E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১২শ সংখ্যা / ৬ নভেম্বর ২০২০ / ২০ কার্ত্তিক ১৪২৭

কমরেড শেখ ইসরাইলের জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কৃষক আন্দোলনের নেতা এবং সিপিআই(এম)’র প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড শেখ ইসরাইলের জীবনাবসান হয়েছে। ক্যানসার এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ১ নভেম্বর রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাধানগরপুরের শালিকা গ্রামে নিজের বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

কমরেড শেখ ইসরাইলের জীবনাবসানে গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু, পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক তরুণ রায়, দীপক সরকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

১৯৩৮ সালে মেদিনীপুরের রাধানগরপুরে অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম কমরেড শেখ ইসরাইলের। ছাত্রাবস্থায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেন তিনি।

পেশাজীবনে ঘাটালের একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সেই সঙ্গে সুনাম অর্জন করেছিলেন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক রূপেও।

১৯৬৮-৬৯ সালে রাধানগরে জমির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন কমরেড শেখ ইসরাইল। কৃষক আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে জনপ্রিয়তা তাঁকে নেতৃত্বে উত্তীর্ণ করে। ১৯৭০ সালে অর্জন করেন সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ। সেই সময় কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্য তাঁকে জোতদারদের করা অনেকগুলি মিথ্যা মামলার আসামিও হতে হয়। কিছুদিন কাটাতে হয় আত্মগোপনে।

বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পরে রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৯৭৮ সালে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন কমরেড ইসরাইল। সারা ভারত কৃষক সভার জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার সহসভাপতি।

সিপিআই(এম)’র খড়গপুর জেলা সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্যও হন। অসুস্থতার কারণে পরবর্তীতে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সহজ সরল জীবনযাপন ও আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বদানের কারণে ঘাটালে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন কমরেড শেখ ইসরাইল। সন্ত্রাস মোকাবিলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে সিংহডাঙার মোড়ে গাড়ি থামিয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁর ওপরে হামলা চালায়।

ছাত্র অবস্থা থেকেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন তিনি। কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন, আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং সাহিত্য নিয়ে অনেক বইও লিখেছেন। মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস-উপযোগী তথ্যাদি এবং অনেকগুলি কবিতার বই রয়েছে তাঁর। নন্দন ও গণশক্তিতে বিভিন্ন সময়ে তাঁর একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

কমরেড শেখ ইসরাইলের স্ত্রী ও ৫ পুত্র রয়েছেন। ২ নভেম্বর তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।