E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৬শ সংখ্যা / ৪ ডিসেম্বর ২০২০ / ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭

লাঙল যারই হোক জমি কর্পোরেটদের?

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


দৃশ্য ১

গরম যদি খুব লাগে তাহলে তিব্বত যেতে পারলেই নাকি গরম থেকে মুক্তি। সহজ এই ফরমুলা বাতলে দেওয়া বেড়াল জানিয়েছিল - ‘কলকেতা, ডায়মণ্ডহারবার, রানাঘাট, তিব্বত, ব্যাস! সিধে রাস্তা, সওয়া ঘণ্টার পথ, গেলেই হল।’ তবে মুক্তি পাবার এত সহজ রাস্তা জানেন শুধু গেছোদাদা। সেই গেছোদাদা - যাকে উলুবেড়ে খুঁজতে গেলে তিনি থাকেন মতিহারি। আবার মতিহারি গেলে রামকিষ্টপুর। রামকিষ্টপুর গেলে দেখা যাবে তিনি তখন কাশিমবাজার। তাঁর খোঁজে দিল্লি গেলে তখন হয়তো তিনি আহমেদাবাদ, পুনা, হায়দরাবাদ কিংবা বেনারস - যে কোনো জায়গাতেই থাকতে পারেন। ‘কিছুতেই দেখা হবার জো নেই’।

দৃশ্য ২

কাট টু…। রোম নগরীতে আগুন লাগার সঙ্গে নিরোর বেহালা বাজানোর গল্পটা খুব চালু থাকলেও ওই ঘটনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে গত ৩০ নভেম্বর রাত ৭.৫৫ মিনিটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩৭ সেকেন্ডের এক ভিডিয়ো ট্যুইট করেছেন। মাইক্রোব্লগিং সাইটে যাঁদের ঘোরাফেরা করার অভ্যেস আছে তাঁরা একবার ঘুরে আসতে পারেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে লেসার শো। রকমারি আলোর ঝলকানিতে প্রায় নেচে নেচে ‘হর হর মহাদেব’ ডিজে-র সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে তাল, দূরে কাউকে দেখে হাত নাড়ানো সবই দেখতে পাওয়া যাবে। দৃষ্টিনন্দন। মনোমুগ্ধকর। ‘জন্মজন্মান্তরেও’ ভুলিতে না পারা সেই দৃশ্যের স্বাদ গ্রহণ না করতে পারলে ভারতবাসীর জীবনের ষোলো আনাই বৃথা। এই ট্যুইটে ভালো মন্দ মিশিয়ে প্রায় ১২ হাজার ট্যুইটারি মন্তব্য করেছেন। যেমন অর্চন গৌড়া নামক এক ব্যক্তি লিখেছেন - ‘যখন প্রবল ঠান্ডায় কৃষকরা মরছে তখন মা গঙ্গা, কাশী বিশ্বনাথ এবং অন্নদাতারা প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই নাচ দেখছেন।’ কে জানে। হয়তো নিরোরা সত্যিই নগরীতে আগুন লাগলে বেহালা বাজাতে ভালোবাসেন। রাজা মহারাজের খেয়াল বলে কথা। কখন দশ লাখের স্যুট পড়বেন, কখন নোটবাতিল করবেন, কখন লকডাউন করবেন, কখন দেশের মানুষকে পথে বসাবেন আর কখন নেচে উঠবেন - দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যা।

ফ্ল্যাশব্যাক

গত সেপ্টেম্বর মাসে সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে পাশ করানো হয় তিন কৃষি বিল। দ্য ফার্মার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশান অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) বিল ২০২০, দ্য ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশান) এগ্রিমেন্ট অফ প্রাইস অ্যাসুরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস বিল ২০২০ এবং দ্য এসেন্সসিয়াল কমোডিটিস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২০। লোকসভায় এই তিন বিল পাশের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর এই সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স পেশ হয় রাজ্যসভায় এবং বিরোধীদের প্রবল বাধা উপেক্ষা করেই সংসদের উচ্চকক্ষে ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যায় দুই অর্ডিন্যান্স। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিরোধীদের আবেদন অগ্রাহ্য করে এই তিন কৃষি বিলে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

বিতর্কিত এই বিলকে ‘কৃষকবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী শিরোমণি অকালি দলের হরসিমরত কাউর। ২৬ সেপ্টেম্বর এনডিএ জোট ছাড়ে অকালি দল। ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যসভায় যেদিন এই বিল পাশ হয় সেদিনই কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে হরিয়ানা। শুরু হয় জায়গায় জায়গায় রাস্তা অবরোধ। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানায় ব্যবহৃত হয় জলকামান। ২৫ সেপ্টেম্বর ৩১টি কৃষক সংগঠনের ডাকে পাঞ্জাবে পালিত হয় সর্বাত্মক ধর্মঘট। শুরু হয় লাগাতার রেল রোকো। উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভরত কৃষকদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩০ নভেম্বর কৃষক বিক্ষোভের সমর্থনে ট্যুইট করে এনডিএ-তে থাকার কথা বিবেচনা করতে হবে বলে জানায় এনডিএ জোটসঙ্গী আরএলপি। একইভাবে এই বিষয়ে ক্ষোভ জানায় অন্য এনডিএ জোটসঙ্গী জেজেপি। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীর বাবা এবং জেজেপি নেতা অজয় চৌতালা জানান - ‘‘অন্নদাতারা হতাশ হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছেন। সরকারকে কৃষকদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।’’ হরিয়ানা সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় নির্দল বিধায়ক সোমবীর সাংওয়ান।

দৃশ্য ৩

গত ২৬ নভেম্বর ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্পভিত্তিক ফেডারেশনের ডাকে দেশব্যাপী ধর্মঘটে সংহতি জানিয়ে ২৬ এবং ২৭ নভেম্বর দু'দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে কৃষক সংগঠনের যৌথমঞ্চ অখিল ভারতীয় কিসান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি।

গত সাত দিন ধরে চলছে কৃষক বিক্ষোভ। দিল্লিমুখী কৃষক মিছিল আটকাতে কৃষকদের ওপর লাঠি চার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাস্তা কেটে দেওয়া এবং জলকামান ব্যবহার করে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানা প্রশাসন। প্রশাসনের বাধায় সাময়িক পিছু হটলেও পরে বিরাট সংখ্যক জনতা এসে ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। ক্ষুব্ধ কৃষকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নদীতে ফেলে দেয়। কোনো অবস্থাতেই কৃষকরা ফিরে যেতে রাজি নয় বলেও জানায়। হরিয়ানার বর্ডার সিল করে দেওয়া হয়। দিল্লিমুখী কৃষকদের আটকাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় পরিবহণ। যদিও তাতেও কৃষকদের দমানো যায়নি। হরিয়ানার পাশাপাশি দিল্লিতে গুরগাঁও এবং ফরিদাবাদে বর্ডার সিল করে দেওয়া হয়। কৃষকদের ট্রাক্টর আটকাতে বালি ভর্তি ট্রাক দিয়ে সিঙ্ঘু সীমান্ত ঘিরে দেয় দিল্লি পুলিশ।

বিক্ষুব্ধ কৃষকদের দাবি, সরকার তাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই এই আইন পাশ করিয়েছে। এর ফলে কর্পোরেটরা অনায়াসে মান্ডির বাইরে ব্যবসা করতে পারবে। এই তিন আইন কার্যকর হলেই গ্রামীণ ভারত একেবারে ধ্বংসের মুখে চলে যাবে। প্রথমে হোলসেল মার্কেট বা মান্ডিগুলোকে নিজেদের কবজায় নেওয়া হবে, এরপর এসেন্সসিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট, ১৯৫৫-এর অধীনে মজুতের পরিমাণ শেষ হয়ে যাবে, বেসরকারি মান্ডিগুলো তখন একে-একে প্রবেশ করতে শুরু করবে। এভাবেই ধীরে ধীরে দেশের কৃষকদের বিপদ এগিয়ে আসবে।

বিক্ষোভরত কৃষকদের তিনদিন একটানা লড়াইয়ের পর দিল্লি প্রবেশের অনুমতি মেলে। কৃষকদের চড়া মেজাজের সামনে কোনোরকম বাধাই তাদের নত করতে পারেনি। যদিও দিল্লির যন্তরমন্তর বা রামলীলা নয়। উত্তর পশ্চিম দিল্লির বুরারির নিরঙ্কারি গ্রাউন্ড এলাকায় জমায়েত করার অনুমতি দেওয়া হয়। যে দাবি মানতে অস্বীকার করে কৃষকরা। উল্টে দিল্লিমুখী একাধিক হাইওয়ে বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। গত ২৬ নভেম্বর হরিয়ানা আম্বালার নভদীপ সিং নামের এক যুবক নিজের ট্রাক্টর থেকে লাফিয়ে জলকামানবাহী ভ্যানে উঠে জলকামানের ট্যালপ বন্ধ করে দিয়ে সেখান থেকেই দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলিতে ফিরে আসেন। দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষক বিক্ষোভ-আন্দোলনের নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে এই একটি ঘটনাই স্পষ্ট করে দেয়, লড়াই-আন্দোলনের তীব্রতা কী পরিমাণ সঞ্চারিত হয়েছে আন্দোলনকারীদের মনের গভীরে। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো। যে ঘটনার জেরে নভদীপ সিং-এর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।

দৃশ্য ৪

গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রের তরফ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, কৃষকরা যদি সরকার নির্ধারিত দিল্লির বুরারীর নিরঙ্কারী সমাগম গ্রাউন্ডে তাঁদের বিক্ষোভ স্থানান্তর করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ সরকার তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসবে। যদিও অমিত শাহের আবেদন প্রত্যাখান করে আন্দোলনরত কৃষকরা ২৯ নভেম্বর জানিয়ে দেন, কোনো পূর্ব আরোপিত শর্ত মেনে সরকার নির্ধারিত জায়গায় আন্দোলন করবেন না তাঁরা। তাঁদের দাবি অনুযায়ী প্রশাসন যদি যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অনুমতি না দেয়, তাহলে দিল্লি সীমান্তেই তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। কিন্তু অমিত শাহের দাবি মেনে তাঁদের আন্দোলন অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে না।

২৯ নভেম্বর রাতে জরুরিভিত্তিতে বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার দিল্লির বাড়িতে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রমুখ। বিক্ষোভরত কৃষকরা জানান, তাঁদের দাবি মানা না হলে তাঁরা সোনেপথ, রোহতক, জয়পুর, গাজিয়াবাদ-হাপুর এবং মথুরা সীমান্ত আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাবেন। এরপরেই ৩০ নভেম্বর সকালে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কৃষকরা অমিত শাহের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর শেষ ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয়বার কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক। ১ ডিসেম্বর কৃষক সংগঠনকে আলোচনার জন্য ডাকা হয়। ৩০ নভেম্বর দিল্লি সীমান্তে যখন তুমুল কৃষক বিক্ষোভ চলছে তখনই বেনারসে ‘হর হর মহাদেব’ ডিজে-র সুরে সেই নাচের ভিডিও। ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনা এবং প্রবল ঠান্ডায় মৃত্যু হয়েছে তিন কৃষকের।

দৃশ্য ৫

গত ১ ডিসেম্বর কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় কোনো রফাসূত্র পাওয়া যায়নি। বৈঠকের বিরতিতে কৃষক প্রতিনিধিদের চা খেতে বললে কৃষিমন্ত্রীর সেই আবেদন কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে জানান - আপনি বিক্ষোভ স্থলে আসুন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চা, জিলিপি, পকোড়া খেয়ে যান।

আজ ৩ ডিসেম্বর ফের বৈঠক। যদিও বিক্ষোভের মাত্রা এতটুকু কমেনি এখনও। দিল্লি ঢোকার পাঁচ রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ। বিক্ষোভে প্রতিদিনই যোগ দিচ্ছেন আরও আরও কৃষক। তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, গ্রামীণ ভারতকে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবার জন্য কেন্দ্র যে তিনটি কৃষি আইন এনেছে তা প্রত্যাহার না করলে কৃষকদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যই শুধু নয়, গ্রামীণ ভারতে যদি কর্পোরেটদের ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কিছু মানুষের সুবিধা হলেও কৃষক ও সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। আর তা আটকাতেই কৃষকদের এই বৃহত্তর আন্দোলন।

বিক্ষুব্ধ কৃষকদের দাবি, সরকার তাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই এই আইন পাশ করিয়েছে। এর ফলে কর্পোরেটরা অনায়াসে মান্ডির বাইরে ব্যবসা করতে পারবে। এই তিন আইন কার্যকর হলেই গ্রামীণ ভারত একেবারে ধ্বংসের মুখে চলে যাবে। প্রথমে হোলসেল মার্কেট বা মান্ডিগুলোকে নিজেদের কবজায় নেওয়া হবে, এরপর এসেন্সসিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট, ১৯৫৫-এর অধীনে মজুতের পরিমাণ শেষ হয়ে যাবে, বেসরকারি মান্ডিগুলো তখন একে-একে প্রবেশ করতে শুরু করবে। এভাবেই ধীরে ধীরে দেশের কৃষকদের বিপদ এগিয়ে আসবে।

ক্লাইম্যাক্সের আগে

কৃষক আন্দোলনটা যখন বেশ দানা বেঁধেছে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতিদিন আরও মানুষ যোগ দিচ্ছেন, সংহতি জানাচ্ছেন তখনই জনৈক সাংবাদিক প্রথম এই আন্দোলনের পেছনে খালিস্তানি হাত খুঁজে পেলেন। বলা বাহুল্য এই সুধীর চৌধুরীই সেই সাড়াজাগানো সাংবাদিক, যিনি নোটবাতিল-পরবর্তী সময়ে দেশবাসীকে ২০০০ টাকার নোটে মাইক্রোচিপের গল্প শুনিয়েছিলেন। দেশের মানুষ বিশ্বাস করেছিল। এবার তাঁর পেশ করা খালিস্তানি গল্পও বাজারে বেশ চাউর হয়েছে। এই সাংবাদিকের পাশাপাশি অধুনা বিতর্কের শিরোনামে থাকা কঙ্গনা রানাওয়াত কৃষক আন্দোলন নিয়ে ভুয়ো দাবি করে এক আপত্তিকর ট্যুইটে জানান - “হা হা হা। ইনিই তো সেই দাদি যিনি টাইম ম্যাগাজিনে ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মহিলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন... এবং ১০০ টাকা দিলেই এনাকে পাওয়া যাবে।” যদিও পরে জানা গেছে যাকে কঙ্গনা ‘শাহিনবাগের দাদি’ বলে দাবি করেছিলেন তিনি ওই ভদ্রমহিলা নন। তুমুল সমালোচনার মুখে সেই ট্যুইট মুছতে বাধ্য হন কঙ্গনা। বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য, যিনি একাধিকবার ভুয়ো খবর ছড়িয়েছেন বলে জানিয়েছে অলট নিউজ, তিনিও কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে এডিটেড ভুয়ো ভিডিয়ো ট্যুইট করায় ট্যুইটার কর্তৃপক্ষ তাঁর ট্যুইটে ‘ম্যানিপুলেটেড ভিডিয়ো’ বলে লেবেল সেঁটে দিয়েছে। এছাড়াও আইটি সেল, ভক্তবৃন্দের করা কৃষকদের জীবনমরণ সমস্যা নিয়ে একাধিক অশালীন এবং অসংবেদনশীল মন্তব্য তো আছেই।

অতঃপর

দৈর্ঘ্য প্রস্থে লেখা শেষ হবার জায়গায় পৌঁছে গেলেও এখনও পর্যন্ত কৃষক আন্দোলন থামবার লক্ষণ নেই। যদিও ৩ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সকালে যখন এই লেখা লিখছি, তখনও জানিনা এদিন সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর কোনো মীমাংসা সূত্র বেরোবে কিনা। দেশের কৃষক, তথা অন্নদাতাকে সরকারের কীভাবে দেখা উচিত সে কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুদিন আগে লিখে গেছেন। ‘রাশিয়ার চিঠি’তে তিনি কমিউনিস্ট আদর্শে অনুপ্রাণিত সোভিয়েত রাশিয়া প্রসঙ্গে লিখেছেন “…চাষের উন্নতির জন্যে সমস্ত দেশ জুড়ে যে প্রভূত উদ্যম সেও অসাধারণ। ভারতবর্ষেরই মতো এ দেশ কৃষিপ্রধান দেশ, এইজন্যে কৃষিবিদ্যাকে যতদূর সম্ভব এগিয়ে দিতে না পারলে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায় না। এঁরা সে কথা ভোলেনি। এরা অতি দুঃসাধ্য সাধন করতে প্রবৃত্ত।” ফ্যাসিস্ত সরকারের বোধহয় সে দায় থাকে না। কৃষক আন্দোলন নিয়ে সরকারের গতিপ্রকৃতি সেকথাই প্রমাণ করছে।