E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪২ সংখ্যা / ৪ জুন, ২০২১ / ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮

বিহারে বিভূতিপুরের সিপিআই(এম) বিধায়ক অজয় কুমারের উপর হামলা আহত দেহরক্ষী


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিহারের জনপ্রিয় সিপিআই(এম) নেতা অজয় কুমার আক্রান্ত। সমস্তিপুরে পার্টির জেলা দপ্তরে বিভূতিপুরের বিধায়ক এই নেতার ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণের চেষ্টা হয়। ২৯ মে রাত প্রায় ১০টা ৩০ নাগাদ বিহারের সমস্তিপুরের স্টেশন রোডস্থিত সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে বাইকে চড়ে প্রায় ১৫ জন দুষ্কৃতী আসে। তারা অজয় কুমারের উপর চড়াও হবার চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এই নিয়ে পরপর দু’বার তাঁর ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটল। কিছুদিন আগেও পারিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তাঁর ওপর হামলা হয়েছিল। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং অজয় কুমারের উপযুক্ত নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে পার্টির ডাকে ৩১ মে রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হন সাধারণ মানুষ।

২৯ মে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অজয় কুমার সমস্তিপুরের পার্টি দপ্তরে ছিলেন। ওই দিন বিধায়ক বিভূতিপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক মহিলাকে দেখতে সমস্তিপুর সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি বেলা সাড়ে তিনটে থেকে পার্টি দপ্তরেই ছিলেন। দুষ্কৃতীরা রাত সাড়ে দশটা নাগাদ জেলা পার্টির দপ্তরের সামনে আসে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর তারা তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর করতে শুরু করে। প্রথমে বিধায়কের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তারা সিঁড়ি বেয়ে বিধায়কের খোঁজে উপরে উঠার সময় বিধায়কের দেহরক্ষী সহ দফতরের কর্মীরা তাদের আটকাতে গেলে ওই দুষ্কৃতীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। দেহরক্ষী ওই পুলিশ আধিকারিক এবং দপ্তরে থাকা পার্টি কর্মীরা দৃঢ়তার সাথে তাদের প্রতিহত করেন। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে দেহরক্ষী এন রাম গুরুতর আহত হন। দুষ্কৃতীরা তাঁর সরকারী আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভিতরে চলা গোলমালের আওয়াজে পার্টি দপ্তরের আশেপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হতে শুরু করলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। তারা তাদের বাইক ফেলে রেখেই চম্পট দেয়। অভিযোগ, স্টেশনের কাছাকাছি দপ্তর থাকলেও ঘটনাস্থলে পুলিশ দেরিতে আসে।

হাঙ্গামার গোটা ঘটনার ভিডিয়ো যা দলীয় কর্মীরা ঘটনার সময় রেকর্ড করেছিলেন তা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

হামলা প্রসঙ্গে অজয় কুমার বলেন, ‘আমাকে বেশ কিছুদিন ধরেই হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এদিনও দুষ্কৃতীরা বড়ো সংখ্যায় কার্যালয়ে ঢুকে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল’।

এদিকে সংবাদমাধ্যমে ২৯ তারিখের ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় এসপি’র দেওয়া বয়ান থেকে পরিষ্কার, পুলিশ ঘটনাকে লঘুভাবে নিচ্ছে বা ইচ্ছে করেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। এসপি’র বক্তব্য প্রচারিত হতেই ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় মানুষ। পরদিন সকালেই এসপি’র দপ্তরে সামনে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।

সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে পার্টি নেতা এবং বিধানসভায় দলনেতা অজয় কুমারের ওপর আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের জানানো হয়েছে এবং দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারকে বিধায়ক অজয় কুমারকে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়বারের এই হামলা সম্পর্কে অবিলম্বে সঠিক তদন্ত করে দেখতে হবে কেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

এর আগে বিভূতিপুর বিধানসভার উজিরপুর থানা এলাকায় বিধায়ক অজয় কুমারের ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়। সেবারেও তিনি দেহরক্ষীর তৎপরতায় কোনোক্রমে রক্ষা পান। পুলিশ সেই ঘটনার এখনো পর্যন্ত কোনও ফলপ্রসূ তদন্ত করেনি। এর মধ্যেই ঘটে গেল বিধায়কের উপর আরেকবার হামলার ঘটনা।

সিপিআই(এম) বিহার রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধায়কের ওপর কিছুদিন আগে ঘটা হামলার প্রেক্ষিতে সমস্তিপুরের পুলিশ আধিকারিকের কাছে পার্টির পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধি দল গিয়ে বিধায়ক অজয় কুমারের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত করার দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে বিধায়কের ওপর হামলার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করার পাশাপাশি বলা হয়েছে, রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা কেমন তা একজন বিধায়কের ওপর দু’দুবার হামলার ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।