৫৮ বর্ষ ২৯ সংখ্যা / ৫ মার্চ, ২০২১ / ২০ ফাল্গুন, ১৪২৭
‘সহসা ঘুমের তল্লাট ছেড়ে শান্তি পালাল আজ’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
অ্যাকুওয়েদার বলে একটা ওয়েবসাইট আছে। যারা দিনের তাপমাত্রার আগাম হিসেব দেয়। ওই ওয়েবসাইটের হিসেব অনুসারে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শহর কলকাতার তাপমাত্রার পারদ ছিলো ৩৭ডিগ্রির আশেপাশে। সর্বনিম্ন ২৩ডিগ্রি। একটু খোঁজাখুঁজি করলে জেলাভিত্তিক তাপমাত্রা পেতেও অসুবিধে হবে না। বেশ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ থেকে গরমের পারদ চড়তে সময় নিয়েছে মাত্র কয়েক দিন। তাতেই ২১ ফেব্রুয়ারির ১৭ সর্বনিম্ন থেকে ২৮ তারিখ ৩৭-এ পৌঁছে গেছে উত্তাপ। অবশ্য উত্তেজনা হোক বা গরম, পারদ যখন চড়ে - এভাবেই চড়ে। চড়চড় করে। হিসেব উল্টে দিয়ে সংখ্যা বাড়ে, শতকরা বাড়ে। ধরতে পারা যায়না।
ওইদিন শহর কলকাতার ফুসফুস ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে কড়া এবং চড়া রোদ্দুরের সঙ্গে প্রচণ্ড ধুলোও ছিলো। সেই ভয়ঙ্কর গরম, ধুলোর ঝড়ে ব্রিগেডে আসা মানুষজনের যত না কষ্ট হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি কষ্ট হয়েছে ব্রিগেডে না আসা বহুজনের। তারপর থেকেই প্রচন্ড গরম, মারাত্মক ধুলোতে তাঁদের চোখ জ্বালা, শ্বাসকষ্ট শুরু। বাম যুব কর্মীদের রক্ত বিক্রি করে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির শপথ নেওয়া আন্দোলনের সময় ‘বাঙালি বাচ্চার রক্তের তেজ’ খুঁজতে সম্পাদকীয় লিখে যাদের রাশি রাশি নিউজপ্রিন্ট খরচ করতে হয়েছিলো, সেরকম অনেকেই মৃদু ঢোঁক গিলেছেন। আগে থেকে কষে ফেলা হিসেব নিয়ে দাড়ি চুমরোতে চুমরোতে পরিসংখ্যানবিদরা গোপনে নতুন করে পারমুটেশন কম্বিনেশন ছকতে বসেছেন। মিন, মিডিয়ান, মোড, প্রোভাবলিটি নিয়ে নতুন করে নাড়াচাড়া। আনুপাতিক তত্বের নিক্তিতে ফেলে মানুষ ঠিক কোনটা খাবে বুঝতে না পেরে ক্ষণে ক্ষণে হেডলাইন বদল। আবহাওয়া দপ্তর যদিও সেদিন আগাম কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়নি, তবে গত রবিবারের ব্রিগেড জানান দিয়ে গেছে - ঝড় আসছে। সে ঝড়ের ইঙ্গিত যেমন মিলেছে ব্রিগেডের ময়দানে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, তেমনই দেখা গেছে একটু হলেও ঢোঁক গিলে ফেলা মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও। শ্রীনাথ বহুরূপীর উত্তেজিত পিসেমশাই বারবার বলেছিলেন ‘সড়কি লাও - বন্দুক লাও’। “‘লাও’ তো বটে, কিন্তু আনে কে?” আর বঙ্গজ জ্যাঠামশাইরা সেদিন বলছিলেন ‘দূরবিন লাও, দূরবিন লাও’। ‘লাও তো বটে, কিন্তু আনে কে?’ নিউজপ্রিন্ট আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ঢপবাজি আটকাতে বাম কর্মী সমর্থকদের সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধই সেদিন যথেষ্ট ছিলো। তাই ভরা ব্রিগেডের মাঠে ঘাস খুঁজে বেড়ানো মিডিয়া জেঠুদের ছবির লড়াইতে বেমালুম হেরে গিয়ে হেডিং-এর লড়াই-এ মুখ বাঁচাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা চোখ এড়ায়নি। মাঠের বাইরে রেখে দিতে চাওয়া দর্শকরা যে এভাবে একটা ম্যাচের রঙ বদলে দেবেন, খেলে বেরিয়ে যাবেন সেটা ‘খেলা হবে’ তত্বের উদ্ভাবকরাও সম্ভবত ভাবতে পারেননি। একেই বোধহয় বলে ঠেলার নাম বাবাজি, থুড়ি ব্রিগেডজি।
ব্রিগেড সমাবেশের আগের দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি মাঠেই দেখা হয়েছিলো হালিশহরের রবি দাসের সঙ্গে। পেশায় লটারি টিকিট বিক্রেতা রবি দাস অন্যান্য বছরের মত এবারেও ব্রিগেড চলে এসেছিলেন নিজের হুইল চেয়ার সাইকেল নিয়ে। যেহেতু ওঁর কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে তাই পাছে ঠিকসময় ব্রিগেড না পৌঁছতে পারেন, তাই আগেভাগেই এবং বাড়িতে না জানিয়ে। এত কষ্ট করে আসেন কেন জিজ্ঞেস করাতে রবি জানিয়েছিলেন - ‘আমাদের রাজ্যের যা পরিস্থিতি, দেশের যা পরিস্থিতি শুরু হয়েছে তাকে আটকাতে ব্রিগেড না এসে উপায় নেই।’ চার পাঁচ দিনের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াতেও ভ্রূক্ষেপ নেই রবি দাসদের। এ আবেগ, এ বিশ্বাস ছুঁচের ফুটো বিচার করতে বসা চালুনিদের পক্ষে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
কথা হচ্ছিলো গঙ্গারামপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের লতিকা রহমানের সঙ্গে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে মহিলা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুরুষ পুলিশের আচরণের কথা বলতে বলতেই চলে এলেন ব্রিগেড প্রসঙ্গে। বলছিলেন - পার্টি যখন ব্রিগেডের ডাক দেয় আমরা তখন গ্রামের দিকে প্রচারে যাই। ব্রিগেডের কথা বললে মানুষ ছুটে আসতে চায় কলকাতা। যারা সারা বছর বিভিন্ন কারণে এলাকার মিটিং মিছিলে থাকতে পারেনা তাঁরাও একবার ব্রিগেডে পা রাখতে চায়। খুব উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে ‘যামো ব্রিগেড’।
ব্রিগেডে জড়ো হওয়া লাখো লাখো মানুষের মধ্যে থেকে আরও একজনের কথা না বললে এই লেখা সম্পূর্ণ হয়না। তিনি সরস্বতী। সরস্বতী পাঁজা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানের দিন থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া পূর্ব মেদিনীপুরের বাহারপোতা গ্রামের দীপক পাঁজার স্ত্রী। লাখো মানুষের ভিড়ের মধ্যে অবশ্যই থাকবেন পার্টি অন্তঃপ্রাণ দীপক, এই বিশ্বাসে মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সরস্বতী। না, দীপককে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হেবিয়াস কর্পাস দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। কিন্তু বিশ্বাস হারাননি সরস্বতীর মতো মানুষরা। যার স্বামী দীপককে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সভায় মাংস ভাতের লোভ দেখিয়ে যেতে বলা হলেও অত্যন্ত গরিব দিনমজুর মানুষটি খেপে গিয়ে বলতেন - ‘ওটা কি আমাদের পার্টির মিটিং? যে খেতে যাবো?’ শেষ ১০ বছরেও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি দীপক, লতিকা, রবি দাসরা। দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে মানুষের জন্য খবর বেছে দেওয়া ঘণ্টাখানেকের ঘরে এসব খবর পৌঁছায় না। এসব খবর থাকে ব্রিগেডের মাঠে, লাখো মানুষের পায়ের ধুলোয়, বিশ্বাসে। সেখানে চড়া রোদ, কড়া ধুলো, দূরবিন, শতাংশ সব মিথ্যে হয়ে যায়। জীবন্ত হয়ে ওঠে সুকান্ত ভট্টাচার্যর লেখনী - ‘ঠোঁটে ঠোঁটে কাঁপে প্রতিজ্ঞা দুর্বোধঃ কানে বাজে শুধু শিকলের ঝন্ঝন্; প্রশ্ন নয়কো পারা না পারার, অত্যাচারীর রুদ্ধ কারার, দ্বার ভাঙা আজ পণ;’ কর্পোরেটের বাণিজ্য আর বিজ্ঞাপনের ঝনঝনির এ আবেগ স্পর্শ করার ক্ষমতা নেই।
এবারের বাম-কং-আইএসএফ’র ব্রিগেডের দিন কোনো নাটক হয়নি। হয়নি কোনো ধর্না মঞ্চও। ফলে মিডিয়াকেও অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে হয়নি। তবে কৌশলে একটা কাজ করার চেষ্টা হয়েছিলো। সেটা ট্যুইটারে। বহু মানুষ সেই পোস্টার ট্যুইটও করেছিলেন। হয়তো পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি না জেনেই, বা জেনে। ট্যুইটকারীদের সেই তালিকায় ছিলেন প্রশান্ত ভূষণের মত প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বও। তবে সেই চেষ্টা খুব একটা সফল হয়নি। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশান’ শীর্ষক সেই পোস্টারে বলা ছিলো - ৩৩ দিন, ৮ দফা, ২২ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ৬ মুখ্যমন্ত্রী, ৩ কেন্দ্রীয় সংস্থা, হাজারে হাজারে বাহিনী, অপর্যাপ্ত অর্থ, মিডিয়া বনাম হাওয়াই চপ্পল পরিহিত ১ মহিলা। দুঃখিত। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী পরিস্থিতি আদৌ এরকম নয়। সেটা বাইরের মানুষদের জানা না থাকলেও রাজ্যের মানুষ ভালোভাবেই জানেন। এই রাজ্যে বিজেপির সহযোগী শক্তিকে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখানোর চেষ্টাও তাই ফলপ্রসূ হবেনা। যাদের হাত ধরে বিজেপির রাজ্যে প্রবেশ, যে রাজনৈতিক দলের কর্তা ব্যক্তিদের ‘লোন’-এ নিয়েই বিজেপি ‘খেলা হবে’ বলছে, তারা আর যাই হোন বিজেপি বিরোধী কোনোভাবেই নন। এই বিরোধিতা যে মুখোশ মাত্র তা আগেও একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তাদের নিজস্ব ‘দুর্গা’ ভজনা করেই রাজ্যে আরএসএস, বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। ‘ন্যাচারাল অ্যালাই’ র প্রতি এই নিবিড় গোপন ভালোবাসার কথা হয়তো প্রশান্ত ভূষণদের নজর এড়িয়ে গেছে।
বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ হয়ে যাবার পর গত দু’দিনে আশপাশের পরিবেশটা বেশ কিছুটা থমথমে। যার মাথাব্যথা হয়েছে তার চেয়ে বেশি চিন্তিত অন্যেরা। ভালো মন্দ, মন্দ ভালোর দ্বন্দ্বে খেলিয়ে দেবার চেষ্টা চোখ এড়াচ্ছে না। মঙ্গলবার ২ মার্চ জ্যাঠামশাই দায়িত্ব পালন করতে সাধুভাষায় লিখেই ফেলেছেন “এত দিন যাহা ছিল অনুমান এবং সংশয়, রবিবারের ব্রিগেড তাহা প্রশ্নাতীত রকম স্পষ্ট করিয়া দিল - পশ্চিমবঙ্গের বাম কুলপতিরা আব্বাস সিদ্দিকি নামক ধর্মগুরুর ভরসায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হইতে ব্যাকুল হইয়াছেন।” ঠিক লিখেছেন, ভুল লিখেছেন সে বিতর্কে যাচ্ছি না। আপনার নিউজপ্রিন্ট। আপনি সাপ লিখবেন নাকি ব্যাং লিখবেন সেটা তো আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু বামেদের ব্যাকুল হওয়া ঘিরে আপনাদের এই উদগ্র ব্যাকুলতার কারণ তো স্পষ্ট নয়? যে দলকে দূরবিন ছাড়া চোখে দেখা যায়না, যে দল নির্বাচনে ১৯ থেকে ৩১-এর বেশি আসন পাবেনা বলে ভবিষ্যদ্বাণী হয়ে গেছে তাদের নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক কচকচিতে যাচ্ছি না। তবে এটা ঠিক যে, বহু আগে যে সমীক্ষা করে বসেছিলেন সে সমীক্ষায় ‘জল ঢালিয়াছে ব্রিগেড সমাবেশ’ লিখতে পারলে বোঝা যেত সৎসাহস আছে।
গতকাল ২ মার্চ মালদায় সভা করে গেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। বাংলা আজতক ডট ইন-এর খবরের হেডিং - ‘মালদায় যোগীর হুংকার! 'রাম নাম পছন্দ না হলে বাংলায় কোনও জায়গা নেই...’। যে খবরের ভেতরে লেখা আছে, “বাংলায় দুর্গাপুজো করতে দেওয়া হয় না। গোরু পাচার করতে দেওয়া হয়। বাংলায় জয় শ্রী রাম স্লোগান দিতে বাধা দেওয়া হয়। ...রামের দ্রোহীদের ভারত ও বাংলায় কোনও কাজ নেই।” এগুলো সম্ভবত অধার্মিক, নির্বিষ কথা। এই কথায় কোথাও ধর্মীয় যোগ নেই। তাই ‘বিধি ও বাম’, বামেদের ধর্মীয় যোগ নিয়ে ধুয়ো তুলে বহু শব্দ লিখে ফেলা সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে কোনো খবর নেই। এই মন্তব্য নিয়ে কোনো বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা নেই। রাজ্যবাসীর বিপদ নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই। নিরন্তর চলা এই খেলার কথা মানুষ এখন বেশ বুঝে গেছেন। ‘টুম্পা’ থেকে ‘আব্বাস’, ‘অধীরকে ব্রিগেডের মঞ্চে অপমান’ জাতীয় কোনো ন্যারেটিভই সেখানে হালে পানি পায়নি। বরং অনেক সহজে মানুষকে ছুঁয়ে গেছে - ‘মোদীজী ভীষণ রাগী, তখন আমি ভেবেছিলাম, তারপর হঠাৎ দেখি, সব চোরেরাই গোয়াল ঘরে’। তৃণমূল বিজেপি, বিজেপি তৃণমূল ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই এই বাঙলায় - সেই তত্ব ভেঙে খান খান। অসুবিধে হবারই কথা।
ব্রিগেডে কোন্ দলের নেতৃত্ব কী বললেন তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার জায়গা এখানে নেই। তাই বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছিনা। বামেরা ব্রিগেডে বামেদের কথাই বলবেন, মানুষের কথাই তুলে ধরবেন - সেটাই স্বাভাবিক। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গরতেই দেবলীনা হেমব্রম বলেছেন - ‘জোটবদ্ধভাবে বিজেপি তৃণমূলের প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের গ্রাম পাড়ায় এলাকায় একদম কোনো ফুল ফুটতে দেওয়া যাবেনা। আমরা রক্ত দেব কিন্তু মাথা নত করবো না। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা লড়াই করবো।’ মহম্মদ সেলিমের সোজাসাপটা বক্তব্য - ‘ব্রিগেডে আসতে গেলে চার্টার্ড প্লেন লাগে না। কাল লড়ে থে গোরো সে, আজ লড়েঙ্গে চোরো সে। আমি এর সঙ্গে একটাই কথা যোগ করতে চাই। কাল ভি হাম জিতে থে, আজ ভি হাম জিতেঙ্গে।’ সীতারাম ইয়েচুরি জানালেন - ‘লুটপাটের সরকার নয়, জাতপাতের সরকার নয়, বাঙলার মানুষের দাবি জনহিতের সরকার।’ সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন - ‘শেষ কথা হচ্ছে বুথে বুথে মানুষের ঐক্য। মানুষ মানে মানুষ। সব মানুষের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে। নিপীড়িত বঞ্চিত শোষিত মানুষের কাছে আমাদের পৌঁছতে হবে। আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন থাকবেন এবং আরও বহু মানুষকে নিয়ে আসবেন এই বিশ্বাস রাখি।’
এ তো গেল বামেদের কথা। রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে বামেদের নির্বাচনী সঙ্গী কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ দিয়ে ভাষণ শেষ করার আগে বলেন - ‘আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই বাঙলায় বিজেপিকে রুখে দেওয়া, টিএমসিকে রুখে দেওয়া। নতুন বাংলা গড়বার শপথ নিয়ে আমরা এই মোর্চা গড়েছি। সারা বাঙলার অর্থনীতি, সারা দেশের অর্থনীতি চুরমার হয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদী যখন বলেন কংগ্রেস মুক্ত ভারত চাই তখন দিদি বলেন বিরোধী শূন্য বাংলা চাই। আসলে দিদি আর মোদীর রাজনৈতিক ডিএনএ এক।’ আইএসএফ-এর আব্বাস সিদ্দিকি বলেন - ‘আমাদের মনে রাখতে হবে এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বাংলা, নজরুল ইসলামের বাংলা। সেই বাঙলাকে এরা শেষ করে দিয়েছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
আজ ভীষণ ছোটোবেলায় প্রাথমিক যোগ বিয়োগ শেখার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যোগ বা বিয়োগ করার সময় চোখে দেখা না গেলেও ধরে নিতে হতো একটা সংখ্যা। সেই ‘হাতে রইলো’ মনে রেখেই পরের ঘরের যোগ বিয়োগ সম্পন্ন হতো। তার পেছনে লুকিয়ে থাকা থিওরি বোঝার মত বয়স ছিলো না। তাই ধরে ধরেই মনে রাখতে রাখতে একদিন সকলে কীভাবে যেন অঙ্ক শিখে যেতাম। আজ হয়তো সেভাবে আর অঙ্ক করতে হয়না। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ওই শেখাটা বৃথা গেছে। অঙ্কটা নিছক অঙ্কই। সেটা ফর্মুলা মেনেই হয়, হবে। সেখানে জট পেকে গেলে হিসেব জটিল হয়। তাই আপাতত ভরসাটুকুই নাহয় থাক। শেষ করি সুকান্তকে দিয়েই - ‘কত যুগ, কত বর্ষান্তের শেষে/জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণীঃ/আকাশে মেঘের তাড়াহুড়ো দিকে দিকে/বজ্রের কানাকানি।’