৫৯ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৬ মে, ২০২২ / ২২ বৈশাখ, ১৪২৯
পুঁজিবাদের লুটেরা চরিত্র পর্যবেক্ষণ করেছিলেন কার্ল মার্কস
শংকর মুখার্জি
‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ শব্দবন্ধটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। বাংলায় এর প্রতিশব্দবন্ধ ‘লুটেরা পুঁজিবাদ’ কিংবা ‘ধান্দার ধনতন্ত্র’ বলে লেখা হয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে যার অর্থ হয়, রাজনীতিক এবং আমলাদের সঙ্গে ‘পবিত্র’ আঁতাত গড়ে তুলে করপোরেট ও পুঁজিপতিদের রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানা, প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুট। রাজনীতিক এবং আমলারাও এই লুটে বখরা পায়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা শুধু শ্রমিকের উদ্বৃত্ত শ্রমই আত্মসাৎ করে না, তারা মানবসমাজের সমস্ত সম্পদের ওপর একপ্রকার লুট চালায়। এখন আমরা যা সারা বিশ্বে এবং আমাদের দেশে দেখতে পাচ্ছি। পুঁজিবাদের এই লুটেরা চরিত্র কোনো সাম্প্রতিক সময়ের বৈশিষ্ট্য নয়। এই লুটের গর্ভেই তার জন্ম। জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিবাদ তাকে লালন করে আসছে। সময়ের সাথে অবশ্যই তার ধরনে পরিবর্তন হয়েছে। এখন যেমন উদারনীতির যুগে আর্থিক সংস্কারের নামে এই লুট চলছে। পুঁজিবাদের এই লুটেরা চরিত্রের পর্যবেক্ষণ এবং তাত্ত্বিক বিশ্নেষণ মানবসমাজের কাছে প্রথম হাজির করেছিলেন কার্ল মার্কস তাঁর ‘পুঁজি’ গ্রন্থে। আজ থেকে প্রায় ১৫৫ বছর আগে ১৮৬৭ সালের জুলাই মাসে ‘পুঁজি’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড প্রকাশ হয়। তবে সামন্তব্যবস্থা থেকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানবসমাজের উত্তরণে এই প্রক্রিয়ার অবশ্যই এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
কার্ল মার্কস ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশ্তেহার’ লিখলেন ১৮৪৮ সালে। এই সময়কে মার্কসবাদের সূচনা বলে ধরা হয়। তখন পুঁজিবাদ দুশো বছর প্রায় অতিক্রম করে ফেলেছে। সেসময়ে পুঁজিবাদী দেশগুলির ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা সারা বিশ্বেই প্রসারিত হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চল খাতায়কলমে স্বাধীন হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘মনরো ডকট্রিন’-এর মাধ্যমে সেখানে বকলমে কর্তৃত্ব কায়েম রেখেছিল। যা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থারই নামান্তর। পুঁজিবাদী উৎপাদনের সূচনার নির্দশনগুলি প্রথম দেখতে পাওয়া গিয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কিছু শহরে বিক্ষিপ্তভাবে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে। তবে এর যে ‘ক্ল্যাসিক্যাল’ বিকাশ তা ষোড়শ শতক থেকে ইংল্যান্ডেই হয়েছিল। ১৮৪৯ সাল থেকে মৃত্যুর দিন ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ৩৪ বছর মার্কস এই ইংল্যান্ডে, পুঁজিবাদের ভরকেন্দ্র লন্ডনে কাটিয়েছেন। এই লন্ডন থেকেই মার্কস তাঁর রাজনৈতিক জীবন পরিচালনা করেছেন, মেহনতি মানুষের আন্তর্জাতিক সমিতি গড়ে তুলেছেন; এবং গভীর অধ্যয়নে নিমগ্ন থেকেছেন ব্রিটিশ মিউজিয়মের লাইব্রেরিতে।
কার্ল মার্কস কিন্তু স্বেচ্ছায় লন্ডনে আসেননি। তাঁকে দেশ থেকে বিতারিত করা হয়েছিল। কার্ল মার্কসের জন্ম ১৮১৮ সালের ৫ মার্চ প্রুশিয়ার (এখন জার্মানি) তিয়ের শহরে এক ইহুদি পরিবারে। তাঁর পড়াশুনো তিয়েরে এবং বন ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।রাজনৈতিক জীবন, লেখালেখি সবেরই সূচনা এই প্রুশিয়াতেই। প্রথমে প্রুশিয়া, পরে বেলজিয়াম এবং শেষে ফ্রান্সের সরকার তাঁকে তাদের দেশে থাকতে দেয়নি। ওইসব দেশের শাসকশ্রেণি নিজেদের অস্তিত্বের পক্ষে মার্কসকে নিরাপদ বলে মনে করেননি বলেই মার্কসকে তাদের দেশে থাকতে দেয়নি। ১৮৪৯ সালের ১৩ জুন প্যারিসে বিক্ষোভের পরই ফরাসি সরকার তাঁকে দেশ ছেড়ে যেতে বলে। সেই সময়েই মার্কস প্যারিস থেকে পাকাপাকিভাবে লন্ডনে চলে আসেন।
● ● ●
আমরা যে বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম তাতে ফিরে যাব। ইংল্যান্ডে ভূমিদাস-প্রথার অবসান ঘটে চতুর্দশ শতকের শেষদিকে। পরবর্তী চারশো বছরে ইংল্যান্ডে ভূমিসম্পর্কের পরিবর্তন কীভাবে ঘটেছিল তার বিশ্লেষণাত্মক বিবরণ আমরা পাই ‘পুঁজি’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের চতুর্বিংশ অধ্যায়ে। সেসময়ে ইংল্যান্ডে বড়ো বড়ো জমিদারিতে আগেকার আমলের ভূমিদাস তত্ত্বাবধায়কদের জায়গায় নিযুক্ত হচ্ছিল ভূমিদাস প্রথা থেকে মুক্ত হওয়া কৃষকরা। এই কৃষকদের সঙ্গেই ছিল মজুরি শ্রমিক। যারা বড়ো জমিদারিতে গতর খাটাতো। আবার নিজেদের কিছু জমি ছিল, এজমালি জমিতেও তাদের অধিকার ছিল। জমিতে কৃষকদের সামন্ততান্ত্রিক অধিকার ছিল সামন্ত-ভূস্বামীদের সমান। পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ইংলন্ডে ফ্লেমিশ পশমী বস্ত্রের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। পশমের দামও বৃদ্ধি ঘটছিল সেই হারে। এই জন্য কৃষকদের জমি থেকে উৎখাতে উৎসাহিত হচ্ছিল ভূস্বামীরা। আবাদী জমিকে মেষচারণক্ষেত্রে পরিণত করাই প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল একশ্রেণির ভূস্বামীদের। তারা কৃষকদের আবাসস্থল ও কৃষিমজুরদের কুটিরগুলি ধ্বংস করে মাটিতে মিশিয়ে দিল। সেইজন্য বাধ্য হয়ে ১৪৮৯ সালে সপ্তম হেনরি একটা আইন করলেন। যাতে বলা হলো, যে কৃষকের বাড়ি সংলগ্ন ২০ একর জমি আছে তার বাড়ি ভাঙা যাবে না। এই আইন যে খুব একটা ফলপ্রসূ হলো বলা যাবে না। তাই ১৫৩৩ সালে প্রণীত হলো আরেকটি আইন। ওই আইনে বলা হলো, ২ হাজারের বেশি ভেড়া রাখা যাবে না কোনো খামারে। কেন না তখন কোনো কোনো খামারে ২০-২৪ হাজারও ভেড়া থাকত। সপ্তম হেনরির রাজত্বকালের পর ১৫০ বছর কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ রুখতে জনসাধারণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয়েছে। হয়েছে বহু আইন প্রণয়ন। তবে এর প্রতিকারে কাজের কাজ খুব একটা কিছু হয়নি । জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এই কৃষকরাই হলো পশমের সুতো তৈরির কারখানার শ্রমিক। ১৬৬০ সালে স্ট্যুয়াট রাজবংশ ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ভূস্বামীদের ভূমিসম্পদ আত্মসাৎ চলে আইনসম্মত উপায় অবলম্বন করেই। তৎকালীন ইয়োরোপ মহাদেশের অন্যান্য দেশে এসব চলতো কোনোরকম আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই।
১৬৮৮ সালে গৌরবময় বিপ্লব উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎকারী ভূস্বামী এবং পুঁজিপতিদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করল। এই যুগে রাষ্ট্রীয় জমিজমার চুরি ঘটল ব্যাপকহারে। অষ্টাদশ শতকে দেশের আইনকানুন বদলে হয়ে দাঁড়িয়েছিল জনসাধারণের জমি চুরির হাতিয়ার। আগেও হয়েছে রাষ্ট্রীয় জমিজমা চুরি, তবে তখন তা হতো রয়েসয়ে। এই লুট চলল পঞ্চদশ শতকের শেষ থেকে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত। এর জন্য এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি কৃষকদের। মার্কস লিখছেনঃ এই লুট এমন অবস্থা তৈরি করল, “কৃষক ও এজমালি ভূ-সম্পত্তির মধ্যে একদিন যে-কোনো একটি যোগসূত্র ছিল, ঊনবিংশ শতকে পৌঁছে তা স্মৃতি থেকে গেল হারিয়ে।” অর্থাৎ প্রথমে শুরু হয়েছিল জোরজবরদস্তি লুট, পরে তা দাঁড়ালো পুরোপুরি রাষ্ট্রের মদতে।
এই লুটই ছিল পুঁজিবাদের আদিম সঞ্চয়ের মূল ভিত্তি। এই আদিম সঞ্চয় পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতির ফল নয়, তার সূচনার শর্তমাত্র। এরফলে এক ধরনের লোক সম্পদ সঞ্চয় করল। আর বাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে তাদের নিজেদের গায়ের চামড়া ছাড়া বিক্রি করার মতো আর কিছু রইল না। মার্কস লিখলেনঃ “মানুষের এক বিপুল সংখ্যাধিক্যের দারিদ্র্য, যে বিপুল সংখ্যক মানুষ সবরকমের পরিশ্রমে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত একমাত্র নিজেকে ছাড়া বিক্রি করার মতো আর কোনো বস্তুর মালিক তারা নয়। অপরদিকে গড়ে উঠল অল্পকিছু লোকের বিপুল ঐশ্বর্য, যাদের দীর্ঘকাল ধরে কাজ বন্ধ করে দিলেও তাদের ঐশ্বর্যের পরিমাণ বেড়ে চলল অনবরত।”
● ● ●
একবিংশ শতকে পুঁজিবাদ চারশো বছর অতিক্রম করেছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির সাথেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বহিরঙ্গে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু ১৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে মার্কস পুঁজিবাদের শোষণ ও লুটের চরিত্রের যে বিশ্লেষণ হাজির করেছিলেন তার গুণগত পরিবর্তন খুব একটা হয়নি। বলা যায়, পুঁজিবাদ তার এই দুই হাতিয়ারকে আরও সংহত করেছে, উৎপাদন ব্যবস্থায় আরও গভীরভাবে অঙ্গীভূত করেছে।
উদারনীতির যুগে পুঁজিবাদের এই লুটের ছবি সর্বত্র। আমাদের দেশেও এর উদাহরণ ভুরিভুরি। সাম্প্রতিক সময়ে একটা উদাহরণ তো একেবারে হাতের সামনে রয়েছে। তা হলো ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন। রেলওয়ে স্টেশন, রেলওয়ে লাইন, জাতীয় সড়ক, টেলিকম টাওয়ার, বন্দর, স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর, কয়লা খনি, গুদামঘর সহ বিপুল রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ প্রায় বিনামূল্যে পুঁজিপতিদের হাতে দীর্ঘদিনের জন্য তুলে দেওয়ার প্রকল্পই হলো ন্যশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন। এই জাতীয় সম্পদের সম্মিলিত মূল্য ৬ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। একেবারে হালে এলআইসি’র শেয়ার বিক্রিতেও ৫০ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। কেলেঙ্কারিটা হলো, কম দামে এলআইসি’র মতো দামী সংস্থার শেয়ার পুঁজিপতি–করপোরেটদের হাতে তুলে দিয়েছে মোদি সরকার। এসবই হলো লুটেরা পুঁজিবাদ বা ধান্দার ধনতন্ত্র। এপ্রসঙ্গে জমিবিলের বিষয়ের উল্লেখ খুবই প্রাসঙ্গিক হবে। আমরা সবাই জানি, বিজেপি সরকার প্রণীত জমিবিলটি ছিল পুঁজিপতি-করপোরেটদের দেশের কৃষিজমি লুটের এক আইনি ছাড়পত্র। অনেকটা অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের জমি সম্পর্কিত আইনকানুনের মতো। যদিও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মোদি সরকার জমিবিল নিয়ে যে অর্ডিন্যান্স এনেছিল তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।
● ● ●
‘বিচ্ছিন্নতা’ হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি পূর্বশর্ত। মার্কস পুঁজি গ্রন্থের ওই অধ্যায়তে এর ব্যখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলছেনঃ “সর্বপ্রকার সম্পত্তি যাকে উপায় হিসেবে ব্যবহার করে শ্রমিকেরা তাদের শ্রমকে কাজে লাগাতে পারে, তেমন সব কিছু থেকে শ্রমিকদের বিচ্ছিন্নতাই হলো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি পূর্বশর্ত। পুঁজিবাদী উৎপাদন যে মুহূর্তে একবার নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই মুহূর্ত থেকে তা যে এই বিচ্ছিন্নতাকে কেবল বজায় রেখে চলতে থাকে তা-ই নয়, ক্রমাগত ব্যাপকহারে তা বাড়িয়ে চলে। ” তথাকথিত আদিম সঞ্চয় ছিল উৎপাদনকারীকে উৎপাদনের উপায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবার এক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া ভিন্ন অপর কিছু না। আদিম সঞ্চয় কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ ও উৎপাদনের উপায়-উপকরণ থেকে তাদের বিচ্ছিন্নই শুধু করেনি, গ্রাম্য কুটির শিল্পের ধ্বংসসাধন এবং হস্তশিল্পের ক্ষেত্রে শিল্পোৎপাদন ও কৃষির মধ্যে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াটাও সমানতালে চালিয়েছিল। পরবর্তীকালে পুঁজিবাদ এই লুট এবং গ্রাম্য কুটির শিল্পের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল উপনিবেশগুলিতে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে নিজেদের একাত্মতাকে জনসাধারণ, মেহনতি মানুষ বেশি অনুভব করে। করাটাই স্বাভাবিক। গণতন্ত্র রক্ষা, দেশের স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটা তাদের হাতিয়ারও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর সময়ে সদ্যস্বাধীন উপনিবেশগুলিতে এই সম্পদের ওপর ভিত্তি করেই স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলেছিল। এতে সদ্যস্বাধীন দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছিল, শ্রমিকশ্রেণির অধিকার অনেকটাই সুরক্ষিত হয়েছিল। নয়াউদারবাদ একেই ধ্বংস করতে চায়, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সম্পদ গড়ে তোলার এই ইতিবাচক প্রক্রিয়া থেকে শ্রমিক সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। এই উদ্দেশ্যসাধনে পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতকে লুট যেমন পুঁজিবাদের একটা হাতিয়ার ছিল, আজ একবিংশ শতকেও তার কোনো ব্যতয় ঘটেনি।ক্রোনি ক্যাপিটালিজম সেই ঐতিহ্য পরম্পরাকে বহে নিয়ে চলেছে।
কার্ল মার্কস পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চালিকাশক্তি শোষণ ও লুটের যে ব্যাখ্যা আজ থেকে দেড় শতকেরও বেশি সময় আগে তাঁর ‘পুঁজি’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন আজও তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং বর্তমান স্তরের পুঁজিবাদকে ব্যাখ্যা করতে সমানভাবে সাহায্য করে।পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসানের জন্য এর বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি মানুষের পার্টি কমিউনিস্ট পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্র করতে হবে। এটাতো জরুরি বটেই, ততোধিক জরুরি হলো মার্কসবাদের বস্তুনিষ্ঠ চর্চা ও তার প্রয়োগ। কার্ল মার্কসের ২০৫তম জন্মদিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।