৫৯ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৪ মার্চ, ২০২২ / ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৮
২৮-২৯ মার্চের সাধারণ ধর্মঘট সংগ্রামকে নতুন চূড়ায় পৌঁছে দেবে
তপন সেন
“জনগণকে বাঁচাও এবং দেশ বাঁচাও” এই আহ্বান জানিয়ে মোদি সরকারের ধ্বংসাত্মক জাতীয়তা-বিরোধী, শ্রমিক-বিরোধী এবং জন-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি ও ক্ষেত্রওয়াড়ি স্বাধীন ফেডারেশনগুলি দুদিনের দেশব্যাপী ধর্মঘট ডেকেছে।
যুক্তমঞ্চ প্রসারিত হচ্ছে
১৯৯১ সালে পশ্চাদগামী নয়াউদারবাদী নীতির যুগ শুরুর সময় থেকে এর বিরুদ্ধে এবারের ধর্মঘট হলো ২১তম সাধারণ ধর্মঘট। তিন দশকের দীর্ঘ সংগ্রাম, একের পর এক সফল ধর্মঘট, শিল্প ও পরিষেবার সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে ক্ষেত্রওয়াড়ি অসংখ্য সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হয়েছে এবং শেষপর্যন্ত ২০০৯ সালে সমস্ত বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়নগুলি এক মঞ্চে আসে। যদিও ২০১৫ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ট্রেডইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ ছেড়ে সঙ্ঘ পরিবারের ট্রেড ইউনিয়ন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস) পালিয়ে যায়। তবে যৌথ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে এটা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি ।বরঞ্চ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সরকারমুখী অবস্থান সত্ত্বেও প্রতিরক্ষার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রওয়াড়ি সংগ্রামের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চগুলিতে বিএমএস’র ইউনিয়নগুলি অংশগ্রহণ করে চলেছে।
এই ঐক্যবদ্ধ মঞ্চকে সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রদর্শিত করেছে। এই মঞ্চে শুধু কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলিই অন্তর্ভুক্ত হয়নি, রাজ্য সরকারি ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের এবং ব্যাংক, বিমা, টেলিকম, প্রতিরক্ষা প্রভৃতির মতো বৃহৎ পরিষেবা ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী স্বাধীন সর্বভারতীয় ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলিকেও এই মঞ্চ সাদরে আলিঙ্গন করেছে।
চেতনা এবং আন্দোলনের বিকাশ ঘটছে
আরেকটি বিষয়, বিশেষ করে,এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে যা সচেতনভাবেই চিহ্নিত করতে হবে। ধর্মঘট সহ একেরপর এক আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যদিয়ে নয়া-উদারবাদী নীতির শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলছে। জীবন, জীবিকা ও অধিকারের ওপর এই উদারবাদী নীতির প্রভাব এবং এর ফলশ্রুতিতে যে দুর্দশা তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের যে ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে তুলনায় নয়াউদারবাদী নীতি শাসন এবং তার রাজনৈতিক পরিচালকদের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া ততোটা দেখা যাচ্ছে না।
তিন দশক ধরে ক্ষেত্রওয়াড়ি এবং জাতীয় উভয়স্তরে ধারাবাহিকভাবে যে অসংখ্য যৌথ আন্দোলনের সাথেই যে ধর্মঘট-সংগ্রাম সংগঠিত হয়েছে সবমিলিয়ে তা বিফলে যায়নি। এই নীতিসমূহ এবং রাজনীতিক সংগঠনে এদের কারিগরদের প্রসঙ্গে শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পুঁজিবাদের ব্যবস্থাগত সংকট বৃদ্ধি এবং সমস্ত শোষিত অংশের জীবন ও জীবিকার ওপর এর গভীর প্রভাবের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকশ্রেণির ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ সমাজের অন্যান্য অংশকে ধীরে ধীরে এই নীতির বিরুদ্ধে নিয়ে আসার পথ তৈরি করেছে এবং তারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, সংগঠিত কর্মসূচিতে অগ্রসর হয়েছেন।
নতুন শতকের দ্বিতীয় দশকে দুটি স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য প্রকট হচ্ছে
এই শতকের দ্বিতীয় দশকের শুরুতে, বিশেষকরে, দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্টভাবে উদঘাটিত হতে শুরু করে। প্রথমত, নয়াউদারবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যবস্থাগত সংকটে নয়াউদারবাদী নীতি জমানার দেউলিয়াপনা উন্মোচন হতে শুরু করে। অন্যদিকে, পুঁজিবাদী শ্রেণি পোষিত এবং তাদের দ্বারা ত্বরান্বিত গণ-দুর্দশা সৃষ্টিকারী এই ধরনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নয়াউদারবাদী নীতির আগ্রাসী, নৃশংসতা ও বর্বরতাকে প্রকাশ্যে এনে দেয়। কেন্দ্রে বিজেপি শাসনের সূচনায়, বিশেষকরে দ্বিতীয়পর্বের শাসনে জনগণের ওপর এই ধরনের আক্রমণ ও দমনপীড়ন বৃদ্ধি পায় এবং তা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। দুটি প্রধান উৎপাদক শ্রেণি এবং সামগ্রিকভাবে জনগণের ওপর নয়াউদারবাদী নীতি শাসনের প্রভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও যুক্তিগ্রাহ্যভাবে এই অনৈতিক নীতি-শাসন এবং সরকারে এর রাজনৈতিক পরিচালকদের প্রকৃত মুখ উন্মোচন করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
বর্তমান সময়ে জনগণের জীবন, জীবিকা এবং তাদের অধিকারের ওপর স্বৈরাচারী দমন-পীড়নের সবচেয়ে নৃশংস প্রক্রিয়ার সাক্ষ্য থাকছে দেশ। মহামারীর সমগ্র সময়পর্বে শাসকশ্রেণির শাসনের সবচেয়ে নির্মম অমানবিক মুখ প্রত্যক্ষ হয়েছে। জনগণের মহামারীর দুর্দশা এবং অসহায়ত্বকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করে আর্থিক নীতি ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ও সমাজ সংক্রান্ত শাসনকার্যে সবচেয়ে নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম কোনোরকম রাখঢাক না করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় কেন্দ্রীয় সরকার রূপায়িত করেছে। কৃষকভিত্তিক কৃষিব্যবস্থাকে ধ্বংস এবং কৃষি অর্থনীতির ওপর মুনাফাখোর করপোরেটদের চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পশ্চাদগামী কৃষি আইনগুলিকে প্রণয়ন করা হয়েছে। এরফলে, ইতিমধ্যে যে জনগণ ক্ষুধাপীড়িত তাদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরতা ফের বিপদের মধ্যে পড়বে।
শ্রমিকশ্রেণির ওপর দাসত্বের শর্ত চাপিয়ে বেপরোয়াভাবে শ্রমব্যয় ন্যূনতম করার মধ্যদিয়ে পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফা বৃদ্ধির অতৃপ্ত লালসাকে চরিতার্থ করতে চারটি শ্রম কোড প্রণয়ন করেছে মোদি সরকার। বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলা চাকরি-সম্পর্ক-এ চূড়ান্ত ভঙ্গুরতা এবং কর্মহীনতা ও রোজগার হারানো সহ উৎপাদন অর্থনীতির নিরবচ্ছিন্ন অধোগতি ও ধ্বংসসাধন এবং টানা চলতে থাকা সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার এই শ্রম কোড প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থনীতির হতাশাজনক অবস্থা জারি আছে। মুদ্রাস্ফীতি খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ এবং অন্যান্য জন-প্রয়োজনীয় দ্রব্য সহ দৈনন্দিন বেঁচে থাকার জন্য জরুরি দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের আয়স্তরের তীক্ষ্ণ অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিই শুধু ঘটে নি, এটা করপোরেট ও বৃহৎ ব্যবসায়ের লুট এবং সামগ্রিকভাবে জনগণকে চুষে নেওয়ার হাতিয়ার হয়েছে। গুণগতমানে উন্নত কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়া এবং চলতে থাকা কর্মচ্যুতির সাথেই বেকারি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা নিঃস্বতা, দরিদ্রতা এবং ক্ষুধাকে বৃহৎভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২২-২৩ সালের বাজেটেও কেন্দ্রীয় সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে সেই একই ধ্বংসাত্মক অনুশীলন অব্যাহত রেখেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ সমগ্র নয়াউদারবাদী প্রক্রিয়ায় সর্বদা মূলগত অংশ হিসেবে থেকেছে। গত তিন দশক ধরে বহুমাত্রিক পথে এই একই নীতি রূপায়িত হয়ে চলেছে। শেষপর্যন্ত এখন ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে একেবারে দেশের সম্পদের এক নতুন ধরনের লুঠের কারবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যদিয়ে সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বিশেষকরে, পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে দেশি ও বিদেশি করপোরেটদের হাতে প্রায় বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যদিয়ে ওই করপোরেট সংস্থাগুলি কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই ওই সম্পদগুলি থেকে আয় করতে পারবে।
বৈষম্য এবং জনগণের দুর্দশা বৃদ্ধি পেয়েছে
এই প্রক্রিয়ায় ‘ব্যবসা সহজতর করা’ (পড়ুন জনগণ এবং দেশের সম্পদ লুটের)-র সূচকে ভারতের উচ্চস্তরে উন্নীত হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে ক্ষুধা ও সাধারণ জনগণের জীবনমানের অবনতির সূচকে ভারত ক্রমাগত নিচে নেমে চলেছে। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে অশ্লীল আয় বৈষম্যের ঠিকানা হয়েছে ভারত, যা কোনো সভ্য জগতে গ্রহণীয় নয়।
বিভিন্ন বিশ্বাসযোগ্য সমীক্ষা রিপোর্টের তথ্য উদ্ধৃত করছিঃ “ওপরের দিকের ১ শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে দেশের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ, যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেক গরিব মানুষের ভাগে রয়েছে ৬ শতাংশের কম সম্পদ। ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সম্পদে ওপরের দিকের ১০ শতাংশের অংশ ছুঁয়েছিল ৫৭ শতাংশ, যেখানে নিচের দিকে থাকা জনসংখ্যার অর্ধেকের ভাগে অংশ কমে ১৩ শতাংশ হয়। জনগণের ওপরের ১ অংশ জাতীয় আয়ের ২২ শতাংশ কুক্ষিগত করেছে।”
চলতি বছরে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে। এর অর্থ অর্থনীতিতে সম্পদ তৈরি নিম্নগামী। অন্যদিকে, মুষ্টিমেয় করপোরেট শ্রেণির বিলিওনেয়ারদের সম্পদ গড়ে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই সম্পদ এই সময়কালে ৮-১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সম্পদ বৃদ্ধি নতুন কোনো মূল্য সৃষ্টির মধ্যদিয়ে ঘটেনি, এই সম্পদ বৃদ্ধি ঘটেছে জনগণকে লুট করে এবং সরকারের নিজস্ব তৈরি করা প্রশাসনিক বিধির সাহায্যে দেশের সম্পদ ও জাতীয় কোষাগার লুট করে। মোদি শাসন নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণ ও দেশের সম্পদের এই সীমাহীন লুটতরাজে পরিপোষণ করে চলেছে।
সংগ্রামের স্ফূরণ, বিস্তারণ এবং বিকেন্দ্রীভবন ঘটেছে
এটাই কিন্তু সব নয়। এই সময়কাল শোষিত জনগণের উত্তাল আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে দেশ, এবং বর্তমানে তা এক নতুনমাত্রায় পৌঁছেছে। এই সময়কাল সাক্ষী থেকেছে শ্রমিকশ্রেণির ডাকা ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ২০ তম সর্বভারতীয় ধর্মঘটের, যা ১৯৯১ সাল থেকে সংঘটিত সাধারণ ধর্মঘটগুলির মধ্যে ছিল সর্ববৃহৎ। ভয়ংকর কোভিড মহামারী এবং একইসাথে ২০২০-র মার্চের শেষ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে সমস্ত রকমের চলাফেরা, জমায়েত, যৌথ কর্মসূচির ওপর কয়েক মাসের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসব সত্ত্বেও ধর্মঘটের ব্যাপক প্রচার সংগঠিত হয়েছিল।
এই ধরনের সমস্ত নিষেধাজ্ঞা ও বাধাকে প্রতিরোধ করেই সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রের তৃণমূল স্তরের শ্রমিকদের মধ্যে হাজার হাজার কর্মস্থল ও শিল্পকেন্দ্রগুলিতে বিকেন্দ্রীকৃত উদ্যোগের মধ্যদিয়ে ওই ধর্মঘট সংগঠিত হয়। এর মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণির এক ভিন্ন ধরনের আন্দোলন-সংগ্রামের সম্পৃক্ততা এবং সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শিত করেছে যা তাঁদের এক অন্য স্তরের মেজাজ ও সচেতনতাকেও প্রতিফলিত করেছে।
ওই সাধারণ ধর্মঘটের দিন ঐতিহাসিক বছরব্যাপী সর্বাত্মক ঐক্যবদ্ধ কৃষক সংগ্রাম শুরু হয়। পশ্চাদগামী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা জাতীয় রাজধানীকে ঘিরে ফেলে। সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন এই কৃষক সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানায়। এমনকী তারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়। এই সংহতি জানিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ শুধু জাতীয় রাজধানীতে সীমাবদ্ধ ছিল না, বিকেন্দ্রীকৃতভাবে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, দৈর্ঘ্য প্রস্থে দেশের সর্বত্র তা ব্যাপ্ত হয়েছিল।
কৃষক আন্দোলনের প্রতি ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চের দেশজুড়ে এই সক্রিয় সংহতিই তাদের সাথে সংযুক্ত কৃষক মোর্চার ঐক্যের মজবুত সেতু তৈরি করে। কৃষক ও শ্রমিকদের এই উভয় ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ তাদের পারস্পরিক দাবিগুলির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞাপন করে। যা শেষপর্যন্ত সামগ্রিকভাবে জনগণের ওপর বর্বর করপোরেট-লুটের রাজত্বের দৃঢ বিরোধিতায় জোর দেয়। এইসব কর্মসূচি এবং সংহতির প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণি এবং কৃষকসমাজের মধ্যে ঐক্য এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়। এই পশ্চাদগামী নীতির প্রভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সামগ্রিকভাবে এই নীতি শাসন এবং প্রশাসনে তার রাজনৈতিক পরিচালকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উন্নীত হবার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এক অভিমুখী যুক্ত সংগ্রাম
শ্রমিকশ্রেণি এবং কৃষকসমাজের স্ব স্ব দাবির প্রতি সক্রিয় সমর্থন তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এক অভিমুখী বিষয়। বৃহৎ করপোরেট-চালিত প্রশাসনের আক্রমণের সাথে লড়াইয়ের ময়দানে উভয়ই তাদের এই সাধারণ শত্রুকে চিহ্নিত করেছে। এটাই হলো শ্রমিকশ্রেণির ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির আসন্ন পর্যায়ের - শ্রমিক-বিরোধী, জন-বিরোধী, জাতীয়তা-বিরোধী ধ্বংসাত্মক নীতি-রাজত্বের বিরুদ্ধে ২৮-২৯ মার্চের দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ভিত্তিভূমি। এই কারণেই জাতীয় সম্পদের করপোরেট লুটের বিরুদ্ধে এবং জনগণের জীবন-জীবিকা ও অধিকারের জন্য রণহুঙ্কার। এই রণহুঙ্কার হলো “জনগণকে বাঁচাও, দেশ বাঁচানো”র লক্ষ্যে। শ্রমিকশ্রেণির এই ধর্মঘট-সংগ্রাম শুধু তাদের অধিকার, জীবনজীবিকা রক্ষার্থে নয়, তা জনগণের ওপর শাসকশ্রেণির নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণ এবং ধ্বংসের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে দেশকে বাঁচানোর জন্যও।
চলুন আমরা এই স্বৈরাচারী ও ধ্বংসাত্মক শাসনের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে ২০২২ সালের ২৮-২৯ মার্চের আসন্ন সাধারণ ধর্মঘটকে গুণমানে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাই। নয়াউদারবাদের রাজনীতিকে স্পর্ধিত প্রতিরোধ, লড়াই এবং চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে সচেতনতার স্তরকে উচ্চস্তরে পৌঁছে দিতে দৃঢ প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হই।
২৮-২৯ মার্চের সাধারণ ধর্মঘটের দাবিসমূহঃ
(১) ‘শ্রম কোড’ এবং ‘এসেনসিয়াল ডিফেন্স সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ বাতিল করতে হবে।
(২) সরকারি সংস্থা, ব্যাঙ্ক, বিমা সহ সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ বন্ধ করো।
(৩) আইসিডিএস সহ বিভিন্ন প্রকল্প কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করতে হবে।
(৪) বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকা কর্মীদের স্থায়ীকরণ সাপেক্ষে স্থায়ী শ্রমিকদের মতন বেতন দিতে হবে।
(৫) আয়করের বাইরে থাকা সকল নাগরিকদের মাসে নগদ ৭৫০০ টাকা দিতে হবে এবং বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে।
(৬) সকলের জন্য সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে।
(৭) পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাতে কেন্দ্রীয় অন্তঃশুল্ক কমাতে হবে।
(৮) নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাতে হবে।
(৯) জাতীয় পেনশন প্রকল্প বাতিল করতে হবে। প্রবীণদের পেনশন চালু করতে হবে। ন্যূনতম পেনশন যথেষ্ঠ পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে।
(১০) কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাজেটে আরও ব্যয়-বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
(১১) অতিমারী সময়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য সুরক্ষা এবং পেনশন চালু করতে হবে।
(১২) মনরেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো এবং তা শহরেও লাগু করো।