৬০ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ / ২১ পৌষ, ১৪২৯
তিরুবনন্তপুরমে শুরু সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় ত্রয়োদশ সম্মেলন
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ● তিরুবনন্তপুরম
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার যারা পৃষ্ঠপোষক তারা বারবার এড়িয়ে যেতে চাইলেও আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস বলে সমাজ-রাজনৈতিক বিপ্লব থেকে সামাজিক রূপান্তর - নিপীড়িত মানুষের স্বাধীনতার যে কোনো লড়াইতেই সামনের সারিতে থেকেছেন নারীরা। তাই ‘সমতার জন্য ঐক্যবদ্ধ লড়াই’ (স্ট্রাগল ইন ইউনিটি ফর ইকুয়ালিটি) - এই স্লোগানকে সামনে রেখেই সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় ত্রয়োদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরমে। ১৯৮৬ সালের ছত্রিশ বছর পর তিরুবনন্তপুরমে হচ্ছে এই সম্মেলন।
আগামী ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এই সম্মেলন। চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী এবং কেরালা কলামণ্ডলম পাবলিক ডিমড ইউনিভার্সিটির অধ্যক্ষা মল্লিকা সারাভাই।
দেশের পঁচিশটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চল্লিশ হাজারের কিছু বেশি সংগঠনের(এ আই ডি ডবলিউ এ) ইউনিট সম্মেলন সংগঠিত হয়েছে গত মাস ছয়েক ধরে। প্রায় ৮৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দেবেন এই সর্বভারতীয় সম্মেলনে। সম্মেলনস্থল টেগোর থিয়েটার-এর নামকরণ করা হয়েছে এমসি জোসেফাইন নগর।
শহরের সর্বত্র, এবং শহরে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সম্মেলন উপলক্ষে তোরণ, হোর্ডিং সহ পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে সুদৃশ্যভাবে। স্টেশন সংলগ্ন কন্যার শ্রীধর পার্ক , ভিড়ে জমজমাট মহাত্মা গান্ধী রোড, পূর্ণা মোড় প্রভৃতি বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল সহ বিভিন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া এবং সমাজ বদলের লড়াইয়ের সাথি বিশিষ্ট নারীদের ছবি সংবলিত তোরণ ও ফ্লেক্স। এই আয়োজনে আড়ম্বরের বহিঃপ্রকাশ নেই, রয়েছে রুচির ছাপ। বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ক্যাম্প, রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা আগত প্রতিনিধিদের সাহায্য করার জন্য।
প্রাক্ সম্মেলন পর্বে শহরের আয়ুর্বেদ কলেজ মোড়ে সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে(যার নামকরণ করা হয়েছে মাল্লু স্বরাজ্যম নগর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মহিলাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত যা অধিকার তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলে নরেন্দ্র মোদির সরকারকে উৎখাত করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের জমানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহিলারা। সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন তারা। তাদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি অভুক্ত থেকেছেন মহিলারা এই সময়েই। নারী এবং শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয়েছেন বেশি মোদি জমানায়। রেগার মজুরি দেওয়া তো দূরের কথা রেগা কার্যকর করা হয়নি সঠিকভাবে। নির্ভয়া ফান্ড গড়ে তোলার কাজ সঠিকভাবে হয়নি। ক্রমবর্ধমান হিংসার শিকার হচ্ছেন নারীরা। ধর্ষকদের কীভাবে বাঁচানো যায় বিজেপি সরকার সেই ছক কষে চলছে। স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের সম্ভ্রমের বার্তা শুনিয়ে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দিয়ে দেন। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এটা কী মহিলাদের উপহার? আমরা আশাবাদী, আগামী দিনেও এর বিরুদ্ধে আরও বেশি অংশের মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারব।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিশিষ্ট নেত্রী সুভাষিণী আলি হরিয়ানার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি’র নৃশংসতা তুলে ধরেন।
সম্মেলন উপলক্ষে সুদৃশ্য একটি ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন করেন নেত্রীবৃন্দ। কেন্দ্রীয়ভাবে যে পোস্টার ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে রয়েছে সুশীলা গোপালন, গৌরি আম্মা, ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গল এবং এমসি জোসেফাইনের ছবি।
সম্মেলন উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং সিপিআই(এম)রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে গোটা পৃথিবীর মুক্তি আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা সংক্রান্ত ছবি,পোস্টার সহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি ও মডেল।
সম্মেলন উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি এক বর্ণাঢ্য মিছিল আয়োজিত হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়াম ধাওয়ালে, সুভাষিণী আলি, পি শ্রীমতি, কে কে শৈলজা সহ নেত্রীবৃন্দ। স্থানীয় ভিজেটি হল থেকে শুরু হয় মিছিল। সম্মেলন উপলক্ষে এই হলের নামকরণ করা হয়েছে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নগর। লাল-সাদা বেলুন উড়িয়ে, পতাকা হাতে প্রাণবন্ত এই মিছিল ব্যস্ত শহরের নজর কেড়ে নেয়।