৫৯ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৫ নভেম্বর, ২০২১ / ১৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮
সিপিআই(এম) ঝাড়খণ্ড রাজ্য সপ্তম সম্মেলন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিপন্ন গণতন্ত্র, বিপন্ন সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ, বিপন্ন কৃষি ও কৃষক, বিপন্ন শ্রমিক থেকে আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষ। দেশের সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে দেশি-বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির হাতে। বিজেপি’র অপশাসনে কেউ নিরাপদ নয়। তাই প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলার ডাক দিয়ে ঝাড়খণ্ডে গণমুখী রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে সিপিআই(এম)রাজ্য সপ্তম সম্মেলন থেকে।
২৯ অক্টোবর দুমকায় সিপিআই(এম)’র ঝাড়খণ্ড রাজ্য সপ্তম সম্মেলনের সূচনা হয় প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে। সিধু-কানহু ইনডোর স্টেডিয়ামে এই সমাবেশ আয়োজিত হয়। প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত, মহম্মদ সেলিম সহ সিপিআই’র প্রবীণ নেতা রাজেন্দ্র যাদব, এমসিসি’র রাজ্য সম্পাদক হলধর মাহাতো প্রমুখ বামপন্থী নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন। সর্বস্তরের মানুষের একতা গড়ে তুলে দেশবিরোধী বিজেপি সরকারের মোকাবিলা করতে মোর্চাবদ্ধ সংগ্রামকে মজবুত করে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান ধ্বনিত হয় প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে।
বৃন্দা কারাত ও মহম্মদ সেলিম সহ অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে বিজেপি সরকারের কর্পোরেট দাসত্ব, কৃষি ও কৃষকের সর্বনাশ করার জন্য কৃষি সংক্রান্ত তিনটি আইনের প্রসঙ্গ, বিজেপি সরকার সংসদকে গুরুত্ব না দেওয়া সহ সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রবণতার কথা। বক্তারা এদিন তুলে ধরেন রাষ্ট্রীয়করণ পাইপলাইন (এনএমপি)পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা। তাঁরা বলেন, ঝাড়খণ্ডে লাল ঝান্ডার পার্টিগুলির মোর্চা লড়াইয়ের শক্তি হিসেবে মাথা তুলেছে। ঝাড়খণ্ডে এক বিশাল সংখ্যক নির্দোষ আদিবাসীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দিয়ে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ জানিয়ে বলেন হেমন্ত সরেন সরকারকে বন্দিমুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে।
এরপর রক্ত পতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদান এর মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়। রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন পার্টির প্রাক্তন বিধায়ক যতীন সরেন। পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচির পর বর্ণাঢ্য মিছিল শহরের পথ পরিক্রমা করে। সম্মেলনস্থলের নামকরণ করা হয় কমরেড রাজেন্দ্র সিংহ নগর। সম্মেলন মঞ্চের নাম কমরেড অজিত বিশ্বাস মঞ্চ। শিবানী পাল, মহম্মদ ইকবাল, সুখনাথ লোহারকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সম্মেলনের কাজ পরিচালনা করেছেন। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেছেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক গোপীকান্ত বক্সী। প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বের উদ্বোধন করেন মহম্মদ সেলিম।
সম্মেলন থেকে দলিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে, মহিলাদের ওপর আক্রমণের বিরোধিতা, রাজ্যে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য, পঞ্চায়েত নির্বাচন করানো, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, গরিব প্রান্তিক মানুষের পক্ষে জমি সম্পর্ক গণতান্ত্রিক করতে, দিল্লিতে চলা কৃষক আন্দোলনের সমর্থন, কেন্দ্রীয় সরকারের আনা শ্রম কোডের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা, আদিবাসী মানুষকে তার আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা সহ অন্যান্য ইস্যুতে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। রাজ্য রাজনীতিতে পার্টিকে প্রচার ও হস্তক্ষেপকারী ভূমিকা নিতে কর্মসূচি নেওয়ার প্রশ্নটিকে মাথায় রেখে আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।
৩১ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে সিপিআই(এম) ঝাড়খন্ড রাজ্য কমিটির সম্মেলন। আরও বেশি সংখ্যক গরিব মেহনতী মানুষকে লড়াই আন্দোলনে শামিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে সম্মেলন থেকে। সম্মেলনে সমাপ্তি ভাষণ দেন পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। তিনি শ্রমিক-কৃষক মহিলাদের মধ্যে পার্টির বিস্তার ঘটিয়ে পার্টিকে আরও মজবুত করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে প্রতিনিধি এবং পর্যবেক্ষক মিলিয়ে যোগ দিয়েছেন মোট ২২৯ জন। খসড়া প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেছেন ৪০ জন। সম্মেলন থেকে ৩৫ জনের কমিটি গঠিত হয়। সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন প্রকাশ বিপ্লব। গঠিত হয়েছে ১১ জনের সম্পাদকমন্ডলী। এই কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে বিশেষ স্থায়ী আমন্ত্রিত হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক গোপীকান্ত বক্সী। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র উপস্থিত ছিলেন।