E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৪ মার্চ, ২০২২ / ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৮

আনিস খানের হত্যার সঠিক তদন্ত, হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি এবং হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার মিছিল


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলের উত্তাল ঢেউ প্রায় প্রতিদিনই আছড়ে পড়ছে কলকাতার বিভিন্ন রাজপথ সহ জেলা সদর ও গ্রাম বাংলার প্রতিটি প্রান্তে। আনিস খানের হত্যার সঠিক তদন্ত, হত্যাকারীদের শাস্তি চাওয়ার মুখ্য দাবির পাশাপাশি হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে-অবস্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-যুব নেতৃত্বের মুক্তির দাবিতে মুখর এই মিছিলগুলি।

বামপন্থী ছাত্র-যুবদের স্লোগানে মুখর কলকাতার দুই দিক থেকে আসা দু’টি মিছিল নানা সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে কলেজ স্ট্রিটে আনিস খানের ছবিতে মালা দিয়ে লড়াইয়ের শপথ নিলো ১ মার্চ। এদিন দুপুরে সুবিশাল দু’টি মিছিল এসে মিলিত হয় ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক পীঠস্থান কলেজ স্ট্রিটে। প্রায় একই সময়ে শিয়ালদহ স্টেশনের এবং হাওড়া স্টেশনের সামনে থেকে মিছিল দু’টি রওনা হয়েছিল কলেজ স্ট্রিটের ছাত্র-যুব সমাবেশের উদ্দেশে। পূর্ব ও পশ্চিম- থেকে আসা দু’টি মিছিলে ছিল আনিস হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে লেখা পোস্টার ফেস্টুন। শিয়ালদহ থেকে বামপন্থী ছাত্র-যুবদের মিছিল যখন শুরু হচ্ছে তখনই সেখান থেকে আনিসের খুনিদের শাস্তির দাবিতে আরেকটি বিরাট মিছিল বের করে আইএসএফ। সেটা চলে যায় মৌলালি হয়ে ধর্মতলার দিকে। আর বামপন্থী ছাত্র-যুবদের মিছিল মহাত্মা গান্ধী রোড হয়ে কলেজ স্ট্রিটে পৌঁছায়। ততক্ষণে হাওড়ার মিছিল সেখানে পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ দিকে ৫০ মিটার দূরেই পুলিশের বিশাল বাহিনীর ব্যারিকেড এবং জলকামানকে অগ্রাহ্য করেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় বসে পড়েন বামপন্থী ছাত্র-যুবরা।

এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি হাওড়া গ্রামীণ এসপি’র অফিস অভিযানের ডাক দিয়েছিল এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। সেই মিছিলে পুলিশ নির্মম অত্যাচার চালায় এবং যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। এখানেই থামেনি মমতা ব্যানার্জির পুলিশ। রাতে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে পুলিশ হেফাজতে তাদের নির্মম প্রহার করা হয়। পুলিশি অত্যাচারের চিহ্ন শরীরে নিয়েই আদালতে এসেছিলেন মীনাক্ষী সহ ছাত্র-যুবরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের জামিন দেওয়া হয়নি। জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এই ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ ছাত্র-যুবরা তাদের ক্ষোভ উজাড় করে কলেজ স্ট্রিটের সভায় ধৃতদের মুক্তির দাবি করে বলেছেন, অবিলম্বে ধৃতদের না ছাড়লে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।

কলেজ স্ট্রিটের এই বিক্ষোভ সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা এবং এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান। বক্তব্য রাখেন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ।তাঁরা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তিনি আন্দোলন পছন্দ করেন না। আমরা এই সভা থেকেই জানিয়ে দিচ্ছি বাংলার ছাত্র-যুবরা মুখ্যমন্ত্রীকে পছন্দ করছেন না। পুলিশ গুন্ডা কোনো কিছু দিয়েই তিনি আমাদের আন্দোলন ঠেকাতে পারবেন না।

এসএফআই এর সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া উমর খালিদকে নরেন্দ্র মোদির দিল্লি পুলিশ যেভাবে জেলে আটকে রেখেছে ঠিক সেইভাবে এই রাজ্যের পুলিশ সিএএ, এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের লড়াকু কর্মীকে খুন করেছে এবং তার হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি যারা করছে তাদের জেলে আটকে রেখেছে।

এদিনের সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আন্দোলনের সমর্থনে ভাষণ দিয়েছেন ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বও। এআইএসএফ’র পক্ষ থেকে ভাষণ দিয়েছেন নীলাশিস বসু, আরওয়াইএফ-এর পক্ষ থেকে আদিত্য জোয়ারদার, যুব লিগের পক্ষ থেকে সমন্বয় বিশ্বাস, আরওয়াইএফ-র পক্ষ থেকে রঞ্জন সেনগুপ্ত, এসপি’র পক্ষ থেকে সিরূপ চক্রবর্তী, পিএসইউ-র পক্ষ থেকে মহম্মদ রফির শফিউল্লাহ, ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে অরিন্দম গোস্বামী, যুব কংগ্রেসের সাদাব সিদ্দিকি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি এসএফআই কলকাতা জেলার একই দাবিতে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলেও বিনা প্ররোচনায় চড়াও হয় পুলিশ।

১ মার্চ কলকাতায় ল’ইয়ারস ফর ডেমোক্রেসির উদ্যোগে আনিস খানের হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে শামিল হন আইনজীবীরা। এই মিছিলে অংশ নেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরাও। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এই মিছিল শুরু হয়ে ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির সামনে গিয়ে শেষ হয়। এই মিছিলে মহিলা আইনজীবীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। মিছিলের সামনে ছিলেন এআইএলইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিলাল মৈত্র, আইনজীবী অরিন্দম ভট্টাচার্য, শোভনলাল হাজরা, ইয়াসিন রহমান প্রমুখ। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আনিসের পরিবারকে সমস্ত রকমের আইনি সাহায্য করা হবে এবং যে সমস্ত ছাত্র-যুবকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে, তাদের পক্ষ নিয়ে হাওড়ার আদালতে আইনি লড়াইয়ে থাকবেন সংগঠনের আইনজীবীরা।

আনিস খানের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১ মার্চ কলকাতায় এক সুবিশাল মিছিল করে আইএসএফ। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর থেকে ধর্মতলা ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে মিছিলে অংশ নেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক। উল্লেখ্য, আইএসএফ-এর কর্মী হিসাবে গত বিধানসভা নির্বাচনে আনিস কাজ করেছিলেন। এদিন মিছিলে ছিলেন আইএসএফ-এর চেয়ারম্যান বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকী সহ দলের নেতৃবৃন্দ। মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশের অপদার্থতার বিরুদ্ধে স্লোগানের পাশাপাশি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতেও স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিল শেষে ধর্মতলায় সংক্ষিপ্ত সভায় নৌশাদ সিদ্দিকী রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আনিস খানের হত্যাকারীদের যতক্ষণ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না হচ্ছে ততক্ষণ আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে।