E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৪ মার্চ, ২০২২ / ১৯ ফাল্গুন, ১৪২৮

বকেয়া বেতনের দাবিতে হরিয়ানার আইসিডিএস শ্রমিকরা ধর্মঘটে অনড়


সমাবেশে বলছেন তপন সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বকেয়া সাম্মানিকের দাবিতে হরিয়ানার অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক এবং সহায়িকাদের অবস্থান ধর্মঘট পেরিয়ে গেল ৮০ দিন। হরিয়ানা জুড়ে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। এই ধর্মঘটের বিরুদ্ধে এবং ধর্মঘটীদের ওপর বিজেপি রাজের নির্লজ্জতা এবং নিপীড়ন সমানে চলছে। নিজেদের কাজ হারানোর ঝুঁকি নিয়েও হাজারো অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক এবং সহায়িকা এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাব নিয়ে উত্তর ভারতের তীব্র শীতের মোকাবিলা করে। তাঁদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে সামাজিক সুরক্ষা, অবসরকালীন সুবিধা এবং প্রাপ্যের কথাও।

অভূতপূর্ব মহিলা আন্দোলন

হরিয়ানার ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মহিলা আন্দোলন। এখানে আইসিডিএস শ্রমিকরা ১১হাজার ৪৪৮ টাকা এবং সহায়িকারা ৬হাজার ৪৫ টাকা সাম্মানিক হিসেবে পান। এই আইসিডিএস এই নিম্ন আয়ভুক্ত শ্রমিক ও সহায়িকাদের বড়ো অংশই পিছড়ে বর্গ এবং অর্ধেক বিধবা। কিন্তু এই সাম্মানিকটুকুও গত তিন মাস ধরে পাচ্ছেন না। দীর্ঘ তিন মাস ধরে বেতন না পেয়েও প্রতিদিন অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক এবং সহায়িকারা অংশগ্রহণ করছেন এই বিক্ষোভে। নিজেদের পকেট থেকে ভাড়া দিয়েই আসছেন ধরনা-বিক্ষোভস্থলে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৩০০ জন শ্রমিক এবং সহায়িকাকে ছাঁটাই করেছে। আর প্রতিদিনই এরকম ছাঁটাইয়ের নোটিশ আসছে আরও সহায়িকা ও শ্রমিকদের নামে। কিন্তু ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রশ্নে তারা দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়েই অনড় রয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এই শ্রমিকদের দাবিদাওয়া পূরণ করবে।

এই শ্রমিকদের লড়াই করতে হচ্ছে দু’জায়গাতেই। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের সরকার-প্রশাসনের বিরুদ্ধে, আর অন্যদিকে নিজেদের পরিবারের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে এই আন্দোলন চলার ফলে পরিবারের সদস্যদের দিক থেকেও এই আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর চাপ আসছে প্রবল। অনেক মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিবারে চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনার পরিস্থিতি রয়েছে কাজ হারানোর আশঙ্কাকে ঘিরে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন এই বেতন না পাওয়া শ্রমিক-সহায়িকারা জেলা সদরে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য গত তিন মাস ধরে যে যাতায়াত করছেন তার রাহা খরচ সংকুলান হবার ক্ষেত্রেও সংসারের প্রতিদিন বাড়তে থাকা খরচের চাপ সামলে আসতে হচ্ছে তাঁদের।

১৪ ফেব্রুয়ারি অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক এবং সহায়িকাদের সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে কারনালে এক মহা পদযাত্রার ডাক দেওয়া হয়। কারনাল হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা ক্ষেত্র। এখানে প্রায় কুড়ি হাজার অঙ্গনয়াড়ি শ্রমিক সারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মহামিছিলে যোগ দিয়ে শুরুতে পাল্টা চাপ তৈরি করে প্রশাসনের ওপর। বিক্ষোভ থেকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় ‘মন কি বাতে’ প্রধানমন্ত্রীও সাম্মানিক বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন ৩ বছর আগে।

হরিয়ানার এই অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিকদের সভায় তাঁদের বিক্ষোভে সহমর্মিতা জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেছেন, বিজেপি সরকারের এই ব্যবহার জনবিরোধী এবং মহিলাবিরোধী। এই নির্লজ্জ বিজেপি সরকার যে পথ নিয়েছে সেটা তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিজেপি-কে এই পদক্ষেপের জন্য ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, হরিয়ানার এই শ্রমিক আন্দোলনের পাশে গোটা দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন রয়েছে। এদিন সভায় বক্তব্য রাখেন সারা ভারত অঙ্গনওয়াড়ি ফেডারেশন-এর সভাপতি ঊষারানি এবং সাধারণ সম্পাদক এ আর সিন্ধু। কারনাল শহরে এই সভার পর অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক এবং সহায়িকাদের এক সুবিশাল মিছিল শহর পরিক্রমা করে এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘণ্টাঘর এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সভা জারি রাখে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া এক্ষেত্রে বৈরিতামূলক ছিল। অবস্থানরত অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার কোনো আমন্ত্রণ সেদিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। উল্টে এফআইআর করা হয় ৪০০জনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় গুরুদোয়ারা থেকে এই প্রতিবাদী মহিলাদের খাবার দেওয়া হয়। এরপর গভীর রাত পর্যন্ত এই শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল সংগঠিত হয়। এই লাগাতার কর্মসূচিগুলিতে চাপে পড়ে যায় প্রশাসন। টনক নড়ে সরকারের। পরের দিন রাজ্যের শ্রমদপ্তরের ডেপুটি কমিশনারের অফিস ঘেরাও করা হয়। এখন গত ১০ দিন ধরে দিনরাত অবস্থান-বিক্ষোভ জারি আছে কারনালে।

বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং গণসংগঠন সহ অন্যান্য সংগঠনের তরফ থেকে সমর্থন

এই আন্দোলনকে ঘিরে এখন হরিয়ানার রাজ্য রাজনীতি এবং সাধারণ মানুষের চর্চা-আলোচনা আবর্তিত হচ্ছে। রাজ্যের প্রায় সমস্ত বিরোধী দলগুলি - সিপিআই(এম), সিপিআই, আইএনএলডি, কংগ্রেস আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। কারনাল-এ এসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা ভূপেন্দ্র সিং হুডা এবং কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি শৈলজা কুমারী, অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিকদের অবস্থান বিক্ষোভে সহমর্মিতা ও সমর্থন জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মঘটী শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছে, বিধানসভার আগামী অধিবেশনে তারা এই বিষয়টি উত্থাপন করবেন। এর পাশাপাশি সিআইটিইউ, সর্ভাকর মাচারি সংঘ, জনবাদী মহিলা সমিতি, কৃষক সভা এবং অন্যান্য সংগঠন সমূহ এই বিক্ষোভ আন্দোলনে তাদের সহমর্মিতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

২১ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার অতিরিক্ত মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে ওই শ্রমিকদের দাবি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি। সরকারি আধিকারিকরা ওই বৈঠকে শ্রমিক নেতৃত্বকে চাপ দিতে থাকেন নিঃশর্তভাবে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার জন্য। তাদের বক্তব্য, তাহলেই তারা অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক ও সহায়িকাদের দাবিসমূহ বিবেচনা করবেন। শ্রমিকদের সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আগামী ৩ মার্চ অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক ও সহায়িকাদের সংগঠন হরিয়ানা বিধানসভা ঘেরাও করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ওই সময় বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলার কথা। একইসঙ্গে পরের সপ্তাহে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি সংবলিত লিফলেট সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলির পাশাপাশি জেলা সদরগুলিতেও ধরনা চলছে প্রতিদিন। ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলাগুলিতে বিজেপি মন্ত্রীদের বাড়িগুলোর চারপাশে দিন রাতের ধরনার ডাক দেওয়া হয়।