৫৯ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৬ মে, ২০২২ / ২২ বৈশাখ, ১৪২৯
তিলাবনির মৃত্যুদণ্ডের প্রাক্কালে
তপন মিশ্র
পুরুলিয়া জেলার অসংখ্য পাহাড়ের মধ্যে হুড়া পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার কলাবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি পাহাড় তিলাবনি। সেই তিলাবনি পাহাড়ের অস্তিত্ব এখন সংকটে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই পাহাড়ের পাথর কাটার বরাত দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুনাফার লোভে পাহাড় গুঁড়িয়ে সেখানকার গ্রানাইট পাথর বিক্রির নেশা লেগেছে ওদের। অন্যদিকে পাহাড় বাঁচানোর দাবিতে এবং পরিবেশ রক্ষার তাগিদে শুরু হয়েছে গ্রামবাসীদের আন্দোলন। এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।
যেখানে রুক্ষতাই সম্পদ
ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্বদিকের এই অংশে তরঙ্গায়িত ভূমিতে চারটি গ্রাম তিলাবনি, লেদাবনা, পরশিবনা এবং মাধবপুর ঘিরে আছে এই পাহাড়কে। তিলাবনি পাহাড়ের উচ্চতা ৪০০ মিটারের সামান্য বেশি। এককালে পুরুলিয়া জেলাজুড়ে ছিল শাল, মহুয়ার জঙ্গল। সে হয়তো ২০/২৫ পুরুষ আগের কথা। জমিদার এবং সাহেবদের উদ্যোগে জঙ্গল কেটে মৃত্তিকা ন্যাড়া হয়েছে পাহাডের পর পাহাড। মৃত্তিকা-ক্ষয় এবং অন্যদিকে উচ্চ তাপমাত্রার (গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই হয়ে যায়) কারণে লালমাটির স্বাভাবিক বন্ধু শাল অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। রেলের স্লিপার তৈরি, মাটির নিচের কয়লা খনিতে খুঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য শাল গাছের চাহিদা ছিল অনেক। তারও আগে জঙ্গলের মধ্যে শালগাছ জ্বালানি করে লোহা আকরিক গলিয়ে লোহা তৈরির অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়। বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের পশ্চিম অংশ, ঝাড়গ্রামে অপেক্ষাকৃত সমতল জমিতে জঙ্গলের ওপর এই অত্যাচার থাকলেও শালের ফোড় (coppice) তৈরির ক্ষমতা এবং অপেক্ষাকৃত কম ভূমিক্ষয় শালগাছকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। ব্যাপক অরণ্য ক্ষয়ের কারণে জেলার কিছু অংশে শাল অধ্যুষিত জঙ্গল নষ্ট হয়ে সেখানে পলাশ, শিমূল বাস্তুতান্ত্রিক পর্যায় অনুসরণ করে এসেছে। অত্যন্ত অল্পকথায় এ হলো এই অঞ্চলের বাস্তুতান্ত্রিক ইতিহাস (ইকোলজিক্যাল হিস্ট্রি)। যেখানে এই জোড়া আঘাত ছিল অপেক্ষাকৃত কম সেখানে এখনও বেশ কিছু অঞ্চলে শাল জঙ্গল মাথা তুলে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।এই ইতিহাস প্রমাণ করে যে, একদিকে মানুষের অবিবেচনা প্রসূত উন্নয়নের ধাক্কা এবং অন্যদিকে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক জলবায়ু কীভাবে ভূমি ব্যবহারের (land-use) প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে আগাগোড়া পাল্টে দিতে পারে।
এই রুক্ষতার মধ্যে যে হাঁসি ফুটতে পারে তা পুরুলিয়ার পলাশ-ই কেবল দেখাতে পারে। প্রতিবছর পলাশফুলের টানে অনেক মানুষ আসেন পুরুলিয়ায়। রুক্ষতা যাতে অবসাদের কারণ না হয় সম্ভবত সেকারণেই প্রকৃতি পলাশ সাজিয়ে রাখে। এ কোনো ভাববাদী আবেগ নয় বরং ইকোলোজিক্যাল সাক্সেসন-এর এটাই নিয়ম। এখানে শালের পর পলাশই প্রকৃতির নিয়ম। এই ধরনের এক সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রকে আরও আঘাত করা হলে তা এই অঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
যারা পর্বতারোহন করতে উৎসাহী তাদের হাতেখড়ি হয় এই পাহাড়ের বিভিন্ন ঢালে। পাহাড়ে চড়া শিখতে গেলে যে ‘রক ফেস’ চাই তা এখানে প্রকট, তাই পর্বতারোহনের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এই পাহাড় ইদানীংকালে এক পছন্দের ঠিকানা। শীতের সময় পাহাড়ের নিচে প্রায়শই তাঁবু খাটিয়ে শিক্ষার্থীরা রাত্রিযাপন করেন। বেশ কয়েকজন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানের পর্বতারোহী পুরুলিয়ার মাঠার পর তিলাবনিতে পর্বতারোহন শিক্ষার সম্ভাবনা দেখে খুবই আশান্বিত।
গত কয়েকটি লকডাউনের সময় মানুষ বেড়ানোর নিরিবিলি আস্তানা চেয়েছে। এক্ষেত্রে তিলাবনি প্রকৃতি প্রেমী মানুষকে আকর্ষণ করেছে। আদ্রা বা আনাড়া রেলস্টেশন থেকে স্বল্পদূরত্ব হওয়ায় তিলাবনি এবং ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তৈরি ফুটিয়ারি জলাধারও পর্যটকদের আকর্ষিত করে। বলে রাখা ভালো যে, এই ফুটিয়ারি ড্যামও এই অঞ্চলের বৃহৎ-জলবিভাজিকা (ম্যাক্রো-ওয়াটারশেড)-র অংশবিশেষ।
এই অঞ্চলে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য দেখা যায় কারণ এখানে যেমন বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা রয়েছে,তেমনই রয়েছে বৃষ্টিপাতের সময়ের স্বল্পতা। দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার গত ২০ বছরের আঞ্চলিক জলবায়ুর তথ্য সামনে রাখলে বোঝা যাবে যে, এই অঞ্চলে যেমন বছরে তাপপ্রবাহের দিনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনই হ্রাস পেয়েছে বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা এবং সাথে সাথে হড়কা বানের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই বিপদ কী আরও ত্বারান্বিত হবে?
এই সমস্ত পরিবেশগত সমস্যার কথা সরকারি আধিকারিকদের না বোঝার কারণ নেই। মুনাফার লোভে অন্ধ করপোরেটদের সঙ্গে কাটমানিখোর (কথাটির সঙ্গে মানুষ বেশি পরিচিত) সরকার এবং তার রাজনৈতিক দাদাদের গোটা পাহাড়কে লুঠ করে নেওয়ার পরিকল্পনা এই অঞ্চলের পরিবেশের পক্ষে ভয়ংকর হতে পারে। কারণ এই ঘটনা পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তনকে আরও উসকে দেবে।
দ্বারকেশ্বর নদীর উৎসের অপমৃত্যুর এক বড়ো কারণ হবে তিলাবনির খনন কাজ। তিলাবনির পরিবেশকর্মী স্বরূপ মাহাতো নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাকে বোঝাচ্ছিলেন দ্বারকেশ্বর নদীর উৎসের কথা। তিলাবনি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে পাঞ্জনিয়া। ইতিমধ্যে পাঞ্জনিয়াকে ধ্বংস করেছে এই গ্রানাইট কাটার লোভ। এই পাঞ্জনিয়া পাহাড় থেকে একটি জোড় বা ঝোরা নেমেছে দ্বারকেশ্বরের উৎস হিসাবে। আর একটি ধারা তৈরি হয় তিলাবনির প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে একটি বাহালি বা শোল (নিচু) জমি থেকে। এই অঞ্চলের আদিবাসীরা এবং কৃষিজীবী মানুষ জলবিভাজিকার পুঁথিগত ধারণা তৈরি হওয়ার আগে টাঁড, বাহালি, শোল ইত্যাদি ভাগে এই অঞ্চলকে ভাগ করেছেন। স্বরূপ মাহাতো বললেন যে, এই বাহালি জমিতে কয়েক দশক আগে তৈরি হয় দুর্গাশিং বাঁধ। এই বাহালি জমিতে তিলাবনি পাহাড় সহ এলাকার বর্ষার জল জমে। পরে এই জলাভূমির চারপাশে এক গ্রাম গড়ে ওঠে। বর্ষার সময় এই বাঁধের জল বাঁধ ছাপিয়ে দ্বারকেশ্বরের আর এক ধারা তৈরি করে। তিলাবনি ধ্বংস হলে জলের এই স্বাভাবিক গতিপথ ওলট পালট হয়ে যাবে।
পুরুলিয়া জেলার পরিবেশ রক্ষার প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত। তিলাবনি পাহাড় ভেঙে পাথরের খনন এই অঞ্চলের পরিবেশের উপর এক বড়ো আঘাত হানতে চলেছে। অবশ্য পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা ছাড়াও পাহাড়কে ঘিরে পর্বতারোহী প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের পর্যটন, পাহাড় লাগোয়া গ্রামবাসীদের পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্যের উপর নির্ভরশীলতা হারিয়ে যাওয়া, আদিবাসীদের পাহাড়কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক আবেগের উপর আঘাত ইত্যাদির সমস্যা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাছে ওরা
ওরা অর্থাৎ সরকার এবং পাথর খাদানের মালিক করপোরেট সংস্থা। আমাদের দেশের যে কোনো খনির জন্য পরিবেশ অভিঘাত (এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট - ইআইএ) আইন অনুযায়ী এই ধরনের গ্রানাইট পাথর খনন গৌণ খনিজ (মাইনর মিনেরাল) পদার্থের মধ্যে পড়ে। ৫ হেক্টরের কম লিজ নেওয়া জমিতে গৌণ খনিজ খনন ‘বি-টু’ ক্যাটাগোরিতে পড়ে। ‘বি-টু’ ক্যাটাগোরি অর্থাৎ যেখানে খননের আগে পরিবেশ অভিঘাত সমীক্ষা করা আবশ্যক নয়। তার জন্য এক্ষেত্রে গণ-শুনানি (পাবলিক)-র কোনো দরকার নেই। আইনের এই ফাঁকের সুযোগ নিয়ে তিলাবনি পাহাড় কেটে ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আসলে খনন কাজ আরও বড়ো জায়গা জুড়ে হবে, কিন্তু রয়ে সয়ে। প্রতিবারে ৫ হেক্টরের সামান্য কম জমি লিজ নিয়ে খননের অনুমতি আদায় করা এবং এই অংশ শেষ হলে আবার নতুন করে লিজের আবেদন করা। ইআইএ পদ্ধতিতে লোকজানাজানির সম্ভাবনা বেশি। এই পদ্ধতিকে এড়ানোর এটাই সহজ উপায়। পশ্চিমবাংলার সর্বত্র এই চালাকি চলছে সরকার ও করপোরেটের যৌথ উদ্যোগে।
আগে উল্লেখিত হয়েছে এবং তা ছাড়াও খননের ফলে যে আঘাতগুলি আসবে সেগুলি হলোঃ
১। পাহাড়ের জৈব বৈচিত্র্যের উপর বড়ো আঘাত আসবে। এখানে বৃক্ষ না থাকলেও যে বিরুৎ এবং গুল্ম ঝোপ-ঝাড় রয়েছে তার প্রজাতির সংখ্যা ৬১-র কিছু বেশি। এর মধ্যে যেমন আদিবাসীদের ব্যবহৃত অনেক ধরনের উপযোগী উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে তেমনই রয়েছে বেশ কিছু বন্য প্রজাতি। কেবল হাতি, বাঘ, ভাল্লুক আমাদের জৈববৈচিত্র্যের পরিচায়ক নয়। এখানকার অসংখ্য ছোটোবড়ো স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, পক্ষী এবং অন্যান্য প্রজাতির আশ্রয়স্থল এই ঝোপ-ঝাড়।
২। তিলাবনি পাহাড় একটি বড়ো জলবিভাজিকার অংশবিশেষ। পাহাড় থেকে বর্ষার জল গড়িয়ে গ্রামগুলির জলাধার, চাষ জমি, এমন কী অদূরে দুর্গাশিং জলাধারকে প্রাকৃতিক নিয়মে জল সরবরাহ করে। দ্বারেকেশ্বর নদীর জলের একটা অংশ আসে এই জলাধার থেকে। ভৌম্য জলের স্তর বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এই পাহাড়ের বড়ো ভূমিকা আছে। এমনিতেই এই অঞ্চল জল-কষ্টে জর্জরিত। তিলাবনি পাহাড় নষ্ট হলে মানুষের জীবন ধারণের জন্য জল সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে।
৩। পাহাড় ভাঙার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার, পাথর গাড়িতে তোলা ইত্যাদির সময় যে ধুলো বাতাসে মিশবে এবং তার ফলে বায়ুদূষণ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। এই দূষণ থেকে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও আশেপাশের গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৪। যে কোনো বাস্তুতন্ত্রের উপর, সেই বাস্তুতন্ত্রের কাছাকাছি যে প্রান্তিক মানুষ থাকেন তাদের জীবন জীবিকার নির্ভরশীলতা থাকে। এখানেও পাহাড়ে ঝোপঝাড় আছে, সেখান থেকে কেন্দুপাতা সংগ্রহ, ওষধি গাছ সংগ্রহ, জ্বালানি সংগ্রহ ইত্যাদির নির্ভরশীলতা থাকা স্বাভাবিক। সেই সমস্ত নির্ভরশীলতার আর্থিক মূল্য নির্ধারণ একপ্রকার অসম্ভব। এই নির্ভরশীলতা আসলে যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রকৃতি প্রদত্ত অধিকার। ফলে পাহাড় ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অর্থ প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার উপর বড়ো আঘাত।
৫। প্রত্যেকটি পাহাড়ের সঙ্গে আদিবাসী-জনজাতি মানুষের কিছু সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও পরম্পরা যুক্ত আছে। এখানে আদিবাসীদের বড়ো দেবতা বা মারাং বুরু অবস্থানের কথা ওরা বিশ্বাস করেন। পাহাড় ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে তাদের সেই ভাবাবেগের উপর আঘাত হানা হবে।
ঠিক একইসময়ে অন্ধপ্রদেশের আনাকাপাল্লে জেলার ভুরালভা পাহাড় খননের বিরুদ্ধে লড়াই করছে কোন্ডাডোরা আদিবাসীরা। তিলাবনি পাহাড়কে ঘিরে এক নতুন সম্ভাবনাকে আঁতুড়ে নষ্ট করছে সরকার। এখানকার পর্যটক এবং পর্বতারোহীদের জন্য সরকারি সহায়তায় কিছু ব্যবস্থা তৈরি করতে পারলে, গ্রামবাসীদের তত্ত্বাবধানে সেই ব্যবস্থা মানুষের জীবন-জীবিকায় কিছু সাহায্যে লাগতে পারে। এখানেই বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। এই সুযোগ তৈরি না’করে প্রকৃতি-পরিবেশ এবং আদিবাসী ও অ-আদিবাসী প্রান্তিক মানুষদের জীবন-জীবিকার সম্ভাবনাকে নষ্ট করবে তিলাবনির প্রস্তাবিত পাথর খাদান। তাই তিলাবনির মৃত্যু পরোয়ানার উপর পাকাপাকিভাবে স্থগিতাদেশ জারি করুক জনতার আদালত।