৫৮ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৫ মার্চ, ২০২১ / ২০ ফাল্গুন, ১৪২৭
মানুষের ঐক্যকে বুথে নিয়ে যেতে হবে
সূর্য মিশ্র
ব্রিগেড ময়দানে বক্তব্য রাখছেন সূর্য মিশ্র।
এইরকম ব্রিগেড আগে কখনও হয়নি। এখানে যে শক্তিরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসে আছে, সেই ঐক্যই যথেষ্ট নয়। আসন ভাগাভাগি শেষ কথা নয়। শেষ কথা হচ্ছে মানুষের ঐক্য। যা বুথে বুথে, এলাকায়, ওয়ার্ডে, প্রত্যেকটা বাড়িতে বাড়িতে গড়ে তুলতে হবে। ব্রিগেড সমাবেশে এই আহ্বানই জানান সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। রাজ্যের প্রত্যেকটা অংশে এই ঐক্য গড়ে তুলতে তাঁর পরামর্শ হলোঃ কে কোন্ পার্টির ঝান্ডা ধরে তা দেখলে চলবে না। মানুষ মানে মানুষ। তাকে কাছে পেতেই হবে। সব নিপীড়িত শোষিত বঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথেই ঘোষণা করেনঃ এই বড়ো লড়াইতে কোনো সন্দেহ নেই পশ্চিমবঙ্গ বদলাবে। বিকল্পের জন্য সংগ্রামের রাস্তা খুলে যাবে। সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। সেই কাজে আপনারা থাকবেন। আরও মানুষকে নিয়ে আসবেন।
কাঙ্ক্ষিত বিকল্পের একটা সংক্ষিপ্ত ছবিও সমাবেশে তুলে ধরেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই বিকল্পের মুল অভিমুখই হচ্ছে নতুন কাজ তৈরি করা। সরকারি, আধা সরকারি, স্কুল, কলেজ সহ সমস্ত দপ্তরে যত শূন্য পদ আছে তা একবছরের মধ্যে পূরণ। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানো। রেগার কাজ বছরে ১০০ থেকে ২০০ দিন করা। শুধু গ্রামেই আর নয় প্রকল্প সম্প্রসারিত করা শহরে। ছোটো মাঝারি কারখানা গড়া, বড়ো কারখানা গড়ার যতোটুকু সুযোগ আছে মানুষের সহমতের ভিত্তিতে তার রূপায়ণ। সুনিশ্চিত করা খাদ্যের নিরাপত্তা, যাতে কেউ অর্ধাহারে অনাহারে না থাকে। ২ টাকা কিলো চালের ব্যবস্থা করা, যা আমরা সরকারে থাকার সময়ে করেছিলাম কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়াই। প্রত্যেকের শিক্ষা স্বাস্থ্যের অধিকার। রাজ্যের পশ্চাৎপদ অনুন্নত এলাকায় যাঁরা থাকেন তাঁদের শিক্ষা স্বাস্থ্যের খাদ্যের অধিকার কেন থাকবে না। এসবের জন্য যেসব প্রকল্প আগে চালু ছিল তা আবার শুরু করতে হবে। কত জনজাতির মানুষ আছে এরাজ্যে। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, তরাই ডুয়ার্স, পাহাড় থেকে জঙ্গলমহলে বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের নিজস্বতা, তাদের সংস্কৃতি আক্রমণের মুখোমুখি। আমরা সমস্ত শক্তি নিয়ে তা রেখার চেষ্টা করব। সমান অধিকার কায়েমের লক্ষ্যে তাদের সামাজিক অধিকারের উপর আক্রমণকে রুখব। মহিলারা যাঁরা সমাজের তিন ভাগের দু’ ভাগ শ্রম দেয়, তাঁরা নিরন্তর বঞ্চনা বৈষম্যের শিকার। তাঁদের অধিকার, মুক্তির জন্য লড়াই আমাদের লড়াইয়ের অংশ হবে। মা-শিশুর কল্যাণ অগ্রাধিকার পাবে।
সূর্য মিশ্র বলেন, পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি খেটেখাওয়া মানুষ, ছাত্র, যুব, মহিলা, আদিবাসী, তপশিলি জাতি, সংখ্যালঘু সবাই আক্রান্ত। তাঁরা কোন্ জাতের, কোন্ ধর্মের সেটা ব্যাপার নয়। তাঁরা আক্রান্ত বঞ্চিত লাঞ্চিত নিপীড়িত শোষিত। যখন রাজ্যের এই অবস্থা তখন শাসকদলগুলির মধ্যে তরজা চলছে। এটা আমাদের গ্রামের তরজার মতো নয়। এখানে গানের পার্টি একটাই। সে এ পক্ষের হয়ে গাইছে, ও পক্ষের হয়েও গাইছে। গান ওপর থেকে লিখে দিচ্ছে। যারা লিখে দিচ্ছে তারাই তরজা বানাচ্ছে। সারা দুনিয়াতে তরজা চলছে। ওদের একটাই লক্ষ্য, মানুষের মধ্যে ভাগ করো, শাসন করো আর লুঠ করো। ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করো। সারা দুনিয়ার কিছু লোক সব সম্পদ লুঠ করছে। শোষণ বঞ্চনা লুঠকে চাপা দেওয়ার জন্যই এই তরজা।
যাঁরা শোষণ বঞ্চনার সবচেয়ে বেশি শিকার সেই তপশিলি জাতি, আদিবাসী, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, সংখ্যালঘু মানুষই আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ। এঁদের ৭১ শতাংশই হচ্ছে শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি, খেটেখাওয়া সর্বহারা মানুষ। এই তথ্য উল্লেখ করে সূর্য মিশ্র বলেন, আমাদের লড়াই ওইসব খেটেখাওয়া মানুষের লড়াই। বঞ্চিত, শোষিত নিপীড়িত মানুষের লড়াই। যাঁরা সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার, তাঁদের জন্য লড়াই - এসব লড়াই একসঙ্গে চালাতে চাই। যাতে ভাগ করো, শাসন করার নীতিকে পরাস্ত করতে পারি। তিনি বলেন, মানুষের জীবন জীবিকার লড়াই, কৃষকের লড়াই, শ্রমিকের লড়াই, বেকারের লড়াই - এইসব লড়াই মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। আমাদের নির্বাচনী লড়াই তারই অংশ। এই লড়াইয়ের মধ্যেদিয়েই আমরা বিকল্প গড়তে চাই।