E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১২শ সংখ্যা / ৬ নভেম্বর ২০২০ / ২০ কার্ত্তিক ১৪২৭

ভারত-মার্কিন সামরিক জোট ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয়

সিপিআই(এম) এবং সিপিআই-র অভিমত


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রের সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে শক্তিশালী করছে। এই পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে ভারতের সময়-পরীক্ষিত বিদেশ নীতিকে পুরোপুরি নস্যাৎ করা হয়েছে। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সামরিক জোটে আবদ্ধ হবার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) এই অভিমত ব্যক্ত করেছে। ৩১ অক্টোবর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে উপরোক্ত বক্তব্যের পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে কোনো সামরিক বা স্ট্র্যাটেজিক জোটে না গিয়ে আমাদের দেশের স্বার্থে স্বাধীনভাবে নীতিগ্রহণই ছিল ভারতের বিদেশনীতির মূল মর্মবস্তু। অথচ এই প্রথমবার কোয়াড মালাবারে যৌথ নৌ-মহড়া করতে চলেছে।

এর আগে ২৮ অক্টোবর সিপিআই(এম) এবং সিপিআই এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক জোট ভারতের স্বার্থে নয়। এদিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৭ অক্টোবর দিল্লিতে চুক্তি করে ভারত যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক জোটে আবদ্ধ হয়েছে তার সুদূরবর্তী প্রভাব রয়েছে। ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতি এবং স্ট্র্যাটেজিক স্বশাসনের ওপর এই চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। এই চুক্তি ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয়। এদিনের বিবৃতিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বলেছেন, ২৭ অক্টোবর দিল্লিতে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রীদের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে ভূ-স্থানিক সহযোগিতা সংক্রান্ত ‘বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ)’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক জোট তৈরির পূর্ববর্তী সমস্ত ভিত্তিমূলক চুক্তি রূপায়ণের প্রক্রিয়া শেষ হলো। আগামী নভেম্বরেই যেখানে কোয়াড-ভুক্ত চারটি দেশের যৌথ নৌ-মহড়া ‘মালাবার মহড়া’ নির্ধারিত রয়েছে, সেই সময়েই এই চুক্তি করলো ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার অজুহাত দেখিয়ে এই চুক্তির যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাস্তব হলো, লাদাখে সাম্প্রতিক উত্তেজনার বহু আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এসব চুক্তি সইয়ের বিষয়টি নির্ধারিত ছিল। কয়েক বছর আগেই মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট, লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ এগ্রিমেন্ট, কমিউনিকেশনস সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি চার দেশীয় জোট আরও চাঙ্গা করার কাজও চলছে গত কয়েক বছর ধরেই।

বিবৃ‍‌তিতে আরও বলা হয়েছে, এই বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ)’র মাধ্যমে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং তাদের স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনার খপ্পরে ফেলা হলো ভারতকে। কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে দু’দেশের এহেন পারস্পরিক বন্ধন ভারতের পক্ষে অনুকূল হবে না। এই অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধন ভারতীয় প্রতিরক্ষা কাঠামোর অখণ্ডতা এবং স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এই চুক্তি মার্কিন যুদ্ধসম্ভারের ওপর আমাদের নির্ভরশীল করে তুলবে। এসব যুদ্ধাস্ত্রের প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা এবার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণ করবে।

এই অবস্থায় সিপিআই(এম) এবং সিপিআই’র স্পষ্ট অভিমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই ক্রমপ্রসারমান সামরিক জোট ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতি এবং স্ট্র্যাটেজিক স্বশাসনের ওপর দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব তৈরি করবে। এই চুক্তি আদৌ ভারতের জাতীয় স্বার্থের অনুকূল নয়। একইসঙ্গে সিপিআই(এম) এবং সিপিআই’র পরামর্শ, সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য চীনের সঙ্গে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত ভারত সরকারের। এজন্য এশিয়ায় মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অধীনস্থ ছোটো শরিকে পরিণত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই ভারতের।

প্রসঙ্গত, ২৭ অক্টোবর দিল্লিতে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পিও এবং প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এসপার ও ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের উপস্থিতিতে এই বিপজ্জনক বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে এবার থেকে ভারতের উচ্চমানের সামরিক প্রযুক্তি তথ্য, উপগ্রহ থেকে সংগৃহীত গোপনীয় তথ্য, সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতিতে হস্তক্ষেপ আরও বাড়িয়ে ভারতকে মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনার ছোটো শরিকে পরিণত করার দীর্ঘদিনের ছক রূপায়ণে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল আমেরিকা।