৫৯ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৫ নভেম্বর, ২০২১ / ১৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮
নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষা এবং প্রেরণা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে
অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়
কমরেড লেনিনসহ নভেম্বর বিপ্লবের নেতৃবৃন্দ।
এ বছরের ৭ নভেম্বর (পুরানো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর) রাশিয়ার মহান নভেম্বর বিপ্লবের ১০৫তম দিবস। ১৯১৭ সালের ওই দিনটিতে রাশিয়ার বলশেভিক পার্টির পরিচালনায় কমরেড লেনিনের নেতৃত্বে সে দেশের শ্রমজীবী মানুষ স্বৈরাচারী জারশাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে পুঁজিবাদী শোষণ-শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। শ্রমিকশ্রেণি সে দিন শাসকশ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বে নবযুগের সূচনা করেছিল। সে যুগ হলো সমাজতন্ত্রের যুগ। গড়ে উঠেছিল সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। সূচিত হয়েছিল পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শ্রমিকশ্রেণির বিজয়ের যুগ। কমরেড লেনিনের পরিচালনায় বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে রাশিয়ার শ্রমিকশ্রেণির দৃঢ়, বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বিপ্লব বিজয়ী হয়েছিল।
পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের যুগের সূচনায় মানবমুক্তির নতুন চেতনা এবং সংগঠন শক্তির বিদ্যুচ্ছটা ঔপনিবেশিক ও জাতীয় মুক্তিকামী দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে নিপীড়িত, শোষিত, শৃঙ্খলিত মানবসমাজকে দাসত্ব শৃঙ্খল মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল, মুক্তির দিশা দেখিয়েছিল। তাই নভেম্বর বিপ্লব মহান, এখানেই তার মহত্ব। ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শুধু রাশিয়াতে নয়, সারা দুনিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার নিশ্চিত বার্তা ঘোষণা করেছিল। বিংশ শতাব্দীতে আরও অনেক দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘটনাবলিতে সমাজবিকাশের নিয়মের শাশ্বত সত্য দৃঢ়মূল হয়েছে। শোষণহীন সমাজ যে অনিবার্য - রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তা চিহ্নিত করে দিয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর বিশের দশক থেকে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সংবাদ ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে আলোড়িত করে নতুনভাবে এগিয়ে দিয়েছিল। শ্রমিক, কৃষক সহ শ্রমজীবীদের আন্দোলন-সংগঠনের চেতনার তন্ত্রীতে নভেম্বর বিপ্লব জাগিয়েছিল ভয়লেশহীন অদম্য শিহরণ ও মনোবল। আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগের নবজাগরণকে যদি জাতীয় চেতনার জগতের প্রথম প্রবাহের উত্থান বলা হয়, তাহলে দ্বিতীয় এবং নির্ধারক প্রবাহ সঞ্চারিত হতে শুরু করে পূর্বোক্ত সময়ে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে। এই অভিঘাত জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অভ্যন্তরে এক নতুন ধারার আবির্ভাব ঘটিয়েছিল - যা যে কোনো ধরনের সমঝোতার বিরুদ্ধে সার্বিক নীতিবোধকে জাগিয়ে তুলেছিল। শ্রমিক আন্দোলনকে দিয়েছিল সমাজের আমূল পরিবর্তনের বিপ্লবী চেতনা। এক কথায় বলা যায়, রুশ বিপ্লব ছিল ভারতের সমগ্র ইতিহাসে চেতনার জগৎকে সর্বাপেক্ষা আলোকিত করার শক্তি। রুশ বিপ্লবই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের সর্বময় কারণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। রুশ বিপ্লব ভারতের শিল্পসাহিত্য সংস্কৃতিতে নবজীবনের উদ্বোধন ঘটিয়েছিল। মহৎ সৃষ্টির যাবতীয় প্রেরণা ও চেতনা জাগিয়েছিল রুশ বিপ্লব।
নভেম্বর বিপ্লব ছিল একইসাথে শ্রমিকশ্রেণির অগ্রগতি ও রাষ্ট্রক্ষমতায় তাদের কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা প্রদর্শনের, সমগ্র মানবজাতির নতুন অগ্রগতির এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সৃজনের প্রতীক। দেশের সীমানা অতিক্রম করে সভ্যতার আলোক তেমনভাবে পৌঁছয়নি এমন প্রত্যন্ত প্রদেশেও আশার আলো জ্বালিয়েছিল এই বিপ্লব। মানুষের ভাবগত এবং বস্তুগত জগতে সৃজনের সর্বাপেক্ষা মোক্ষম ইন্ধন হিসাবে এই বিপ্লব উদ্ভাসিত হয়েছে।
চেতনা, ঐক্য, সংগঠন এবং সংগ্রামই যে শ্রমজীবীদের সমস্ত প্রতিকূলতাকে পরাভূত করা এবং মুক্তির উপায় তা নভেম্বর বিপ্লব সবলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। সাম্রাজ্যবাদের কালের মার্কসবাদ যে লেনিনবাদ, তার নির্ধারক প্রমাণ দিয়ে নভেম্বর বিপ্লব বিশ্ব জনগণের হাতে তুলে দিয়েছিল মার্কসবাদের সাথে লেনিনবাদের আয়ুধ। নভেম্বর বিপ্লব রুশ জাতীয় স্তরে পুঁজির সাথে শ্রমের সঙ্ঘাতের তুঙ্গ রূপকে যেমন প্রদর্শন করেছিল, একইসাথে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও প্রবল আঘাত হেনেছিল। এই বিপ্লবের সাফল্য কেবল তাৎক্ষণিকভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুযুধান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকে প্রজ্জ্বলিত করেনি এবং কেবল ধনতন্ত্রের সংকটকে বাড়িয়ে দেয়নি, বিশ্বের দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, জাতীয় মুক্তি, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের সংগ্রামকে প্রজ্জ্বলিত করেছিল, বিপুল ব্যাপক ঐতিহাসিক সাফল্য এনে দিয়েছিল। দশ দিনের দুনিয়া কাঁপানো এই ঘটনা মানবসমাজকে একলাফে এগিয়ে দিয়েছিল সহস্র যোজন।
সমাজতন্ত্র নির্মাণে ভুল-ত্রুটি এবং মতাদর্শগত অবক্ষয়ের কারণে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটলেও নভেম্বর বিপ্লবের মর্মবস্তুর পতন ঘটেনি। নভেম্বর বিপ্লবের আদর্শ, শিক্ষা এবং তাৎপর্য বর্তমান বিশ্বে এতটুকুও ম্লান হয়নি। বরং, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও পুঁজিবাদের অভূতপূর্ব সংকটের কালে নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য, তার মার্কসবাদী মতাদর্শের ভিত্তি আরও প্রাসঙ্গিক, আরও জোরালো হয়ে দেখা দিচ্ছে। দুর্বলতা ও বিপর্যয় সত্ত্বেও বিংশ শতাব্দীর ঘটনাবলি প্রমাণ করছে মানবসভ্যতার অগ্রগতির মৌলিক অভিমুখ ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে অনিবার্যভাবেই জাতীয় ও সামাজিক মুক্তির দিকেই।
১৮৪৮ সালে মার্কস-এঙ্গেলস রচিত ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র মধ্য দিয়েই সর্বপ্রথম ঘোষিত হয়েছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের, তথা মার্কসবাদের তত্ত্বগত মূল নীতি এবং রণকৌশলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূল নীতিই ঘোষিত হয়েছিল কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে। ডাক দেওয়া হয়েছিল - দুনিয়ার মজুর এক হও, শ্রমিকশ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করো। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ওই মূল নীতিকে প্রথম বাস্তবে প্রয়োগ করার চেষ্টা হয়েছিল ১৮৭১ সালে ফ্রান্সে ‘প্যারি কমিউন’ নামে পরিচিত শ্রমিক বিপ্লবে। শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যারি কমিউনে। কিন্তু কমিউন টিকেছিল মাত্র ৭২ দিন। বুর্জোয়া শাসকরা কমিউনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। কমিউনের ওই পরিণতি দেখে কার্ল মার্কস তখনই ঘোষণা করেছিলেনঃ ‘‘কমিউনের পতন হলেও, কমিউনের আদর্শের মৃত্যু নেই।’’ মার্কসের ওই ঘোষণাই বাস্তবায়িত হতে দেখা গিয়েছিল ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবে। নভেম্বর বিপ্লবে প্যারি কমিউনের শিক্ষাকেই প্রয়োগ করেছিলেন লেনিন। তিনি সে দিন ঘোষণা করেছিলেন, প্যারি কমিউন ছিল প্রথম পদক্ষেপ। আমরা এখন যে নতুন সমাজ গড়ে তুলছি তা হচ্ছে বিশ্ব কমিউনের দিকে এগিয়ে চলার সূচনা। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র মূল নীতির সত্যতা, কমিউনের আদর্শের অবিনশ্বরতা প্রমাণিত হয়েছিল নভেম্বর বিপ্লবের বিজয়ে।
মানবসমাজের ইতিহাসে কোনো নতুন সমাজব্যবস্থা একটিমাত্র বিপ্লবের সফল পরিণতির মধ্য দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই, প্যারি কমিউন যেমন ব্যর্থ নয়, রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও তেমনই ব্যর্থ নয়। বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবের সংঘর্ষে, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বহু বছরের এমনকী কয়েকশত বছরের প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত পত্তন ঘটেছে নতুন এক সমাজ ব্যবস্থার। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বে ক্রমান্বয়ে বুর্জোয়া বিপ্লবগুলিকে প্রতিবিপ্লবগুলি প্রথম দিকে পরাস্ত করেছিল। তারপর সফল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পুঁজিবাদ। সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও উৎপাদিকা শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিকাশের এই দ্বান্দ্বিকতার নিয়ম অনিবার্য। বর্তমান সময়েও আমরা দেখি বিপ্লবের ৭২ বছর পরেও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ঘোষণা করেছেন, চীন এখনও সমাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে অবস্থান করছে; পূর্ণ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তাদের আরও শতবর্ষ লেগে যেতে পারে। কিন্তু সমাজতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যম্ভাবী। এটাই ইতিহাসের ধারা।
বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী নয়াউদারনৈতিক নীতির যুগে নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য এবং প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বে জনগণের প্রধানতম শত্রু সাম্রাজ্যবাদ আরও ভয়ংকর আগ্রাসী হয়ে নিজেকে প্রকাশ করছে। সংকটের আবর্ত থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে না পেয়ে আগ্রাসনের পথকেই বাঁচার উপায় বলে ধরে নিয়েছে। অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে বিশ্বায়ন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সর্বকালের মধ্যে তীব্র করা সত্ত্বেও সংকটমুক্ত হতে না পেরে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরেও আগ্রাসনকে তীব্র করেছে। সাম্রাজ্যবাদী মদতেই ধর্মীয় মৌলবাদ, জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ বেড়ে চলেছে। সংকট থেকে মুক্তি পেতে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি লাগামছাড়া শোষণ চালাচ্ছে। পুঁজিবাদ যত সংকট জর্জরিত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের আক্রমণ তত তীব্র হচ্ছে। আবার, এর বিপরীতে দেশে দেশে এই শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামও বেশি বেশি করে সংগঠিত রূপ নিয়ে প্রতিস্পর্ধী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা বিকল্পের সন্ধান করছে; সমাজতন্ত্রই যে একমাত্র বিকল্প সেই প্রত্যয় দৃঢ় হচ্ছে। আমাদের দেশে বামপন্থী এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি সাম্রাজ্যবাদী নয়াউদারনীতির বিরুদ্ধে শ্রমজীবী জনগণকে সংগঠিত করে ক্রমবর্ধমান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। নভেম্বর বিপ্লবের আদর্শই এইসব লড়াইয়ে প্রেরণা সৃষ্টির কাজ করছে। আমাদের পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেসে গৃহীত মতাদর্শগত দলিলে বলা হয়েছে, জনগণের জীবন-জীবিকার উপর সাম্রাজ্যবাদী নয়াউদারনৈতিক বিশ্বায়নের আক্রমণ বিশ্ব পুঁজিবাদী সংকট ও মন্দায় আরও তীব্র হয়েছে। এই আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রমবর্ধমান সংগ্রাম ভবিষ্যতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের সংহতি ও অগ্রগতির ভিত্তি হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে মতাদর্শগত বিষয়ে এবং পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জগুলির বৈজ্ঞানিক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বিশ্লেষণ করে আমাদের বিপ্লবী প্রত্যয় আরও শক্তিশালী করতে হবে। মতাদর্শগত দলিলে বলা হয়েছেঃ আমাদের মনে রাখতে হবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের যে রূপই হোক না কেন, রাষ্ট্র সব সময়েই বুর্জোয়াদের একনায়কত্ব এবং সাম্রাজ্যবাদের অধীনে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির স্বার্থপূরণের বর্তমান প্রয়োজনীয়তা মাফিকই রাষ্ট্রের ভূমিকা বদলাচ্ছে। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির স্বার্থ এগিয়ে নিয়ে যেতে পালটে যায় রাষ্ট্রের ভূমিকা। সামাজিক দায়বদ্ধতা রাষ্ট্র ছুঁড়ে ফেলে দেয়, অবদমিত করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেও।
মনে রাখতে হবে, চূড়ান্ত ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ও রূপান্তর অনিবার্য হলেও একবিংশ শতাব্দীতে এই পর্ব হবে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের। কমিউনিস্ট, শ্রমিকশ্রেণি এবং সমস্ত প্রগতিশীল অংশের অবশ্য কর্তব্য হলো, নিজ নিজ দেশে শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্রতর করে এই প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা।
আমাদের রণনীতিগত লক্ষ্য হলো, বর্তমানের বৃহৎ বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে পরিচালিত বুর্জোয়া ও জমিদার শ্রেণির শ্রেণি শাসনের অবসান ঘটিয়ে তার জায়গায় শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে জনগণতান্ত্রিক শাসনের প্রবর্তন করা। এর জন্য প্রয়োজন বর্তমান শ্রেণিশক্তিগুলির পারস্পরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটানো। ব্যাপকতম জনগণকে সংগ্রামের মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ করে গণসংগ্রাম এবং শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্রতর করেই এই ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন ইস্পাতদৃঢ় সংগঠন গড়ে তোলা। আমাদের পার্টির সাংগঠনিক প্লেনামে গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছেঃ সকল শোষিতশ্রেণির বিপুল সংখ্যক মানুষ শোষণকারী শ্রেণিগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রুখে না দাঁড়ালে কোনো সামাজিক রূপান্তরই সম্ভব নয়, বস্তুতপক্ষে তা অভাবনীয়। চূড়ান্ত বিচারে ইতিহাস রচনা করেন জনগণই। বৈপ্লবিক ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। দৃঢ়তার সাথে প্লেনামে ঘোষণা করা হয়েছে, বৈপ্লবিক দল হিসাবে সিপিআই(এম) এই গণঅভ্যুত্থানের অগ্রণীবাহিনী হিসাবে অবতীর্ণ হবেই। এ আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।
নভেম্বর বিপ্লবের শিক্ষা এবং প্রেরণা নিয়েই এই কর্তব্য পালনে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।