৫৮ বর্ষ ২৫ সংখ্যা / ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ২২ মাঘ, ১৪২৭
মমতার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের রাজনৈতিক তাৎপর্য
গৌতম রায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রীসভাতে ছিলেন, ততদিন আরএসএস বা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র রাজনীতি আর ধর্মান্ধতার মিশেল স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’ সম্পর্কে কোনো আপত্তির কথা, কেউ কখনো শোনেন নি। গুজরাট গণহত্যায় বহুল ব্যবহৃত এই স্লোগান ঘিরে বাজপেয়ী মন্ত্রীসভার সদস্যা মমতা কখনো এতটুকু আপত্তি জানান নি। বরং সেই স্লোগান দিতে দিতে মুসলমানের রক্তে হাত রাঙিয়ে নরেন্দ্র মোদী আবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুল পাঠাতেও মমতার কোনো অসুবিধা হয়নি। মমতা যখন বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবার লক্ষ্যে সিঙ্গুর ঘিরে ধর্মতলায় অনশনের অভিনয় করেছিলেন, তখন বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং আসার পর, সেখানে জমে থাকা বিজেপি সমর্থকেরা যখন সেই স্লোগান দেয়, সেদিনের বিরোধী নেত্রীর কাছে চরম সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিতবাহী সেই স্লোগান ঘিরে কোনো আপত্তি ওঠেনি।
গত ২০১৯ সালের লোকসভার ভোটে এই রাজ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পাবার পর, বিজেপি-কে জেতাতে মমতা বা তাঁর দল কিভাবে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে সাহায্য করেছে, সেই বিষয়টি যখন সর্বস্তরের মানুষের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল, তখন বিজেপি’র সঙ্গে ছদ্ম দূরত্বটাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতেই প্রকাশ্য জনপথে ওই স্লোগানটিকে ঘিরে মমতা এমন আচরণ করলেন, যে আচরণকে কোনো অবস্থাতেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের পরিচয়ের সঙ্গে খাপ খায় না। বিজেপি’র সঙ্গে নিজের ছদ্ম দূরত্ব বোঝাতে ভাটপাড়াতে প্রকাশ্য রাস্তায় বিজেপি’র স্লোগানের মোকাবিলার নাম করে তিনি চূড়ান্ত ভাষা এবং জাতি বিদ্বেষ ছড়ালেন। তারপর থেকেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ জীবনপণ লড়াই করে যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিজয়বৈজয়ন্তী উড়িয়েছিলেন, সেই স্লোগানের অনুকরণে মমতা জাতি এবং ভাষা বিদ্বেষ ছড়িয়ে, আরএসএস-বিজেপি’র ধর্মান্ধতার প্রতিকল্প হিসেবে ভাষাভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার আমদানি ঘটালেন।
মমতা আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার সাথে বিজেপি’র পক্ষে মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও স্পষ্ট করতে সংযুক্ত করেছেন ভাষা- জাতপাতভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাকে। এই উদ্দেশেই তিনি গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর থেকে যে বাঙালি-অবাঙালি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন, সেটিকে যেমন সময়ের নিরিখে উচ্চনাদে নিয়ে গিয়েছেন, তেমনিই ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। এই তত্ত্বের ভিতর দিয়ে মমতা ঠিক শিবসেনার মারাঠি অস্মিতা বা আনন্দমার্গের রাজনৈতিক সংগঠন ‘আমরা বাঙালি’র উগ্রতার আমদানি ঘটাতে চাইছেন।এই উগ্রতার ভিতর দিয়ে আরএসএস-বিজেপি’র ধর্মান্ধতা আর মমতার প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা এমন একটা জায়গাতে গিয়ে পৌঁছতে শুরু করেছে, যার জেরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অবাঙালি ভারতীয় নাগরিকেরা, যাঁরা রুটি-রুজির তাগিদে এই রাজ্যে কতো পুরুষ আগে এসেছেন, তার সালতামামি তাঁদের নিজেদেরই মনে নেই, সেইসব মানুষের ভিতরে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছেন।আর এর পাল্টা হিসেবে অন্য রাজ্যগুলিতে রুটি-রুজির জন্যে যেসব বাঙালি আছেন, তাঁদের সেইসব রাজ্যের মানুষদের বিদ্বেষের শিকার করে তুলছেন। আরএসএস-বিজেপি’র যে বিদ্বেষের রাজনীতি, বিভাজনের কৌশল, তাকে এইভাবে উসকে দিচ্ছেন মমতা। এভাবেই তিনি সাম্প্রদায়িক বিজেপি-কে সাহায্য করে চলেছেন।
রাজ্য বিধানসভার ভোট যতো এগিয়ে আসছে, মমতা ততোই তাঁর বিজেপি-কে সাহায্য করবার নতুন কৌশল, ‘ভাষা-জাতপাতভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতাকে, আরও উগ্র করে তুলতে বিজেপি’র রাজনৈতিক স্লোগানের অনুকরণে নিজের রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে ‘জয় বাংলা’কে তুলে ধরতে শুরু করেছেন। এই স্লোগানটিকে মমতা কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে কিন্তু তুলে ধরছেন না। এই স্লোগান মমতা তুলে ধরছেন ভাষা-জাতপাতকেন্দ্রিক অস্মিতাকে চাগিয়ে দিয়ে বিজেপি-কে ভোট রাজনীতিতে সুবিধে করে দিতে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষ যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে সামনে রেখে হানাদার পাক বাহিনীকে মিত্রশক্তির সহায়তায় পর্যুদস্ত করেছিল, সেই স্লোগানের মূল ভিত্তি ছিল অসাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। মমতা কিন্তু কোনো অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে তাঁর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে তুলে ধরছেন না। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার দ্বারা নিজের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে মানুষের সামনে মেলে ধরছেন না।
ধর্মান্ধ চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতেই মমতা এই রাজ্যের বাঙালি অধিবাসীদের সঙ্গে অবাঙালি অধিবাসীদের একটা ভয়াবহ দ্বন্দ্ব তৈরি করতে, সংঘাত সৃষ্টি করতেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিকে তুলে ধরছেন।বাংলাদেশে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে স্ফূরণ ’৫২ র মহান ভাষা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে উঠে এসে মুসলিম জাতীয়তার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে, তার অন্তঃস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার চেতনাই ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের মতো বহুভাষী দেশে প্রতিবেশি বাংলাদেশের সংগ্রামঋদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং তার মূল স্লোগান ‘জয় বাংলা’র দর্শনজনিত সাদৃশ্য নেই। মমতা যে ‘জয় বাংলা’র স্লোগান দিচ্ছেন, সেই স্লোগান কিন্তু মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত নয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটির আন্তর্জাতিক মাত্রা পাওয়ার প্রধান দু’টি কারণ হলো, স্লোগানটির অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং তার বিশ্বস্ত দোসর হিসেবে পাকিস্তানি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা।
মমতা এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিকে যে দ্যোতনায় তুলে ধরছেন, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতার কোনো জায়গা নেই। বরং রয়েছে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলার নাম করে ভাষাভিত্তিক, জাতপাতভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার ডিমে তা দেওয়ার একটা জঘন্য ষড়যন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিকস্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটির ভিতর দিয়ে পরীক্ষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, মমতা সেই স্লোগানটিকে আঞ্চলিক ভেদবুদ্ধির নিরিখে তুলে ধরে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকে একদম খুন করতেই, বিভাজনের উদ্দেশে, বাঙালি-অবাঙালি, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা বনাম ভারতের অন্য রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের ভিতরে একটা সংঘাত তৈরি করে বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই এই স্লোগানটিকে তুলে ধরছেন।
মমতা যখন এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে আরএসএস-বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীসাথীদের ধর্ম-রাজনীতির মিশেল দেওয়া স্লোগান ‘জয় শ্রীরাম’র তৃণমূলীয় পরিপূরক হিসেবে তুলে ধরছেন, ঠিক তখনই মমতার এই স্লোগানযুদ্ধের লোকদেখানো খেলাকে বিজেপি’র দিলীপ ঘোষ বর্ণনা করছেন, মমতার ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ তৈরির উদ্যোগ হিসেবে। আরএসএস-বিজেপি বঙ্গবন্ধু-উত্তর বাংলাদেশের সংবিধানে স্বৈরাচারি এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অন্তর্ভুক্তিকে ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এইভাবে তুলে ধরতে চায় যে, বাংলাদেশ একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান যে অর্থে ইসলামিক রাষ্ট্র, বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম যে সেই চেতনার অনুসারী আদৌ নয়, ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি সেটা কিছুতেই স্বীকার করে না। এই প্রকৃত সত্যটা যে ভারতের সাধারণ মানুষ জানুক, সেটাও হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি চায় না। তাই মমতা যে অর্থে বাংলাদেশে তিরিশ লক্ষ শহিদের আত্মবলিদানের ভিতর দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিকে বুকে ধারণ করে, যে স্লোগান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শাহাদাত বরণের পর জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, খালেদা জিয়া কার্যত নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল বাংলাদেশে, তাকে পশ্চিমবঙ্গে তুলে ধরছেন বিভাজনের রাজনীতিকেই উসকে দিতে, বিজেপি’র প্রতি সাহায্যকারী মমতার এই ভূমিকাকেই ব্যবহার করছে আরএসএস-বিজেপি। মমতা যেভাবে বিজেপি’র সঙ্গে একটা ছদ্ম সংঘাতের পথে হেঁটে বিজেপি’কে সবরকমভাবে সাহায্য করছেন, বিজেপি-ও এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ঘিরে মমতার ভূমিকাকে কেন্দ্র করে, মমতার বিরুদ্ধে একটা ছদ্ম লড়াইয়ের পথ বেছে নিয়েছে।
মমতা আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দিত ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে নিজের সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে দিলীপ ঘোষের মতো বিজেপি নেতাদের… ‘মমতা গ্রেটার বাংলাদেশ তৈরির ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত অভিযোগ তোলবার যে সুযোগ করে দিয়েছেন, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন ভোটে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি সহ ,গোটা রাজ্য জুড়ে ধর্মীয় বিভাজনের পরিবেশ তৈরির একটা সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেল।
বাঙালি জাতিসত্তার সম্যক বিকাশের যে ঐতিহাসিক পরম্পরা আজকের স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে ধারণ করছে, তার সঙ্গে ভারতের মতো একটি বহু ভাষাভাষী, সংস্কৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের একটি অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের তুলনা টানা চরম বিভ্রান্তিকর।অথচ মমতা তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে অন্য রাজ্য থেকে বিজেপি’র যেসব নেতা এই রাজ্যে তাঁদের দলের রাজনৈতিক প্রয়োজনে আসছেন, তাঁদের ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে দিচ্ছেন। এইধরনের তকমাতে ভারতের একটি রাজ্য থেকে যে কোনো প্রয়োজনেই অপর একটি রাজ্যে আসা মানুষকে দেগে দেওয়ার অর্থ হলো, জাতি এবং ভাষা বিদ্বেষকে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া। মমতা বিজেপি’র যেসব নেতারা ভিন প্রদেশ থেকে আসছেন এই রাজ্যে, তাঁদের উদ্দেশ্যে কিন্তু একটিবারের জন্যেও কোনো রাজনৈতিক আক্রমণ করছেন না।ভারতের মানুষকে এক রাজ্য থেকে রাজনৈতিক তাগিদে বা স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশে আসাটার পিছনে ‘বহিরাগত’ তত্ত্বের অবতারণা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ‘বহিরাগত’ তত্ত্ব যে মমতার দলের ভিন রাজ্যের অধিবাসী সাংসদ দীনেশ দ্বিবেদির উদ্দেশে খাটে কিনা বলে বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, সেই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
মমতা ব্যানার্জি বিজেপি’র পশ্চিমবঙ্গে পা রাখবার সিঁড়ি হিসেবে এতকাল ব্যবহৃত হয়েছেন।এখন মমতা চাইছেন, নিজের পিঠের উপর বিজেপি’র ভার বহন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, গান্ধী হত্যাকারী আরএসএস’র রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’কে প্রতিষ্ঠিত করতে। সেই উদ্দেশেই রাজ্য বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত সংক্ষিপ্ততম অধিবেশনে বিজেপি’র স্লোগানের মোকাবিলায় নিজের স্লোগান ঘিরে শীবাকীর্তন গাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বিধানসভার ভিতরে দাঁড়িয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে, স্লোগানটির মূল ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার কিভাবে গঙ্গাযাত্রা ঘটাচ্ছেন, তা বোঝাতে চাইলেও আনন্দবাজার পত্রিকা সুজনবাবুর বক্তব্যকে ঘিরে একটা বিকৃত মানসিকতা তৈরিতে প্রবৃত্ত হলো। এই পত্রিকা এমনভাবে বিধানসভার ভিতরে স্লোগান বিতর্ককে উপস্থাপিত করলো, যাতে সাধারণ মানুষের মনে হয়, সিপিআই(এম) নেতা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্লোগানটির বিরোধিতা করছেন।
মমতা যে হারে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রতিদিন নিজের পেটোয়া খবরের কাগজগুলোতে দিচ্ছেন, তাতে সুজনবাবুকে বিকৃত করে মমতার প্রিয়পাত্র হওয়া ছাড়া আনন্দবাজারের কাছে আর কোনো বিকল্প পথ অবশ্য ছিল না। বাবু যতো বলে, পারিষদগণ বলে তার শতগুণ, দুই বিঘা জমিতে রবীন্দ্রনাথ বর্ণিত আপ্তবাক্যের প্রতি মর্যাদা দিয়েই ওই কাগজের এক সাংবাদিক সামাজিক গণমাধ্যমে নিজের কাগজের অপব্যাখ্যার সমর্থনে সুজন চক্রবর্তীকে কার্যত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাহী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিরোধী বলে মন্তব্য করতেও ছাড়েন নি।এই বাংলাতেই কাঙাল হরিনাথ, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মুজিবর রহমান (দি মুসলমান), বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়রা সাংবাদিকতা করেছিলেন, এটা ভাবতেও এখন কষ্ট হয়।