৫৯ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৬ মে, ২০২২ / ২২ বৈশাখ, ১৪২৯
কেমন আছে বাংলা
সুপ্রতীপ রায়
আমাদের বাংলা কেমন আছে? বাংলা ভালো নেই। বাংলার মানুষ চরম আতঙ্কে। বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই থেকে নদীয়ার হাঁসখালির পূর্ব শ্যামনগরের ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে তোলাবাজ, মাফিয়ারা। আনিস খানের হত্যাকাণ্ড, নানুরের খেতমজুর বাদল শেখকে হত্যা, পৌর নির্বাচনের পর তৃণমূলের সদ্যজয়ী কাউন্সিলরের হুমকিতে বর্ধমানের তরুণী তুহিনা খানের আত্মঘাতী হওয়া, পানিহাটি ও ঝালদায় নির্বাচিত শাসকদলের কাউন্সিলরের গুলিবিদ্ধ হওয়া, পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির আদিবাসী শিকারী মুরার সরকারি হেফাজতে মৃত্যু প্রমাণ করছে রাজ্যে আইনের শাসন নেই।
কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? মূল কথা তৃণমূলের বড়ো নেতা থেকে ছোটো নেতা প্রত্যেকের লক্ষ্য কত অর্থ লুট করা যায়। পাথর খাদান, বালি খাদান, গোরু পাচার, গ্রাম্য সালিসি, থানার দালালি, সরকারি অর্থ সবেতেই তৃণমূলের নেতাদের ভাগ চাই। নির্মাণ শিল্পে যে দ্রব্যসামগ্রী প্রয়োজন হয় তার সরবরাহের পুরোটাই এখন তৃণমূলী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। পৌরাঞ্চলে নির্মাণের ক্ষেত্রে দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করে তৃণমূলী কাউন্সিলর ও স্থানীয় তৃণমূলী নেতারা। গ্রামাঞ্চলে এগুলি সরবরাহ করে গ্রামীণ তৃণমূলী নেতৃত্ব। এধরনের নেতাই ছিল ভাদু শেখ থেকে সমর গয়ালী।
আসলে বখরার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের নেতারা আক্রান্ত হচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। বগটুয়ে যাঁরা নিহত হলেন তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের নেতা বা সমর্থক, পানিহাটির অনুপম দত্ত তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন, ভাদু শেখ তৃণমূলের নেতা ছিলেন। টাকার ভাগ নিয়ে তৃণমূলের সর্বত্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে এবং বাড়বে। পঞ্চায়েত, পুরসভা, সমবায় সমিতি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিরোধী-শূন্য করার মূল লক্ষ্যই ছিল-বাধাহীনভাবে অর্থ লুট করা যাবে। এর ফলে তৃণমূল দলকে এখন নিয়ন্ত্রণ করছে সমাজবিরোধী, খুনিরা। রাজ্যের সব সমাজবিরোধী এখন তৃণমূলের ছত্রছায়ায়। গোটা দলটাই সমাজবিরোধী হয়ে গেছে। পুলিশের একটা বড়ো অংশ এখন বখরার ভাগ পাচ্ছে।
এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার এরাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন তৃণমূলের অঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসন সরাসরি তৃণমূলের কর্মীতে রূপান্তরিত হয়েছে। একারণেই রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে যখন বিভিন্ন বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছিল তখন পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। হাঁসখালি ধর্ষণ কাণ্ডে প্রমাণ লোপাট করেছে পুলিশ। ধর্ষণে যুক্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ার। রাজ্য পুলিশের উপর পশ্চিমবাংলার মানুষের আস্থা নেই। এটি বিপদজ্জনক প্রবণতা। সবেতেই সিবিআই। আর সিবিআই তদন্ত মানে রায় কবে প্রকাশিত হবে তা মানুষ জানেন না। মমতা ব্যানার্জির আশীর্বাদে পশ্চিমবাংলা অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
মানুষের কথা বলার অধিকার এরাজ্যে নেই। মমতাই সর্বেসর্বা। তৃণমূলের স্লোগান তাঁকে অপমান করা মানে “বাংলাকে অপমান”। নির্বাচন আসলেই শ্রীমতী বলেন - তিনিই সব আসনে প্রার্থী। জনগণের মতামত ছাড়াই রাজ্য সরকার নীতি গ্রহণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা এমনভাবে করছেন যেন এগুলি দিয়ে তিনি জনগণকে করুণা করছেন। উলটো দিকে এসএসসি কিংবা দেউচা-পাঁচামির বিষয়ে আন্দোলন হলে তাকে দমন করার চেষ্টা হয়। মমতার পপুলিস্ট রাজনীতির মধ্যে লুকিয়ে আছে স্বৈরাচারী ভাবনা। তৃণমূলের রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে লুকিয়ে আছে হিংসার বীজ।
রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দল ঢাক বাজিয়ে চলেছে - রাজ্যে নাকি উন্নয়নের বন্যা বইছে। নেত্রী একনাগাড়ে বলে চলেছেন উন্নয়নই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। যদিও উন্নয়নের প্রশ্নে কোনো দিশা না দেখিয়েই মুখ্যমন্ত্রী প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছেন। লক্ষ্য একটাই ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করা। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের উদ্দেশে এই প্রকল্পগুলি ঘোষিত হচ্ছে না। প্রকল্পের নামে তৃণমূল সরকার যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে চলেছে তার মূল লক্ষ্য সরকারি অর্থে দলীয় ভোট বৃদ্ধি করা।
আমাদের রাজ্যে প্রায় ৭০টি প্রকল্প চালু আছে। এর সঙ্গে যুক্ত আছে নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্প - যাতে রাজ্য সরকারকে কিছুটা অনুদান দিতে হয়। এছাড়া বিজ্ঞাপন, মামলা প্রভৃতি বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তৃণমূলের আমলে রাজ্যে তৈরি হয়েছে আর্থিক বিশৃঙ্খলা।
তৃণমূল উন্নয়ন নিয়ে যে দাবি করছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা আছে দেখে নেওয়া যাক। তৃণমূলের আমলে (২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ সাল পর্যন্ত) পশ্চিমবাংলায় মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি গড়ে বার্ষিক ৪.২৩ শতাংশ, সেখানে সর্বভারতীয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি গড়ে ৫.১২ শতাংশ। আলোচ্য সময়কালে সাড়ে পাঁচ শতাংশ বা এর থেকেও বেশি হারে গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৯টি রাজ্যের। সমবায়, কৃষি ঋণ, সেচ, রাস্তা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পশ্চিমবাংলা পিছিয়ে পড়ছে। ২০১২ সালের ২০১৮ সালে দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে সাত বছরে আমাদের রাজ্যে রাস্তার উন্নতি হয়েছে ৪ শতাংশ। ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে পশ্চিমবাংলার থেকে রাস্তার উন্নতি অনেক বেশি হয়েছে। প্রায় ১০টি রাজ্যে দেখা যাচ্ছে তাদের রাস্তা সাত বছরে ৮ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি দীর্ঘ হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রাপ্তির নিরিখে দেখা যাচ্ছে ২০১২-১৩ থেকে ২০২০-২১ এই নয় বছরে ২৫ শতাংশ বেড়েছে, ভারতে এই বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশ।
তৃণমূল সরকারের আমলে পশ্চিমবাংলায় মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রভৃতি বিষয়ে নতুন কোনো প্রকল্প রাজ্য সরকার ঘোষণা করেনি। যেগুলি আছে সেগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প-মিড ডে মিল, আইসিডিএস, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এনআরইজিএস, খাদ্য সুরক্ষা প্রভৃতি। বেশ কিছু প্রকল্পে রাজ্য সরকার অর্থের অপচয় করছে - কিষান মান্ডি, পরিকাঠামোবিহীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প প্রভৃতি।
এই সময়কালে তৃণমূল দীর্ঘ মেয়াদি কোনো প্রকল্প ঘোষণা করেনি। কারণ তৃণমূলের লক্ষ্য ভোটের বৈতরণি অতিক্রম করা। তৃণমূল সরকারের ঘোষিত ও চালু প্রকল্পগুলি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন আনতে পারেনি। নারী ও প্রান্তিক মানুষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেনি। ঘোষিত ও চালু প্রকল্পগুলি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে মূল্যায়ন হয় না। ফলে ত্রুটিপূর্ণ হলেও প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া হয় - মূল লক্ষ্য ভোট। নেত্রীর ভাবভঙ্গি এমন যেন তিনি প্রাচীন আমলের কোনো দানশীল জমিদার।
উন্নয়ন নয়, মূল লক্ষ্য সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জন করা। ৩৭,০০০ দুর্গা পূজা কমিটিকে ৫০,০০০ টাকা করে অনুদান ও বিদ্যুতের বিলে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বছরে ব্যয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা। চার হাজারের বেশি ক্লাবকে বার্ষিক দু’লক্ষ টাকা অনুদানের কারণে বছরে ১০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়া তো পুরোহিত ভাতা, ইমাম ভাতা আছে। “দুয়ারে রেশন” একটি অপরিকল্পিত, হাস্যকর প্রকল্প।
কী হাল স্বাস্থ্যসাথী স্কিমের। বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং হোম, বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডধারী রোগীদের ভরতি করতে অস্বীকার করা শুরু করেছে। কারণ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডধারী রোগীদের চিকিৎসা খরচ মেটাবার জন্য হাসপাতালগুলি সরকারের কাছে যে বিল জমা দেয় তা অনাদায়ী থাকছে। এই প্রকল্পের খরচ মেটানোর দায় রাজ্য সরকারের। আবার সবাইকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের আওতায় আনা হচ্ছে। আবার বেশ কিছু প্রকল্প রাজ্য সরকার চালু করেছে যা উন্নয়ন বিরোধী। যেমন “রূপশ্রী প্রকল্প”। আবার “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার” প্রকল্পের জন্য বছরে আনুমানিক ১৪,০০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের অপরিকল্পিত ব্যয়ের কারণে ঋণের বহর বাড়ছে। ঋণের বোঝা বাড়তে বাড়তে এরাজ্যে নবজাতকদের উপর ৬০ হাজার টাকার ঋণ চাপতে চলেছে। গত এক দশকে ঋণের বোঝা বেড়েছে। রাজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০১১-১২ সালে ছিল ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে তা হবে ৫.৩৫ লক্ষ্ কোটি টাকা। ২০২০-২১ আর্থিক বর্ষের বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা যা প্রকৃত প্রস্তাবে দাঁড়িয়েছিল ২৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালের বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব ঘাটতি ২৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
“পরিবর্তন”-এর এক দশকে রাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দশা কী? ২০১৯ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত হওয়া ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ্ সার্ভে বা জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ (এন এফ এইচ এস)-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে পশ্চিমবাংলায় ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতায় ভুগছে ৬৯ শতাংশ শিশু (সারা ভারতে ৬৭.১ শতাংশ )। ১৫-৪৯ বছর বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতা রয়েছে পশ্চিমবাংলায় ৭১.৪ শতাংশ, সারা দেশে ৫৭ শতাংশ। ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে যাঁরা আছেন তাঁদের মধ্যে ৭০.৮ শতাংশ রক্তাল্পতা আছে, গোটা দেশের ক্ষেত্রে এটি ৫৯.১ শতাংশ। পুরুষদের ক্ষেত্রেও আমাদের রাজ্যে রক্তাল্পতার হার বেশি সর্বভারতীয় নিরিখে। ১৫-১৯ বছরের ক্ষেত্রে ৩৮.৭ শতাংশ (সর্বভারতীয় গড় ৩১.১ শতাংশ )। ১৫-৪৯ বছরের মধ্যে আমাদের রাজ্যে গড় ৩৮.৯ শতাংশ (সর্বভারতীয় গড় ২৫ শতাংশ )।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের জন্য নাকি বিশেষভাবে চিন্তিত। তাই তিনি “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার” প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু আমাদের রাজ্যে মায়েদের অবস্থা কেমন? পরিসংখ্যান বলছে ভারতে মাতৃ-মৃত্যুর হার কমলেও, বাংলায় তা বেড়েছে। ২০১৯ সালে মাতৃ-মৃত্যুর হার (এম এম আর) ছিল ১০৩; ২০১৭ সালের তথ্য অনুসারে জাতীয় স্তরে এম এম আর ছিল প্রতি এক লক্ষ জীবিত বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে ১১৩। কিন্তু পশ্চিমবাংলা, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যগুলিতে আলোচ্য সময়ে এম এম আর খারাপ হয়েছে। মাতৃ-মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য নির্দেশক যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতি ১ লক্ষ জীবিত বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে মাতৃ-মৃত্যুর সংখ্যা দেখায়। স্যাম্পল রেজিস্টেশন সিস্টেম (এস আর এস) অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে এম এম আর ১১ পয়েন্ট বেড়ে ২০১৭ সালের ৯৮ থেকে ২০১৯ সালে ১০৯ হয়েছে।
মমতা ব্যানার্জির সাধের প্রকল্প “কন্যাশ্রী”। এই প্রকল্পটি নিয়ে হৈ চৈ প্রচুর হয়েছে। ২০১৩ সালে “কন্যাশ্রী” প্রকল্প ঘোষণার সময় মূলত তিনটি লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছিল-মহিলাদের বাল্য বিবাহ হ্রাস করা, ১৮ বছরের কমবয়সী মেয়েদের স্কুলছুট হওয়া রোধ করা, মহিলা ক্ষমতায়ন প্রভৃতি। বিভিন্ন রিপোর্ট, সমীক্ষায় প্রমাণিত হচ্ছে “কন্যাশ্রী” প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলি সফল হয়নি। ২০-২৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে ৪১.৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কমে বিয়ে হয়েছে পশ্চিমবাংলায় যা সারা দেশের ২৩.৩ শতাংশ-এর প্রায় দ্বিগুণ। আমাদের রাজ্যে নাবালিকাদের মধ্যে গর্ভধারণের হার ৮.১ শতাংশ। সারা দেশে ৪.৩ শতাংশ।
মুখ্যমন্ত্রী যতই গলাবাজি করুন না কেন রাজ্যে কিন্তু বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। চা বাগান, চটকলগুলি ধারবাহিকভাবে বন্ধ হয়ে চলেছে। অজস্র ছোটো কারখানা বন্ধ। সরকার আহূত শিল্প সম্মেলনগুলিতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের গল্প শোনালেও বাস্তবে মিল নেই। সংগঠিত ক্ষেত্রে চাকরি নেই। শিক্ষক নিয়োগ নেই। খুব কম মজুরিতে চুক্তির ভিত্তিতে কিছু কাজ তৃণমূলের কর্মীদের দেওয়া হচ্ছে, আনুগত্য বজায় রাখার জন্য।
তৃণমূল সরকার প্রায় পাঁচ লক্ষ পদ অবলুপ্ত করেছে। নিয়মিত কর্মচারীদের বিকল্প হিসাবে ঠিকা কর্মচারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ঠিকাকর্মীদের অন্য কোনো ভাতা, পেনশন, গ্রাচুইটি দিতে হয় না। তাহলে এই খাতের অর্থ কোথায় যাচ্ছে? এটি মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের প্রকল্পগুলিতে বা অন্য কোথাও ব্যয় হয়। রাজ্য সরকার মেট্রো ডেয়ারির মতো লাভজনক ক্ষেত্রগুলিকে বিক্রি করে চলেছে।
তৃণমূল সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ হিসাবে দেশি ও বিলাতি উভয় প্রকার মদ বিক্রয়কে উৎসাহিত করছে। এতে নাকি রাজস্ব বাড়ছে। বলা বাহুল্য এটি একটি অনৈতিক কাজ। অনৈতিক কাজে রাজ্য সরকারের পূর্ণ মদত আছে। এই কারণেই রাজ্যে দুর্বৃত্তরা তৃণমূলের সম্পদ। কারণ এরাই তো নির্বাচনে তৃণমূলের কর্মী হিসাবে কাজ করে। এই সব কারণেই পশ্চিমবাংলা গভীর অন্ধকারে।