোভরত কৃষকরা।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মোদী সরকারের সর্বনাশা তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষক আন্দোলন ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। কেন্দ্রের তিন নয়া কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার না করা হলে কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। ২ডিসেম্বর দিল্লির সীমান্ত সিঙ্ঘুতে কৃষক জমায়েতের স্থানে বৈঠকে বসেছিলেন কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সারা ভারত কৃষক সংঘর্ষ সমিতির ওয়ার্কিং গ্রুপ, আরকেএমএস, ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের একাধিক গোষ্ঠী, পাঞ্জাব ইউনিয়ন অব ফারমার্সের নেতারা বৈঠকে বসে স্থির করেছেন, তাঁরা সরকারকে একটি চিঠি দেবেন। সেই চিঠিতে তিন কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবি জানানো হবে। বৈঠকে সরকার যে পাঁচজনের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, তাও খারিজ করে দিয়েছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবিও জানিয়েছেন কৃষকরা।
বিক্ষোভরত কৃষকদের মাঝে হান্নান মোল্লাসহ এআইকেএস নেতৃবৃন্দ।
রাজধানী দিল্লির বুকে কৃষক আন্দোলন যখন গোটা দেশে সংগ্রামের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে, তখন বাংলার বুকেও কৃষক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। ২ ডিসেম্বর তাঁরা ঘোষণা করেছেন, ১৬ ডিসেম্বর, বেলা ২টায় কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে বিশাল কৃষক সমাবেশ হবে। এই সমাবেশের আগে ৩, ৪ এবং ৫ ডিসেম্বর জেলায় জেলায় কৃষকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সংগঠিত করছেন।
সিঙ্ঘু বর্ডারে কৃষক জমায়েত।
মোদী সরকারের পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব সরাসরি খারিজ করে দেন আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। কৃষক আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে ২ ডিসেম্বর তাঁরা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার, রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, এবং কৃষি রাষ্ট্রমন্ত্রী সোম প্রকাশের সঙ্গে এক বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমরা কোনো কমিটি চাই না। আমাদের দাবি মেনে তিন কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ বিল বাতিল করতেই হবে সরকারকে। এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ৩ ডিসেম্বর দেশজুড়ে রাস্তা রোকো কর্মসূচি সংগঠিত করে সারা ভারত কৃষকসভা।
দেশের স্বাধীনোত্তর পর্বের গণআন্দোলনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী উত্তাল কৃষক আন্দোলনের সাক্ষী হতে চলেছে গাটা দেশ। দেশের অন্নদাতা কৃষকদের চরম সর্বনাশ করে কেন্দ্রের মোদী সরকার কর্পোরেট ও পুঁজিপতিদের স্বার্থে কৃষি ও কৃষক স্বার্থবিরোধী তিনটি আইন পাশ করিয়েছে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের আবহে গোটা দেশ যখন নানা দিক থেকে বিপর্যস্ত, অর্থনৈতিক অবস্থা যখন কার্যত ভেঙে পড়েছে, কাজ ও খাদ্যের তীব্র সঙ্কটে যখন গরিব সাধারণ মানুষের দিশাহীন অবস্থা; তেমনই একটি দুঃসহ পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়তাকে কাজে লাগিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে তিনটি কৃষি বিল সংসদে পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্রের মোদী সরকার। এই বিল পেশ করার সময় থেকেই সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় সমিতি (এআইকেএসসিসি) এই তিনটি সর্বনাশা বিল সংসদে পাশ না করানোর দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।
কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আগরতলায় মিছিল।
কিন্তু কৃষকদের বক্তব্যকে আমল দেয়নি কেন্দ্রের সরকার। এদিকে এই তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয় দুর্বার আন্দোলন। এই আন্দোলনকে রুখতে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে বিজেপি সরকার যথেচ্ছ দমন-পীড়ন চালিয়েও এই আন্দোলনকে রুখতে পারেনি। বরং আন্দোলনের তীব্রতা সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রের জনবিরোধী ও দেশবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশের দশটি ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্পভিত্তিক ফেডারেশনগুলি ২৬ নভেম্বর দেশব্যাপী যে অভূতপূর্ব সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত করে, সেই ধর্মঘটের প্রতি কৃষক সংগঠনগুলির সংগ্রামের মঞ্চ পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে অংশ নেয় এবং গ্রামভারত বন্ধ সফল করে। কৃষকদের সংগ্রামী মঞ্চ ২৬ নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘট করার পাশাপাশি ২৭ নভেম্বর দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছিল। এই দিল্লি অভিযানকে কেন্দ্র করেই পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্য থেকে হাজার হাজার কৃষক লরি, ট্রাক্টর সহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে দিল্লি সীমান্তে এসে জড়ো হতে থাকেন। সীমান্ত সিল করে দিয়ে হরিয়ানার বিজেপি-জেজেপি সরকার কৃষকদের আটকাতে তীব্র দমন-পীড়ন নামিয়ে আনে। বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আম্বালা, কুরুক্ষেত্র, হিসার প্রভৃতি জায়গায় ব্যারিকেড লাগানো হয়। প্রবল শীতের মধ্যে দিল্লিমুখী কৃষকদের ওপর জলকামান ছোঁড়া হয়েছে। নানা জায়গায় এসমা, এনএসএ প্রভৃতি কালা কানুনও জারি করা হয়। অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এই সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করেই অবরোধ-বিক্ষোভে অনড় থাকেন কৃষকরা।
দিল্লি অভিমুখী কৃষকেরা তাঁদের যানবাহনে তিনমাসের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন। তাঁরা দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়ে দেন, যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, আন্দোলন জারি থাকবে। শুরুতেই আন্দোলনকারী কৃষকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে তাদের আটকানো হবে সেখানেই তারা ‘লঙ্গর’ চালাবেন।
আন্দোলনরত কৃষকদের মাঝে এসএফআই নেতৃবৃন্দ।
এদিকে এই আন্দোলন চলাকালীন সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরজেডি, এনসিপি, ডিএমকে প্রভৃতি রাজনৈতিক দল যৌথ বিবৃতিতে কৃষকদের কথা শুনে ওদের দাবি মেটানোর উদ্যোগ নেবার আবেদন জানায়। সেইসঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর নির্মম অত্যাচার বন্ধের দাবি জানায়। কিন্তু তাঁদের কথা না শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরকার নির্ধারিত বুরারির নিরঙ্কারি ময়দানে গিয়ে সব আন্দোলনকারীকে জমা হতে বলেন। সেখানে গেলেই সরকার দ্রুত আলোচনায় বসবে বলে জানিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে কার্যত ‘হুমকি’ হিসাবে নিয়ে রাজধানীর ভেতরে-বাইরে জড়ো হওয়া লাখো কৃষক পালটা জানিয়েছেন, সরকারের কোনো শর্তই আমরা মানব না। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হলে বিনাশর্তেই বসতে হবে। না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে। পাঁচ দিক থেকে দিল্লি ঘিরে এভাবেই বসে থাকব আমরা। কৃষি আইন বাতিল না হলে আমাদের অবরোধ উঠবে না। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ২৯ নভেম্বর জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাব সন্দেহজনক। কৃষকেরা সরকারের কোনো শর্তই মানবে না। শর্ত চাপানো বন্ধ করে কেন্দ্রকে এখনই কৃষি আইন বাতিলের জন্য বৈঠকে বসতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত কৃষিনীতির বিরুদ্ধে যখন কৃষকেরা প্রতিবাদে উত্তাল, তখন বিজেপি’র তরফে এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানা ফন্দি-ফিকির, অপপ্রচার-কুৎসা শুরু হয়। তার পাশাপাশি চলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রচ্ছন্ন হুমকি। এই পরিস্থিতিতে কৃষক আন্দোলনের যৌথ মঞ্চ ২৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে এই ঘৃণ্য প্রবণতার তীব্র সমালোচনা করে জানায়, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এবং যে কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই বিপুল সংখ্যক কৃষক দিল্লিমুখী হয়েছেন। ‘কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে হবে’ - এই দাবি আদায় করে নেবার জেদে প্রবল ঠান্ডা উপেক্ষা করে হাজার হাজার কৃষক হাজির হয়েছেন দিল্লি এবং আশেপাশে। কোনো বাধা, নিপীড়ন, বর্বরতার কাছে হার মানেননি তাঁরা। কৃষকরা স্পষ্টই বলছেন, সরকার গুজব ছড়ানো বন্ধ করে, এড়িয়ে না গিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের দাবি-দাওয়ার কথা বিবেচনা করুক।
দিল্লির কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে কলকাতায় মিছিল -
কলকাতায় বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নসমূহের সংহতি জ্ঞাপন।
কলকাতায় বামপন্থী ছাত্রদের সংহতি জ্ঞাপন।
দেশের লাখো লাখো অন্নদাতা কৃষক যখন তাঁদের ন্যায্য দাবিতে দিল্লি অভিযানে শামিল হয়ে প্রবল শীতের মধ্যে দিল্লি সীমান্তে রাত কাটাচ্ছেন, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসীতে বিপুল অর্থব্যয়ে প্রমোদতরীতে ভ্রমণ করে দীপাবলি উৎসব উদ্যাপন করেন। গত ৩০ নভেম্বর এই অমানবিক দৃশ্য বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেন দেশের মানুষ। শুধু তাই নয়, কানাডা থেকে অন্নপূর্ণা মূর্তি ফিরিয়ে আনা, অযোধ্যার রামমন্দির, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর ইত্যাদির কথা তুলে ধরে মোদী ধর্মীয় আবেগ তৈরির পুরানো খেলায় মেতে ওঠেন। বিজেপি’র আইটি সেল কৃষকদের জমায়েত নিয়ে দিল্লিতে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কা ছড়িয়ে দেয়। আর করোনার সংক্রমণ রুখতে শারীরিক দূরত্ব বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গঙ্গার ঘাটে সংগঠিত ভিড় করে মোদীর প্রমোদতরীতে ভ্রমণ দেখা ও ভাষণ শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে মোদী অন্নপূর্ণার কথা উচ্চারণ করলেন কিন্তু অন্নদাতা কৃষকদের উদ্বেগ নিয়ে একটি কথাও বলেননি। তাঁদের দাবি নিয়েও নিশ্চুপ থাকেন। এইসব কিছুকেই উপেক্ষা করেই কৃষকনেতারা স্পষ্টতই জানিয়ে দেন, ‘নির্ণায়ক লড়াই’ চালাতেই কৃষকরা দিল্লিতে এসেছেন। কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন খারিজ না হলে দিল্লি ছাড়ার প্রশ্নই নেই। কৃষকদের দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এই পরিস্থিতিতে গত ৩০ নভেম্বর সিপিআই(এম), সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই(এম এল) এক যৌথ বিবৃতিতে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গোটা দেশে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছে। এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অগণতান্ত্রিকভাবে কৃষি বিল ও বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল পাশা করানো হয়েছে সংসদে। সেই আইন প্রত্যাহারের দাবিতে লক্ষ লক্ষ প্রতিবাদী কৃষক জড়ো হয়েছেন দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে। প্রবল ঠান্ডা এবং নিপীড়নকে তোয়াক্কা না করে তাঁরা হাজির হয়েছেন দিল্লির উপকণ্ঠে। কিন্তু তাঁদের এখন পর্যন্ত দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আগেই তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে, দিল্লি এসে তাঁদের দাবি-দাওয়া দাখিল করবেন সরকারের কাছে। দেশের কৃষিব্যবস্থাকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়া উচিত বলেই দাবি জানিয়েছে এই পাঁচ বামপন্থী দল।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই তিন লক্ষেরও বেশি কৃষক পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড প্রভৃতি রাজ্য থেকে দিল্লি সীমান্তে উপস্থিত হয়েছেন, উপস্থিত কৃষকেরা দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়ে দিয়েছেন, কৃষি আইন বাতিল না হলে তাঁরা কিছুতেই দিল্লি ছাড়বেন না। কৃষকের দাবি মানতেই হবে সরকারকে।
এদিকে ১ ডিসেম্বর ৩৫টি কৃষক সংগঠনের নেতারা দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছিলেন। তাঁরাও কেন্দ্রের শর্ত না মানায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। বৈঠক শেষে কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় সমিতির অন্যতম নেতা হান্নান মোল্লা জানান, কৃষকের দাবি মানতে টালবাহনা করছে সরকার। বৈঠকে কৃষক নেতারা একযোগে তিন কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ বিল অবিলম্বে খারিজের দাবি তোলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বলেছিলেন, কৃষকদের দাবি বিবেচনার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়তে রাজি আছে সরকার। কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের সমস্ত আপত্তি এবং উদ্বেগ খতিয়ে দেখবে প্রস্তাবিত কমিটি। কিন্তু কৃষক নেতারা সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রস্তাব আমরা মানছি না। এই ধরনের কমিটি গড়ে অতীতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সুতরাং কমিটি না গড়ে সরাসরি কৃষি আইন এবং বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করে নিতে হবে কেন্দ্রকে।
এদিকে এই কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ভীম আর্মি পার্টি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ। দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে কেন্দ্রের শাসক দলের মতাদর্শগত অভিভাবক আরএসএস-র নাগপুরের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় স্বাভিমানি শ্বেতকারি সংগঠনের সদস্যরা। দিল্লির শাহিনবাগ আন্দোলনের স্বনামধন্যা দাদি ৮২ বছরের বিলকিস বানো ২ ডিসেম্বর কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে যান। কিন্তু পুলিশ তাঁকে সেখানে আটক করে পূর্ব দিল্লির বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কৃষকদের কথা শুনে, সহমতের ভিত্তিতে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আবেদন জানিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। দিল্লিমুখী কৃষক-খেতমজুরদের উপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার প্রতিবাদস্বরূপ পদ্মশ্রী তথা অর্জুনপদক জয়ী কুস্তিগীর কারতার সিং, অর্জুন পদকজয়ী বাস্কেটবল খেলোয়াড় সজ্জন সিং চিমা ও অর্জুন পদকজয়ী হকি খেলোয়াড় রাজবীর কাউর দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে তাদের পুরস্কার ও স্মারকগুলি রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দিল্লির কৃষকবিক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুজে। তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন। ভারত সরকার অবশ্য একে ‘অবাঞ্ছিত’ বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন বাতিলে দাবিতে দুর্বার কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি, বিহার, কেরালা সহ বিভিন্ন রাজ্যে মিছিল সংগঠিত হচ্ছে।