E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৬ আগস্ট, ২০২১ / ২০ শ্রাবণ, ১৪২৮

বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিমা কর্মীদের ধর্মঘট


কলকাতায় বিমা কর্মীদের বিক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সংসদে বিমা বেসরকারিকরণ বিল পাশ হওয়ার প্রতিবাদে ৪ আগস্ট দেশজুড়ে পালিত হলো বিমা ধর্মঘট। ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার ৬৬ হাজার কর্মচারী মঙ্গলবার এই ধর্মঘটে অংশ নেন। ২ আগস্ট সংসদে পাশ হয়েছে সাধারণ বিমা বিল। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় সরকারের যে ৫১ শতাংশ শেয়ার সীমা ছিল তা বিলোপ করা হয়েছে বিমা সংশোধনী বিলে। বিরোধীদের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও মোদী সরকার সংখ্যার জোরে পাশ করিয়েছে বিমা বেসরকারিকরণ বিল।

এদিন দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থায় ধর্মঘটে অংশ নেন কর্মীরা। ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স কোম্পানি, ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানি - এই চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার জয়েন্ট ফোরাম অব ট্রেড ইউনিয়ন পাবলিক সেকটর জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ডাকে ধর্মঘট পালিত হয়।

সর্বভারতীয় বিমা ধর্মঘটকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিআইটিইউ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেন অভিনন্দন বার্তায় জানান, মোদী সরকার বাজেট ঘোষণায় জানিয়েছিল তারা দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও একটি বিমা সংস্থা বিক্রি করে দেবে। সেই লক্ষ্যে বিমা বেসরকারিকরণের বিল পাশ করিয়েছে। কর্মচারীরা তার প্রতিরোধে ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। দেশজুড়ে সর্বাত্মক বিমা ধর্মঘট পালনে কর্মচারীদের সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে সিআইটিইউ। তিনি বলেন,সংসদে কোনও আলোচনা ছাড়াই সংখ্যার জোরে পাশ করানো হয়েছে বিমা বেসরকারিকরণ বিল। এভাবে কর্পোরেটদের হাতে দেশের সম্পদ সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মোদী। বিমা ছাড়াও ব্যাঙ্ক, খনি, প্রতিরক্ষা, রেল,বিমান বন্দর, বিমান পরিষেবা, সমুদ্র বন্দর সব একে একে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। সেন বিবৃতিতে বেসরকারিকরণ আটকাতে সমস্ত শ্রমিক সংগঠনকে একজোট হয়ে দেশে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও জানিয়েছেন।

এদিন অল ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের কে গোবিন্দন জানিয়েছেন, দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা মানুষের আস্থা অর্জন করে চলছে। ফলে তাদের বিমা পরিষেবার মান উন্নত। উদারবাদের জমানায় বেসরকারি সংস্থার জন্য বিমার বাজার খুলে দেওয়া হলেও তারা বাজারে বিশেষ আস্থা অর্জন করতে পারেনি। কর্পোরেটকে বিমার বাজারে একচেটিয়া দখল দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান এটা সকলের জানা উচিত এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা বিমা পরিষেবায় প্রথম পাঁচটি স্লটে অবস্থান করে। বিমা ক্লেমের নিস্পত্তি হার খুব দ্রুত। দেখা গেছে বিমা নিয়ে যে অভিযোগ আসে তাতে মোট অভিযোগের মাত্র ১৮ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে আসে। বাকি ৮২ শতাংশ অভিযোগ বেসরকারি বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে। মোদী সরকার এখন সেই বেসরকারি বিমা সংস্থার হাতেই তুলে দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা। এদিকে ব্যাঙ্ক কর্মী অফিসার সংগঠন বিমা কর্মীদের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোশিয়েশন এবং অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার কনফেডারেশনের পৃথক বিবৃতিতে বিমা ধর্মঘট সফল করায় কর্মচারীদের অভিনন্দন জানিয়েছে।

এদিন সারা দেশের সাথে এরাজ্যেও ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে এই ধর্মঘট। সাধারণ বিমা দপ্তরগুলিতে সর্বাত্মক ধর্মঘটের সঙ্গে জীবনবিমা দপ্তরগুলিতে এই ধর্মঘটের সমর্থনে এবং মোদী সরকারের দেশবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বি‍‌ক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়।

এদিন কলকাতায় মিডলটন স্ট্রিটে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্সের সদর দপ্তরে অংশ নেন ১০০ শতাংশ কর্মী এবং আধিকারিক। কলকাতা ছাড়াও শিলিগুড়ি, আসানসোল, হলদিয়া, মেদিনীপুর সহ রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা কর্মীদের এই ধর্মঘট সর্বাত্মক আকার নেয়।

বিমা কর্মীরা স্পষ্টতই দাবি জানিয়েছেন, সরকারকে অবিলম্বে এই বিল প্রত্যাহার করতে হবে। ৪টি সংস্থাকে একত্রিত করে নতুন সংস্থা তৈরি করতে হবে। যাতে বাজারের অন্যান্য বেসরকারি বিমা সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায়।

আন্দোলনরত কর্মীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বেসরকারি হাতে চ‍‌লে গেলে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ পরিষেবা থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত হবেন। এর পাশাপাশি সরকারি কোষাগারে লাভ হিসেবে ২৮ হাজার কোটি টাকার বেশি প্রদান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ সংস্থা। তাদের স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ দেড় লক্ষ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশব্যাপী পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। বেসরকারিকরণের ফলে সরকার এই রাজস্ব হারাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের উন্নয়ন। এদিন কলকাতায় ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সদর দপ্তরের সামনে বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জীবন বিমার বিভিন্ন দপ্তরের সামনেও আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতি সংহতি জা‍‌নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়।

মোদী সরকারের দেশ‍ বিক্রির নীতির বিরুদ্ধে এদিন সাধারণ বিমা সংস্থায় সর্বাত্মক ধর্মঘট করার জন্য বিমা কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি এবং সাধারণ সস্পাদক অনাদি সাহু।