৫৮ বর্ষ ৫১ সংখ্যা / ৬ আগস্ট, ২০২১ / ২০ শ্রাবণ, ১৪২৮
একটি কুড়ুল ও শালগাছ
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ কুড়ুল আর শালগাছের গল্পটা দিয়েই শুরু করি। গল্পটা অনেকটা এরকম। কুড়ুলের হাতল ছিল না। বেচারি কুড়ুল শালগাছের কাছে গিয়ে কেঁদেকেটে বলে, আমার হাতল নেই। একটা ডাল দাও। দয়ার শরীর শালগাছের। কুড়ুলের কথায় বিশ্বাস করে ভালো মনে ডাল দিয়ে দেয়। সেই ডাল দিয়ে কুড়ুলের হাতল তৈরি হয়। আর সেই কুড়ুল দিয়েই শালগাছের গোড়ায় কোপ। রবীন্দ্রনাথের লেখা এই কবিতার নাম ‘রাষ্ট্রনীতি’। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে দোলা সময়ে এ কবিতা আজও বড়ো প্রাসঙ্গিক। বুঝলে গোঁসাই?
আসলে দায় একটা থেকেই যায়। স্বীকার করা বা অস্বীকার করার সঙ্গে দায় থাকা, না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। অস্বীকার করলেও দায় থাকে। না করলেও। স্বীকার করতে অবশ্য সৎসাহস লাগে। দায় এড়ানোর বিভ্রান্তি তৈরি করতে নিত্যি নতুন বিতর্কের আমদানি। তরতরিয়ে চড়ে টিআরপি। বেশ কিছুটা সময় ধরে অর্থহীন কিছু শব্দের কপচানিতে কেউ কেউ যুদ্ধজয়ের তূরীয় আনন্দ অনুভব করলেও করতে পারেন। কিন্তু তা ‘হাঁসজারু’ নাকি ‘বকচ্ছপ’ অথবা ‘হাতিমির’ - কিসের জন্ম দেয়, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বড়ো কঠিন। মুরগির লড়াই শেষে মুচকি হেসে মালিক লাভের টাকা বুঝে বাড়ির পথ ধরবেন। ক্ষতবিক্ষত মুরগির ময়দানে পড়ে থাকাই রীতি। প্রশ্ন করা এখন রীতিবিরুদ্ধ!
গোড়ালি, হাঁটু, মাথা - মানব শরীরে কোন্টা কোথায় থাকে তা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে জানলেও জানেন না। খেই হারিয়ে ফেলেন। ছাপার অক্ষরে চোখ বোলানোর চেয়ে চোখ দিয়ে দেখা এবং কান দিয়ে শোনা অনেক বেশি মগজে ধাক্কা দেয় বলেই। তাই ভিস্যুয়াল ইমপ্যাক্টে মগজে তালিবানি হানাদারি কিছু বেশিই হয়। কোনোকিছু ভেবে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগেই সত্যকে গুলিয়ে দিতে আরও একটা ধাক্কা। অবিরাম ধাক্কার জেরে সবটাই গিয়ে দাঁড়ায় অনেকটা 'খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না' কাণ্ডে। আমাদের ছাই পিছিয়ে-পড়ার ভয়। না দেখে, না পড়ে উপায় নেই। বাঁকা পথে সাফল্য খুঁজে নেওয়া বিজ্ঞজনদের নিন্দামন্দও চেটেপুটে পড়ে ফেলি। গোড়ালি জলে দাঁড়িয়ে থাকাকেও যখন অম্লানবদনে হাঁটুজল বলে ঘোষণা করা হয় তাও দেখি। এর আগে যশের সময় হাঁটুজলে সাঁতার কাটা আমরা দেখেছি। তারও আগে দু'হাজার টাকার নোটে মাইক্রোচিপ-এর ধারাবিবরণী। গোগ্রাসে গিলেছি, জাবর কেটেছি। আর ‘ম্যান মেড বন্যা’র গল্প শুনতে শুনতে এখন কুমিরছানারাও লজ্জা পেয়ে যায়। পড়া, দেখার এরকম কাহিনি খুঁজতে বসলে লিস্টিতে জায়গা কুলোবে না। কাজেই সে দুষ্টুমি না করাই ভালো। তার চেয়ে বরং হাহুতাশ করা, মুরগি, গোরু নিয়ে আলোচনা করে রসেবশে থাকার চেষ্টাতেই সকলের মঙ্গল।
ইদানীং হয়েছে মুশকিল। মাথার চুল ছিঁড়ে বা মাথায় হাতুড়ি মেরেও সমাধান মিলছে না। অনেকেরই যদিও মনে হতে পারে সেটা আবার কী বস্তু! আমাদের চারপাশে তো মুশকিলের কিছু নেই। সরলরেখা ধরে নিস্তরঙ্গ জীবন। চড়াই উৎরাইহীন। সবকিছুই তো ঠিকঠাক চলছে। পেঁচা সুযোগ পেলেই রাষ্ট্র করে বেড়াচ্ছে সূর্যের সাথে তার শত্রুতার কথা। এর মাঝেই ভোট আসছে, ভোট যাচ্ছে। দম আটকে যাচ্ছে। হাট বসছে। বিকিকিনির হাটে চড়া দামে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বিক্রি হচ্ছে। দম ফিরে আসছে। মোবাইলে মুখ দেখতে পাওয়ার যুগ শুরু হতেই আয়নার বিক্রিবাটা আর বিশেষ হয়না। তাই আয়নার সামনে দাঁড়ানোর তাগিদটাও ক্রমে ক্রমে প্রাগিতিহাসিক অভ্যেস। আমরাও নাচতে নাচতে গিয়ে গণতন্ত্রের মহোৎসবে অংশ নিচ্ছি। বিকল্পে নয়। আস্থা দুয়ারে রেশন থেকে দুয়ারে জল প্রকল্পে। জনগণের টাকায় ক্লাবে ক্লাবে ৫ লক্ষ টাকা করে খয়রাতিতে উৎসব। অন্যদিকে দেশজুড়ে ধিকিধিকি জ্বলা দিয়ে শুরু হয়ে এখন ‘আচ্ছে দিন’-এর দাবানল। ‘মুমকিন হ্যায়’ খেলার রাহুগ্রাস। প্রবল উন্নয়ন যুদ্ধের সঙ্গে অবিরাম স্নায়ুযুদ্ধ। বেবাক গুলিয়ে যাচ্ছে কী করতে হবে। এক পা এগোতে দু’পা পেছোনো...। এসব জটিল বিষয় বরং থাক। থিওরি বনাম প্র্যাক্টিকাল - এ দ্বন্দ্বযুদ্ধ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কাজেই মানে মানে মূষিক রূপ ধারণ করাই শ্রেয়। সেটা অনেক বেশি নিরাপদ।
আসলে আমাদের আশেপাশে যা যা ঘটছে সেই সব ঘটনায় আম পাবলিকের খুব একটা কিছু আসে যায় না। মানে আমাদের সেরকমই বোঝানো হয়। ‘সব মজেমে ছে’। ‘উৎসব করবনা তো কী শ্রাদ্ধ করব’? ডায়ালগগুলো এমনি এমনি তৈরি হয়নি। এসব বোঝানোর জন্য পরোক্ষ, প্রত্যক্ষ - নানারকমের শব্দবন্ধ আছে। কোন্টা পরোক্ষ, কোন্টা প্রত্যক্ষ - এই জটিল তত্ত্ব বুঝতে চাওয়ার জটিলতার থেকে বিষয়গুলো না বুঝতে চাওয়া অনেক কম পরিশ্রমের। খেটে খেতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ না হতে চাওয়াটাই এখনকার ট্রেন্ড। অবশ্য ট্রেন্ডের আড়ালে চুপিসাড়ে, নিঃশব্দে পরোক্ষ বদলে যায় প্রত্যক্ষে খেলা শুরু হয় তখনই। আঁচ সবার আগে পড়ে আম জনতার গায়েই। তা সে পেগাসাস নজরদারি কাণ্ড হোক বা বিমা বেসরকারিকরণ।
যেমন ধরা যাক বিমা বেসরকারিকরণ। গত ২ আগস্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে বিল পাশ হয়ে গেছে লোকসভায়। বিরোধীদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই বিল পাশ করানো হয়। এতদিন নিয়ম ছিল বিমা সংস্থাগুলোয় সরকারের অংশীদারি থাকবে ৫১ শতাংশ। কিন্তু সেই নিয়ম তুলে নেওয়া হলো। ফলে সরকার এবার নিজের শেয়ার বেসরকারি খাতে বিক্রি করতে পারবে। গত শুক্রবার ৩০ জুলাই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিলটি পেশ করেছিলেন।
এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ৪ আগস্ট চারটি সাধারণ বিমা সংস্থায় ধর্মঘট করেছেন কর্মীরা। ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্সের সব দফতরের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। অর্থমন্ত্রী যদিও দাবি করেছেন, বেসরকারিকরণের যে ভাবনা, তা সঠিক নয়। সাধারণ মানুষ যাতে বেশি করে অংশ নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। অথচ বিলে বলা আছে, বৃহত্তর বেসরকারি অংশগ্রহণের লক্ষ্যেই এই বিল। মোদী সরকারের আমলেই বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হয়েছে।
নীতি আয়োগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বেসরকারিকরণ করা হবে। এই সংস্থার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি'র মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২ লক্ষ কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা ৪০ কোটি। সেই এলআইসি-কেও বেসরকারি করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। এই পুরো ঘটনাতেই আপাতত সাধারণ মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ কোনো আঁচ আসবে না বলেই প্রচার হচ্ছে। যদিও বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে।
সংসদে যেদিন বিমা বেসরকারিকরণের বিল পাশ হয়েছে সেদিনই দিল্লির যন্তরমন্তরে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ভাইজাগ স্টিল প্ল্যান্টের সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারী। প্রায় ২০০ দিনের বেশি সময় ধরে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছেন প্ল্যান্টের কর্মীরা। ওইদিন বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করলেও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি আদালতে এফিডেভিট দাখিল করে জানানো হয়েছে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা সম্ভব নয়। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ এই প্ল্যান্টের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই লাভজনক সংস্থা বিক্রি করে দিতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনা মৌখিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, সমস্যাটা একান্তভাবেই ভাইজাগ স্টিল প্ল্যান্ট এবং ওই সংস্থার শ্রমিকদের। কিন্তু এই লাগাতার বেসরকারিকরণ থেকে আগামীদিনে অন্য সরকারি সংস্থা ছাড় পাবে তার নিশ্চয়তা কোথায়?
বিমা সংস্থা বেসরকারিকরণের বিল আনার অনেক আগেই ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে মোদী সরকার। গত জুন মাসের প্রথম দিকে একাধিক পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক ও একটি পাবলিক সেক্টর জেনারেল ইনস্যুরারের নাম কোর গ্রুপ অফ সেক্রেটারিজ অন ডিসইনভেসমেন্টের কাছে পাঠিয়েছে নীতি আয়োগ। সরকারের নতুন বেসরকারিকরণ নীতির আওতায় এই ব্যাঙ্কগুলিকে বিক্রি করা হতে পারে বলে জানা গেছে। ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বা ডিআইপিএএম এবং ডিপার্টমেন্ট অব ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস বা ডিএফএস নীতি আয়োগের পাঠানো তালিকা খতিয়ে দেখবে এবং এই বছরই বেসরকারিকরণের জন্য সম্ভাব্য আর্থিক সংস্থাগুলির তালিকা বাছাই করবে। জুন মাসের রিপোর্ট অনুসারে, নীতি আয়োগের পাঠানো তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। তবে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। বিমা সংস্থাগুলোর মধ্যে বেসরকারিকরণের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স। ওরিয়েন্টাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিও এই দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি আর্থিক বছরে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা এবং পাবলিক সেক্টর কোম্পানি বিক্রি করে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা তোলা হবে। এই তালিকায় আছে ২টি পিএসইউ ব্যাঙ্ক এবং একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
যদি এক্ষেত্রেও ভেবে নেওয়া হয় বিপদ শুধু ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সেটাও ঠিক হবেনা। কারণ আমার আপনার কষ্টের টাকা নিয়েই ব্যবসা করে এইসব ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তার আঁচ আমার আপনার গায়ে পড়তে বাধ্য। আর এই শেষ ক’বছরে যত কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে এবং ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের ঋণমকুব করা হয়েছে তাও তো বড়ো কম নয়। গত ১৩ জুলাই এক ট্যুইটে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার সময় থেকে মোট ৬.১১ লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট ঋণ মকুব করে দিয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে কর্পোরেট ঋণ মকুব করা হয়েছে ১,৮৩,১৬৩ কোটি টাকা। যা এই কয়েকবছরের মধ্যে সর্বাধিক।
বিপদের এখানেই শেষ নয়। সিএমআইই সম্প্রতি তাদের সমীক্ষায় জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে সারা দেশে কাজ হারিয়েছেন ৩৩ লক্ষ বেতনপ্রাপক কর্মচারী। যা দেশের কাজের বাজারে যে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সিএমআইই-র হিসেব অনুসারে জুলাই মাসের শেষে দেশে বেকারির হার ৬.৯৫ শতাংশ। যে হার শহরাঞ্চলে ৮.৩ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৬.৫ শতাংশ। পিছিয়ে নেই আমাদের রাজ্যও। জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গে বেকারির হার ৬.৮ শতাংশ। সিএমআইই জানিয়েছে, গত জুন মাসের শেষে দেশে বেতনপ্রাপক কর্মীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯৭ লক্ষ। যা জুলাই মাসের শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ ৯ হাজার। এখনও প্রত্যক্ষ আঁচ আপনার গায়ে পড়েনি মানেই আপনি নিরাপদ এই ভাবনা কতটা সঠিক তা বোধহয় এবার ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
চলছে পেগাসাস নিয়েও চাপানউতোর। একদিকে সরকারের দাবি ‘পেগাসাস কোনো ইস্যুই নয়। বিরোধীরা সংসদে আলোচনা চাইছে না।’ অন্যদিকে ৪ জুলাই বিরোধীদের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে - ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের নামে কুৎসা রটানোর জন্য বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে। সংসদে অব্যাহত অচলাবস্থার জন্য তাদের দায়ী করছে। এই অচলাবস্থার দায় সরকারের। সরকারের উদ্ধত ও অহংকারী মনোভাবের জন্য এবং সংসদের উভয় কক্ষে বিরোধীদের তোলা আলোচনার দাবি মেনে না নেওয়ার জন্য এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’’ বাদল অধিবেশনের শুরু থেকে পেগাসাস নিয়ে লাগাতার বিক্ষোভের জেরে বারবার অধিবেশন মুলতুবি হলেও এই সময়েই কিন্তু পাশ হয়ে গেছে বিমা বেসরকারিকরণ থেকে একাধিক বিল। প্রচার আর বাস্তবের ফারাক এখানেই।
শালগাছ কুড়ুলের গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। শেষটা তা দিয়েই করা যাক। হাতল করার জন্য কুড়ুলকে ডাল দিয়ে দেবার অর্থ এই নয় যে, কুড়ুলকে গোড়ায় কোপ মারবার অধিকার দিয়ে দেওয়া। কুড়ুল স্বভাববশেই গোড়ায় কোপ মারার চেষ্টা করবে। নিজেদের বাঁচাতে রুখে দাঁড়াতে হবে শালগাছদেরকেই।
______________________________
নীতি আয়োগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বেসরকারিকরণ করা হবে। এই সংস্থার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২৭ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি’র মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২ লক্ষ কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা ৪০ কোটি। সেই এলআইসি-কেও বেসরকারি করার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। এই পুরো ঘটনাতেই আপাতত সাধারণ মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ কোনো আঁচ আসবে না বলেই প্রচার হচ্ছে। যদিও বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে।
______________________________