৫৮ বর্ষ ১৬শ সংখ্যা / ৪ ডিসেম্বর ২০২০ / ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৭
বাবরি মসজিদ ধ্বংস দেশকে সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদের ভয়ঙ্কর যুগে প্রবেশ করিয়েছে
গৌতম রায়
আরএসএস তার হাজার রকমের সহযোগী সংগঠন এবং রাজনৈতিক অঙ্গ বিজেপি’কে নিয়ে ’৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপ ঘিরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শিবিরের যে কাঙ্ক্ষিত অভীপ্সা ছিল, সেটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে তারা পেয়ে গেছে। গোটা বিশ্বের মতোই, আমাদের দেশ, ভারত যখন কোভিড-১৯ জনিত অতিমারীতে জর্জরিত, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর তথাকথিত রামমন্দিরের ভিত স্থাপন করেছেন। আরএসএসে’র রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘সাম্প্রদায়িকতা’র পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগের পথে এইভাবে দেশের সরকার আত্মনিয়োগ করেছে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর এই তথাকথিত রামমন্দিরের ভিত পুজো আমাদের দেশকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের এক ভয়ঙ্কর যুগের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে।
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস বা সেই ধ্বংসস্তুপের উপরে মন্দির তৈরি এগুলির কোনোটার সঙ্গেই ধর্ম বা আধ্যাত্মিক চেতনার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক কোনোদিন ছিল না।নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন, হিন্দুত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, মুসলিম বিদ্বেষগুলির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাবরি মসজিদকে বোড়ের দান হিসেবে নিয়েছিল আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল সহ গোটা সঙ্ঘ পরিবার এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। মসজিদ ধ্বংসের ভিতরে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো ধর্মীয় দ্যোতনাই ছিল না। কারণ, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই অপর ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস করে, সেখানে নিজের ধর্মের স্থাপত্য নির্মাণকে সমর্থন করে না। হিন্দুত্ববাদীদের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে একমাত্র কাজ করেছিল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের তাগিদ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী ঘটনাক্রম হিসেবে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সাম্প্রদায়িকতাকে হিন্দুত্ববাদীরা এমন একটা স্তরে এনে ফেলতে পেরেছে, যার জেরে পর পর দুইবার, একক গরিষ্ঠতা নিয়ে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে।
হিন্দুত্ববাদীদের কাছে এখন লক্ষ্য নির্বাচনের ভিতর দিয়ে যে রাষ্ট্রক্ষমতা তারা লাভ করেছে, সেই ক্ষমতাকে এবার তারা চিরস্থায়ী করতে চায়। সেই লক্ষ্যে এখন তাদের একমাত্র টার্গেট হলো, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে অবলুপ্ত করে, তথাকথিত হিন্দুরাষ্ট্রের বিষভারে জর্জরিত একটি সংবিধান কায়েম করা। বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তৃক ওই ভিতপুজোর এটিই হলো সবথেকে প্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক বিন্যাস। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার হলো আরএসএস-বিজেপি’র সব থেকে বড়ো রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য। সেই পথেই স্বাধীনতার পর থেকে গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি নিজেদের পরিচালিত করেছে। সেই পথকে আটের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর শাসনকালের শেষদিক থেকে তারা তীব্রতর করে তোলার রাস্তায় নামে। ইন্দিরার জীবিতাবস্থায় যদি পরবর্তী লোকসভা ভোট হতো, তাহলে সেই ভোটেই আরএসএস, তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র সাফল্যের তাগিদে এই বাবরি মসজিদের ইস্যুটিকে তীব্র করে তুলত। কারণ, শ্রীমতী গান্ধীর জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে আরএসএসে’র শাখা সংগঠন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে যে ‘ধর্ম সংসদ’গুলি পরিচালিত হতে শুরু করেছিল, সেখান থেকেই পরবর্তী লোকসভার ভোটে হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িক কৌশল বুঝতে পারা যাচ্ছিল।
শ্রীমতী গান্ধীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ সাম্প্রদায়িকতার প্রচার, প্রসার এবং প্রয়োগের ভিতর দিয়ে, তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের পথকে পরিষ্কার করতেই ভিতপুজোর এই রাজনৈতিক সমারোহ। ভিতপুজোর ভিতর দিয়ে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যের লক্ষ্যে গোটা হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির নেমেছে। বস্তুত নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসবার পর থেকেই তার প্রেক্ষাপট হিন্দুত্ববাদী শিবির তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর যে পরিস্থিতির দিকে গোটা দেশকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির ধীর অথচ তীক্ষ্ণগতিতে নিয়ে এসে ফেলেছে, তারই ফলশ্রুতি হলো, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।
আরএসএসে’র আদর্শগত ভিত্তি তৈরির অন্যতম ব্যক্তিত্ব এম এস গোলওয়ালকর যেভাবে তার ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে’র তত্ত্বের ভিতর দিয়ে দেশকে কেবল মুসলমান শূন্যই নয়, বহুত্ববাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানুষশূন্য করবার ফরমুলা দিয়েছিলেন, এনআরপি-এনপিআর ইত্যাদির ভিতর দিয়ে সেই ফরমুলার বাস্তবায়নের পথে ইতিমধ্যেই হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল - ভারতকে আরএসএসী’য় হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা। কোনো ধর্মীয় আকুলতা কখনো অপর ধর্মের উপাসনালয়ের ধ্বংসস্তুপের উপর নিজের ধর্মের উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করার কথা বলে না। যারা ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার করে দেশকে, গোটা সমাজব্যবস্থাকে মধ্যযুগীয় ক্রুসেডের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, অপর ধর্মের উপাসনালয় ধ্বংস, তাদেরই অভিপ্রায়। আরএসএস-বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীসাথীরা, কেবল ভারতকেই নয়, গোটা উপমহাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা ‘ক্রুসেডে’র নতুন করে অবতারণা করতে চায়। তাই আরএসএস বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে, দেশের মানুষকে বিভাজিত করতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তৈরি করেই ক্ষান্ত হয় নি,ধর্মের নামে মানুষের মাথা নিয়ে গেণ্ডুয়া খেলার পৈশাচিক অভিপ্রায়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর একটি রাজনৈতিক অভিপ্রায় সিক্ত মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছে, তাদের এককালের হিন্দুত্বের পোস্টারবয়, তথা দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে।
এই গোটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যাকে হিন্দুত্ববাদী শিবির ধর্মীয় আবেগ ইত্যাদি শব্দের ভিতর দিয়ে প্রকাশ করতে চাইছে, এসবেরই তাদের সময়োপযোগী লক্ষ্য হলো, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পাওয়া ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। সেই লক্ষ্যের পদক্ষেপই ছিল দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই, লোকসভার প্রথম অধিবেশনে সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারার অবলুপ্তি। এসবেরই ধারাবাহিক প্রবণতা হলো কোভিড-১৯ জনিত অতিমারীর ভিতরেও শ্রমআইন শিথিল করা, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যআইন শিথিল করা, কৃষিআইনের সংশোধন। আর এইসব অর্থনৈতিক ব্যাভিচার সম্পর্কে যাতে মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হতে না পারে, প্রতিবাদী না হয়, প্রতিরোধী না হয় - সেই জন্যে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যকে ধর্মীয় বটিকা হিসেবে মানুষের গলাধকরণ করানো।
’৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কালে হিন্দুত্ববাদী শক্তি যে জায়গায় ছিল, আজ প্রায় সাত বছর রাষ্ট্রক্ষমতা এককভাবে দখল করে রাখার পর, তারা কিন্তু আর সেই জায়গাতে নেই। এমন কি অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে প্রায় সাড়ে ছয় বছর ধরে, এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোট সরকার চালানোর সময়েও আরএসএস-বিজেপি যে জায়গায় ছিল, এখন আর তারা সেই জায়গাতে নেই। রাষ্ট্রক্ষমতা এককভাবে করায়ত্ত করে বিচারব্যবস্থার উপরে তারা কতোখানি প্রভাব বিস্তার করেছে - এটাই এখন দেশবিদেশের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে আসছে। কারণ, মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার অল্প কিছুকাল পরে এনআরসি’র বিরুদ্ধে শাহিনবাগের ঐতিহাসিক আন্দোলন হয়েছে। সেই আন্দোলনকে কেবলমাত্র ‘মুসলমান পরিচালিত’ আন্দোলন বলে দেগে দিয়েও আন্দোলনের ঝাঁঝ দিল্লি গণহত্যা, অতিমারী, লকডাউনের পরেও নিভিয়ে দিতে পারেনি আরএসএস-বিজেপি। এই অবস্থাতেই বাবরি মসজিদের জমির মালিকানার রায় দিতে গিয়ে যুক্তি তথ্য-প্রমাণ ব্যাতিরেকে, কিছু লোকের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত হনুমানগড়ির আখড়ার অধীন ‘রামমন্দিরে’র ‘রামলালা’, যেটিকে ’৪৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বাবরি মসজিদের তালা ভেঙে, সঙ্ঘকর্মীরা ঢুকিয়ে দিয়েছিল, তার বলে সাব্যস্ত করেছে।
এই পর্যায়ক্রমটি ভারতের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করবার হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রের কোনো অঙ্গ কি না, তা নিয়ে কেবল ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিকস্তরে যাঁরা মানবাধিকার নিয়ে সরব, সংখ্যালঘুর অধিকার ঘিরে লড়াই করেন, তাঁদের ভিতরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এধরনের একটা সংশয়ের ভিতরেই দেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর আরএসএস নিয়ন্ত্রিত হনুমানগড়ি আখড়ার পরিচালনাধীন মন্দিরের ভিত পুজো করেন। তার অল্প কিছুদিনের ভিতরেই বাবরি মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত যে ফৌজদারি মামলাটি চলছিল, সেটির রায় ঘোষিত হয়। বলা বাহুল্য, এই রায়ে লালকৃষ্ণ আডবানি, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতী সহ যেসব বিজেপি নেতা এবং আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা মসজিদ ধ্বংসে অভিযুক্ত ছিলেন, প্রত্যেকেই বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। লিবেরহান কমিশন থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ধরনের মসজিদ ধ্বংস সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণকে বিশেষ আদালত ন্যূনতম স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয় নি। দেশে এবং বিশ্বে এই প্রশ্নই জোরদার হয়ে ওঠে যে, মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর মন্দির তৈরির ভিত্তিস্থাপন করে যে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদের যুগ হিন্দুত্ববাদীরা তৈরি করেছে, তার প্রভাব কী বিচারব্যবস্থার উপরেও ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করে দিল?
অতিমারীজনিত সঙ্কটে গোটা দেশে অর্থনীতির অবস্থা বেহাল। অর্থনীতিবিদেরা ইতিমধ্যেই বলছেন, ভারতে মন্দা শুরু হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকস্তরে অতিমারীর সঙ্কটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষুধার সঙ্কট ঘিরে সতর্ক করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, অতিমারীর পর ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা, অতিমারীর মৃতের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সেই সঙ্কটের ভয়াবহ আভাস আমাদের দেশের সর্বক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বিজেপি’র শ্রেণিসখ্যতা প্রথম থেকেই যাদের সঙ্গে, সেই মধ্যস্বত্বভোগী ফড়ে, মুনাফাখোর, মজুতদার, খাদ্যের চোরাকারবারিরা এই অতিমারীরকালে প্রশাসনে নিজেদের লোক থাকার সুবাদে ফুলেফেঁপে উঠেছে। তাই বাজারে আলু, পেঁয়াজ থেকে ভোজ্যতেল, জীবনদায়ী ওষুধ - সবকিছুর দামই প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বহুক্ষেত্রেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খোলাবাজারে অমিল। দুই গুণ, তিনগুণ দাম দিয়ে সেইসব জোগাড় করতে হচ্ছে চোরাবাজার থেকে। তেতাল্লিশের মন্বন্তরকালে যে ভয়াবহ চিত্রের ইতিহাস আমরা পড়েছি, জয়নুল আবেদিন-চিত্তপ্রসাদের চিত্রমালায় দেখেছি - তার যেন ধীরে ধীরে আবার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলছে। কর্মহীনতা, বেকারি, ব্যাপক ছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের প্রকোপ এতোকাল পড়ত কেবলমাত্র নিচুতলার কর্মীদের উপর। এখন বেসরকারি, বহুজাতিক সংস্থায় উঁচুদরের কর্মী - যারা লক্ষাধিক টাকার উপর বেতন পান, তারাও শিকার হচ্ছেন ছাঁটাইয়ের।
কেন্দ্রের বিজেপি বা রাজ্যের তৃণমূল, কোনো সরকারই এসব নিয়ে একটা কথাও বলছে না। আরএসএস-বিজেপি বাবরি মসজিদ ভেঙে যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করেছিল, সেই বিভাজনকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভিতরে গেঁথে দিয়ে ভোট রাজনীতিতে বিজেপি’র সুবিধা করতে সবরকমের চেষ্টা করে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের নরম সাম্প্রদায়িক মানসিকতা ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতাকে শক্তি জোগাচ্ছে ভাষা-জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার ভিতর দিয়ে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২০১৯-র লোকসভা ভোটের পর বাঙালি-অবাঙালি বিষয়ের অবতারণা করেছিলেন। এখন বিজেপি’র সাংগঠনিক দিক সামলাতে এই রাজ্যে আরএসএস নিজেদের যেসব প্রচারকদের পাঠাচ্ছে, সেই বিজেপি নেতাদের, রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস একটিবারের জন্যেও রাজনৈতিক আক্রমণ করছে না। করছে জাতিগত আক্রমণ। ভাষাগত আক্রমণ। ফলে একদিকে বাঙালি-অবাঙালি বিষয়ের ভিতর দিয়ে বাবরি ধ্বংসের মূল যে রাজনীতি - সাম্প্রদায়িকতার প্রসার, সেই কাজটি আরএসএস-বিজেপি খুব ভালোভাবেই সফল করতে সচেষ্ট। অপরপক্ষে বিজেপি’র বিরুদ্ধে একটিও রাজনৈতিক আক্রমণ করছে না তৃণমূল। আরএসএস’কে তো তারা ফুলের ঘাও কখনো দেয় নি। বিজেপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণের বদলে, তাদের বিরুদ্ধে জাতি, ভাষাগত বৈষম্যের কথা বলে যে বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী শক্তি, সেই নষ্ট চেতনাকেই মদত দিচ্ছে তৃণমূল বাঙালি শ্যভিনিজিমের নাম করে আঞ্চলিকতাবাদের প্রসারের ভিতর দিয়ে। নরেন্দ্র মোদী ‘এক দেশ, এক ভোটে’র ডাক দিয়ে দেশের সাংবিধানিক পরিকাঠামো বদলে দিয়ে, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙার রাজনৈতিক অভিলাষ হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আর বাংলায় বাঙালি ছাড়া কেউ রাজনীতি করতে পারবে না, এই ঘোরতর আঞ্চলিকতাবাদী মানসিকতার প্রসার কৌশলে ছড়িয়ে দিতে চাইছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য, আরএসএস-বিজেপি’র ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং সেই ধ্বংসস্তুপের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন তথাকথিত মন্দির তৈরির আসল রাজনীতিকে সফল করা।