৫৯ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৪ মার্চ, ২০২২ / ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৮
নম্র নয় পুরভোটের ফলাফলে ভোট ডাকাতির বীভৎসার ছবি বাংলাজুড়ে
মেদিনীপুর পৌরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী সিপিআই(এম) প্রার্থী গোপাল ভট্টাচার্য।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১০৮টি পৌরসভার ভোটের ফলে প্রত্যাশিতভাবেই তৃণমূল কংগ্রেসের অবাধ ভোট সন্ত্রাসের চেনা ছবি ফুটে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী কথিত গণতন্ত্রের উৎসবে ১০২টি পৌরসভা তারা নিরঙ্কুশভাবে দখল করার পথে বিরোধী শূন্য করেছে ৩৮টি পৌরসভা। এই পরিস্থিতিতেও তৃণমূলের ভোট লুট উৎসবকে রুখে সৌধের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে নদীয়া জেলার তাহেরপুর পৌরসভা। এখানে মোট ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে জয়ী বামফ্রন্টের সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বামফ্রন্টই উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৫.৬ শতাংশ, বিজেপি পেয়েছে ১৩.৯৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস পেয়েছে ৫ শতাংশ ভোট। এই হিসেব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মোট ২১৭০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮৭০টি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হলেও ভোট সন্ত্রাসের মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের ভোটদাতা যারা ইভিএম অবধি পৌঁছতে পেরেছেন তাঁদের প্রায় ৩৪ শতাংশ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, অনেক তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৮০ শতাংশ এমনকি কিছু ওয়ার্ডে ৯০ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু যেসব পৌরসভার কিছু ওয়ার্ডে তৃণমূলের ভোট লুট রুখে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছিল, ফলাফলেও দেখা গেছে সেখানেই তৃণমূলের অনুপ্রেরণার ফানুস চুপসে গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড়ো দৃষ্টান্ত যেমন তাহেরপুর পৌরসভা, তেমনই বীরভূমের রামপুরহাটের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই(এম) প্রার্থীর নেতৃত্বে বাসিন্দারা ভোট লুট অনেকটাই রুখে দিতে পেরেছিলেন। এই কারণে ভোটগ্রহণ চলাকালীনই পুলিশ দিয়ে সিপিআই(এম) প্রার্থী সঞ্জীব মল্লিককে আটক করে জেলে পাঠানো হয়। এদিন জেলে বসেই তিনি জয়ের সংবাদ পেয়েছেন।
আবার দার্জিলিঙে যেখানে স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ হয়েছে, ভোট প্রদানের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম, সেখানে তৃণমূল মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছে। দার্জিলিঙ পৌরসভা দখল করেছে নতুন দল হামরো পার্টি। বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়েই ধাক্কা খেয়েছে দার্জিলিঙে। এছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, হুগলির চাঁপদানি, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, পুরুলিয়ার ঝালদা পৌরসভার ঘোষিত ফলাফল অনুসারে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, ত্রিশঙ্কু হয়ে রয়েছে। তৃণমূল অন্য দল ভাঙিয়ে এই পৌরসভাগুলি দখলে নামার চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে।
১০৮টি পৌরসভার মোট ২১৭০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি ৬৩টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে বামফ্রন্ট পেয়েছে ৫৬টি ওয়ার্ড, কংগ্রেস পেয়েছে ৫৯টি ওয়ার্ড। বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিআই(এম) পেয়েছে ৪৮টি ওয়ার্ড, সিপিআই পেয়েছে ৩টি ওয়ার্ড, ফরওয়ার্ড ব্লক ৪টি এবং আরএসপি ১টি ওয়ার্ড পেয়েছে। বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দলরাও কয়েকটি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন। যেমন সোনামুখী পৌরসভায় তিনটি ওয়ার্ডে বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দলরা জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল একাই ছিনিয়ে নিয়েছে ১৮৭০টি ওয়ার্ড। উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু পৌরসভায় এখনও তৃণমূলের পরে বিজেপি’ই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ পৌরসভাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত ভোট শতাংশের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামফ্রন্ট। মুর্শিদাবাদ ও পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে কংগ্রেস রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
নির্বাচনী ফলাফলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হয়ে উঠেছে নির্দল প্রার্থীদের জয়। এর মধ্যে একটা অংশ রয়েছে যারা তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন এবং তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর মদতে জয়ী হয়েছেন। এখন তাঁরা ঝাঁকের কই ঝাঁকে ফেরার মতো তৃণমূলে ফেরার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন।