৫৯ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৪ মার্চ, ২০২২ / ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৮
তাহেরপুরে বামফ্রন্টের তাৎপর্যপূর্ণ জয়
তাহেরপুরে জয়ী বামফ্রন্টের আট প্রার্থী।
তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল কোনো পৌরসভায় বিরোধীদের জিততে দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা হলো না। তাহেরপুর পৌরসভায় সন্ত্রাস ও ভোট লুটকে সাহসের সঙ্গে ঠেকিয়ে বামপন্থীরা পুনরায় জয়যুক্ত হলেন। ১৩টি আসনের পৌরসভায় বামপন্থীরা আটটি আসনে জয়যুক্ত হয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের তীব্র সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করে এই জয় এসেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বামপন্থীরা ৮ আসনে জয়যুক্ত হয়েছিলেন।। গত লোকসভা নির্বাচনের থেকে বামপন্থীদের বিপুল ভোট বৃদ্ধি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও ভোট বেড়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাহেরপুরে বামপন্থীদের ভোট ছিল ১৫ শতাংশ। এ নির্বাচনে তা বেড়ে হয়েছে ৪৫.১৮ শতাংশ। তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট ৪২.১৭ শতাংশ, বিজেপি’র ৯ শতাংশ। বামফ্রন্ট চারটি ওয়ার্ডে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। ৩টি ওয়ার্ডে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে বামপ্রার্থীরা পরাস্ত হয়েছেন।
২০১৫ সালের নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস তাহেরপুরে ধারাবাহিক সন্ত্রাস চালিয়েছে, তীব্র আর্থিক বঞ্চনা রাজ্য সরকার করেছে। তাহেরপুরের মানুষ এর যোগ্য জবাব দিয়েছেন।
প্রতিরোধের মেজাজেই তাহেরপুরে পৌর ভোট হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বহিরাগত সমাজবিরোধী জমায়েত করে বুথ দখল করে ভোট লুট করার চেষ্টা করে। মানুষ তা প্রতিহত করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ছিল নির্বাচন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতেই বহিরাগত সমাজবিরোধীরা তাহেরপুর দখল নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পালটা প্রতিরোধে বহিরাগত বাহিনী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।
নির্বাচনের দিন প্রতিটি বুথ দখলের চেষ্টা করে তৃণমূল। কিন্তু বুথের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সিপিআই(এম) কর্মীরা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১২ নং ওয়ার্ডের সিপিআই(এম) প্রার্থী নির্বাচনের দিন মার খেয়েও বুথ ছাড়েননি। এই ওয়ার্ডে মেশিন দখল করে তৃণমূল বাহিনী ছাপ্পা ভোট করে। ১১ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল সমাজবিরোধীরা বারবার বুথ দখল করার চেষ্টা করে। বিকাল ৪টে পর্যন্ত অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে পার্টিকর্মীরা প্রতিরোধ করেন। কিন্তু বিকাল চারটের সময় বুথ দখল হয়ে যায়। এই ওয়ার্ডেই বামফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান। মাত্র ১১ ভোটে এই আসনে বামপ্রার্থী পরাস্ত হন। ৪ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল বাহিনী ইভিএম দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে পার্টি সদস্য বিষ্ণু গুহ তৃণমূলের টাঙির কোপ খেয়েও রক্তাক্ত অবস্থায় বুথ রক্ষা করেন। তৃণমূলের টাঙির আঘাতে মারাত্মক জখম হন অনিল দাস। ১৩ নং ওয়ার্ডের দুটি বুথ তৃণমূল কংগ্রেস দখল করতে এলে এই ওয়ার্ডের প্রায় ছয়শত মানুষ তা প্রতিরোধ করেন। মহিলারা প্রতিরোধের সামনে ছিলেন।
২ মার্চ রাত থেকে পুনরায় তৃণমূল গুন্ডারা বাড়ি বাড়ি হামলা চালায়। নির্বাচনের দিন ছয় জন সিপিআই(এম) কর্মী আহত হয়েছেন। ১৮ জন পার্টিকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পরও অব্যাহত রয়েছে ষড়যন্ত্র।