৬০ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৪ নভেম্বর, ২০২২ / ১৭ কার্ত্তিক, ১৪২৯
‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগানে মুখরিত পদযাত্রা শুরু
গ্রাম জাগাও রাজ্য বাঁচাওঃ কোচবিহারের শীতলকুচিতে সিপিআই(এম)-র পদযাত্রা।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১ নভেম্বর থেকে ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগানে মুখরিত পদযাত্রা শুরু হলো রাজ্যের উত্তর-দক্ষিণ দু’প্রান্ত জুড়েই। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের তিনদিন অভূতপূর্ব সাড়া এই কর্মসূচি ঘিরে। ভয় ভেঙে অধিকারের দাবিতে লাল পতাকা হাতে সোচ্চার পদযাত্রা আলোড়ন তুলেছে পথের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
রাজ্যের গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েতের কাজের হিসাব চেয়ে পদযাত্রায় সরব হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আর পদযাত্রা যত এগিয়েছে গ্রামবাসীরা ঘর থেকে বাইরে এসেছেন, তাঁদের প্রতি বঞ্চনা ও অপ্রাপ্তির ভুরি ভুরি অভিযোগে সরব হয়ে পদযাত্রীদের সমর্থন জানিয়েছেন। লাল পতাকা হাতে স্লোগানে মুখর মিছিল পরিক্রমার পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সভাও হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। রেগার কাজ, ফসলের দাম ও ন্যায্য মজুরি, প্রাপ্য সরকারি সুবিধা ইত্যাদির দাবিতে এবং পঞ্চায়েতে শাসকদলের লুটের হিসাব চেয়ে রাজ্যজুড়ে গ্রামের মানুষ সরব হয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন, কেন গ্রামে কাজ পাচ্ছি না? কেন ঘরের ছেলেদের কাজের জন্য ভিন রাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে? কেন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? শাসকদলের দুষ্কৃতীদের দাপটে নানা অপরাধ ঘটে চলেছে কিন্তু কেন পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? বরং প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মীদের নামে নানা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কেন?
সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু, এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র এক যৌথ বিবৃতিতে সর্বস্তরের জনগণকে এই লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। পদযাত্রার প্রাথমিক পর্যায়ের প্রেক্ষিতে সংগঠনগুলির পর্যবেক্ষণ, দুর্নীতি এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে ক্রমশ বেশি সংখ্যক মানুষ এগিয়ে আসছেন, আসবেন। প্রতিবাদ করছেন, করবেন। পঞ্চায়েতগুলিতে দুর্নীতির আখড়া ভাঙতে জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তুলতেই এই জাঠার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির ব্লকে ব্লকে গ্রামে গ্রামে পদযাত্রা পথ পরিক্রমার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সভা থেকে শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুর নেতৃবৃন্দ ভাষণ দিয়ে মানুষকে সংগঠিতভাবে এগিয়ে আসার আবেদন করেছেন। গ্রামের মানুষ ভয় ভেঙে সরব হয়েছেন পদযাত্রার কর্মসুচিকে ঘিরে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে পদযাত্রায় প্রথম দু’দিনে পথ হেঁটেছেন গোপীনাথপুর পিংলা এলাকায় ১৫ কিলোমিটার পথ, তেমনি রানীবাঁধ এলাকায় ২৫১ জন কাজ হারানো ছাটাই শ্রমিক। স্লোগানেও গলা মিলিয়েছেন। ভয় ভেঙে তৃণমূলের সন্ত্রাস কবলিত গ্রামে সভা করা গেছে পদযাত্রার কর্মসূচি অনুযায়ী। বীরভূমের হাসন ২ পঞ্চায়েত, সিউড়ি-২ নম্বর ব্লকের সলখানা মোড় সেখানে রেগা পুনরায় চালু এবং বকেয়া মজুরির দাবিতে মানুষ সোচ্চার হয়েছেন। গ্রামের পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলেও নাগাড়ে পথ হেঁটেছেন কৃষক শ্রমিক সহ কাজ হারা মানুষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ নম্বর ব্লকের রাধাকান্তপুর অঞ্চলে যেখানে বামফ্রন্ট অঞ্চল পরিচালনা করে সেখানেও প্রতিটি বুথে হয়েছে মিছিল। মথুরাপুর এক নম্বর ব্লকে যেখানে কমরেড রাজু হালদার শহিদ হয়েছিলেন সেই গ্রামেও পদযাত্রায় পা মিলিয়েছেন শহিদের আত্মীয়রা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মামুদপুর পঞ্চায়েত বালি ভাড়া পঞ্চায়েতের শ্রমিক কৃষক খেত মজুরদের সঙ্গে যৌথ পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন ছাত্র যুব মহিলারা এবং সিপিআই(এম) নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি। বাঁকুড়া জেলায় ঝিলিমিলি কানুরী জিপি গ্রামগুলিতে স্থায়ী পদযাত্রীদের নিয়ে প্রায় ২০০ গ্রামে সভা হয়েছে। বীরভূম জেলার পাঁচটি ব্লকের ছটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৯টি বুথে পদযাত্রা শুরু হয়েছে। ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব গ্রাম পঞ্চায়েত ডাঙ্গাপাড়া, শ্রীনিকেতন ব্লক সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকে পদযাত্রা হয়েছে। মালদা জেলার মানিকচকে চারটি বুথে, ভুতনি, ভীমতলা, রঘুনাথ টোলা এবং পুরাতন মালদার সাহাপুর অঞ্চলে ২০০ জন অংশ নিয়েছেন। কোচবিহার জেলার দু’নম্বর ব্লকের খাপাইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে বর্ণাঢ্য মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পানিশালাতে পদযাত্রা সংগঠিত হয়েছে। মরিচবাড়ির খোলটা অঞ্চলের ১৩টি বুথে পদযাত্রা উদ্বোধন করেছেন কৃষক আন্দোলনের নেতা অনন্ত রায়।