৫৮ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৪ জুন, ২০২১ / ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮
রাজ্য নমুনা পরীক্ষা কমানোয় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল
সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ চুরির ঘটনায় অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যজুড়ে প্রতিদিনই তীব্রতর হচ্ছে কোভিড পরিস্থিতি। অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালে বেড, অ্যাম্বুলেন্স অমিলের ঘটনা ঘটেই চলেছে। চলছে ওষুধ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কালোবাজারি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি হাসপাতাল থেকে করোনার জীবনদায়ী ওষুধ চুরির মতো ঘটনা। তবে স্বাস্থ্য দপ্তর চুরি না ঠেকাতে পারলেও সরকারি স্তরে দলীয় সংকীর্ণতার অভিযোগ এড়াতে পারছে না রেড ভলান্টিয়ারদের টিকাকরণ রদ করার বিষয়টি সামনে আসায়। করোনা আক্রান্তের রাজ্যওয়াড়ি তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও অবস্থান বদল ঘটেনি। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও রয়েছে অষ্টম স্থানে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭২৪। এ'পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮১৩।
সম্প্রতি সারা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও লকডাউনের বিধি নিষেধের জেরে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা কমলেও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন সতর্কতা এবং সরকারি নজরদারিতে শিথিলতা চলবে না। ৩০ মে রাজ্যে ৭০ হাজার ৩১৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়। তার ভিত্তিতে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৮৪। যা (নমুনা পরীক্ষা) গত ৩১ মে নেমে আসে ৫৮ হাজার ১৪৩-এ। স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী অবশ্য বিগত দিন দশেক ধরেই একটু করে কমছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে করোনা সংক্রমণে চেহারা কলকাতায় কিছুটা কমলেও লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় তা এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়েই আছে। কিন্তু রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার কমানোয় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহল।
এদিকে টিকা নিয়ে মানুষের হয়রানি ক্রমশ বাড়ছে এরাজ্যে। দীর্ঘক্ষন ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নিতে না পারায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন মানুষ। এগরা ১ নম্বর ব্লকের রামচন্দ্রপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হয়রানির জেরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মানুষ। এ ঘটনা ঘটছে অন্যত্রও। আবার লকডাউনের জেরে দূরবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নিতে যেতে যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গ্রামীণ টিকাকরণ শিবির বসানোর জন্য দাবি করেছেন মাল মালবাজারের প্রোটো গাও বস্তির মানুষ।
রাজ্য সরকার যেখানে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে ব্যর্থ, সেখানে ঝান্ডার রং না দেখে কোভিড আক্রান্তকে পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব অক্লান্তভাবে পালন করে চলেছেন রেড ভলান্টিয়াররা। রেড ভলান্টিয়ারদের টিকাকরণ বন্ধ করার ঘটনায়এই সঙ্কট কালেও তৃণমূলের দলীয় সঙ্কীর্ণতার কুশ্রী ছবিটা আবারও মানুষের সামনে এলো।
বামপন্থী ছাত্র-যুবদের এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী যেহেতু কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন প্রতিনিয়ত, তাই রেড ভলান্টিয়ারদেরও কোভিড যোদ্ধার স্বীকৃতি দেবার এবং অবিলম্বে টিকাকরণের আওতায় আনতে হবে রাজ্য সরকারকে-দাবি ওঠে। দাবি জানিয়ে গত ২৩ মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেয় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। এরপর দাবি মতো ৩১ মে থেকে রেড ভলান্টিয়ারদের টিকাকরণ শুরু করে সরকার। প্রথম দুই দিন টিকাকরণ হলেও ২ জুন রেড ভলান্টিয়াররা এসএসকেএম হাসপাতালে উপস্থিত হলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় স্বাস্থ্য দপ্তর তাঁদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভবনের অঙ্গুলিহেলনে গোটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারি হাসপাতাল কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এবার বেমালুম গায়েব বা চুরি হয়ে গেল করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত অত্যন্ত দামি, জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন টসিলিজুমাব! হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের স্পেসিমেন এক্সামিনেশন ফরমের মাধ্যমে গত ২৪ এপ্রিল গায়েব হওয়া ২৬টি অত্যন্ত দামি টসিলিজুমাব ইঞ্জেকশনের এখনও কোনও হদিশ নেই। একেকটি ইঞ্জেকশনের সরকারি দাম ৪০ হাজার টাকার মতো। কালোবাজারে এর দাম প্রায় ২ লক্ষ টাকার আশেপাশে।
ওই চুরির ক্ষেত্রে তৃণমূলের দাপুটে নেতার কন্যা ডাঃ দেবাংশী সাহা নামে এই হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
যদিও এই চুরির ঘটনাতেও কার্যত ‘পক্ষ’ নিয়ে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নবান্নে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘কে একটা অভিযোগ করলেন, উনি নিজে ঠিক আছেন তো? সব ব্যাপার তদন্ত ছাড়া হয় না।...’।
এ প্রসঙ্গে ফার্মাসিউটিক্যাল ও ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থাগুলির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওষুধের ব্যবহার সংক্রান্ত নজরদারি চিকিৎসার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের রাখার কথা। কিন্তু সেসব কিছুই হচ্ছে না। ফলে ওষুধের কালোবাজারিও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।