৫৯ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৫ নভেম্বর, ২০২১ / ১৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮
রাজ্যে উপনির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট তৃণমূলের ভোট লুট
চুপসে গেল বিজেপি’র ফানুস
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজ্যে ৪টি উপনির্বাচনের ফলাফলে শাসকদল তৃণমূলের বিপুল ভোটে জয় তাদের ভোট লুটের চিরাচরিত কারবারই স্পষ্ট হলো। রাজ্যের খড়দহ, শান্তিপুর, দিনহাটা এবং গোসাবা এই চারটি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই দলের বিশাল ব্যবধানে জয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কেই প্রশ্ন জাগে।
অন্যদিকে এই নির্বাচনের ফলাফলেই স্পষ্ট হয়েছে, তৃণমূলের মদতেই রাজ্যে বেড়ে ওঠা বিজেপি’র ফানুস চুপসে গেছে। বিজেপি শুধু খড়দহ, গোসাবায় হারেনি, ৬ মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা শান্তিপুর ও দিনহাটার জেতা আসনে ধুলিসাৎ হয়েছে। চারকেন্দ্রের মধ্যে শান্তিপুর ছাড়া দিনহাটা, গোসবা এবং খড়দহে বিজেপি’র জামানত জব্দ হয়েছে।
উপনির্বাচনের ফলাফলে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, এই চার কেন্দ্রের নিরিখে সিপিআই (এম) সহ বামফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোট গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় সামান্য হলেও বেড়েছে। ৪ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ফলের হিসাবে বামফ্রন্ট পেয়েছে প্রায় ৮.৫ শতাংশ ভোট। যা গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় সামান্য হলেও বেশি।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দিনহাটা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ পেয়েছেন ১,৮৯,৫৭৫ ভোট, ৮৪.১৫ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী অশোক মণ্ডল পেয়েছেন ২৫,৪৮৬ ভোট, ১১.৩১ শতাংশ। বামফ্রন্টের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী আবদুর রউফ পেয়েছেন ৬,২৯০ ভোট, ২.৭৯ শতাংশ। এই কেন্দ্রের জয়ের ব্যবধান ১,৬৪,০৮৯ ভোট (৭২.৮৪ শতাংশ)।
শান্তিপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ব্রজকিশোর গোস্বামী পেয়েছেন ১,১০,৯০৭ ভোট, ৫৪.৮২ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী নিরঞ্জন বিশ্বাস পেয়েছেন ৪৭,০১৫ ভোট, ২৩.২৪ শতাংশ। সিপিআই (এম) প্রার্থী সৌমেন মাহাতো পেয়েছেন ৩৯,৬৭৪ ভোট, ১৯.৬১ শতাংশ। এখানে কংগ্রেস প্রার্থী রাজু পাল পেয়েছেন ২,৮৩৬ ভোট, ১.৪ শতাংশ। এই কেন্দ্রের জয়ের ব্যবধান ৬৩,৮৯২ ভোট, (৩১.৫৮ শতাংশ)।
গোসাবা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ১,৬১,৪৭৪ ভোট পেয়েছেন ৮৩.১৯ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী পলাশ রানা পেয়েছেন ১৮,৪২৩ ভোট, ৯.৯৫ শতাংশ। বামফ্রন্টের আরএসপি প্রার্থী অনিলচন্দ্র মণ্ডল পেয়েছেন ৩,০৭৮ ভোট, ১.৬৫ শতাংশ। এখানে জয়ের ব্যবধান ১,৪৩,০৫১ ভোট, (৭৭.২৪ শতাংশ)।
খড়দহ কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় পেয়েছেন ১,১৪,০৮৬ ভোট, ৭৩.৫৯ শতাংশ। বিজেপি প্রার্থী জয় সাহা পেয়েছেন ২০,২৫৪ ভোট, ১৩.০৭ শতাংশ। এখানে সিপিআই (এম) প্রার্থী দেবজ্যোতি দাস পেয়েছেন ১৬,১১০ ভোট, ১০.৩৯ শতাংশ। এই কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান ৯৩,৮৩২ ভোট, (৬০.৫২ শতাংশ)।
নিজেদের দখলদারি কায়েম রাখতে তৃণমূল কংগ্রেস দিনহাটা, গোসাবা, খড়দহ প্রভৃতি জায়গায় যেভাবে রিগিং, ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জয় সুনিশ্চিত করেছে তাতে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মন্তব্য করেছেন, অপপ্রচার উড়িয়ে মানুষ বাংলার উন্নয়নের পথকেই নাকি বেছে নিয়েছেন!
এই ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ছিল না। তৃণমূল তাদের মদত দিয়ে দ্বিমেরু রাজনীতি তৈরি করেছিল বামপন্থীদের শেষ করতে। পাম্প দিয়ে কৃত্রিমভাবে বিজেপি’র ফানুস তৈরি করেছিল তৃণমূলই। কিন্তু এই উপনির্বাচনে শান্তিপুর এবং খড়দহের ফলাফল দেখিয়ে দিল, তৃণমূলের তৈরি করা বিজেপি শেষ হয়ে যেতে চলেছে। বিজেপি আবার প্রায় ২০১৬ সালের অবস্থায় চলে গেছে শতাংশের হিসাবে। তিনি বলেছেন, তৃণমূলের বিকল্প বিজেপি নয়, বামপন্থীরাই একমাত্র বিকল্প। ‘মোদী-মমতা-মিডিয়া’র সবরকমের চেষ্টা সত্ত্বেও বিজেপি’র ফানুস টিকতে পারেনি। এখন আমাদের বামপন্থীদেরই দায়িত্ব প্রকৃত বিকল্প হিসাবে মানুষের চোখে যোগ্য হয়ে ওঠার।
৪ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে শাসকদল তৃণমূলের অস্বাভাবিক ব্যবধানে জয়ের প্রতিক্রিয়ায় সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, উপনির্বাচন কেমন হয়েছে, তা সবাই বুঝতে পারছেন। বিশেষ করে দিনহাটা ও গোসবার ফলাফল তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। দিনহাটার মতো হারা আসনে যদি কেউ ৬ মাসের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হতে পারে তাহলে তো, তাকেই মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত। এই জয় আসলে ‘অনুপ্রেরণা’র জয় না কী গণতন্ত্রের লজ্জা’র জয়, তা ওদের বোঝা উচিত।