E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৪ নভেম্বর, ২০২২ / ১৭ কার্ত্তিক, ১৪২৯

রাজ্যপালদের অসাংবিধানিক কাজ, সাম্প্রদায়িকতা এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে নিচুস্তর পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তুলুন

সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বান


রাজ্যপালদের অগণতান্ত্রিক, সংবিধান বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করতে হবে। কেন্দ্রের সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক বিভাজন। মজুরি বৃদ্ধি তথা রেগার যথাযথ রূপায়ণ সহ বিভিন্ন দাবিতে তাই স্থানীয় স্তরে আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। চাই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ব্যাপকতম সমাবেশ। তিনদিনের বৈঠকের শেষে ১ নভেম্বর এই আহ্বান জানাল সিপিআই(এম)। সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের কয়েকজন রাজ্যপালের সংবিধান বিরোধী কাজের প্রতিবাদ সহ সাম্প্রদায়িকতা, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, জীবন জীবিকার দুর্দশার প্রশ্নে আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার কথা। মোদি সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ফলে দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে চলে যাচ্ছে মন্দার প্রবণতা বাড়ছে জীবন জীবিকার ওপর বৃহত্তর দুর্দশা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারাত্মক চেহারা নিয়েছে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেরালার রাজ্যপাল এলডিএফ সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টায় বিজেপি’র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। যে পদ্ধতিতে তিনি কেরালার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ইস্তফা দাবি করলেন, পরে অর্থমন্ত্রীর ইস্তফা চাইলেন তা ভারতের সংবিধান সম্মত নয়। রাজ্যপালের পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো কেরালার ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, বৈজ্ঞানিক উচ্চশিক্ষার বদলে হিন্দুত্বের মতাদর্শগত কর্মসূচিকে মদত দেওয়া। একই লক্ষ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার জেএনইউ, হায়দরাবাদের মতো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কাজ করছে। কেরালার জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে এই চক্রান্ত প্রতিরোধ করবেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, তামিলনাডুতে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন সেকুলার ফ্রন্টের সরকার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তিনি বিজেপি’র মতামত প্রতিফলিত করছেন, অবাঞ্ছিত বিতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। রাজ্যপাল পদে বসে রক্ষণশীল ও বিষাক্ত ধারণা প্রচার করা সংবিধান বিরোধী কাজ। এই কারণেই সিপিআই(এম) সমস্ত অবিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলের কাছে রাজ্যপালদের এমন ভূমিকার সমবেত প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সংবিধানের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। তাকে খর্ব করার চেষ্টা ক্রমশ বাড়ছে। নির্বাচিত রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্বের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্য তালিকাভুক্ত। মোদী পুলিশের জন্য ‘এক দেশ এক উর্দি’ বলে এই নীতিটিকেই লঙ্ঘন করছেন। বিজেপি তেলেঙ্গানায় টিআরএস বিধায়ক কিনতে বিপুল পরিমাণ টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে।

কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, মোদী সরকারের নীতি অর্থনীতিকে গভীরতর সঙ্কটে ঠেলে দিচ্ছে, মন্দার প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক তৃতীয় বারের জন্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৮.৭ শতাংশ থেকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আরবিআই ৭.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে এনেছে ৭ শতাংশে। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৮মাসের সর্বনিম্ন স্তরে, ১৯.৪ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৮ শতাংশে। এই অর্থনৈতিক সঙ্কট জনগণের জীবনজীবিকার ওপরে বৃহত্তর দুর্দশা চাপিয়ে দিচ্ছে। উৎসবের মরশুমেই বেকারির হার ৭.৮ শতাংশ হয়ে গেছে। এতদসত্ত্বেও মোদী সরকার রেগার তহবিল বরাদ্দ করছে না, ১ এপ্রিল থেকে ২১ অক্টোবর দেড় কোটি আবেদনকারীকে কাজ দেয়নি। সর্বোপরি দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি মারাত্মক চেহারা নিয়েছে। ক্রেতা মূল্য সূচক ৯ মাস ধরেই আরবিআই’র ঊর্ধ্বসীমা ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সর্বকালের সর্বোচ্চ।

কেন্দ্রীয় কমিটি অভিযোগ করেছে, জনগণের এই দুর্দশা সত্ত্বেও মোদী ব্যক্তিগতভাবে জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তীব্র করার অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কোনও না কোনও অজুহাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। মুসলিমদের ওপরে শারীরিক আক্রমণ বাড়ছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ব্যাপকতম সমাবেশের আহ্বান পুনরায় জানিয়েছে সিপিআই(এম)।

কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, নির্বাচন কমিশন ও গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনের সময়সূচি পৃথক করে দেওয়ায় গুজরাটে আচরণবিধি চালুর আগে বিজেপি বাড়তি সুবিধা পেয়ে গেছে। মোদী নিজে বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করা ও কেন্দ্রের টাকায় নতুন প্রকল্প ও সুবিধা ঘোষণা করে চলেছেন। এই রকম কিছু সরকারি প্রকল্পকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত দীপাবলি উপহার’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

হিমাচল প্রদেশে সিপিআই(এম) ১১টি আসনে লড়বে, একটি আসনে সিপিআই’কে সমর্থন করছে। বাকি আসনে সিপিআই(এম) বিজেপি প্রার্থীদের পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

ব্রাজিলে লুলার জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে সিপিআই(এম) বলেছে, স্বঘোষিত দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিস্তসুলভ বোলসোনারোর পরাজয়ে লাতিন আমেরিকায় বামপন্থীদের আরও অগ্রগতি সূচিত হয়েছে। গুজরাটের মোরবিতে সেতু ভেঙে ১৪০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় কমিটি আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তা দেবার দাবি জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, উচ্চপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। জনগণের দুর্দশা ও নির্দিষ্ট ১৪ দফা দাবিতে ট্রেড ইউনিয়ন, কিসান সভা, খেতমজুর ইউনিয়ন দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। ২০২৩-র এপ্রিলে সংসদ অভিযান হবে। এই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

জনগণের জীবনজীবিকার ওপরে ক্রমবর্ধমান বোঝা, দলিত, মহিলা, প্রান্তিক মানুষের ওপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতার ওপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলার ডাক দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি বলেছে, স্থানীয় স্তরের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে।