৫৯ বর্ষ ২৫ সংখ্যা / ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ২১ মাঘ, ১৪২৮
প্রক্সি দিয়ে গার্ড অব অনার এবং আরও কথা...
পল্লব সেনগুপ্ত
শোনা যায়, মহা-ধার্মিক গুরু গোলওয়ালকর এবং তস্য শিষ্য মুচলেকা-বিপ্লবী সাভারকর (আমাদের ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের শ্রদ্ধেয় মাস্টারমশাই নারায়ণ মুখার্জি মশায়ের মুখে যাঁদের নামকরণ হয়েছিল ‘গোলমাল কর’ আর ‘সাবাড় কর’ বলে!) প্রাচীন হিন্দু ঋষিদের পরেই যাঁকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে মনে করতেন - সেই অ্যাডলফ হিটলারের নাকি ৪-৫ জন ‘ডামি’ ছিল! চেহারায়, চুল আঁচড়ানোর কেতায়, গোঁফের স্টাইলে, পোশাকে-আশাকে তারা ছিল হুবহু আসল হিটলারের জেরক্স-কপির তুল্য! এতগুলো নকল কিংবা ‘ডামি’ হিটলার সাজানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এটাই, যাতে আততায়ীর হামলা হলে ‘আসল’ হিটলারের গায়ে আঁচ না লাগে, বিপত্তি যদি কিছু ঘটে - তা যাবে ওই দু’নম্বরি, তিন-নম্বরি, চার-পাঁচ নম্বরি সাজা - হিটলারদের কারুর ওপর দিয়েই! এই ব্যাপারটাকেই বিদ্রূপসিক্ত ভঙ্গিতে চার্লি চ্যাপলিন দেখিয়েছেন তাঁর ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’ চলচ্চিত্রে জনৈক চুল কাটিয়ে (ওরফে, ক্ষৌরকার) যাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল সেখানে হিংকেল - তাঁকে হুবহু হিটলারের মতো করে সাজিয়ে (চ্যাপলিন নিজেই অভিনয় করেন সেই ভূমিকায়) বিশ্বশান্তি এবং মানুষে-মানুষে সাম্য-মৈত্রীর অনবদ্য একটি বক্তৃতা তাঁর মুখে শুনিয়ে চ্যাপলিন সিনেমাটি শেষ করেছিলেন। চ্যাপলিনের সেই ‘ডামি’ হিটলারের ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক স্যাটায়ারগুলির মধ্যে অন্যতম বলেই মনে করা হয়। তো সাভারকর তাঁর চূড়ান্ত ইংরেজভক্তি-কেন্দ্রিক-‘বিপ্লব’ করার কারণে সরাসরি ইংরেজদের পরম শত্রু হিটলার বন্দনা করতে না পারলেও, তস্য (এবং সমস্ত আর-এস-এসীয়দের) গুরুজি গোলওয়ালকর মহামতির সেই রকম কোনও ঠ্যাকা না থাকায় তিনি খোলাখুলিই হিটলার-ভজনা করেছেন। মুখে এবং লিখে। সেই ঐতিহ্য মেনেই অধুনা বিজেপি-আরএসএস যারা, তারাও ডামি-তথা-বিকল্প দিয়ে কাজ চালাতে চাইছে যে, সেটাও দেখা যাচ্ছে।
ঘটনাটা খুলেই বলিঃ ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী শ্রীমদ্ মনোজকান্তি দেব করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে গৃহবন্দি হতে বাধ্য হয়েছেন। (তাঁর আরোগ্য আন্তরিকভাবেই কামনা করছি অন্যদের মতো আমিও, আমরাও)... এই পরিস্থিতিতেই এসে পড়েছিল ২৬ জানুয়ারি, আমাদের ভারত রাষ্ট্রের প্রজাতন্ত্র দিবস। মন্ত্রীমশাই তাঁর কমলপুরের বাড়ি থেকেই ধলাই জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন যাতে ২৬ জানুয়ারি উপলক্ষ্যে পুলিশ বাহিনী এসে তাঁকে (মানে, মন্ত্রীপ্রবরকে) 'গার্ড অব অনার' দেয়! ‘জো-হুকুম উজিরসাহাব-টাহাব’ বলে-টলে এসপি সাহেবও তদ্দন্ডে সেই ব্যবস্থা করেন। অতঃপর যথাকালে ব্যান্ডবাহিনীসহ পুলিশবাবুরা এলেন। কিন্তু কই মন্ত্রীমশাই?... বাড়ি থেকে গট্গটিয়ে বেরিয়ে এলেন তাঁর ছোটো ভাই! তিনি এলেন, পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কথাবার্তা সেরে এগিয়ে গেলেন পতাকাদণ্ডের কাছে গম্ভীর ভঙ্গিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন ভাইবাবু, চারিদিক মুখরিত হলো ‘‘জয়হিন্দ’’, ‘‘বন্দেমাতরম’’ ধ্বনিতে - যেটা স্বাভাবিক। তারপর ভ্রাতাপ্রবর সটান দাঁড়ালেন পতাকার নিচে, যথাযথভাবে স্যালুট করে ‘স্ট্যাচু’ হয়ে রইলেন... এবং, এবং, এবং... পুলিশ ব্যান্ডে ‘‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা’’ বাজনার মধ্যে উপস্থিত পুলিশের দল তাঁকে 'গার্ড অব অনার' দিয়ে মার্চ করে গেলেন!
শুধু এইটুকুই নয়। সমস্ত ঘটনাটা ভাইবাবুর নির্দেশে ভিডিও করানো হয়, এবং সেই চলচ্ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে তার নিচে সগর্বে লিখেছেনঃ ‘‘২৬শে জানুয়ারি কমলপুর থানার পুলিশরা ‘আমাকে’ গার্ড অব অনার দিলেন!’’
।। দুই ।।
‘গার্ড অব অনার’ কাকে, কারা, কখন দেয়?... প্রথমত, কোনও উচ্চপর্যায়ের বিদেশি রাজপুরুষ - রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি পর্যায়ের কেউ যদি ভিন দেশে সরকারি সফরে যান, তাহলে আসা এবং যাওয়ার সময়ে তাঁকে উপলক্ষ্য করে তাঁর রাষ্ট্রকে সম্মানের স্বীকৃতি দেওয়া হয় ওই 'গার্ড অব অনার' -এর মাধ্যমে। তারপর, 'গার্ড অব অনার'-এর আয়োজন করা হয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কোনও দিনে (যেমন, ১৫ আগস্ট বা ২৬ জানুয়ারি) পুলিশ কিংবা সৈন্যবাহিনীর পক্ষ থেকে অতি উচ্চপদস্থ কোনও রাজপুরুষকে 'গার্ড অব অনার' দেওয়া হয় - রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান প্রমুখ। অর্থাৎ, তাঁদেরকে উপলক্ষ্য করে রাষ্ট্রকেই সম্মান জানানো হয় ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে, আইনত নিষিদ্ধ হলেও, লালবাতি-নীলবাতিওয়ালা গাড়ি যেমন সরকারি বেলে-ট্যাংরা-চারাপোনা-তুল্য কর্তাব্যক্তিরাও ব্যবহার করেন তেমনইভাবে অধিকার না থাকলেও, একটু একটেরে অঞ্চল হলে আধুলি মন্ত্রী, সিকি মন্ত্রীরাও স্থানীয় পুলিশকে ধমকে-ধামকে বিশেষ বিশেষ দিনে 'গার্ড অব অনার' নিয়ে আত্মশ্লাঘা অনুভব করেন!
এটা খুব অপরিচিত বা অভাবিত কিছু নয়। যে দেশে বহু মানুষের কাছেই গণতন্ত্রের ধারণাটা আমার বন্ধু, সদ্যোপ্রয়াত কথাসাহিত্যিক মণি মুখোপাধ্যায়ের ‘গণতন্ত্র ও গোপাল কাহার’ গল্পের নায়ক হাবাগোবা চাষি গোপালের মতোই ১৫ আগস্টে পতাকা তোলা দেখে যে ভেবেছিল’ ‘‘ওই পতাকাটাই তাইলে গনোতন্তর’ - সেই পর্যায়ের! সেদেশে এমন সব গণতান্ত্রিক প্রথার অপহ্নবে কেউ মনে করে না বিশেষ কিছু বলে। কিন্তু কমলপুরের এই কেলেঙ্কারি তো সব মাত্রাকেই ছাড়িয়ে গেছে। মন্ত্রীর 'গার্ড অব অনার' নেওয়াটাও না হয় ক্ষ্যামাঘেন্না করে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তেনার ‘প্রক্সি’ দিতে ভাইকে পাঠানোর ব্যাপারটা তো (বিজ্ঞাপনের ভাষায়) ‘‘কুছ হজম্ নেহি হোতা ভাই!’’ আজ যদি মন্ত্রীর হয়ে তাঁর ভাই জাতীয় পতাকা তোলে, 'গার্ড অব অনার' নেয় - তাহলে তো পরশু-তরশু তাঁর শালা-ভগ্নীপতি-ভায়রাভাইরাও বাদ থাকবে না! এই শালা-ভগ্নীপতি প্রমুখের ‘প্রক্সি’ দেওয়ার কথায় একটা তীব্র স্যাটায়ারমূলক লোককাহিনির প্রসঙ্গ মনে পড়ে গেলঃ একজনকে দায়রায় সোপর্দ করা হয়েছে গোরু চুরির মামলায়। আদালতের নিয়মমাফিক এজলাসে বিপক্ষের উকিল তাকে নাম জিজ্ঞাসা করেছেন। সেই আসামী তখন নির্দ্বিধায় নিজের বদলে তার শ্যালকের নামটা বলে দিয়েছে। ফলে, নামের এমন ঘচোপচো হওয়ায় শালাবাবুকেও কাঠগড়ায় তোলা হলে, সে ভগ্নীপতির ওপর চোটপাট করতে থাকে এভাবে মিথ্যে কথা বলে ফাঁসানোর জন্যে। ভগ্নীপতি নিশ্চিন্ত মুখে হেসে শালাবাবুকে বলে, ‘‘আরে বাপা রে বাপা! ঠ্যাকাঠুকা এড্ডু সালাইবার জো্দি না পারবা, তয় তুমার বুইনরে বিয়া করসি ক্যান্?’ এখানে অবশ্য আমাদের এই কমলপুরিয়া মন্ত্রীমশাই ‘ঠ্যাকাঠুকা সামলাইবার লেইগ্যা’' গৃহিনীর নয়, নিজের ভাইয়েরই শরণ নিয়েছেন!
অবশ্য, এদেশে গণতন্ত্রকে এখন যে-স্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে তো বিশেষ-বিশেষ পার্টির দাদা কিংবা দিদিদের নাম করে, তাঁদের আসল-নকল ভাই-ভাইপো-ভাগনের দল যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হুজ্জোতি করে চলেছে - তাতে অমন ঘটনা অভাবিতপূর্ব হলেও, ভবিষ্যতে যে আরও ঘটবে না, তার কী গ্যারান্টি আছে ভাই! অমুক-তমুক দাদা-দিদিদের পক্ষ থেকে যে - তোলাবাজির হুলিয়া চলে গরিব বড়োলোক নির্বিশেষে - সেটার তুলনায় তো ধলাই জেলার কেসটা নেহাৎই আলুভাতে মার্কা ব্যাপার! প্রবাদে সেই আছে না - ‘‘হাকিমের চেয়ে পেয়াদার ঝাঁজ বেশি!’’ - সেও তো এইরকম ডামি-প্রক্সির ঘটনার সূত্রেই তৈরি হয়েছিল কোনও কালে!
।। তিন ।।
অবশ্য আমাদের ‘সুপবিত্র’ সনাতন-ধর্মীয় ঐতিহ্যে এই ‘ডামি’ বা ‘প্রক্সি’ ব্যাপারটা খুবইু জল্চল্! পুরুষত্বহীন স্বামীর বিবাহিতা স্ত্রীকে সন্তানবতী করে বংশধারা ওরফে সম্পত্তি এবং/অথবা সিংহাসনের অধিকার বজায় রাখার জন্য ‘সদ্ব্রাহ্মণ’কে ‘নিয়োগ’ করা হতো শাস্ত্রের দোহাই-দেওয়া সামাজিক বিধির অনুসারে। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু এবং বিদুরের জন্মবৃত্তান্ত স্মরণ করতে পারেন অবশ্যই এই সূত্রে। বহু বনেদি বংশেও ‘গুরুপ্রসাদী’ বলে একটা কুৎসিত প্রথা ছিল - যা ধর্মীয় অনুশাসনের নামে চলত। সদ্যবিবাহিতা বধূ তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রথম নিশি উদ্যাপন করার আগে, বংশের কুলগুরু (অথবা, তাঁর কোনও প্রতিনিধি ওরফে ‘ডামি’) এসে অসহায় মেয়েটির কৌমার্য হরণ করতেন এবং সেটা প্রায় একটা পারিবারিক উৎসব রূপেই ধার্য হতো। কোনও কোনও সমাজবিজ্ঞানী এমনও মনে করেন যে, গঙ্গাসাগরে গিয়ে প্রথম সন্তানটিকে ভাসিয়ে দেবার প্রথাটির (রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতা মনে পড়ছে?) উদ্ভব হয় ওই গুরুপ্রসাদী নামক ঘৃণ্য ব্যাপারটিরই অনুসূত্রে। গুরু হলেও পরপুরুষ তো। তাই তাঁর ঔরসজ সন্তানকে বংশের বিত্তসম্পদের অধিকার দেওয়া যাবে না! অতএব নিরপরাধ শিশুটিকে মেরে ফেললে, ধর্ম এবং সম্পত্তি দুয়েরই হিল্লে হতে পারে - ভাবনাটা ছিল এই রকমের।
নল-দময়ন্তীর পৌরাণিক কাহিনিতে আবার ‘ডামি’ নিয়ে আরেক ঘোটালা করার বিবরণ আছে। স্বয়ম্বর সভায় যাতে দময়ন্তী তাঁর বাঞ্ছিত পুরুষ নলকে ঠিক মতো খুঁজে না পান, সেইজন্য দেবতারা প্রত্যেকে নলের রূপ ধরে সেখানে হাজির হন। অবশ্য গল্পটা যাঁদের পরিচিত, তাঁরা জানেন যে অতশত প্যাঁচ কষেও দময়ন্তীকে বিভ্রান্ত করা যায়নি!
ঋষি গৌতমের ‘ডামি’ সেজে দেবরাজ ইন্দ্রের গৌতমপত্নী অহল্যাকে ভোগ করার পৌরাণিক গল্পও হয়ত এই সূত্রে মনে পড়বে অনেকের। তবে এতসব ধর্মকথা, পুরাণকথা ইত্যাদির অনাচার, কদাচার এবং ‘প্রক্সি’ বা ‘ডামি’র সম্পর্ক নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক বিচার বিশ্লেষণ করার মতো সিরিয়াস নিদর্শনের পাশাপাশি, ‘ডামি’ নিয়ে হাসি ঠাট্টা করার বর্ণনাও ক্লাসিক্যাল সাহিত্যে মেলে। যেমন, কৃত্তিবাসী রামায়ণে আছে যে, হনুমান লঙ্কা রাজ্যে গিয়ে রাবণের খোঁজ করলে, রাজসভার সবাইয়েরই - একমাত্র ইন্দ্রজিৎ ছাড়া - রাক্ষসরাজ মায়াবলে নিজের মতো চেহারা বানিয়ে দিলে হনু তখন ছড়া কেটে বললেনঃ
‘‘একটি কথা সত্য করি কও রে ইন্দ্রজিতা,
এই যে এত রাবণ দেখি, সবাই কি তোর পিতা?
ধন্য রাণী মন্দোদরী, ধন্য রে তোর মাকে,
এক যুবতী শতেক পতি কেমন করে রাখে!’’
।। চার ।।
পুরাণ, শাস্ত্র, ধর্মবিধান এবং সাহিত্য নিয়ে লঘুগুরু অনেক কথার পরে, ‘ডামি’ বা ‘প্রক্সি’ আধুনিক জীবনেও যেভাবে ব্যবহৃত হয় তার একটা আধা কৌতুকী স্মৃতিচারণ করে লেখাটা শেষ করব। আমাদের পোস্ট-গ্রাজুয়েট ক্লাসে বিখ্যাত এবং মহাসম্মানিত এক অধ্যাপক (নামটা আর লিখলাম না!) ক্লাস নিচ্ছেন। সবার ক্লাসের মতো ওঁর ক্লাসেও টুকটাক ‘প্রক্সি’ দেওয়া চলত। ক্লাসের ছেলেরাই ছিল এব্যাপারে পান্ডা। তো, কিছুদিন যাবার পর, ক্লাসের কোনও কোনও সাহসিকা ছাত্রীও ভাবল, ‘‘হম কিসিসে কম নেহি!’’ অতএব, এক অতি শুভদিনে তাদেরই জনৈকা নিজের প্রিয় বান্ধবীর (সেদিন ছিল সে অনুপস্থিত) রোল নম্বর যেই ডাকলেন স্যার, স্বচ্ছন্দেই মুক্ত কণ্ঠে ‘‘ইয়েস স্যার’’ বলল। স্যার অন্যদিন বুঝতেন কি না জানি নে, ওই দিন হঠাৎ সেই বীরাঙ্গনাকে চিনে নিয়ে উঠতে বললেন। সে যে ধরা পড়ে গেছে এটা বুঝে বেচারি নার্ভাস হয়ে দাঁড়িয়েই রইল। তারপর স্যার যা বলেছিলেন সেটা খুবই অনুধাবনযোগ্য। উনি ওকে নাম ধরে ডেকে, ওরে আসল রোল নম্বরটা বলে (কী করে যে উনি সবার নাম এবং রোল নম্বর জেনে রেখেছিলেন - আজও তা রহস্যময় আমাদের কাছে!) একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, ‘‘ছলনা করবেন না, আপনারা মায়ের জাত - মাকে ছলনাময়ী দেখলে বুকে বড়ো বাজে। এই বৃদ্ধের কথাটা সবাই মনে রাখবেন ভবিষ্যৎ জীবনে।’’ ...বেচারী এক হপ্তা তারপর আর ক্লাসে আসেনি!
এই গল্পটা বললাম ওই 'ছলনা' কথাটার প্রসঙ্গেই। যা দিনকাল পড়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনা যাঁরা করেন - তাঁদেরকে তো হরহামেশাই ছলনা করতে দেখি - তবে প্রায়শই সেটা একটু ঢেকে চেপে হয়। কিন্তু এই কমলপুরিয়া ছলনা তো একেবারে নিলাজ, নির্ভয়। মন্ত্রীদাদার প্রক্সি দেওয়াই শুধু নয়, সেই 'গার্ড অব অনার'-এর ভিডিও যে সগর্বে প্রস্ফুটিত ফেসবুকে! এই ‘প্রক্সি’ তো ছলনার স্তর পেরিয়ে অহঙ্কারে পরিণত হয়েছে ভাই! বিজেপি-র তো সব কিছুই ছলনা তাহলে?