৫৮ বর্ষ ১২শ সংখ্যা / ৬ নভেম্বর ২০২০ / ২০ কার্ত্তিক ১৪২৭
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও থমকে যাওয়া অর্থনীতির অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফলগুলি
প্রভাত পট্টনায়েক
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে জড়িয়ে আছে এক অবাধ বাড়বাড়ন্ত দারিদ্র্য। মার্কস এই বিষয়টিকে অনুধাবন করেছিলেন এবং এইভাবে তা তুলে ধরেছিলেনঃ ‘‘সুতরাং, একদিকে যখন সম্পদের পুঞ্জীভবন ঘটে, সেই সময়ে অন্যদিকে - অর্থাৎ, যাঁরা নিজেদের উৎপাদিত বস্তুকে পুঁজি রূপে জন্ম দেয়, সেই শ্রেণির ক্ষেত্রে - দেখা যায় চরম দারিদ্র্যের, শ্রমের নিদারুণ যন্ত্রণার, দাসত্বের, অবহেলার, পশুর মতো জীবনযাপনের আর নৈতিক অধঃপতনের পুঞ্জীভূত চেহারা’’ (পুঁজি প্রথম খণ্ড)। কিংবা, তিনি আবার এটাও বলেছিলেনঃ ‘‘উৎপাদনশীল পুঁজি যত বৃদ্ধি পায়... কাজের দাবিতে উত্তোলিত হাতের জঙ্গল ক্রমাগত গহনতর হয়ে ওঠে, সেই সময়েই ওই হাতগুলি নিজেরাই ক্রমশ কৃশ থেকে কৃশতর হয়ে ওঠে’’ (মজুরি শ্রম ও পুঁজি)।
ভারতের ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা, তা ওই কথাগুলিকেই সমর্থন করে। এটা সাধারণত মেনে নেওয়া হয় যে, পুঁজির দ্রুত পুঞ্জীভবনের সাক্ষী নয়া-উদারবাদী যুগ, অতএব জিডিপি’র দ্রুত বৃদ্ধিরও; ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সব মিলিয়ে এক নতুন যুগের আগমনী বার্তা ঘোষণার কারণে এই সময়পর্বকে অভিবাদন জানানো হয়। অন্যদিকে, এই সময়পর্বেই দেখা যায় দারিদ্র্যের চরম বাড়বাড়ন্ত। মাথাপিছু খাদ্যশস্য কতটা পাওয়া যাচ্ছে, তার নিরিখে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ অর্ধশতাব্দীতে যে ভয়াবহ দুরবস্থার জন্ম হয়েছিল, তাকে উল্টোদিকে চালিত করে ১৯৯১ সালে সামগ্রিক অবস্থা একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছিল (যদিও সেটা কোনোভাবেই পরিপূর্ণ পরিমাণ ছিল না)। পরবর্তী আর কোনো বছরেই সেই পরিমাণ মাথাপিছু খাদ্যশস্য পাওয়ার স্তরে পৌঁছাতে পারা যায়নি।
খাদ্যগ্রহণের তথ্যাবলি এর চেয়ে আরও বেশি কিছু বলছে। গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের সংজ্ঞা হলো মাথাপিছু প্রতিদিন ২২০০ ক্যালোরির সমপরিমাণ খাদ্যগ্রহণে অক্ষমতা। নয়া-উদারবাদী নীতিগুলি চালু করার পরে প্রথম বছর ১৯৯৩-৯৪ সালে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা (এনএসএস লার্জ স্যাম্পেল সার্ভে) হয়েছিল। ওই সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, মাথাপিছু প্রতিদিন ২২০০ ক্যালোরির নিরিখে সংজ্ঞায়িত দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা গ্রামীণ জনসংখ্যার অনুপাত ৫৮ শতাংশ। এই ধরনের একটি জাতীয় নমুনা সমীক্ষার শেষ তথ্য পাওয়া যায় ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত। এই সমীক্ষায় দেখা গেল ওই অনুপাত বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৮ শতাংশ। শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার মাপকাঠি মাথাপিছু প্রতিদিন ২১০০ ক্যালোরির সমপরিমাণ খাদ্যগ্রহণে অক্ষমতা। সেই হিসাবে এক্ষেত্রে ওই দুই সমীক্ষার তথ্য হলো, যথাক্রমে ৫৭ ও ৬৫ শতাংশ। সংক্ষেপে, নয়া-উদারবাদী পুঁজিবাদের সুনির্দিষ্ট সময়পর্বে দারিদ্র্যের সবচেয়ে প্রাথমিক আত্মপ্রকাশ, ক্ষুধার নিরিখে প্রদত্ত সংজ্ঞা মোতাবেক দরিদ্র মানুষের সার্বিক সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল। ক্ষুধার মানদণ্ড যতদিন না সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল, ততদিন পর্যন্ত তা ছিল দারিদ্র্যের সরকারি সংজ্ঞার ভিত্তি। সেই মানদণ্ড অস্বস্তিকর হয়ে উঠলে এই সরকারি সংজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সরকার সবধরনের কৌশল অবলম্বন করল, যাতে একটা প্রশংসনীয় ছবি ফুটিয়ে তোলা যায়।
ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্তটিকে জোরালোভাবে সমর্থন জানায় অসাম্য প্রসঙ্গে প্রাপ্ত প্রামান্য তথ্যগুলি। জাতীয় আয়ে জনসংখ্যার সবচেয়ে ধনী এক শতাংশের অংশ কতটা, আয়কর সংক্রান্ত তথ্য থেকে তার একটা পরিমাপ করেছেন দু’জন ফরাসি অর্থনীতিবিদ, পিকেত্তি এবং চানসেল। তাঁরা দেখিয়েছেন যে, (১৯২২ সালে) ভারতে আয়করব্যবস্থা চালু হওয়ার পরবর্তী সময়পর্বে ওই অংশগত পরিমাণ সর্বোচ্চ ছিল ২০১৩সালে ২২ শতাংশ; অন্যদিকে ১৯৮২ সালে ওই অংশগত পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ শতাংশ। ওই লেখকদ্বয়ের গৃহীত পদ্ধতি নিয়ে কার কী সমালোচনা আছে, তাতে কিছু এসে যায় না; তাঁদের তুলে ধরা ফলাফলগুলি এতটাই নাড়া দেওয়ার মতো যে, সেইগুলি অগ্রাহ্য করা যায় না। নয়া-উদারবাদী পুঁজিবাদের অধীনে অসাম্য এতটাই তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, প্রকৃত প্রস্তাবে তার পরিণতি দারিদ্র্যের বৃদ্ধি।
দারিদ্র্যের এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে কার্যকারণ আছে তা হুবহু তুলে ধরেছিলেন মার্কস। এই কার্যকারণকে বলা যায় অতি সাধারণ উৎপাদকদেরকে, বিশেষভাবে কৃষকদেরকে দরিদ্র মানুষের ভিড়ে ঠেলে দেওয়ার এক প্রক্রিয়া। এঁদের অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক রূপে কাজের খোঁজে শহরে চলে যায়, আর সেখানে কাজের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। এই পরিযায়ী শ্রমিক, এমন কি শ্রমশক্তির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটানো মানুষের একটা অংশ, যাঁরা কাজ চেয়েও কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত - তাঁরা শ্রমের মজুতবাহিনীকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলে (কথাটি বলা হলো এই অর্থে যে, যাঁরা ইতিমধ্যে কাজে নিযুক্ত আছে তাঁদের কাজে এঁরা মাঝেমধ্যেই ভাগ বসায়)। সংগঠিত শ্রমিকদের দরকষাকষির ক্ষমতাকেও তাঁরা খর্ব করে। অতএব, তাঁদের হাত ধরেই আসে অসাম্য ও দারিদ্র্য।
এই প্রসঙ্গটি আমি ইতিপূর্বে লিখেছি, তাই এখানে আর আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু, এই বক্তব্যটি থেকে প্রায়শই দু’টি ভুল সিদ্ধান্ত টানা হয়। প্রথমত, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যদি একটা ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য সৃষ্টি করে, তাহলে এই বৃদ্ধি ঘটা বন্ধ হলে বিপরীত ফলাফল পাওয়া উচিত - দারিদ্র্য থেকে মুক্তি, কিংবা নিদেনপক্ষে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এক জায়গায় স্থির হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, ‘ক’ প্রক্রিয়ার কারণে যদি ‘খ’ প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে, তাহলে ‘ক’ প্রক্রিয়াটি থেমে গেলে ‘খ’ প্রক্রিয়াটিরও থেমে যাওয়া উচিত। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ভুল। তার কারণ, দারিদ্র্যের ওপরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও থমকে যাওয়া অর্থনীতির প্রভাব অসামঞ্জস্যপূর্ণ - অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যদি দারিদ্র্যের বাড়বাড়ন্ত অবস্থার জন্ম দেয়, তাহলে এই বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে দারিদ্র্যের আরও বেশি বাড়বাড়ন্ত অবস্থা দেখা দেয়।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি দারিদ্র্যের আঘাত নামিয়ে আনে। তার কারণ, আমরা যেটা দেখেছি - অতি সাধারণ উৎপাদক ও কৃষকদেরকে দারিদ্র্যের যূপকাষ্ঠে ঠেলে দেওয়া হয়। এমনকি, জমি বা অন্যান্য সম্পদ হারানোর নিরিখে (অর্থাৎ, ‘মজুত সম্পদ’ হ্রাসের হিসাবে) তাঁদের অভিজ্ঞতায় পুঁজির আদিম পুঞ্জীভবন ধরা না পড়লেও তাঁরা তাঁদের আয়ের সঙ্কোচনের কারণে পীড়িত হয়; অর্থাৎ, যা হলো ‘সম্পদ প্রবাহের’ নিরিখে আদিম পুঞ্জীভবন। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি থেমে যাওয়ার অর্থ এটা নয় যে, একজন কৃষক বা একজন অতিসাধারণ উৎপাদকের গড় আয় বৃদ্ধি পায়; বরং, একটি ভিন্ন কারণে সেই আয় আরও হ্রাস পায়।
একটি সহজ উদাহরণ দেখা যাক। ধরা যাক, আগে একজন কৃষকের আর্থিক আয় ছিল ১০০ টাকা; কারণ, তাঁর উৎপাদিত বস্তুর মূল্য (উৎপাদনের মোট পরিমাণকে একক প্রতি দামের দ্বারা গুণ করে পাওয়া) ছিল ২০০ টাকা ও উৎপাদনের জন্য তাঁর উপাদান-খরচ ১০০ টাকা (যেটা মোট মূল্য থেকে বাদ দিতে হবে)। কিন্তু, তাঁর প্রকৃত আয় তখন সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল; কারণ চিকিৎসা ব্যবস্থার বেসরকারিকরণের ফলে তার চিকিৎসা খরচ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলেও চিকিৎসা খরচ কমবে না; কিন্তু, সে তাঁর উৎপাদিত বস্তুর জন্য আবার একই দাম কোনোভাবেই পাবে না, যদিও উপাদান-খরচ একই থেকে যাবে; ফলে তাঁর আর্থিক আয় কমে যাবে। কোনো একটি কার্যকারণের মধ্যে দিয়ে তাঁকে যদি পূর্বে নিষ্পেষিত করা হয়ে থাকে, তাহলে এখন সেই নিষ্পেষণ ঘটছে অন্য একটি কার্যকারণের মধ্যে দিয়ে; কিন্তু প্রথম কার্যকারণটির কার্যকারিতা থেমে যায়নি।
একইভাবে, একটি কাজের দিনের জন্য একজন শ্রমজীবী মানুষ তাঁর কাজের প্রতিদানে প্রকৃত মূল্যে কী পাচ্ছে এবং সে যতদিন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, এই দুই রাশির গুণফল যদি তাঁর প্রকৃত আয় হয়, তাহলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হাত ধরে আগের চেয়ে দুরবস্থা আরও বৃদ্ধি পায় প্রায়; প্রাথমিকভাবে, দিন প্রতি কাজের হিসাবে প্রাপ্য প্রকৃত মজুরি হ্রাসের মধ্যে দিয়ে দুরবস্থার এই বৃদ্ধি ঘটে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি থমকে গেলে দিন প্রতি কাজের প্রতিদানে প্রাপ্য প্রকৃত মজুরির বৃদ্ধি হয় না। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে বাড়বাড়ন্ত দারিদ্র্যের আঘাত জড়িয়ে থাকলেও সেই বৃদ্ধি যখন বন্ধ হয়ে যায় এভাবেই দারিদ্র্য আরও বৃদ্ধি পায়।
আরও সার্বিকভাবে বলা যায়, মন্দা ব্যতীত কারণে সৃষ্ট দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং মন্দার কারণে সৃষ্ট দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে পার্থক্য টানা যায়। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সময়পর্বে দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ হলো প্রথম বিষয়টি; আর মন্দার কারণে দারিদ্র্যের আরও বৃদ্ধি ঘটে দ্বিতীয় বিষয়টির হাত ধরে এবং প্রথম বিষয়টি কোনোভাবেই তখনও বিলুপ্ত হয় না। সুতরাং, ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সময়পর্বে দুরবস্থার যে যে উপাদানগুলি কার্যকর হয়ে আছে, মন্দা ও অর্থনীতির থমকে যাওয়া দশা বেশ কিছু অতিরিক্ত উপাদান তাদের ওপরে অধিকন্তু চাপিয়ে দেয়; তার ফলে আরও বাড়বাড়ন্ত দারিদ্র্যের একটি আঘাত নেমে আসে।
এটাই আমাদের টেনে আনে দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে। তাহলে, আবার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটলে দারিদ্র্য কী কমে যাবে? বলার ইচ্ছা হবেঃ হ্যাঁ, তেমনটাই ঘটবে; তবে সেটা ঘটবে কেবলমাত্র দারিদ্র্য সৃষ্টির যে অতিরিক্ত উপাদানগুলিকে অধিকন্তু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বৃদ্ধির সময়পর্বেও কার্যকর থাকা দারিদ্র্যের মৌলিক উপাদানগুলির ওপরে, সেইগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে; আর, একবার এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে - ধরা যাক, কর্মহীনের সংখ্যা মন্দা-পূর্ববর্তী স্তরে নামিয়ে আনার মাধ্যমে তা করা হলো - অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিরপেক্ষ ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য তখন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে সাথেই চলার জায়গায় ফিরে আসবে।
যাইহোক, এই বক্তব্য সঠিক নয়। নয়া-উদারবাদী পুঁজিবাদ আজকের দিনে যে সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে সেটা সাধারণ পর্যায়ক্রমিক সঙ্কট নয়, বরং একটি গঠনগত সঙ্কট, গোটা ব্যবস্থাটিই একটি কানাগলির শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার কারণে এই গঠনগত সঙ্কটের সৃষ্টি। বিশ্ব জুড়ে মহামারী দেখা দেওয়ার আগেই, মন্দার কারণে যে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের জন্ম, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো স্বয়ংক্রিয় উপায় নেই। মুক্তি পাওয়া যেতে পারে একমাত্র যদি সাধারণ মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা দেওয়া হয়; যার অর্থ, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পুরানো রূপ আর কোনোভাবেই ফিরে আসতে পারবে না।
মন্দার কারণে দারিদ্র্যের এই বাড়বাড়ন্ত পরিমাণকে অল্প কথায় প্রকাশ করেছে দু’টি ছোট্ট তথ্য। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের দারিদ্র্য প্রসঙ্গে ২০১১-১২ সালের তথ্যাবলি আমি আগেই তুলে ধরেছি। ২০১১-১২ সালের পরে আরও একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় নমুনা সমীক্ষা হয়েছে ২০১৭-১৮ সালে। এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, ২০১১-১২ ও ২০১৭-১৮ বছর দু’টির মধ্যবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলে ভোগজনিত মাথাপিছু প্রকৃত ব্যয় ৯ শতাংশ কমে গেছে। গ্রামীণ ধনীদের মাথাপিছু ভোগের প্রকৃত ব্যয় না কমে যদি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তাহলে গ্রামীণ জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশের মানুষের ক্ষেত্রে ওই ব্যয় নিশ্চিতভাবেই আরও অনেকটা কমে যাবে। এই তথ্যটি এতটাই নাড়া দেওয়ার মতো একটি বিষয় যে, উত্থাপিত প্রশ্নগুলির বিড়ম্বনার কারণে উত্তর না দিয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার এই ফলাফলগুলিকে জনগণের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।
দ্বিতীয় তথ্যটি হলো দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্ব সম্পর্কিত। বিশ্ব জুড়ে মহামারী দেখা দেওয়ার আগেই এই বেকারত্বের হার ৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। ভারতে যে বেকারত্ব দেখা যায় তার বেশিরভাগটাই হলো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক কাজ বহু মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়ার কারণে অনিয়মিতভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে সৃষ্ট। এই কারণে, দীর্ঘস্থায়ী বেকারত্বের হার সাধারণভাবে অনেকটাই কম, ২ থেকে ২.৫ শতাংশ। অতএব, এই হার ৬ শতাংশে লাফ দিয়ে ওঠার বিষয়টি চরম অর্থবহ এবং দারিদ্র্যের মন্দাজনিত বাড়বাড়ন্ত অবস্থাকেই তুলে ধরে।
অনুবাদঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য