৬০ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ / ২১ পৌষ, ১৪২৯
দুর্বৃত্তদের বাংলা!
খুন ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের কলঙ্ক নিয়েই তৃণমূলী জমানায় বর্ষবরণ হলো রাজ্যে! জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে বর্ষবরণের রাতে আনন্দের আবহে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা দশম শ্রেণির এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার পর খুন করে। এই মারাত্মক অপরাধের ঘটনা বর্তমানে চরম নৈরাজের কালিমালিপ্ত রাজ্যে যেন আগামী দিনগুলোর জন্য আরও অশনিসংকেত দিয়ে গেল। জানান দিল, একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকারের জমানায় অন্ধকারের জীবরা কতটা বেপরোয়া ও হিংস্র হতে পারে! এই নির্মম-কুৎসিত ঘটনার পর পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এই তথ্যই স্পষ্ট হয়েছে যে, ওই গ্রামে দুষ্কৃতীর দাপটে মেয়েদের সম্মান-মর্যাদা ও নিরাপত্তা একেবারে বিপন্ন হতে বসেছিল, গ্রামের কিছু ছেলে নেশায় মত্ত হয়ে উচ্ছৃঙ্খল কাজকর্ম ও অশান্তি তৈরি করে যাচ্ছিল অবাধে। কিন্তু পুলিশ ছিল স্থবির ভূমিকায়, তারা কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তাই ওই দুর্বৃত্তরা সেদিন বাবা, মা, ভাই ও দিদির অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিশোরীকে শারীরিক অত্যাচার চালানোর পর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে। মৃতের বাবা কোতোয়ালি থানায় ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। বাকিরা ফেরার।
এই ঘটনার দুদিন আগেই ডেবরায় এক গরিব আদিবাসী বিধবা মহিলাকে একাধিক দুষ্কৃতী রাতে দরমার ঘরের দরজা ভেঙে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে এবং ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে জিভ কেটে নেবার চেষ্টা করে। এরপর প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশে মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে। পরদিন ভোরে প্রতিবেশীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মেদিনীপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কোমায় আচ্ছন্ন সেই মহিলার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে কলকাতায় এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ৩১ ডিসেম্বর এখানেই তার মৃত্যু হয়।
রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে এমনই সব বর্বরোচিত ঘটনা ক্রমান্বয়ে ঘটে যাচ্ছে রাজ্যজুড়ে। আরও চাঞ্চল্যকর ঘটনা হচ্ছে, এই ধরনের প্রতিটি অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়েছে শাসকদলের পান্ডাদের নাম। কামদুনি থেকে মধ্যমগ্রাম, পার্কস্ট্রিট থেকে ফালাকাটা - এমনই অসংখ্য ঘটনা তার সাক্ষ্য বহন করছে। মানুষ এই সমস্ত ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানালেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ পর্যন্ত নেয়নি। এমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিযোগ জানাতে গিয়ে পুলিশের শাসানির সম্মুখীন হতে হয়েছে,অথবা অভিযোগকারীদের নামেই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ! অর্থাৎ পুলিশ নানাভাবে শাসকদলের দুর্বৃত্তদের আড়াল করেছে। রাজ্যবাসীর স্মরণে আছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এইসব ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন, আবার তিনিই দুর্বৃত্তদের সাজা দেওয়াতো দূরের কথা উলটে ধর্ষিতাদের বয়স অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বেঁধে দিয়েছেন।
বহু আন্দোলন-সংগ্রাম, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ অনেক বরণীয় মনীষী-কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব ও বরেণ্য রাজনীতিকদের এই বাংলায় বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীরও গড়া অনেক ‘নজির’ বাংলার মানুষ প্রত্যক্ষ করে বিস্মিত হয়েছেন। তাঁর অসংখ্য ‘সুবচন’ ও ‘বাণী’র মধ্যে এমন বাক্যও রয়েছে, ‘‘আমি গুন্ডা কন্ট্রোল করি’। আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনিই দলবল নিয়ে’’ ভবানীপুর থানায় গিয়ে দুষ্কর্মে ধৃত দলের কর্মীকে জোর করে ছাড়িয়ে এনেছেন। এসব ঘটনা উৎসাহিত করেছে অন্ধকারের জীবদের।
তাই তৃণমূলী জমানায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। রাজ্যজুড়ে চুরি,ডাকাতি,ধর্ষণ,খুন প্রভৃতি অপরাধমূলক কাজকর্ম ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। দুর্নীতিতে আকাশ ছুঁয়েছে। রাজ্যের সর্বত্র দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছে তৃণমূলের ছত্রছায়ায়। বিভিন্ন সময়ে এদেরকেই দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন গোটা শাসকদল, সরকার ও প্রশাসনের যেন দুর্বৃত্তায়ন ঘটে গেছে!
সিপিআই(এম) নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছিলেন, অপরাধী-অন্ধকারের জীবরা মনে করছে এখন তাদেরই সরকার এসেছে রাজ্যে!