E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৪ নভেম্বর, ২০২২ / ১৭ কার্ত্তিক, ১৪২৯

“চিত্ত যেথা ভয়শূন্য”...

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


সাঁকোটা দুলছিল। ‘ঝুলতো পুল’। ঝুলন্ত সেতু যেরকম দোলে সেরকমই। ছেলে মেয়ে বুড়ো বুড়ি বাচ্চা কাচ্চা মিলে বেশ কয়েকশো মানুষ। সেতুর ভারবহন ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি। তাতে কী? দোল খাওয়ার মজাই আলাদা। এর পরের টুকু খবরের কাগজে, নিউজ চ্যানেলে, ডিজিটাল মিডিয়ায়। ১৩৫ নাকি ১৪১ - মোরবিতে সেতু দেখতে এসে কতজন মরলো তা এখনও স্পষ্ট নয়। মোচ্ছু নদীতে দেহ ভেসে বেড়ানোর পাশাপাশি মৃত, নিখোঁজের সংখ্যাও ভেসে বেড়াচ্ছে। মনপসন্দ একটা কিছু ধরে নিলেই হবে। বাকিটুকু বুঝে নেবেন ওরেভা কোম্পানি, ভূপেন্দ্রভাই আর মোদিভাই। তবে স্থান এবং প্রেক্ষিত যেহেতু আলাদা এবং সেতুটা পশ্চিমবঙ্গে না হয়ে গুজরাটে তাই প্রধানমন্ত্রীর জবানিতে বদল আসাই স্বাভাবিক। এটা তো আর ২০১৬’র নির্বাচনের মুখে পোস্তা ব্রিজ ভেঙে পড়া নয় যে প্রধানমন্ত্রী তড়িঘড়ি বলবেন, “...ভোটের সময়েই ভেঙেছে। যাতে বোঝা যায়, ঠিক কেমন সরকার চালিয়েছেন আপনি। সবাইকে ঈশ্বরের বার্তা, আজ এই সেতু ভেঙেছে, কাল পুরো বাংলাই এ ভাবে শেষ হয়ে যাবে। একে রক্ষা করো - এটাই ভগবানের বার্তা। মা মাটি মানুষের নাম করে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখন তার জায়গায় মৃত্যু (মওত) আর টাকার (মানি) কারবার চলছে।” এই সেতু যেহেতু গুজরাটে ভেঙেছে এবং নির্বাচনের মুখেই ভেঙেছে (প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত প্যাকেজের ঘোষণা শেষ করেই ৩ নভেম্বর ঘোষিত হয়েছে গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনের তারিখ) তাই ‘ঈশ্বর’ এক্ষেত্রে কী বার্তা দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে ওরেভা সংস্থার ম্যানেজার জানিয়েছেন, ‘মোরবি ব্রিজ কোলাপস অ্যান অ্যাক্ট অফ গড’। অতএব যেহেতু ভগবান ঘটিয়েছেন তাই প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, স্থানীয় প্রশাসন - সকলের সমস্ত দায়িত্ব শেষ। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে তো নাকি!!! আর আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তো জানিয়েই দিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে কিছু বলবেন না। ‘আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে’...

‘ক্রোনোলজি’। শব্দটা অভিধানে ছিলনা এমনটা নয়। ব্যবহার হতো, হতো না। নিজের মনেই অভিধানের পাতায় অবহেলায় পড়ে থাকত আরও পাঁচটা শব্দের মতো। যদিও ২০১৯-এর এপ্রিলের পর থেকে ‘তাঁর’ দিন ফিরেছে। কদর বেড়েছে। এখন দিনরাত ‘তাঁকে’ নিয়ে টানাটানি। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় আলগোছে ‘আপ ক্রোনোলজি সমঝিয়ে’ বলে এনআরসি, এনপিআর, সিএএ নিয়ে এই বাক্য ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অন্তর্নিহিত অর্থ যে কত গভীর এবং প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী সেইসময় অনেকেরই ঠাওর হয়নি। সময় যত এগোচ্ছে তত বোঝা যাচ্ছে ক্রমশ ক্রোনোলজির বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে আমাদের বেঁধে ফেলার ব্যবস্থা পাকা করা হচ্ছে। কোনো একটা কাজ ক্রোনোলজি ছাড়া হচ্ছে না। হচ্ছে নিখুঁত পরিকল্পনায়, ঠান্ডা মাথায়, হিসেব কষে, অ্যাজেন্ডা ধরে। হয়তো এভাবেই পরিকল্পনা করে সেনাবাহিনীতে ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ। ঠিক ১৯২১ সালে যেরকম পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয়েছিল ‘ব্রাউন শার্ট’ বাহিনী বা এসএ। যে বাহিনীতে মূলত নিয়োগ করা হয়েছিল অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী অথবা বেকার যুবকদের। যে বাহিনীকে ব্যবহার করা হতো বিরোধীদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনার জন্য, বিরোধীদের সভা ভন্ডুল করে দেবার জন্য। পরবর্তী সময়ে এসএ বাহিনী থেকেই তৈরি করা হয় এসএস। ১৯২৯ সালে যাদের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০০, ১৯৩৩-এ তাদেরই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার। যাদের বাছাই করা হতো তাদের ‘জাতিগত বিশুদ্ধতা’, অন্ধ আনুগত্য এবং হিটলারের প্রতি ধর্মান্ধ আনুগত্যের ভিত্তিতে। অদূর ভবিষ্যতে এদেশেও যে এরকম হবেনা তার নিশ্চয়তা কোথায়? ব্রাউনের সঙ্গে খাঁকি রঙের কতটা পার্থক্য কে জানে? ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৩৯, ১৯৭৪, ২০১০, ২০১৬ - বারবার তো পোশাক পরিবর্তন হয়েছে খাঁকি বাহিনীর। ১৯২৫-এ খাঁকি শার্ট, জুতো কালো টুপি দিয়ে শুরু হয়ে ১৯৩৯-এ সাদা শার্ট, ২০১৬-তে হাফপ্যান্ট থেকে ফুলপ্যান্ট হয়েছে। ব্রাউন সোয়েটার যুক্ত হয়েছে ২০১৬ সালের দ্বিতীয় পরিবর্তনে।

এসব আলোচনা থাক। আমরাও নাহয় একটু ক্রোনোলজি খুঁজে দেখার চেষ্টা করি। ২০১৫ সালের ২৬ মে ইকনমিক টাইমস-এ এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে জানানো হয়েছিল, মোদি সরকারের শপথ নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে, কেন্দ্র থেকে একদল সচিবালয় কর্মীদের একটি ‘প্রশিক্ষণ-কাম-ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’-এর জন্য গত বছরের জুলাই মাসে মুম্বাই নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এই শিবিরে বলা হয়েছিল, সরকার আমাদের, আর নিয়ম কংগ্রেসের তার পুনরাবৃত্তি হবেনা। এর পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের মধ্যে থেকে বাছাই করা সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। যাদের শেখানো হয়েছিল প্রকৃত সংঘকর্মী কীভাবে বাছাই করতে হবে এবং পরে কাজে যোগ দেওয়া কর্মীদের কীভাবে বাদ দিতে হবে। সেইসময়ই জানা গেছিল ২০১৪-র এপ্রিল থেকে ২০১৫-র ওই সময় পর্যন্ত সারা দেশে নতুন শাখা খুলেছে ৬০০০। সারা দেশে আরএসএস-এর শাখা ৪৪,৯৮২ থেকে বেড়ে হয় ৫১,৩৩০। এই প্রসঙ্গে আরও একটা তথ্য দিয়ে রাখা ভালো। ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে আরএসএস-এর শাখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০,৯২৯। যা ২০২১ সালের মার্চ মাসে ছিল ৫৫,৬৫২। অর্থাৎ শেষ এক বছরে বেড়েছে ৫,২৭৭ শাখা। বিষয়ে ফিরি। এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবিরের পর সংগঠনের প্রকাশনার প্রাক্তন সম্পাদক শেষাদ্রি চারি বলেন, ‘‘গুরুজি (গোলওয়ালকর) বলতেন বেড়ে ওঠা এবং ফুলে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আরএসএস-এর প্রভাব তখনই পরিমাপ করা যাবে যখন এটি তার সভ্যতামূলক অ্যাজেন্ডাকে মূলধারায় স্থাপন করতে পারবে, আব্রাহামিক সংস্কৃতির উপর ভারতীয়দের বিশেষাধিকার প্রদান এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধির (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) মূল বিষয় এবং ৩৭০ ধারার বিলুপ্তি ঘটাতে পারবে।” গোবিন্দাচার্য এবং শেষাদ্রি আরও জানিয়েছিলেন, “বাজপেয়ীর তুলনায় মোদির কাছে তাঁদের আশা অনেক বেশি। কারণ বাজপেয়ী কোনোদিনই মোদির মতো প্রচারক ছিলেন না। তাই, আরএসএস-এর আদর্শ, কর্মপদ্ধতি এবং প্রতিদিনের কার্যকারিতা মোদির পক্ষে বোঝা সহজ। তাঁর জন্য ইশারা হি কাফি হ্যায়।”

ইউনিফর্ম সিভিল কোড-এর কথা গুজরাট নির্বাচনের আগে আরএসএস-এর দোসর, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল সুকৌশলে তুলে দিয়েছেন। তিনি যে ক্ষমতায় এলে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর কেজরি বলেন, বিজেপি কেন দেশ জুড়ে এই বিধি চালুর কথা বলছে না! আসলে বিজেপি’র উদ্দেশ্য ভালো না। কারণ সংবিধানের ৪৪ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রয়োগের দায়িত্ব সরকারের। তাই সরকারেরই উচিত এই বিধি তৈরি করা। তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনাদের মনে আছে তো, উত্তরাখণ্ডে ভোটের আগে বিজেপি কী করেছিল? ওরা একটি কমিটি তৈরি করেছিল ঠিকই। কিন্তু ভোটে জেতার পর সব ভুলে গেছে। গুজরাটেও ভোট আসছে, তাই সেখানেও একটা কমিটি তৈরি করে লোক দেখানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বিজেপি’র নির্বাচনী ইস্তাহারের অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা। গুজরাটে নির্বাচনের মুখে গত ২৮ অক্টোবর গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি জানিয়েছিলেন, গুজরাটে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে মন্ত্রীসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ৩৭০ ধারা? সে না হয় আপাতত থাক।

গত ২৮ অক্টোবর হরিয়ানার সূরজকুণ্ডে আয়োজিত হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র চিন্তন শিবির। যে শিবিরের সমাপ্তি বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এখন আর একটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অপরাধ এখন ক্রমেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তেমন আন্তর্জাতিক স্তর থেকেও সংগঠিত হচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে অপরাধীরা তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে রাজ্যে রাজ্যে অপরাধ সংগঠিত করছে।’ এরপরেই তিনি বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য রাজ্যগুলির একসঙ্গে কাজ করা শুধুমাত্র সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নয়, রাষ্ট্রের প্রতি রাজ্যগুলির দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে’ এর পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশের জন্য এক দেশ, এক উর্দি নীতি চালু করা নিছকই ভাবনা মাত্র। আমি মোটেই তা আপনাদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছি না। শুধু ভেবে দেখার জন্য বলব। এতে হয়তো পাঁচ, দশ, পঞ্চাশ বছরও লাগতে পারে। প্রসঙ্গত, দেশের সব রাজ্য নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী রাজ্য পুলিশের উর্দির রং এবং লোগো নির্ধারণ করে। সেই বিষয়ে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সরকারের এই হস্তক্ষেপ কেন? প্রশ্ন উঠছে। নাকি এই পদক্ষেপও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার আগে সাধারণের পালস বুঝতে চাওয়া।

যে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এইসব বলেছেন, সেই বৈঠকেই তিনি আরও বেশ কিছু কথা বলেছেন। আপাতদৃষ্টিতে যে বক্তব্যকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে হলেও সেই শব্দও তিনি খরচ করেছেন ক্রোনোলজি মেনে। আরএসএস-এর অ্যাজেন্ডা ধরেই। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘সব ধরনের নকশালবাদকে পরাস্ত করতে হবে আমাদের, সে বন্দুকধারীই হোক বা কলমধারী। ওদের জন্য সমাধান বার করতে হবে।’ যে বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন কলমধারী নকশালবাদের কথা বলছেন, তখন তাঁর উচিত এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় পড়ে দেখা। সুপ্রিম কোর্ট একের পর এক রায়ে কলমের অপ্রতিরোধ্য অধিকারের কথা বলেছে।’ তাঁর অভিমত, সরকার আসলে বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। যাতে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করা যায়। আর প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সূত্র ধরেই একটু দেখে নেওয়া যেতে পারে আরএসএস-এর মুখপত্র অর্গানাইজার-এর গত ২ নভেম্বরের একটি প্রতিবেদন। ঋষি সুনকের গুণগান প্রসঙ্গিত ‘ঋষি সুনক বিকামস ইউকে-র ফার্স্ট হিন্দু পিএম’ শীর্ষক প্রতিবেদনের শুরুটাই করা হয়েছে ইচ্ছাকৃত বিকৃতি দিয়ে। যেখানে সেক্যুলারিজম-কে (Secularism) লেখা হয়েছে সিকুলারিজম (Sickularism)। না। কোনো মুদ্রণ প্রমাদ নয়। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করেন তাঁরা এই ইচ্ছাকৃত বিকৃতির সঙ্গে ভালোরকম পরিচিত।

ঋষি সুনককে আদাজল খেয়ে হিন্দু প্রমাণ করতে নামা বাহিনীর এক সদস্য স্নেহাল প্রভু। যিনি ২৫ অক্টোবর বিকেল ৪.২৩ মিনিটে এক সাধুর সঙ্গে সুনকের এক ছবি দিয়ে পোস্ট করেন, ‘ইউকে-র নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক শপথ গ্রহণের আগে আশীর্বাদ নিচ্ছেন।’ যদিও ইন্ডিয়া টুডে-র ফ্যাক্ট চেক জানিয়েছে এই ছবি ভুয়ো। এই ছবি ১৮ আগস্টের। সুনকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এই উচ্ছ্বাসের প্রাবল্যের সঙ্গে সাভারকরীয় মুচলেকার কোনো যোগাযোগ আছে কিনা জানা নেই। আর এই সময়েই পুরীর গোবর্ধন পিঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী দাবি করেছেন, হিন্দু ছিলেন যিশু। ১০ বছর তিনি ভারতে কাটিয়েছিলেন। তার মধ্যে পুরীতেই তিনবছর ছিলেন। সেই সময়ে হিন্দুই ছিলেন তিনি। পরে তাঁকে ধর্মান্তরিত করা হয়। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত বক্তব্যের প্রমাণও তাঁর কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন শঙ্করাচার্য। ইনিই সেই শঙ্করাচার্য যিনি এর আগে দাবি করেছিলেন নবি মহম্মদও হিন্দু ছিলেন। ওপরের ঘটনাগুলোর কোনোটাই ভুল নয়। বরং ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘটানো এবং আরও স্পষ্ট করে বললে এই প্রচার ক্রোনোলজি মেনেই। সবকিছু গুলিয়ে দিতে, অনাবশ্যক বিতর্ক তৈরি করে কিছুটা সময় অন্য বিষয় থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে।

২ নভেম্বর রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রয়াত হাসিম আবদুল হালিম স্মারক বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সংসদীয় গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থনীতি - সবটাকে ধ্বংস করে, তছনছ করে কোন ‘নিউ ইন্ডিয়া’র কথা বলছে মোদি সরকার? এগুলো ধ্বংস করে দেশকে কীভাবে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়? গ্রামসভা থেকে লোকসভা, সব কিছুকে অকেজো করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের কথা বলার অধিকার থেকে সংবিধান বর্ণিত অধিকারগুলো ছিনিয়ে নিয়ে এক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করার প্রচেষ্টা চলছে। কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা চলতে পারে না।

তবে ক্রোনোলজি যাই বলুক এবং যাই করুক এর উলটোস্রোতও সমান তালে বইছে। বলা যেতে পারে ক্রমশ গতি পাচ্ছে। দেশজুড়েই। যে কোনো কিছুতে রবীন্দ্রনাথকে টেনে আনা নিজের অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টামাত্র। আরও একবার নাহয় সেই কাজই করি। তিনি লিখে গেছেন, “যারা শক্তিমান তারা উদ্ধত। দুঃখীদের মধ্যে আজ যে শক্তির প্রেরণা সঞ্চারিত হয়ে তাদের অস্থির করে তুলেছে তাকে বলশালীরা বাইরে থেকে ঠেকাবার চেষ্টা করছে - তার দূতদের ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাদের কণ্ঠ দিচ্ছে রুদ্ধ করে।...” “অতিশয় শক্তি অতিশয় অশক্তির বিরুদ্ধে চিরদিন নিজেকে বাড়িয়ে চলতেই পারে না।” আশা সেখানেই।