৫৮ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৬ আগস্ট, ২০২১ / ২০ শ্রাবণ, ১৪২৮
কঠিন সময়ে লড়াইয়ে আমাদের প্রেরণা কাকাবাবু
শংকর মুখার্জি
দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অভ্যন্তরে মতাদর্শগত লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল গত শতকের ষাটের দশক। প্রথমে সংশোধনবাদ এবং পরে সংকীর্ণতাবাদ এই দুইয়ের পাকচক্রেই পড়েছিল দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন। এর সুযোগ নিয়েছিল দেশের শাসকশ্রেণিও। কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শ্রেণিআপসকামী পথে চলতে বাধ্য করতে তারাও চালিয়েছিল কুৎসা অপপ্রচার; সংগঠিত করেছিল শারীরিক আক্রমণ। ঘরে বাইরে এই আক্রমণের মধ্যে দাঁড়িয়েও তৎকালীন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অংশ এক দুর্বার মতাদর্শগত লড়াই চালায়। সারা দেশেই এই লড়াই চলেছিল। পশ্চিমবঙ্গ ছিল সেই লড়াইয়ের এপিসেন্টার। সেই লড়াইয়ে কাকাবাবুর ভূমিকা ছিল মহীরুহের মতো।
পার্টিতে কাকাবাবুর, কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদের জন্মদিন পালনের সূচনাও হয় এই দশকেই, ১৯৬৩ সালের ৫ আগস্ট, কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরি হলে। সেটা ছিল কাকাবাবুর ৭৪তম জন্মদিন। প্রকাশ্যে এইরকমভাবে জন্মদিন পালনের ব্যাপারে কাকাবাবুর নিজেরও ঘোরতর আপত্তি ছিল। সেই বিষয়ে আমরা পরে আসছি। ওই দিনটি আরও একটি কারণে স্মরণীয়। ওই বছরের আগস্ট মাসের ১৬ তারিখে 'দেশহিতৈষী'র প্রকাশের ঘোষণাও ওই রামমোহন লাইব্রেরির সভাতেই করা হয়।
ইংরেজির ১৮৮৯ সালে এবং বাংলার ১২৯৬ সালের শ্রাবণ মাসে কোনো এক সোমবার কাকাবাবু জন্মগ্রহণ করেন। কাকাবাবুর কথায়ঃ “খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় আমার কখনও জন্মবার্ষিকী পালিত হয়নি। তাই আমার জন্মের সঠিক তারিখ আমার জানা নেই। মায়ের মুখে শুনে যতটা মনে আছে ততটাই শুধু আমি এখানে লিখলাম।” শ্রাবণ মাসের ওই সোমবারের হিসেবে “আমি স্থির করেছি, ১৮৮৯ সালের ৫ আগস্টকে আমি আমার জন্মদিন বলব।” (আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মুজফ্ফর আহ্মদ) কাকাবাবুর জন্মস্থান ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গের নোয়াখালি জেলার সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রাম। ২০২১ সালের ৫ আগস্ট কাকাবাবুর ১৩৩তম জন্মদিবস।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে সোভিয়েত পার্টি ও চীনের পার্টির নেতৃত্বে দুটি পরস্পরবিরোধী শিবিরের আবির্ভাব ঘটে। মূলত স্তালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত পার্টির বিংশতিতম কংগ্রেসের গৃহীত শান্তিপূর্ণ উত্তরণ ও শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের লাইনকে চীনের পার্টি সংশোধনবাদী বলে আখ্যা দেয়। অপরদিকে সোভিয়েত পার্টি চীনের পার্টিকে সংকীর্ণতাবাদী বলে নিন্দা করে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে এর প্রভাব পড়ে। পার্টির একটা বড়ো অংশ সোভিয়েত পার্টির লাইনকে অনুসরণ করে। পার্টির মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধ তীব্র হয়। শ্রেণিসংগ্রাম এবং শ্রেণি সহযোগিতার লাইনের মধ্যে এবং ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের রণনীতিগত লক্ষ্য কী হবে এবং তা অর্জনের জন্য কী রণকৌশল গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণই ছিল এই আন্তঃপার্টি মতাদর্শগত বিরোধের মূল বিষয়। এই মতাদর্শগত সংগ্রাম চূড়ান্ত পরিণতি পেয়েছিল পার্টিভাগ এবং সিপিআই(এম) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের এই মতাদর্শগত সংগ্রামের কালেই ভারত চীনের মধ্যে সীমান্তবিরোধের সূত্রপাত ঘটে ১৯৬২ সালের অক্টোবরে। শাসকশ্রেণির উদ্যোগে দেশজুড়ে উগ্রজাতীয়তাবাদ এবং চীনবিরোধী প্রচারের বন্যা বয়ে যায়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে প্রকৃত মার্কসবাদী-লেনিনবাদী অংশ যাঁরা পার্টির মধ্যে শ্রেণিসংগ্রামের লাইন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছিলেন তাঁরা এই চীনবিরোধী প্রচারে শামিল হতে অস্বীকার করেন। তৎকালীন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার কমিউনিস্ট পার্টির ওই নেতৃত্বের বেশিরভাগকেই গ্রেপ্তার করেন। যাঁরা পার্টির মধ্যে শ্রেণিসহযোগিতার লাইনের প্রবক্তা ছিলেন তাঁরা শাসকশ্রেণির উগ্রজাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে দাঁড়ান। তাঁদের বক্তব্য ছিলঃ পার্টির উচিত ভারত সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করা। শ্রেণিসংগ্রামের পক্ষের অংশ বলেছিলেনঃ ভারত-চীনের সীমান্তবিরোধ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলা দরকার। শাসকশ্রেণির সুরে গলা মিলিয়ে শ্রেণি সহযোগীরা একে চীনের সাথে আঁতাত বলল। পালঘাট পার্টি কংগ্রেসের পর থেকে যে নীতিগত বিরোধ স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে তা পার্টিকে দুভাগে বিভক্ত করে ফেলল। ১৯৬২ সালের ২১ নভেম্বর চীন একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পরও সরকার সারা দেশের হাজারের বেশি পার্টিকর্মী ও নেতাকে ভারতরক্ষা বিধি অনুসারে আটক করে রাখল কিংবা নতুন করে গ্রেপ্তার করল। কাকাবাবুকে ওই ২১ নভেম্বরই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেলে তখন জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্তসহ আরও অনেক নেতৃত্ব। জেলেই নেতৃবৃন্দ ঠিক করেন যে, এই মতাদর্শগত লড়াইয়ে পার্টিকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাকাবাবুর জন্মদিন পালন করা হবে। কাকবাবু প্রথমে রাজি ছিলেন না। পরে নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেন। ১৯৬৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কাকাবাবু মুক্তি পান। তখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড অপারেশনের জন্য তিনি ভর্তি।
পার্টির মধ্যে যাঁরা সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন তাঁরা ১৯৬৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতার মনুমেন্ট ময়দানে সমাবেশের ডাক দেয়। হাসপাতালের বেড থেকেই সেই সমাবেশকে সফল করতে 'দেশহিতৈষী' পত্রিকায় বার্তা পাঠান কাকাবাবু। সেই বার্তায় তিনি লিখেছিলেনঃ “আমি একান্তভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, কলকাতার ও আশেপাশের জিলাগুলির মানুষ হাজারে হাজারে ২৮শে সেপ্টেম্বর সমাবেশে যোগদান করুন। ওখানেই হবে কাজের শুরু। এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে রবীন্দ্রনাথ ‘সবুজপত্রে’ যে একটি কবিতা লিখেছিলেন তার দুটি পংক্তি আজ আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি।”
“আমরা চলি সমুখপানে
কে আমাদের বাঁধবে।
রইল যারা পেছুর টানে
কাঁদবে তারা কাঁদবে ৷৷”
মার্কসবাদী-লেনিনবাদী আর্দশে অটল থেকে সেদিন সমুখপানে চলারই নির্দেশ দিয়েছিলেন কাকাবাবু।
সংশোধনবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদের বৈঠক থেকে যে ৩২ জন বেরিয়ে এসেছিলেন তার মধ্যে কাকাবাবু ছিলেন। এঁরাই অন্ধ্রপ্রদেশের তেনালিতে ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে কনভেনশন আহ্বান করেন। ওই কনভেনশনেই ঠিক হয়, ওই বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় পার্টির সপ্তম কংগ্রেস হবে। পার্টি কংগ্রেসের কয়েকদিনের আগে ৩০ অক্টোবর কাকাবাবুকে ফের গ্রেপ্তার করল কংগ্রেস সরকার। তিনি পার্টি কংগ্রেসে অংশ নিতে পারলেন না। সপ্তম কংগ্রেসে যে রিপোর্টটি পেশ করা হয়েছিল তার শিরোনামও ছিল ‘সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে’। জেলে থাকাকালীন অবস্থাতেই কাকাবাবু কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। কাকাবাবু এই পর্বে জেলে ছিলেন ১৮ মাস। ১৯৬৬ সালের ৬ মে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ভিত্তিতে সিপিআই(এম) গঠন এবং পার্টি কংগ্রেসে পার্টি কর্মসূচি গৃহীত হবার মধ্য দিয়ে মতাদর্শগত লড়াইয়ের একটা পর্যায় শেষ হয়। তবে পার্টিতে এই লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের রিপোর্টে বলা হয়েছিলঃ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবার সাথে সাথেই পার্টিকে সংকীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এবং এও বলা হয়েছিল যে, দু’ভাবে সংকীর্ণতাবাদ পার্টিতে প্রকাশ পায়। এর থেকে মুক্ত হতে এমন একটা রণনীতি ও রণকৌশল রচনা করতে হবে যাতে শাসক কংগ্রেস এবং বিরোধী অন্যান্য বুর্জোয়া দলগুলির সমর্থক লক্ষ লক্ষ মানুষকে শ্রমিকশ্রেণির দিকে আকৃষ্ট করা যায়।
সংকীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ১৯৬৭-৬৮ সাল ছিল উল্লেখযোগ্য বছর। ১৯৬৭ সালের ২৮ জুন 'দেশহিতৈষী'র দপ্তরে হামলার মধ্য দিয়ে সংকীর্ণতাবাদীদের অর্থাৎ তথাকথিত নকশালদের হঠকারী অভিযান শুরু হয়। এর বিরুদ্ধে কলম গর্জে ওঠে কাকাবাবুর। ১৯৬৭ সালের ২ জুলাই 'গণশক্তি'তে নিজ নামে স্বাক্ষরিত এক সম্পাদকীয় লেখেন কাকাবাবু। ওই সম্পাদকীয়তে তিনি লেখেনঃ
“কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লবী পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিপ্লবী মতের ও পথের অনুসরণ করে। যাঁরা মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে সংশোধন করে ধনিক শ্রেণির লেজুড়ে পরিণত হয়েছেন আমরা তাঁদের বর্জন করেছি।
সুকঠোর শ্রেণিসংগ্রামের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গিয়েই শ্রমজীবী জনগণ একদিন দেশে ক্ষমতা দখল করবেন। হঠকারিতার পথ বিপ্লবের পথ নয়, ক্ষমতা দখলের পথও তা নয়। হঠকারিতা জনগণকে দুঃখ-দুর্ভোগের অতল সাগরে ডুবিয়ে দেয়।
পথের শেষে পৌঁছতে হলে সমস্ত পথ পার হয়ে যেতে হবে। মধ্যপথে পথ সংক্ষেপ করে গন্তব্য স্থলে পৌঁছানো অসম্ভব। হঠকারীরা তাই করতে চান। সংগ্রাম করার ধৈর্য ও একাগ্রতা তাঁদের নেই। তাঁদের লক্ষ্য সস্তায় বাজিমাত।
কমিউনিস্ট পার্টির ভিতরে হঠকারী উপদলের অভ্যুদয় হয়েছে। এই উপদলের লোকেরা যদি আত্ম-সমালোচনার ভিতর দিয়ে নিজেদের বিচ্যুতির হাত হতে না বাঁচান, তবে কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁদের স্থান নেই। ইতোমধ্যে তাঁদের অনেকেই পার্টি হতে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
...অতীতে আমরা হঠকারিতার জন্যে অনেক মূল্য দিয়েছি। আর সেই পথে নয়। যত দুঃখ হোক, যত কষ্ট হোক, যত কাঁটা বিছানোই হোক না কেন আমাদের পথ - আমরা বিপ্লবের পথ ধরেই চলব। হঠকারীরা আর যাই কিছু হোন না কেন, তাঁরা বিপ্লব-বিরোধী।
আমাদের ভিতরে হঠকারীদের স্থান নেই। তাঁদের ভিতরে আমাদের পার্টির অনেকেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা থাকতে পারেন। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভুললে চলবে না যে, বন্ধুর চেয়ে পার্টি বড়।”
এর কয়েকদিন পর ৭ জুলাই তিনি 'দেশহিতৈষী'তে আরেকটি প্রবন্ধ লেখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘হঠকারীদের হঠাতে হবে’। সেখানে লিখলেনঃ “কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লবী পার্টি। শৃঙ্খলাই পার্টির জীবন। শৃঙ্খলা কিন্তু আমাদের পায়ের শৃঙ্খল নয়। পার্টির শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে পার্টি হতে পার্টির শত্রুদের বহিষ্কার করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর পার্টির শৃঙ্খলার প্রতি নজর না দেওয়ায় পার্টি আপন বিপ্লবী স্বরূপ হারিয়ে প্রায় উদারনৈতিক দলে পরিণত হয়েছিল। পার্টি আপন ভুল বুঝতে পেরে দীর্ঘকাল পরে এবার কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষার প্রতি নজর দিয়েছে। এবার পার্টি বাঁচবে।”
সংশোধনবাদের মতোই সংকীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধেও আপসহীন দৃঢ় সংগ্রাম করার শিক্ষাই আমাদের দিয়ে গেছেন কাকাবাবু।
১৯২০ সালের শুরুতেই কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ ঠিক করে ফেলেছিলেন, রাজনীতিকেই তাঁর জীবনের পেশা হিসেবে নেবেন। যদিও কয়েক বছর আগে, ১৯১৬ সাল থেকেই তিনি রাজনৈতিক সভা- সমিতি, মিছিলে যোগ দিতে শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর কমরেড মুজফ্ফর আহমদ মারা যাওয়ার আগে এই সাড়ে পাঁচ দশকে তাঁর এই সিদ্ধান্তের কোনো ব্যতয় ঘটেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এই মহান রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। শীঘ্রই দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্যানভাসে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের শ্রেণিরাজনীতির সূত্রপাতের পুরোধা হয়ে ওঠেন; দেশে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলায় কাণ্ডারী হন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ১৯২৩ সালে কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় এবং ১৯২৯ সালে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে পাঁচ বছরের বেশি সময় জেলে পুরে রাখে। ঠিক একইভাবে স্বাধীনতার পর দেশের শাসক কংগ্রেস দলও তাদের শত্রুকে চিনতে ভুল করেনি। ১৯৪৮, ১৯৬২ এবং ১৯৬৪ সালে মোট তিন বার স্বাধীন ভারতে কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ গ্রেপ্তার হন। স্বাধীন ভারতেও তাঁর জেলজীবন পাঁচ বছরেরও বেশি।
তিনি সেই ১৯২০-র দশক থেকেই সারা দেশে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং পার্টি পত্র-পত্রিকা প্রকাশ, পুস্তক প্রকাশনার কাজে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে নির্বাচনী লড়াইতেও তিনি পার্টিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনী লড়াই প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত ছিলঃ “কমিউনিস্ট পার্টি কোনো কাজ খেলার ছলে করে না। নির্বাচনের কাজকে পার্টি গভীরভাবে গ্রহণ করেছে। না করলে পার্টি দেশের জনগণের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিত, জনগণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত পার্টি। তবে, এ কথা এক মুহূর্তের জন্যেও ভুললে চলবে না যে কমিউনিস্ট পার্টির চিন্তাধারা নিয়েই আমরা দেশের মানুষের কাছে যাব। তাতেই বাড়বে পার্টির প্রভাব।” (দেশহিতৈষী, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৮)
প্রতিকূল সময়ে পার্টির অভ্যন্তরে, পার্টির বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে মতাদর্শগত লড়াই করে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পথে পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এবং লক্ষ-কোটি মেহনতি মানুষকে শাসকশ্রেণির কবল থেকে মুক্ত করে পার্টির পতাকাতলে আনার যে শিক্ষা কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ আমাদের জন্য রেখে গেছেন তা এই কঠিন সময়ে আমাদের চলার পাথেও হোক,প্রেরণা জোগাক।
কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ লাল সেলাম। কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ অমর রহে।