E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১২ সংখ্যা / ৫ নভেম্বর, ২০২১ / ১৮ কার্ত্তিক, ১৪২৮

নভেম্বর বিপ্লবের পথ ধরে পরিবেশ রক্ষার চেতনা

তপন মিশ্র


‘আস্ত্রাখান প্রকৃতি সংরক্ষণাগার’ (Astrakhan Zapovednik)

কমিউনিস্ট-বিরোধীরা বলে থাকেন, মার্কসবাদীরা প্রকৃতিকে জয় করার কথা বলে, যার অর্থ হলো, প্রকৃতিকে নিঃশেষ করা। কার্ল মার্কস ক্যাপিটালের প্রথম খণ্ডে লেখেনঃ “মানুষের শ্রম হলো এমন একটি কাজ যার মধ্যদিয়ে সে প্রকৃতি জগতের সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে, মধ্যস্থতা করে, নিয়ন্ত্রণ করে, এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার মিথষ্ক্রিয়া বুঝতে চেষ্টা করে।” সোভিয়েতের প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে পৃথিবীতে প্রথম মার্কসবাদের সফল প্রয়োগ হলো কেবল সেদেশের রাজনীতিতে নয় সংস্কৃতি, পরিবেশরক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও।

কমিউনিস্ট-বিরোধীদের কথা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। ১৯৯৭ সালে (সোভিয়েতের পতনের পর) আমেরিকার অলিম্পিক কলেজ (ওয়াশিংটন)-এর এক অধ্যাপক বার্ন্ড রিখটার সোভিয়েতের সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধটির নামঃ ‘নেচার মাস্টার্ড বাই ম্যানঃ আইডিওলজি অ্যান্ড ওয়াটার ইন দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’। উদ্দেশ্য ছিল - মার্কসবাদে প্রকৃতিকে জয় করার স্লোগানের অত্যন্ত দুঃখজনক (লেখকের ভাষায়) পরিণতির কথা তুলে ধরা। প্রবন্ধটির অনেক জায়গায় সোভিয়েতের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার সঙ্গে আমেরিকার একই বিষয় তুলনা করা হয়েছে। লেখক লিখছেনঃ ১৯৭৮-র সময় দেখা যায়, সোভিয়েতের উর্বর ১.৫ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার অরণ্য এবং জলা জমি শিল্প প্রসারণের মধ্য দিয়ে বন্ধ্যা হয়ে গেছে। লেখক লিখছেনঃ “If we look at a map of the former USSR with all the marks of environmental catastrophes we see a sick giant bleeding out of numerous wounds.”। লেখক বলতে চাইছেন যে, প্রকৃতির উপর আধিপত্য বিস্তার করার প্রবণতাই সোভিয়েতের প্রাকৃতিক পরিবেশ অবনমনের একটি কারণ। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে দুর্ঘটনায় যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় তা এই প্রাকৃতিক পরিবেশের নষ্টের কারণ হিসাবেও লেখক উল্লেখ করতে ভোলেননি। অবশ্য ১৯৪৫ সালের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এবং ভিয়েতনামে নাপাম বোমার ব্যবহারে লক্ষ লক্ষ মানুষের হত্যা এবং প্রকৃতির সর্বনাশ ঘটানোর বিষয়টি লেখক বিস্মৃত হয়েছেন।

রিখটারের প্রবন্ধ পড়তে পড়তে আলফ্রেড ক্রসবি-র বিখ্যাত একটি বইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। বইটির নামঃ ‘ইকোলজিক্যাল ইমপেরিয়ালিজমঃ দ্য বায়োলজিক্যাল এক্সপ্যানশন অফ ইয়োরোপ, ৯০০-১৯০০’। আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন ক্রসবি। তিনি লিখছেন যে, ইয়োরোপ থেকে দলে দলে মানুষ যখন উত্তর আমেরিকাতে আসে তখন তাদের সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসা রোগ, আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র আমেরিকান-ইন্ডিয়ানদের ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যদি দেশে। ইয়োরোপীয়দের বাস্তুতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের মূল লক্ষ্য ছিল প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ। পরে তা অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৯ সালে ওয়েন গার্ড নামে একজন আমেরিকাবাসী ‘দ্য গ্রেট বাফেলো হান্ট’ নামে একটি বই লেখেন। তাতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার লক্ষ লক্ষ নিরীহ বাইসনকে মাংসের জন্য হত্যা করে প্রায় শেষ করে ফেলার কাহিনি স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলা হয়। কেবল বাইসন হত্যা নয়, উত্তর আমেরিকার আদিম বাস্তুতন্ত্রকে এভাবেই ধ্বংস করা হয়। ‘গ্লোবাল কার্বন প্রোজেক্ট’-এর তথ্য বলছেঃ ১৭৫১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এই সমস্ত অপকর্মের ফলে কানাডা এবং আমেরিকার ঐতিহাসিক নির্গমন (কার্বন ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস) সর্বাধিক। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের ২৫ শতাংশের জন্য দায়ী কেবল আমেরিকা এবং এছাড়া ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশের এতে অংশ হচ্ছে ২২ শতাংশ। এই দুই দেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাকে যুক্ত করলে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রায় ৬০ শতাংশ এই সব দেশ থেকে নির্গত হয়েছে।

লেনিন এবং সোভিয়েতের পরিবেশ রক্ষা

কমিউনিস্টদের ‘পোডাক্টশনিস্ট’ (‘Productionist’) হিসাবে চিহ্নিত করতে ধনতন্ত্রের দালালরা সদাব্যস্ত। সোভিয়েত, চীন, ভিয়েতনাম বা কিউবার বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে মূল চাহিদা ছিল - সামাজিক উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে ব্যক্তিপুঁজি নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া। এই প্রয়াসকে কোনো দোষে দুষ্ট করতে না পারলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে নিন্দিত করা যাবে না। যেহেতু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম লক্ষ্য উৎপাদন পদ্ধতির মালিকানার পরিবর্তন - তাই অন্তত পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে তাকে আক্রমণ করা এরা কর্তব্য মনে করে।

১৯১৭ সালে নভেম্বর বিপ্লবের (Great October Socialist Revolution) পর সেদেশে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সাংস্কৃতিক মাধ্যমে প্রচার করা হয় যে, সোভিয়েতে প্রাকৃতিক সম্পদ গর্ব করার মতো। এই রচনাগুলির মূল বক্তব্য ছিল - “বিশ্বের এক ষষ্ঠাংশ স্থলভাগ অধিকার করে আছে যে দেশ সেখানে বির্স্তীর্ণ বনাঞ্চল, আদিম জলাভূমি, মাটির নিচের বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ ইত্যাদিকে রাষ্ট্রের স্বার্থে রক্ষা করো।” এই সমস্ত সম্পদের অধিকারী হলো রাষ্ট্র অর্থাৎ দেশের সাধারণ মানুষ। এবং এই কারণে ব্যক্তিস্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ আহরণ নিষিদ্ধ। এই সম্পদসমূহের ভাণ্ডার ছিল মূলত সেই সমস্ত এলাকায় যেখানে নভেম্বর বিপ্লবের আগে ৭০ শতাংশ মানুষ ছিলেন দারিদ্র্যের একদম শেষ-প্রান্তে। সোভিয়েত অনেকটা উত্তর মেরুর কাছাকাছি হওয়ায় দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভূমিতে বছরের প্রায় সব সময় থাকে বরফাবৃত। একারণে জীবনযাত্রা ছিল অনেক কঠিন। এই সমস্ত অঞ্চলে পৌঁছানো এবং উন্নয়নের কাজ করা ছিল অনেক কঠিন। তাতিয়ানা (Tatiana R. Zaharchenko) নামে রুশদেশের আন্তর্জাতিক পরিবেশ-আইনের একজন মহিলা গবেষক আমেরিকায় বেশ কয়েক বছর গবেষণার কাজে থাকাকালীন ১৯৯৫ সালে একটি প্রবন্ধ লেখেনঃ
‘এনভায়রনমেন্টাল পলিসি ইন সোভিয়েত ইউনিয়ন’। তাতে তিনি যে তথ্যগুলি তুলে ধরেন, সেগুলির দু-একটি এখানে উল্লেখ করছি। তিনি লিখছেন - ১৯১৯ সালে লেনিনের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে পৃথিবীর প্রথম ‘আস্ত্রাখান প্রকৃতি সংরক্ষণাগার’ (Astrakhan Zapovednik) তৈরি হয়। ভলগা নদীর ‘ব’ দ্বীপ অঞ্চলে অরণ্য ও বিশাল জলাভূমি নিয়ে এই সংরক্ষিত অঞ্চল ১৯৭৫ সালে রামসার সাইট হিসাবে ঘোষিত হয়। এই তৎপরতা ছিল অভাবনীয়। ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শাসনকালে অর্থাৎ ১৯২৭ সালে যে দমন এবং লুণ্ঠনকেন্দ্রিক বন আইন (ইন্ডিয়ান ফরেস্ট অ্যাক্ট) তৈরি হয় তা এখনও বলবৎ আছে।

নভেম্বর বিপ্লবের পর লেনিনের মত ছিলঃ ‘‘প্রকৃতি অক্ষয় এবং প্রকৃতিকে জয় করতে হবে।’’ এই জয় করার অর্থ প্রকৃতিকে গভীরভাবে জানা এবং ব্যবহার করা - নিঃশেষ করা নয়। এই সংরক্ষণের নৈতিকতাই সোভিয়েতের আদিম বনভূমিকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। ২০২০ সালে এফ.এ.ও. - ফাও (Food and Agriculture Organisation)-র স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বলছে, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এখনও সংরক্ষিত আছে বর্তমান রাশিয়াতে (পৃথিবীর মোট বনভূমির প্রায় ২০ শতাংশ)। তারপর ব্রাজিল এবং আমেরিকা(মাত্র ৮ শতাংশ)-র স্থান। বর্তমানের রাশিয়া রিপাবলিকের মোট ভৌগোলিক অঞ্চলের ৪৯.৪ শতাংশ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, বাকিটা সৃজিত বনাঞ্চল। বর্তমানের রুশ দেশ সোভিয়েত রাশিয়ার প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বহন করে।

সোভিয়েতের প্রথম যুগে প্রকৃতি সংরক্ষণের নকশা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন আমেরিকার অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ডগলাস ওইনার। ১৯৮৮ সালে তাঁর প্রবন্ধ “মডেলস অফ নেচারঃ ইকোলজি, কনজারভেশন অ্যান্ড কালচারাল রেভোলিউশন ইন সোভিয়ত ইউনিয়ন”-তে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি তুলে ধরেন।

১৯১৮ সালে সোভিয়েত দেশে ‘ল্যান্ড ডিক্রি’ এবং সেই বছর দেশের সমস্ত অরণ্যভূমির সরকারি সংরক্ষণের জন্য ‘ফরেস্ট ডিক্রি’র মাধ্যমে দেশের সমস্ত অরণ্যভূমির অধিগ্রহণ করা হয়। “ফরেস্ট অফ দ্য রিপাবলিক” - নামে বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত প্রবন্ধের ভিত্তিতে দেশের সমস্ত অরণ্য অধিগ্রহণ করে অরণ্য সম্পদকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগ হলো সংরক্ষিত বনাঞ্চল - যার কাজ ছিল মৃত্তিকা সংরক্ষণ, জল সংরক্ষণ ইত্যাদি। অন্য অংশটি বনবাসী এবং রাষ্ট্রের ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। সোভিয়েত সরকারের বন্যপ্রাণী যেমন মুজ (এক বিশালাকায় হরিণ), বন্য ছাগলের চামড়া থেকে তৈরি পশম থেকে রাজস্ব উপার্জনের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বন্যপ্রাণীদের শিকার নিষিদ্ধ করে। ১৯১৯ সালের মে মাসে লেনিন “ অন হান্টিং সিজনস অ্যান্ড দ্য রাইট টু প্রোসেস হান্টিং ওয়েপান” - “On Hunting Seasons and the Right to Possess Hunting Weapons” - ডিক্রি অনুমোদন করেন। তখন সোভিয়েতে একটি রীতি ছিল যে, বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে শিকারের আয়োজন হতো। সংরক্ষণের তাগিদে এবং বিজ্ঞানীদের পরামর্শে আইন করে এই রীতির অবসান ঘটানো হয়। কৃষি এবং বাস্তুতন্ত্র বিজ্ঞানী এবং কৃষিবিদ পোডিয়াপোলস্কির সঙ্গে আলোচনার মধ্যদিয়ে লেনিন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সোভিয়েতে যা করতে এক বছর সময় লাগে, ভারতে স্বাধীনতার ২৫ বছর পর সেই আইন অর্থাৎ ‘দ্য ওয়াইল্ডলাইফ (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট’ ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়।

লেনিনের নির্দেশে ১৯২১ সালে “ওন দ্য প্রোটেকশন অফ নেচার, গার্ডেনস অ্যান্ড পার্কস” নামে একটি কমিশন তৈরি হয়। কমিশনে প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন। কমিশনের সুপারিশক্রমে ‘ইলমেনস্কি জাপোভেদনিক’ (Ilmenski zapovednik) নামে আর একটি সংরক্ষিত অঞ্চল তৈরি হয়। এই সংরক্ষিত অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এই খনিজ পদার্থ (ইলমেনাইট, মোনাজাইট, ক্যানক্রিনাইট এবং সামারসকাইটে’র মতো আরও ১৬টি) গুলির বাজার মূল্য অনেক হওয়া সত্ত্বেও লেনিনের নির্দেশে এটি সংরক্ষিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। সোভিয়েতে বিজ্ঞানের যুক্তি ছিল অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে। একারণে প্রাকৃতিক সম্পদের বেশ কিছু অংশ বিজ্ঞান গবেষণার স্বার্থে সংরক্ষিত হয়।

সোভিয়েত প্রতিষ্ঠার ৬-৭ বছরের মধ্যে (১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে) সে দেশের জল, বায়ু, মৃত্তিকা ইত্যাদির দূষণ রোধ এবং সংরক্ষণের জন্য সরকার ১৩৯টি আইন তৈরি করে (ইমপ্লিমেনটেশন অফ এনভায়রনমেন্টাল ল ইন দ্য ইউএসএসআর, ১৯৮৯)। মূলত শ্রমিক এবং কৃষকদের কর্মস্থলে দূষণ রোধে এই আইন তৈরি হয়। আমেরিকায় জলদূষণ রোধের আইন হয় ১৯৪৮ সালে এবং ভারতে এই আইন হয় ১৯৭৪ সালে।

স্তালিনের সময় এবং পরিবেশ রক্ষা

১৯৪৮ সালে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে পৃথিবীতে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েতে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক পরিকল্পনা তৈরি হয়। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ঠিক হয় যে, ভুমিক্ষয় রোধে সেল্টরবেল্ট, তৃণভূমি, জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হবে। ১৯৪৬-র খরায় পরিবেশ সংরক্ষণের যে ক্ষতি হয়েছে তাকে মেরামত করতে ঠিক হয়, দেশের দক্ষিণ অংশে ৫৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে অরণ্য সৃজনের কাজ শুরু হবে। ১৯৫৩ সালে স্তালিনের মৃত্যুর পর এই কাজে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে এই কাজ অনেকটা না এগোলে বর্তমান রাশিয়ায় অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি সৃজিত অরণ্য (ফাও-র তথ্য অনুযায়ী) পাওয়া যেত না। আমাদের দেশে (ফরেস্ট সারভে অফ ইন্ডিয়া-২০১৯) এফএসআই-র তথ্য অনুযায়ী এই পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশেরও কম।

কমিউনিস্টরা সংরক্ষণ-বিরোধী এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলতে হয় যে, বিকাশের প্রথম শর্ত হলো দ্বন্দ্ব। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির সঙ্গে এই দ্বন্দ্ব অপরিহার্য। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের অর্থ বৈরিতা নয়। সোভিয়েতের প্রথম যুগে লেনিনের নেতৃত্বে প্রকৃতি গবেষণার উদ্যোগ এবং সংরক্ষণে বিশেষ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্তালিনের নেতৃত্বে এই কাজ আরও বিকশিত হয়।