E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৪ জুন, ২০২১ / ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে দেশে কাজ হারিয়েছেন দু’কোটি মানুষ

কেন্দ্রের টিকাকরণের নীতি নিয়ে হলফনামা জমা দিতে বলল সুপ্রিম কোর্ট


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে জীবন জীবিকা থেকে বাঁচা মরার প্রশ্নে দেশের মানুষ যখন নাজেহাল, তখন টিকাকরণ থেকে কোভিড টেস্ট-কোন বিষয়েই স্বছতার লেশমাত্র নেই বিজেপি-আরএসএস পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের ভুমিকায়। প্রধানমন্ত্রী সহ দেশের শাসক জোট তাঁদের ক্ষমতায় আসার সপ্তম বর্ষপূর্তি নিয়ে এই মুহূর্তে মশগুল। এই আবহে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার অভাব ও নিষ্ক্রিয়তায় গ্রাম ভারতে হুহু করে বেড়েছে সংক্রমণ। শহর এবং শহরতলির থেকে মহামারী আরও ভয়ঙ্কর থাবা বসিয়েছে সেখানে। সরকারি হিসাবে মে মাসে ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজারের। যা এপ্রিলে ছিল ৪৮,৭৬৮। এই ভয়াবহ অবস্থা আড়াল করতে কেন্দ্রের দাবি, দেশে ‘অ্যাক্টিভ’ রোগীর সংখ্যা ২০ লক্ষের নিচে নেমেছে ৪৩ দিন পর। যদিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের টিকা নীতি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে। গ্রামের পরিস্থিতি এবং শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির রিপোর্ট নিয়েও উদ্বেগ জানিয়ে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলেছে।

৩১ মে সুপ্রিম কোর্টে তীব্রভাবে সমালোচিত হলো টিকাকরণ নিয়ে কেন্দ্রের অস্পষ্ট অবস্থান। টিকার জন্য নাম নথিভুক্তকরণ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের নীতি, তার একেক রকম দাম নিয়ে কেন্দ্রের নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি বিচারপতিরা। শীর্ষ আদালত এদিন বলেছে, এইরকম নজিরবিহীন সংকটের সময় নীতিনির্ধারকদের কান পেতে শোনা উচি্ত, বাস্তবে কি ঘটছে তা জানা উচিত।

বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছে কোউইনে নাম নথিভুক্তি বাধ্যতামূলক করা নিয়ে। তাঁরা নিরক্ষর শ্রমিকের পক্ষে পরিযায়ী হিসেবে অন্যত্র থাকার সময় কিভাবে নিজ রাজ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব তার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রশ্নে বিচারপতিরা বলেন কেন্দ্র নিজে সংগ্রহ করছে রাজ্যগুলোকেও সংগ্রহ করতে বলছে এমনকি কর্পোরেশন পর্যন্ত বরাত দিয়ে বসে আছে। পাঞ্জাব দিল্লির মত রাজ্য বিশ্ব টেন্ডার ডাকছে। এই পরিস্থিতির পেছনে যুক্তি কি, কেন্দ্র কি নোডাল সংস্থা হিসেবে কাজ করবে নাকি যে যা খুশি করবে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা ভ্যাকসিনের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন উৎপাদক দাম নির্ধারণ করছেন কিভাবে? কেন কেন্দ্র সেটা করছে না? কেন্দ্র রাজ্যের জন্য পৃথক দাম কেন? সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে জন্য পৃথক দাম কেন? এর পাশাপাশি ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীরা যখন করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে তীব্রভাবে আক্রান্ত সে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের বয়সসীমা ঠিক করার ক্ষেত্রে যুক্তি কি তাও জানতে চেয়েছেন বিচারপতিরা।

তাঁরা বলেছেন দেশজুড়ে ভ্যাকসিনের একই দাম হওয়া উচিত। ভ্যাকসিন নিয়ে কেন্দ্রের নীতি সংক্রান্ত ফাইল দেখতে চেয়েছেন তারা। শীর্ষ আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রকে হলফনামা দিতে বলেছে।

এদিকে দেশজুড়ে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবির স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেই লক্ষ্যে তিনি দেশের ১১ জন অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তাঁদেরকেও এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সরব হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে স্পষ্টই বলেছেন কেন্দ্রকে নিজের খরচে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে রাজ্যগুলিকে। এর আগে তিনি কেন্দ্রকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।

অন্যদিকে দেশে যখন অক্সিজেন সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে তখন কেউ ব্যক্তিগতভাবে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আমদানি করে সেক্ষেত্রে ‘ইন্টিগ্রেটেড গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (আইজিএসটি) বসিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লি হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলেছে। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য দিল্লি হাইকোর্টের সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

আবার উত্তরাখণ্ডের উত্তর কাশীর মানুষ দিন কয়েক ধরেই বীভৎস এক দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছেন। সেখানে ভাগীরথীর তীরে কেদার ঘাটে দেখা গেছে অর্ধদগ্ধ শব ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর। কোথায় এই শবদেহ পোড়ানো হয়েছিল তা স্পষ্ট না হলেও কেদার ঘাট একটি পরিচিত শ্মশান যা স্থানীয়রা অনেকে ‘মোক্ষ ঘাট’ বলেই চেনেন। তবে এই নিদারুণ দৃশ্যের ভিডিও দেশ জুড়ে ভাইরাল হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই উত্তরাখণ্ডেই কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্য সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে সেই মেলা করায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ।

একই সঙ্গে উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ের বক্সার ঘাট এলাকায় গঙ্গায় দেহ ভেসে যাবার দৃশ্য আবার চোখে পড়ছে। বলা হচ্ছে, উত্তর প্রদেশের মৃত্যুর সংখ্যা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে অনেক দেহ দাহই করা হয়নি। সংবাদপত্রে ছবি প্রকাশিত হলেও প্রশাসন অবশ্য গঙ্গায় দেহ ভেসে যাবার খবর অস্বীকার করছে। অভিযোগ, যোগী সরকার মৃতের যে সংখ্যা দাবি করছে, বাস্তবে মৃত্যুর ঘটনা তার থেকে বহুগুণ বেশি।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছে বহু চিকিৎসকের প্রাণ। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউতে এখনও পর্যন্ত ৫৯৪ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউতে গোটা দেশে যত জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির চিকিৎসক।

সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) বেকারত্ব নিয়ে সাপ্তাহিক সমীক্ষা রিপোর্টে জানিয়েছে, দেশে মে মাস পর্যন্ত প্রায় দু’কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এই বছর জানুয়ারিতে করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ শুরু হয়েছে এবং এপ্রিল থেকে বিভিন্ন রাজ্যে নানা সময়ে লকডাউন শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল এই চার মাসে মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কায় কাজ হারিয়েছেন ১ কোটি মানুষ। আর দফায় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় বিপুল হারে কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। শুধু মে মাসেই কাজ হারিয়েছেন অন্তত ১ কোটি দেশবাসী।

অন্যদিকে নীতি আয়োগ-এর সদস্য ডাক্তার ভিকে পল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে করোনা প্রতিষেধকের দুটি ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়নি। কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ থেকে দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে যেই পার্থক্য সরকারের পক্ষ থেকে পূর্বে নির্ধারণ করা হয়েছিল সেই সময়সীমা মেনেই দ্বিতীয় টিকা দেওয়া হবে। কেউ যদি করোনা প্রতিষেধক এর প্রথম ডোজ হিসাবে কোভিশিল্ড পেয়ে থাকে তবে দ্বিতীয় ডোজে তাকে কোভিশিল্ড দেওয়া হবে এবং কোভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে।