৫৯ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৬ মে, ২০২২ / ২২ বৈশাখ, ১৪২৯
বৈষম্য টু পুঁজি - হিডন ক্রোনোলজি
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সেসব অনেককাল আগেকার কথা। বিলেতে এক ভদ্রলোক ছিলেন। যিনি পেশাগতভাবে বই বাঁধাইয়ের কাজ করতেন। সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়নও। সেই ভদ্রলোকটি ১৮৬০ সালে লিখলেন “ট্রেডস ইউনিয়ন্স অ্যান্ড স্ট্রাইকসঃ দেয়ার ফিলোজফি অ্যান্ড ইন্টেনশন”। যেখানে ‘দ্য কোয়ার্টারলি রিভিউ’ অংশে তিনি যা লিখলেন, তা অনেকটা এরকম - পর্যাপ্ত লাভের ক্ষেত্রে পুঁজি খুবই সাহসী। যে কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ১০ শতাংশ লাভ হলেই সে তার কাজ নিশ্চিত করবে। লাভ ২০ শতাংশ হলেই তার উদ্যম নিশ্চিত হবে। ৫০ শতাংশ মুনাফার ক্ষেত্রে সে আরও সাহসী হয়ে উঠবে। লাভ যদি ১০০ শতাংশ হয় তাহলে সে যে কোনো মানবিক আইনকানুন পদদলিত করার জন্য প্রস্তুত হবে এবং লাভের হার যদি ৩০০ শতাংশ হয় সেক্ষেত্রে এমন কোনও ঝুঁকি নেই যা পুঁজি নেবে না। এমনকী প্রয়োজনে মালিককে ফাঁসিকাঠে ঝোলাতেও দ্বিধা করবে না। যদি দাঙ্গাহাঙ্গামা এবং বিবাদ কোনো লাভ আনতে পারে সেক্ষেত্রেও পুঁজি স্বাধীনভাবে তাকে উৎসাহিত করবে।
দেশ এবং বিশ্বে গত দু’বছরের কোভিডজনিত পরিস্থিতিতে ধুঁকছে বিশ্বের অর্থনীতি। কোভিড পৃথিবীর একটা অংশের মানুষকে শেষ করে ফেলার পরিকল্পিত চক্রান্ত অথবা সময়ের নিয়ম মেনে আসা মহামারী - এসব কাল্পনিক বিতর্কে না ঢোকাই ভালো। নানা মুনির নানা মত। একেক জন একেক রকমের বিশ্বাস নিয়ে বাঁচেন। সে বড়ো জটিল বিষয়। তবে যেহেতু পরিসংখ্যান-টংখ্যান বলে কীসব আছে সেগুলো নিয়ে মাঝে মধ্যে নাড়াঘাঁটা করতে ভালোই লাগে। ওয়াদ্দেদার জোয়ারদারে বদলে গেলেও, নাম তো একই আছে ভেবে আমাদের যেমন খুব একটা কিছু যায় আসে না, এও অনেকটা সেরকম। কত কিছুতেই তো আমাদের কিছু যায় আসেনা। আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খোঁজ না রাখতে চাইলেও ঘটনার ‘ক্রোনোলজি’ তাতে থেমে থাকে না।
অন্য দেশের কথা থাক। আমাদের দেশেও মহামারীতে সাধারণ মানুষের রোজগার কমতে কমতে তলানিতে পৌঁছে গেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ছাঁটাই হয়েছেন, কাজ হারিয়েছেন। কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর দৈনিক রোজগার ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। মহামারী চলাকালীন তাদের প্রতিদিনের সম্পদ বেড়েছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত বছর প্রকাশিত এইচএফএল ওয়েলথ হুরুন ইন্ডিয়া সমীক্ষা রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছিল। রিপোর্টে প্রকাশিত সর্বোচ্চ ১০ ধনী ব্যক্তির তালিকা অনুসারে, ওই সময় গৌতম আদানি গোষ্ঠীর পরিবারের দৈনিক আয় বেড়েছে ১০০২ কোটি টাকা।
আদানিরা হলো এমন এক গোষ্ঠী, যারা এমন পাঁচটি কর্পোরেট সংস্থার মালিক, যাদের মোট মূলধনের পরিমাণ এক লক্ষ কোটি টাকার উপর। যারা ধনীতমদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে। এই সময় মুকেশ আম্বানি পরিবারের দৈনিক সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ১৬৩ কোটি টাকা। শিব নাদারের পরিবারের ২৬০ কোটি টাকা, এসপি হিন্দুজা পরিবারের ২০৯ কোটি টাকা, এলএন মিত্তাল পরিবারে ২১২ কোটি টাকা, সিরাম ইনস্টিটিউটের মালিক সাইরাস পুনাওয়ালার ১৯০ কোটি টাকা।
গত ১০ বছর ধরে সম্পদের নিরিখে প্রথম স্থানে মুকেশ আম্বানি গোষ্ঠী। দ্বিতীয় স্থানে আদানি গোষ্ঠী। মন্দা-মহামারীর মধ্যেও কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার জন্যই তাদের এই সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে বলে সমীক্ষাকারী সংস্থার দাবি। এছাড়াও কর্পোরেটদের বকেয়া কর মকুব, অনাদায়ী ঋণ মকুব করে আরও ফুলে ফেঁপে ওঠার সব ব্যবস্থাই করে দিয়েছে দেশের সরকার। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এক প্রতিবেদনে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা জানিয়েছিল, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে বিলিওনেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ১০ জন। সেই সময় এক বছরে মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছিল প্রায় ৩৩ শতাংশ। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন গৌতম আদানি। তালিকাতে ছিলেন উইপ্রোর আজিম প্রেমজি, এইচসিএল-এর শিব নাদার। ২০২০ সালে যাঁদের সম্পদ বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ। ২০১৯ সালের শেষে এঁদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। ২০২০’র শেষে এদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও তালিকায় ছিল এশিয়ান পেন্টস। যাদের সম্পদ বেড়েছিল ৪৮ শতাংশ। অ্যাভিনিউ সুপারমারটের রাধাকিশান দামানি। যার সম্পদ বাড়ে ৪১ শতাংশ। সান ফার্মার দিলীপ সাংভি। যার সম্পদ বাড়ে ৩৬ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ সম্পদ বাড়ে সুনীল মিত্তালের।
২০২০ সালে যখন বিশ্বজুড়ে মহামারীর আতঙ্ক, হাহাকার, দেশে বিদেশে লাশ চাপা দেবার জায়গার অভাব, সেই সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিশ্বের সর্বাধিক ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থানে ছিলেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেফ বেজোস। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৮৫.৮ বিলিয়ন। ১১৩.১ বিলিয়ন সম্পত্তি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। তৃতীয় স্থানে বিখ্যাত গ্রুপ এলভিএমএইচ মোয়েট হেনেসি লুই ভুইটনের প্রধান বার্নার্ড আর্নাউল্ট ও তাঁর পরিবার, এঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন। এই তালিকায় প্রথম দেশের মধ্যে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে ছিলেন ৬৩ বছর বয়সি মুকেশ আম্বানি। তাঁর পরেই ছিলেন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট, যাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭২.৭ বিলিয়ন। মহামারীর আগে দেশে ১০০ কোটি টাকার উপর সম্পদের মালিকের সংখ্যা ছিল ৫৮ জন। কিন্তু মহামারীতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ জন। গত বছরের ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইন্ডেক্স অনুসারে, আম্বানি বিশ্বের ত্রয়োদশ ও আদানি চতুর্দশ স্থানে ছিলেন। চিনা ধনকুবের শানশান চলে যান পঞ্চদশ স্থানে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শানশানকে টপকে এশিয়ার ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। শানশানের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬৩.৬ বিলিয়ান ডলার, আদানির সম্পদ ৬৬.৬ বিলিয়ান ডলার। মহামারীতে ভারতবাসীর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার বছরে আদানির সম্পদ বেড়েছে ৩৭.৭ বিলিয়ন ডলার এবং মুকেশ আম্বানির ৭৬.৫ বিলিয়ন ডলার। আর সম্প্রতি ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স অনুযায়ী, গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে এলন মাস্ক, জেফ বেজোসদের এক্সক্লুসিভ ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্লাবে ঢুকে গেছেন তিনি। গৌতম আদানিকে নিয়ে গোটা বিশ্বে ১০০ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক মোট ১০ জন। চলতি বছরের তিন মাসেই আদানির সম্পদ বেড়েছে ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, ভারতের আর এক শিল্পপতি রিলায়েন্সের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি, যিনি গত সেপ্টেম্বরে বেঞ্চমার্কের শীর্ষে ছিলেন, এই মুহূর্তে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কিছুটা কমে হয়েছে ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রথম ১০ থেকে সরে যেতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর স্থানে ১১ নম্বরে।
সাধারণ পণ্য ব্যবসায়ী হিসাবে জীবন শুরু করা গৌতম আদানি এখন শক্তি, সংস্থান, বন্দর, রসদ, কৃষিক্ষেত্র, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক পরিষেবা, গ্যাস বিতরণ, প্রতিরক্ষা ব্যবসা, বিমানবন্দর সহ অনেকগুলি ব্যবসার মালিক। তাঁর প্রতিপত্তি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, তাঁর সংস্থা আদানি গ্রিন, আদানি এন্টার প্রাইজেস, আদানি গ্যাস ও আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। ২০২১ সালে তাঁর সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২৬১ শতাংশ)। গত বছরের পর থেকে আদানির মোট গ্যাসের শেয়ারের পরিমাণ ১,১৪৫ শতাংশ বেড়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেস ও আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ার যথাক্রমে ৮২৭ শতাংশ ও ৬১৭ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি পাওয়ার যথাক্রমে ৪৩৩ শতাংশ ও ১৮৯ শতাংশ বেড়েছে।
বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সেটা ২০১৪। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ সালে দেশে কমবেশি প্রায় ৩ কোটির বেশি মানুষ কর্মহীন ছিলেন। যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে বেড়েছে আরও ১ কোটির বেশি। সিএমআইই’র তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই কর্মসংস্থান কমেছিল প্রায় ৬ শতাংশ। ৩৭ শতাংশ থেকে হয়ে যায় ৪৩ শতাংশ। এনএসও’র এমপ্লয়মেন্ট আন এমপ্লয়মেন্ট সার্ভের তথ্য অনুসারে ২০১৩ থেকে ২০১৯-এ দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ২৯ লাখ। যেখানে প্রায় প্রতি বছর চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ৫০ লাখ। উল্লেখযোগ্যভাবে ২০১৬ সালে যেখানে উৎপাদন ক্ষেত্রের জিডিপি ছিল ১৭ শতাংশ, তা ২০২০-তে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে (জবলেসনেস অন দ্য রাইজ ইন ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, ৪ মে ২০২২)। দেশের প্রথম সারির কর্পোরেটরা প্রতিদিন মুনাফার পাহাড়ে, সম্পদের পাহাড়ে চড়লেও তাতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। রোজগার বাড়ছে না।
আবারও একটু রিপোর্টে ফেরা যাক। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ডাভোস অ্যাজেন্ডার আগেই প্রকাশিত হয় ‘ইনইক্যুয়ালিটি কিলস’ শীর্ষক রিপোর্ট। ২০২২ সালের গ্লোবাল অক্সফাম ডাভোস রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালীরা কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের সম্পদ দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছেন। যা আদপে দেশকে ধ্বংস করেছে এবং দারিদ্র্যকে আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। অক্সফ্যামের মতে, সরকারের উচিত সম্পদের পুনর্বণ্টন করার জন্য তাদের নীতির পুনর্বিবেচনা করা। জানিয়েছিলেন অক্সফ্যাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহার। ওই রিপোর্ট অনুসারে, বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় $৭২০ বিলিয়ন ডলার, যা জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ দরিদ্রের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। রিপোর্ট অনুসারে ভারতে ২০২১ সালে প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষের রোজগার কমেছে। রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুসারে বিশ্বে দরিদ্র মানুষের তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যত মানুষ যুক্ত হয়েছেন তার অর্ধেকের বেশি ভারতের অধিবাসী।
অমিতাভ বেহার জানিয়েছিলেন, বৈষম্যের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২১,০০০ মানুষের বা প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ২০২০ সালে মহামারীর সময় সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহিলারা। তাঁদের রোজগার কমেছে প্রায় ৫৯.১১ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৯-এর অনুপাতে ২০২০ সালে মহিলা কর্মীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ১.৩ কোটি। আর অন্যদিকে ফাঁস হওয়া ১১.৯ মিলিয়ন নথির সংগ্রহ প্যান্ডোরা পেপারস জানাচ্ছে - বিশ্বজুড়ে কর ফাঁকি দেবার জন্য ২৯ হাজার অফশোর কোম্পানি এবং ব্যক্তিগত ট্রাস্ট করা হয়েছে। যেখানে ৩৮০ জনের বেশি ভারতীয়র ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থ মূল্যের অঘোষিত বিদেশি এবং দেশীয় সম্পদ রয়েছে। আর ২০২১-এর মাল্টিডায়মেনশনাল প্রোভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই)-এ নীতি আয়োগ রিপোর্ট অনুসারে সর্বভারতীয় এমপিআই ২৭.৯ শতাংশ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে বিহার ৫১শতাংশ, উত্তরপ্রদেশ ৩৭শতাংশ, মধ্যপ্রদেশ ৩৬শতাংশ। একইভাবে ২০২১-এর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে ১১৩টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৭১তম। গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইন্ডেক্স ২০২১ প্রকাশ করেছে ইকনমিস্ট ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড করটেভা এগ্রিসায়েন্স। ২০২১-এর গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সে ১১৬ দেশের মধ্যে সাত ধাপ নেমে ভারতের স্থান ১০১। ২০২০ সালে ১০৭ দেশের মধ্যে যা ছিল ৯৪। আইরিশ সংস্থা কনসারন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এবং জার্মান সংস্থা ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ-এর তথ্য অনুসারে ২০০০ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের সূচক ছিল ৩৮.৮। যা ২০১২-তে গিয়ে দাঁড়ায় ২৮.৮-এ এবং ২০২১-এ ২৭.৫-এ।
পুঁজি, লাভ, সম্পদ বৃদ্ধি, অসম বণ্টন, বৈষম্য - বিষয়গুলো এত ভারি ভারি যে আলোচনা করতে গেলে আমাদের মতো মধ্যমেধার ছাপোষাদের কীরকম একটা দম বন্ধ হয়ে আসে। আসল কথা, ঠিকমতো মাথায় না ঢোকার কারণে বিষয়গুলোর আন্তঃযোগাযোগ এবং ক্রোনোলজি বুঝতে অসুবিধে হয়। এক্ষেত্রে সবথেকে সহজ যে পথ, তা হলো, এড়িয়ে যাওয়া। আমরাও এড়িয়ে গিয়ে বালিতে মুখ গুঁজে মরুঝড় কোনোমতে পার করে দেবার চেষ্টা করি। ভাবি তাতেই মুক্তি। এক বই বাঁধাই শ্রমিক থমাস জোসেফ ডানিং-কে উদ্ধৃত করে লেখা শুরু করেছিলাম। যাঁর এই লেখা ‘ক্যাপিটাল’ - প্রথম খন্ডের ‘জেনেসিস অফ দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটালিস্ট’ পর্বে পঞ্চদশ ফুটনোট হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন কার্ল মার্কস। আজই যাঁর জন্মদিন। যেখানে মার্কস বলেছিলেন, পুঁজি জন্ম নিয়েছে অর্থের মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্রতিটি রোমকূপ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরা রক্ত ও পূতিগন্ধ আবর্জনা নিয়ে। পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্তি - কথাটা লিখে দেওয়া হয়তো খুব সোজা। কিন্তু বাস্তব একদমই অন্য কিছু বলে। সেখানে কোনও শর্ট কাট নেই, মেডইজি নেই। পথ একটাই। লড়াই, লড়াই এবং লড়াই।