E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৫ মার্চ, ২০২১ / ২০ ফাল্গুন, ১৪২৭

নির্বাচনে টিএমসি-বিজেপি উভয় অপশক্তিই পরাস্ত হবে

অধীর চৌধুরী


এদিন জনপ্লাবিত ব্রিগেড ময়দানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও সংসদের বিরোধী দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, বাংলার আগামী নির্বাচনকে যারা বোঝাতে চাইছে নির্বাচন হবে টিএমসি এবং বিজেপি - এই দুই দলের মধ্যে, তাদের সেই তত্ত্বকে খারিজ করে আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করছে এই দুই শক্তির উপরে উঠে সংযুক্ত মোর্চা ক্রমশ তাদের বক্তব্য, অভিব্যক্তি, উপস্থিতি স্পষ্ট করছে। আগামীদিনে টিএমসি-বিজেপি থাকবে না, সংযুক্ত মোর্চাই শুধু থাকবে। তিনি বলেন, একটা প্রবাদ আছে সকাল দেখলে বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। আজকের সভা এটাই স্পষ্ট করছে নির্বাচনে টিএমসি-বিজেপি উভয় অপশক্তি পরাস্ত হবে। ইয়ে তো স্রেফ ঝাঁকি হ্যায়, সরকার বদলনা অভি ভি বাকি হ্যায়। এই বাকি কাজ করার জন্য সবাইকে এককাট্টা হয়ে লড়তে হবে।

তিনি বলেন, সংযুক্ত মোর্চার লক্ষ এ বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির জয় নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক, স্বৈরাচারি শক্তিকে পরাস্ত করা। তাই আজ আমরা মাঠে দেখতে পাচ্ছি রঙবেরঙের পতাকা উড়ছে। আমরা লক্ষ করছি এই মাঠে নতুন বাংলা গড়ার, নতুন পরিবর্তনের রামধনু উঠেছে। যারা প্রমাণ করতে চায় এই বাংলায় লড়াই হবে দু’টো শক্তির মধ্যে - তাদের বলতে চাই - নজর বদলো, নজারে বদল জায়েঙ্গে। সোচ কো বদলো, সিতারে বদল জায়েঙ্গে। কষ্ঠিয়া বদলনে কী জরুরত নেহি, দিশা বদলো। কিনারে বদল জায়েঙ্গে। সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য এ বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র আগ্রাসনকে রুখে দেওয়া, স্বৈরাচারী টিএমসি-র অপশাসনকে রুখে দেওয়া।

তিনি দেশের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, সারা দেশ ও বাংলার দিকে তাকান - হতাশা, নৈরাশ্য আর অবসাদ ছাড়া আর কিছু নেই। সারা দেশ ও বাংলার অর্থনীতি চুরমার হয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ফারাক খুঁজে পাওয়া ভার। এরা দু’জনেই গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে টুঁটি টিপে হত্যা করে স্বৈরতন্ত্রকে কায়েম করার চেষ্টা করছে। তাই নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে বলেন, বিরোধীমুক্ত ভারত চাই। এখানে দিদি বলেন, বিরোধীমুক্ত বাংলা চাই। এদের দু’জনেরই রাজনৈতিক ডিএনএ এক।

দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্প্রদায়িক ভারত গড়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমাদের প্রয়োজন রুটি, রুজি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা। এসব কি দিতে পারছে দে‍‌শের সরকার? পেট্রোপণ্যের দাম লাগাতার বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে ১৪ বার তেলের দাম বাড়ায় দেশজুড়ে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। করোনার সময় তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি ইচ্ছে করলে তেলের দাম ১ টাকা নয়, ১৫ টাকা কমাতে পারতেন। ছত্তিশগড়ে ১ লিটার পেট্রোলের দাম ১২ টাকা ও ১ লিটার ডিজেলের দাম ৪ টাকা কমানো হয়েছে। রাজ্য সরকার ভ্যাট থেকে এবং কেন্দ্রীয় সরকার এক্সাইজ ডিউটির মাধ্যমে তেলের দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

লকডাউনের সময় রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নিষ্ঠুর আচরণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে যখন রাজ্যে ফিরতে চেয়েছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী ফিরেও তাকাননি। তাঁদের সঙ্গে গোরু-ছাগলের মতো আচরণ করা হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকরা যে ট্রেনে ফিরছিলেন সেই ট্রেনকে করোনা স্পেশাল বলে তাদের অপমান করেছেন। এসব বাংলার মানুষ কোনোদিন ভুলবে না। তিনি বলেন, রুটি-রুজির জন্য যখন এই বাংলায় আন্দোলন হয়, তখন বামপন্থী যুবক মইদুল ইসলাম মিদ্যাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। মুখ্যমন্ত্রী কি একবারও বলতে পারতেন না যে, মইদুলের মৃত্যুতে আমি দুঃখী। অপরাধীদের আমি শাস্তি দেব। মুখ্যমন্ত্রী মইদুলের মা‍‌কে গিয়ে বলেছেন চাকরি দেবেন। কিন্তু কীসের চাকরি? হোমগার্ডের। বাংলার বেকার যুবকদের মৃত্যু নিয়ে এভাবেই রসিকতা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, দিল্লিতে লক্ষ লক্ষ কৃষক ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে লড়াই করছে। দেশের রেশন ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না যায় এবং খাদ্য সুরক্ষার দাবিতে তারা লড়ছে। এ রাজ্যের সরকার কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য দেয় না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এরাজ্যে কৃষকের আয় নাকি তিনগুণ বেড়ে গেছে! এসব আপনারা জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার করে নিন। আপনাদের বলবো আগামী দিনে সংযুক্ত মোর্চাকে শক্তিশালী করা মানে বাংলাকে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাই আপনারা এই সভা থেকে শপথ নিয়ে যান, এই বাংলার পরিবর্তন আপনারা করবেন। এই পরিবর্তন সহজ, সরল রাস্তায় হবে না। ওদের টাকা আছে, পুলিশ আছে, ক্ষমতা আছে। তাই হিম্মত ধরতে হবে।