৫৮ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৬ আগস্ট, ২০২১ / ২০ শ্রাবণ, ১৪২৮
শ্রমিকবিরোধী শ্রমকোড বিষয়ক আলোচনাসভা
সৌম্যজিৎ রজক
ভাইজাগে বেসরকারিকরণ বিরোধী শ্রমিক মিছিল।
চলতি মাসের দুই ও চার তারিখে প্রতিদিন দু’টি করে মোট চারটি শ্রমকোড বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করেছিল সিআইটিইউ কলকাতা জেলা কমিটি।
“ভারতবর্ষের বুকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শ্রমিকশ্রেণি তাঁদের ন্যায়সঙ্গত নানান দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আরএসএস পরিচালিত বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার কর্পোরেটদের স্বার্থে শ্রমিকদের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করার জন্য শ্রমিক-কর্মচারীদের সমস্ত অর্জিত আইনগত অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। মালিকের মুনাফা যাতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ে তা নিশ্চিত করতেই দেশের শ্রমআইনগুলো দুমড়ে মুচড়ে চারটি শ্রমকোড তাঁরা চালু করতে চাইছে। এই বিপদ সম্পর্কে সকল শ্রমিক-কর্মচারী এবং শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠকদের অবহিত ও সচেতন করা প্রয়োজন।” ২ আগস্ট আলোচনাসভার শুরুতে বর্ষীয়ান শ্রমিকনেতা নিরঞ্জন চ্যাটার্জি একথা বলেন। প্রথম দিনের অধিবেশনে ‘বেতন সংক্রান্ত কোড’ ও ‘শ্রমিক মালিক সম্পর্ক বিষয়ক কোড’ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা উপস্থিত করেন যথাক্রমে দেবাশিস রায় ও মৃণাল রায়চৌধুরী। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৪ তারিখ ‘শিল্প নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কাজের শর্তাবলি সংক্রান্ত কোড’ এবং ‘সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক কোড’ সম্পর্কে আলোচনা করেন যথাক্রমে সত্যব্রত ঘোষ এবং দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। দ্বিতীয় দিন সভা পরিচালনা করেন প্রভাকর মণ্ডল। আলোচনা সংগঠিত হয় কৃষ্ণপদ ঘোষ ভবনে।
দু’দিনে মোট চারটি শ্রমকোড নিয়ে চারটি নির্দিষ্ট আলোচনায় আলোচকরা বারেবারে এই কোডগুলি নিয়ে গভীর অধ্যয়ন এবং চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এযাবৎকাল পর্যন্ত ইউনিয়নগুলি মাঠে ময়দানে লড়াই আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের নানান সমস্যায়, নানান দাবিতে আইনি পথে লড়াই করে তাঁদের বিভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। শ্রমআইনগুলিতে গুরুতর পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশেই শ্রমিক-কর্মচারীদের আইনি লড়াইয়ের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে এব্যাপারে ধারা-উপধারা ধরে ধরে পরিবর্তিত আইন অনুধাবন না করতে পারলে শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকারের লড়াই পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি এই কোডগুলি সম্পর্কে মূলধারার মিডিয়া প্রকৃত তথ্য তুলে না ধরায় এবং শাসকদলের পক্ষ থেকে নানান রকম বিভ্রান্তিকর মিথ্যে ব্যাখ্যা হাজির করায় শ্রমিক-কর্মচারীরা তাঁদের ওপর নেমে আসা আক্রমণের মাত্রা ও চরিত্র সঠিকভাবে অনুধাবনই করে উঠতে পারবেন না।
সঙ্গত কারণেই শ্রমিক-কর্মচারীদের সামনে কোডগুলির যথাযথ ব্যাখ্যা উপস্থিত করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সময়ের এই দাবি মেটাতেই সিআইটিইউ কলকাতা জেলা কমিটির এহেন উদ্যোগ।
এই আলোচনাসভায় জেলার সমস্ত ইউনিয়নের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা শারীরিকভাবে উপস্থিত তো ছিলেনই, পাশাপাশি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে আলোচনা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। আগামীদিনে এই বিষয়ে আরও গভীর অধ্যয়ন ও চর্চার বন্দোবস্ত করা এবং সেই চর্চা আরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানান সিআইটিইউ কলকাতা জেলা সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। আলোচনার শেষে তিনি বলেন, “শ্রমিক কর্মচারীদের সামনে যে ভয়ঙ্কর বিপদ আজ হাজির হয়েছে সে সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপড়া গড়ে তুলে তাকে প্রতিহত করার জন্য জোরালো লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত করতে হবে।”