৫৯ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৫ নভেম্বর, ২০২১ / ১৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮
সিপিআই(এম) রাজস্থান রাজ্য ২৩তম সম্মেলন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম) রাজস্থান রাজ্য সম্মেলন এবং সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে উচ্চারিত হলো আর্থিক বৈষম্য প্রতিরোধ, উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলির বিভাজন বিরোধিতা, মেহনতি মানুষের ওপর শোষণ রুখতে সক্রিয় সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রসারিত করে পার্টির এবং বামপন্থীদের স্বাধীন আন্দোলনের বিকাশের মধ্য দিয়ে কর্পোরেট হিন্দুত্ববাদী জোটকে পরাস্ত করার আহ্বান। ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সিকরের সঞ্জীবনী প্যালেসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন এবং সমাবেশ ঘিরে কৃষক আন্দোলনের শক্ত ঘাঁটি শিকর শহর সেজে ওঠে লাল পতাকায়। প্রতিনিধি অধিবেশনের উদ্বোধন করেন প্রকাশ কারাত। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন অমরা রাম। প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত এবং হান্নান মোল্লা।
সম্মেলনে দেশের স্বাধীন বিদেশনীতি বিসর্জন প্রসঙ্গে প্রকাশ কারাত বলেন, সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে চীনকে ঘিরতে নেমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছে চার দেশের জোট কোয়াড। ভারত মার্কিন বিদেশ নীতির অধস্তন অংশীদার হয়ে পড়ার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভরসা হয়ে উঠতে সক্রিয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের কাছে দেশ বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতের জনগণের স্বার্থ মাথায় নেই বিজেপি সরকারের। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
হান্নান মোল্লা বলেন, কৃষক আন্দোলনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে থাকা আন্দোলনরত কৃষকদের সংকল্পে দৃঢ় থাকার কথা। তিনি বলেন, বহু চেষ্টা, ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে দুর্বল করতে পারছে না বিজেপি জোট।
রাজস্থানের সম্পাদক অমরা রামের বক্তব্যে উঠে এসেছে দেশের কৃষক আন্দোলনে রাজস্থানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা। ওই আন্দোলনে দিল্লি সীমান্তে সারা ভারত কৃষক সভার ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংগ্রামের সাফল্যকে সংহত করতে হবে।
খসড়া প্রস্তাব পেশ করে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সংকট প্রসঙ্গে রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম বলেছেন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ১৫ লক্ষের বেশি যুবক অংশ নিচ্ছেন এটাই সংকটের ব্যাপকতাকে বোঝাচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে সম্মেলন থেকে।
রাজস্থান রাজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১ নভেম্বর গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ প্রতিরোধের আহ্বান, শ্রম কোড প্রতিরোধ, দলিত নিপীড়নের বিরুদ্ধে, মহিলাদের ওপর আক্রমণের বিরোধিতা, কৃষক আন্দোলনের পক্ষে সহমর্মিতা, কর্মসংস্থানের সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, সাম্প্রদায়িকতা সহ বেশ কিছু বিষয়ে আন্দোলনের পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়।
প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনায় উঠে আসে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মত প্রকাশের অধিকারের ওপর বারবার আঘাত নামিয়ে আনা, শ্রমিকবিরোধী নানা পদক্ষেপে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শ্রমজীবীদের অধিকার সংক্রান্ত প্রসঙ্গসমূহ। উঠে আসে দেশের সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মালিকানা বিজেপি সরকারের কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা। ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিনিধিরা। সংবিধানকে নানা আইনের মোড়কে উল্লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ এবং সংসদে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা সম্পর্কে প্রতিরোধের বার্তা উচ্চারিত হয় সম্মেলনে।
প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে আসে সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং শ্রেণি আন্দোলন তীব্রতর করে গড়ে তোলার কথা। রাজ্যে কৃষির জন্য জলবিদ্যুৎ এবং ঋণের প্রশ্নগুলিকে সামনে রেখে আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে কারখানা থেকে পাথরের খাদান সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের জারি করা চার শ্রম কোড-এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা জরুরি বলেছেন অমরা রাম। রাজস্থানের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের জমানায় দলিত নিপীড়ন, মহিলাদের ওপর আক্রমণের পরিস্থিতিতে সম্পাদকীয় রিপোর্টে এবং প্রস্তাবে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এরপর জবাবি ভাষণ দেন অমরা রাম।
সম্মেলনের সমাপ্তি ভাষণ দিয়েছেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা। তিনি বলেন, সিপিআই(এম) সাংগঠনিক গণতন্ত্রের চর্চা করে। সম্মেলনে প্রত্যেকটি সদস্য তাঁর মত জানানোর ও কমিটির সদস্য নির্বাচনের অধিকার প্রয়োগ করেন। প্রত্যেককে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। পার্টি জীবনে এই অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ।... এই বোধের মূলে রয়েছে পার্টির মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ এবং শৃঙ্খলা মেনে চলার সময় সমন্বয়।
২ অক্টোবর পার্টি’র গণভিত্তিকে আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে রাজ্য সম্মেলন। সম্মেলন থেকে নির্বাচিত হয়েছে ৩৫ জনের রাজ্য কমিটি। গৃহীত হয়েছে রাজনৈতিক সাংগঠনিক রিপোর্ট। সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন অমরা রাম।