৫৮ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৬ আগস্ট, ২০২১ / ২০ শ্রাবণ, ১৪২৮
চলমান ঘটনাবলি সম্পর্কে পলিট ব্যুরোর বিবৃতি
গত ৩১ জুলাই সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো’র বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কোভিড অতিমারী, পেগাসাস, আসাম-মিজোরাম সংঘর্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা, কৃষক বিক্ষোভ, শ্রমিকশ্রেণির ওপর আক্রমণ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, ১ আগস্ট এক বিবৃতিতে সভায় আলোচিত বিষয়গুলি প্রসঙ্গে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, এমনকি সরকারি তথ্যেও দেখা যাচ্ছে দেশে গড়ে কোভিড পজিটিভ হবার হার বাড়ছে। তা যাতে বিপর্যয়কর তৃতীয় প্রবাহে পরিণত না হয় তা রুখতে ভ্যাকসিন দেবার হার বহুগুণ বৃদ্ধি করা দরকার। এযাবৎ প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মাত্র ১০.৮৩ শতাংশ পূর্ণ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। সব রাজ্য সরকার ভ্যাকসিনের ঘাটতির কথা জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রক্রিয়া এলোমেলো। একই দিনে সংসদে তিনটি পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়েছে সরকার। মোদী সরকারের উচিত এখনই বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা এবং দেশজুড়ে বিনামূল্যে গণ টিকাকরণের অভিযান শুরু করা।
পলিট ব্যুরো বলেছে, মহামারী ও নানা ধরনের লকডাউনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের জীবন জীবিকার ওপরে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বেকারি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন জ্বালানির দাম বাড়ায় তা সামগ্রিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির জন্ম দিয়েছে। মানুষের জীবন জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারকে আয়করদাতা নয় এমন পরিবারকে সরাসরি ৭৫০০ টাকা নগদে হস্তান্তর করতে হবে, যাদের প্রয়োজন তাদের সকলকে বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
পেগাসাস নজরদারি প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, মোদী সরকার পেগাসাস স্পাইওয়্যার নজরদারি নিয়ে সংসদে কিছুতেই আলোচনা করতে দিচ্ছে না। তার ফলে সংসদ বিপর্যস্ত হচ্ছে। সরকার সত্য কথা জানাতে রাজি নয়, সংবিধান মেনে সংসদের কাছে দায়বদ্ধতা মানতেই রাজি নয়। ইজরায়েলি এনএসও’র তৈরি সামরিক গ্রেডের ওই স্পাইওয়্যার সরকার বা তার কোনো এজেন্সি ব্যবহার করছে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। এই নজরদারির তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, বিচারবিভাগের কর্মী, প্রাক্তন সিবিআই প্রধান, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার প্রমুখ। এটি বিপজ্জনক ঘটনা। শুধুমাত্র ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকারের ওপরেই আক্রমণ নয়, এ হলো গণতন্ত্রে ভারসাম্য রাখে এমন সংস্থার ওপরে আক্রমণ। তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের ওপরে আক্রমণ। এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার গণতন্ত্র ও তার প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার শামিল। সিপিআই(এম) দাবি করেছে সত্য অনুসন্ধানে এবং দোষীদের শাস্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে উচ্চপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্ত করাতে হবে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, দুই প্রতিবেশী রাজ্য আসাম ও মিজোরামের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত ও বৈরিতার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়েছে। আরও খারাপ দিক হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠকের পরপরই এই ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রকে দেখতে হবে যেন বৈরিতার অবসান হয় ও সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। পলিট ব্যুরো প্রশ্ন তুলেছে, আসাম এবং মিজোরামে এনডিএ’র সরকার। বিজেপি এনডিএ’র নেতৃত্বে। শাসকদল কী করছে?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত দ্রুত খোলা যায় তার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, দেড় বছর হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তরুণ প্রজন্মের বড়ো ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এই অপচয় রোধ করা দরকার। দেখা গেছে মাত্র ২২ শতাংশ ছাত্রের ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশেই কোনো ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা নেই। এই ডিজিটাল বিভাজন অসংখ্য সমস্যা তৈরি করছে। শিশু ও মানবপাচারের ঘটনা, শিশুশ্রম, ছোটো অপরাধ, মিড ডে মিলের অভাবে অপুষ্টি অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে গেছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমস্ত শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাকর্মীদের পূর্ণ টিকাকরণ করা প্রয়োজন। তাঁদের ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা দরকার।
আট মাস হলো সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতৃত্বে কৃষকরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। পলিট ব্যুরো বলেছে, মোদী সরকার একগুঁয়ে আচরণ করে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে না। মোর্চার সঙ্গে এখনই আলোচনা পুনরায় শুরু করতে হবে। কৃষকদের লড়াইকে সমর্থন করে সিপিআই(এম) তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং সি২+৫০শতাংশ দামে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার আইন চালুর দাবি জানিয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সম্পদ বিপুল আয়তনে লুট করছে, সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও জনপরিষেবা বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের ওপরে বর্ধিত আক্রমণ নামিয়ে আনছে। অত্যাবশ্যকীয় প্রতিরক্ষা পরিষেবা অর্ডিন্যান্স, ২০২১-কে আইনে পরিণত করা চলবে না। সংসদে অন্যদের সঙ্গে সিপিআই(এম) এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করবে।
সংসদে সরকারই হইচই তৈরি করে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশ করিয়ে নিচ্ছে। পলিট ব্যুরো বলেছে, যথাযথ বিতর্ক ছাড়া কোনও আইন পাশ করানো চলবে না। বিজেপি সরকার সংসদকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছে, শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন জড়িত এমন বিষয়েও আইন করে নিচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এখনই বন্ধ হওয়া দরকার।