৫৮ বর্ষ ২৫ সংখ্যা / ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২২ মাঘ, ১৪২৭
যাহা নবান্ন, তাহাই ছাপ্পান্ন
তৃণমূল সরকারকে চার্জশিট ধরাতে লাখো যুবক ১১ ফেব্রুয়ারি শামিল হবেন নবান্ন অভিযানে
আর কোনো দাবি দাওয়ার পথ নয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর অপদার্থতার জন্য সরে যেতে হবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে - এ কথা জানিয়ে দিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সচিবালয় নবান্ন অভিযান করতে চলেছেন এ রাজ্যের লাখো ছাত্র-যুব। ডিওয়াইএফআই, এসএফআই সহ ১০টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন এই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে। নবান্ন অভিযানের কর্মসূচির সপক্ষে শতাধিক বিক্ষোভ সভা-মিছিল থেকে জোরালো হয়েছে এই সরকারকে সরানোর ডাক। সর্বত্রই ছাত্র-যুব নেতৃত্ব তুলে ধরছেন এ রাজ্যের তরুণতর অংশের মনের ক্ষোভের কথা। এর আগে রাজ্যের সরকারের কাছে একাধিকবার তাদের দাবি-দাওয়া পৌঁছে দেবার পরেও পরিস্থিতির উন্নতির বদলে অবনতি হয়েছে। তাই আর কর্মসংস্থান শিক্ষার দাবিসহ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কোনো আবেদন নয়, এবার চার্জশিট এই তৃণমূল কংগ্রেসের দশক ব্যাপী অপশাসনে ভুরি ভুরি অপদার্থতার নজিরের প্রেক্ষিতে।
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনো দাবি জানাতে যাচ্ছি না। দশ বছর ধরে ওনার কাছে দাবি জানিয়েছি। প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছেন উনি। তাই এবার আর কোনো দাবি নয়। পরিষ্কার ওনাকে বুঝিয়ে দেওয়া আপনি আর নবান্নে ফিরবেন না। এই বার্তা দিতে আমরা ১১ ফেব্রুয়ারি নবান্ন অভিযান করছি। এই সরকার তার ১০ বছরের সময়সীমার মধ্যে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আর ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ নেই। এটা জনাদেশ। এই কথাটাই আমরা নবান্নে জানিয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাম গণতান্ত্রিক সরকার এলে ১০ বছর আগে যেখানে রাজ্যের উন্নয়ন থমকে গিয়েছিল তা পুনরায় শুরু করা যাবে। এই বার্তাটাও আমাদের রয়েছে। আমাদের একটা ক্যাম্পেইন চলছে ‘কাজ চেয়ে নাম লেখাও’। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এই অনলাইনে ক্যাম্পেইনে তাদের নাম নথিভুক্ত করছে। সেই নামের তালিকা আমরা আগে থেকেই বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সরকারের জন্য নবান্নে গিয়ে রেখে আসব। নতুন নামের তালিকা ধরে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চেষ্টা করতে পারে চাকরি দেবার। গতকাল সিঙ্গুরে প্রতীকী শিলান্যাস হয়েছে। রাজ্যটাকে ঢেলে সাজাতে হবে, সেটা বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯সালের ১২-১৩ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর থেকে নবান্ন পর্যন্ত অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল ডিওয়াইএফআই-এসএফআই’সহ রাজ্যের ১২টি ছাত্র-যুব বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লক্ষ লক্ষ বেকার যুব’র প্রতীকী আবেদনপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ছিল এই অভিযান। সেই আবেদনপত্রে লেখা ছিল লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকের কাজ না পাওয়ার যন্ত্রণার কথা। প্রায় এক দশক আগে সিঙ্গুরেই পশ্চিম বাংলার লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ধ্বংস হয়েছিল। প্রতারণা হয়েছিল এই অঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গেও। ২০১৯-এ কাজের দাবি তোলার অভিযান রুখতে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রক্তাক্ত বাংলার ছাত্র-যুব সমাজ সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশের লাঠি -গ্যাস-জল কামানের মুখে।
রাজ্যের ছাত্র যুব নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূলের সরকারের বিদায়টা নিশ্চিত করতে আমাদের এই লড়াই। তাই আমাদের এই নবান্ন অভিযান। দুর্নীতির অভিযোগ প্রশাসন ছাপিয়ে এই সরকারের শীর্ষস্তরের বিরুদ্ধেও। আমরা মনে করি তৃণমূল বিদায় না নিলে বিজেপি’র বাড়বাড়ন্ত ঠেকানো যাবে না। বিজেপি’র সাপ্লাই লাইন হলো তৃণমূল। বিজেপি-কে তো এই সময়কালে গোটা ভারতের মানুষ দেখেছে। ত্রিপুরার মানুষ দেখছেন। এটা তৃণমূলের ‘বি টিম’। তাদের সম্পর্কে যেন মানুষের মোহ না থাকে সেটা নিশ্চিত করতেই এই অভিযান। মুখ্যমন্ত্রীকে চার্জশিট দিয়ে আমরা চলে আসব ওইদিন। তারপর ২০২১ সালে রাজ্যের মানুষ রায় দেবেন এই দু’টো শক্তিকে পরাজিত করে প্রকৃত বিকল্প হিসেবে বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে।