E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১২শ সংখ্যা / ৬ নভেম্বর ২০২০ / ২০ কার্ত্তিক ১৪২৭

শেষ কথা কে বলবে?

প্রসঙ্গঃ বিহার বিধানসভা নির্বাচন

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


ভদ্র মানুষ অন্যের বাবা-মাকে ধরে টানাটানি করে না। এই আচরণ ভদ্রজনোচিত নয় বলেই মনে করা হয়। কিন্তু তাও দেখা গেল বিহারের বর্তমান বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে। ভারতের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে যা হয়তো নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবেই থেকে যাবে। এবং শুধু বাবা-মাকে টেনে আনাই নয়। বর্তমানে তাঁর ঘোরতর প্রতিপক্ষ প্রয়াত রামবিলাস পাশোয়ানের ছেলে চিরাগ পাশোয়ানকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে কৌশলে জোটসঙ্গী জিতন রাম মাঝিকে দিয়ে রামবিলাসের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ তৈরি করাও অবশ্যই এক নিকৃষ্ট রাজনৈতিক চাল। রাজ্যের তিন দফা নির্বাচনের প্রচারে একাধিকবার জনতার প্রশ্নবাণে মেজাজ হারিয়ে ফেলা নীতীশ কুমার বিগত কয়েক দিনে নিজেই বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন এবার তাঁর অঙ্ক সহজে মেলার নয়। ২০১৫-র নির্বাচনের আগের অঙ্ক, ২০১৭-র জুলাইতে দলবদলের অঙ্ক কষে পার পেয়ে যাবার পর, মসনদে টিকে থাকার অঙ্কতে এবার যে ভালোরকম জট পেকেছে তা নীতীশ কুমারের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকের বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয়। তবু এই চেষ্টা হয়তো তাঁর মরণকামড়। বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ‘পালটুরাম’ তকমা পাওয়া, পেঁয়াজ ছোঁড়া খাবার পরেও মসনদ দখলের মরিয়া চেষ্টা।

প্রথম প্যারার কথাগুলো যদিও রাজনীতির সঙ্গে আদ্যোপান্ত জোড়া, তবু কথাগুলো কোনোভাবেই রাজনীতির পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং বলা যেতে পারে সরাসরি রাজনীতির যুদ্ধে পিছু হটে বাঁকা পথে বাজার গরমের চেষ্টা। অবশ্য শুধু নীতীশ কুমারকেই বা দোষ দিয়ে লাভ কী? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো বিহারের নির্বাচনী প্রচারে একই পথে হেঁটেছেন। সেখানেও বিহারের আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন রাম মন্দির, পুলওয়ামা হামলা থেকে মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবকে ‘জঙ্গলরাজের যুবরাজ’ বলে ব্যক্তি আক্রমণ - কোনো কিছুই বাদ যায়নি। দিনের শেষে যোগ- বিয়োগের অঙ্ক কষতে গেলে বোঝা যায় - আসলে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এনডিএ-তে থাকা বিজেপি বা জেডি(ইউ)-এর কাছে রাজনৈতিক ইস্যু কম পড়িয়াছিলো। তাই রাজনীতির লড়াই উৎরোতে অরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে টানাটানি। অবশ্য তেজস্বী যাদব পরিণত রাজনীতিকের মতোই প্রধানমন্ত্রীকে ‘গুজরাটের গণহত্যার নায়ক’ বলে সম্বোধন না করে উত্তরে বলেছেন - আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, যা ইচ্ছে তা বলতেই পারেন। তবে অরাজনৈতিক কথা না বলে বিহারের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ নিয়ে কিছু বলুন, মানুষের খিদে, বেকারি নিয়ে কথা বলুন।

মুখবন্ধে বেশি শব্দ খরচ না করে বরং সরাসরি বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ঢুকে পড়া যাক। ইতিমধ্যেই গত ২৮ অক্টোবর এবং ৩ নভেম্বর দু’দফায় ৭১ এবং ৯৪ আসনে ভোট হয়ে গেছে। বাকি ৭৮ আসনে ভোট হবে আগামী ৭ নভেম্বর। ভোট গোনা হবে ১০ নভেম্বর, মঙ্গলবার। বিহারে আগামী সরকার নীতীশের, নাকি তেজস্বীর নাকি অন্য কারোর তা জানার জন্য ওই দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। কারণ, অন্যান্যবারের থেকে এবার বিহার নির্বাচনের জটিলতা একটু বেশি।

২০২০-র বিহার বিধানসভা নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ মহাজোট এবং এনডিএ। ৬৯ বছরের নীতীশ কুমারের সঙ্গে ৩১ বছরের তেজস্বী যাদবের প্রায় মুখোমুখি লড়াই। যদিও এর বাইরেও এক প্রতিপক্ষ আছে। প্রয়াত রামবিলাস পাশোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি বা এলজেপি। যাদের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বেশ কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। এলজেপি এনডিএ-তে আছে, কিন্তু নেই - এই অবস্থান আসলে কোন্‌ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা করে দিচ্ছে তা স্পষ্ট হতে আরও কটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে।

২৪৩ আসনের বিধানসভায় এনডিএ-র দুই প্রধান স্তম্ভ বিজেপি এবং জেডি(ইউ) লড়াই করছে ১১০ ও ১১৫ আসনে। দুই দলের ভাগে পড়েছিলো ১২১ ও ১২২ আসন। অন্য দুই শরিক হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা বা হ্যাম এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি বা ভিআইপি লড়ছে ৭ এবং ১১ আসনে। মহাজোটের আসন ভাগাভাগি ঘোষণার দিন জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসা প্রায় সদ্য জন্ম নেওয়া ভিআইপি-কে নিজেদের কোটা থেকে ১১ আসন ছেড়ে দিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে জিতন রাম মাঝির হ্যাম-কে নিজেদের কোটা থেকে ৭ আসন ছেড়েছে জেডি(ইউ)।

মহাজোটের আসন ভাগাভাগি প্রথম থেকেই স্পষ্ট। জোটের প্রধান শক্তি আরজেডি ১৪৪ আসনে, কংগ্রেস ৭০ আসনে, সিপিআই(এম-এল) ১৯ আসনে, সিপিআই ৬ আসনে এবং সিপিআই(এম) ৪ আসনে লড়াই করছে। এছাড়াও শিবসেনা ২৩ আসনে, এনসিপি ১৪৫ আসনে, লোকতান্ত্রিক জনতা দল ৫১ আসনে, রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি ১০৪ আসনে, বিএসপি ৮০ আসনে লড়াই করছে। লড়াইয়ের ময়দানে আছে আরও কিছু রাজনৈতিক দল। যারা বেশ কিছু আসনে লড়াই করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ তাদের ‘ভোট কাটুয়া’ তকমা দিয়েছে। ফলে এদের কারোরই ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক হওয়ার কথা নয়। দু’চারটে আসন ছাড়া প্রায় কোনো আসনেই এদের নিয়ন্ত্রক ভূমিকা নেবার সম্ভাবনা কম।

এক্ষেত্রে লড়াইটা সরাসরি হওয়ার ছিলো এনডিএ বনাম মহাজোটের মধ্যে। যদিও এর মাঝখানে চিরাগ পাশোয়ানের এলজেপি বেশ কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি করেছে ১৪৩ আসনে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে। এনডিএ-তে থেকেও এলজেপি জেডি(ইউ)-এর বিরুদ্ধে সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে ১১০ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এই এলজেপি-কে নিয়ে দু’একটা কথা একটু সেরে নেওয়া দরকার।

বিহারের রাজনীতিতে এলজেপি এককভাবে কোনোদিনই বড়ো শক্তি নয়। ২০০৫-এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ১৭৮ আসনে লড়াই করে ২৯ আসনে জয়লাভই এখনও পর্যন্ত এলজেপি-র সবথেকে ভালো রেকর্ড। ২০০৫-এর অক্টোবরের নির্বাচনে এলজেপি নেমে আসে ১০ আসনে। ২০১০-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৭৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এলজেপি পায় ৩টি আসন। ২০১৫-তে ৪২ আসনে প্রার্থী দিয়ে এলজেপি জেতে ২ আসনে। যদিও বিধানসভায় শক্তিহীন এলজেপি এনডিএ-র সহযোগী হিসেবে ২০১৪ এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এলজেপি ৬ আসনে জয়ী হয়েছে। রামবিলাস পাশোয়ানের অবর্তমানে কার্যত নখদন্তহীন এলজেপি কোন্‌ ভরসায় ১৩৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে সবথেকে বড়ো প্রশ্ন সেটাই। দেশের করোনাজনিত দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সহানুভূতির ভোটে এবার যুদ্ধজয় হবেনা। নীতীশ কুমারের যাত্রাভঙ্গ করতে নিজের নাক কতটা কাটলেন চিরাগ তা বলবে সময়। একদিকে চড়া সুরে নীতীশ কুমারের বিরোধিতা, অন্যদিকে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে এনডিএ-তে থেকে যাওয়ার পেছনে অঙ্ক অবশ্যই অন্য। এই অঙ্কের পেছনে চিরাগ পাশোয়ানের মাথা কতটা আর বিজেপি-র কৌশল কতটা সে প্রশ্ন থাকবেই। যার উত্তর পাওয়া যাবে একমাত্র ফলাফলের পরে।

এক্ষেত্রে যা যা হতে পারে তা অনেকটা এরকম। (এক) এলজেপি বিরোধিতায় জেডি(ইউ)-র ভোটে বড়োসড়ো ভাঙন ধরতে পারে। মেরেকেটেও দুই অঙ্কের আসনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা এলজেপি-র খুবই কম। কিন্তু জেডি(ইউ)-র ভোট কেটে বিরোধী প্রার্থীদের সুবিধার কারণ হতে পারে। (দুই) এলজেপি-র বিরোধিতায় জেডি(ইউ)-র আসন সংখ্যা কমে গেলে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার নীলামে উঠবে। (তিন) এলজেপি যদি নির্বাচনে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব না ফেলতে পারে সেক্ষেত্রে চিরাগ পাশোয়ানের পক্ষে দল রাখাই মুশকিল হয়ে যেতে পারে। তবে ফলাফল যাই হোক এলজেপি-র ভূমিকায় বিজেপি-র কোনো দিক থেকেই ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বরং সবথেকে লাভবান হবে বিজেপি-ই। ভরা কেনাবেচার যুগে ভবিষ্যতে ছয় এলজেপি সাংসদ সদলবলে বিজেপি-তে চলে গেলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এলজেপি নিজেও কোন্‌দিকে থাকবে তাও নির্ভর করছে নির্বাচনী ফলাফলের ওপর। অতীতেও এলজেপি-র শিবির বদলানোর ইতিহাস আছে। এবারেও নির্বাচনের পরে তারা আদৌ এনডিএ-তে থাকবেই তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে গত ১৫ বছর ধরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর রাজনৈতিকভাবে নীতীশ কুমারের জায়গা পাকা থাকলেও, বিরোধিতার জায়গাটাও ভালোই তৈরি হয়েছে। আপাতত এই রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণেই রাজ্যে তাঁর আসন টলে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। লকডাউনের সময় ১৪৪ দিন ঘরে থাকায় বিরোধীদের কড়া সমালোচনায় তিনি। লকডাউনের পর সারাদেশ থেকে প্রায় ৩৬ লক্ষ বিহারী পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে ফিরে আসে। কিন্তু সেই সময় নীতীশ কুমারের অতি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছিল। অবশেষে ৮৪ দিন পর তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ‘‘স্কিল ম্যাপিং’’ প্রকল্প ঘোষণা করেন। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই প্রকল্প থেকে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই হয়নি, বরং বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিক আবার রাজ্য ছাড়েন।

এছাড়াও রাজ্যে বাড়তে থাকা অপরাধ, নীতীশের প্রতিশ্রুতি না-রাখতে পারাও অন্যতম উদাহরণ। সৃজন কেলেঙ্কারি থেকে মুজফ্‌ফরপুর শেল্টার হোম মামলায় তাঁর সেই ভাবমূর্তি অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। যেভাবে তাঁর সরকার মহামারী, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে, বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাতে নীতীশ সরকারের অদক্ষতা ও অসংবেদনশীলতা স্পষ্ট হয়েছে। সরকারি অফিসের বড়ো কর্তারা যেভাবে ‘সুশাসন সারচার্জ’ চাপিয়ে দিয়েছিলেন তাতে দুর্নীতি আরও প্রকট হয়েছে। এর ফলে নজরদারি অভিযান, জেল খাটা এবং চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গিয়েছে। গত পাঁচ বছরে রাজ্যে গণ ছুটি নিয়েছেন নজরদারি বিভাগের পরিদর্শকরা। নীতীশ কুমারের আমলে রাজ্যে ৬০টা বড়ো দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তেজস্বী যাদব। তাঁর হিসেবে যা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। তেজস্বী জানিয়েছেন, এর মধ্যে ৩৩টার কথা পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন। এরপর সৃজন দুর্নীতি, ধান দুর্নীতি, শৌচালয় দুর্নীতি, ছাত্র বৃত্তি দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতি আছে। তিনি আরও বলেছেন, বিহারের মানুষ ভুলবেনা কীভাবে সুশীল মোদী অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে বলেছিলেন, বিহার অভিবাসী শ্রমিকদের ফেরাবে না, কারণ বিহারের কাছে যথেষ্ট সম্পদ নেই।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এক বয়স্ক মানুষের প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনডিএ-র পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতীশ কুমার। বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই হাজিপুরে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে জনতার ‘গো ব্যাক’ স্লোগানের মুখে পড়েন। বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতীয় জনতা পার্টিকে আর তাঁরা ভোট দেবেন না বলেও চিৎকার করে স্লোগান দিতে থাকেন। বিহারের শ্রমমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বিজয়কুমার সিনহা পাতনার গ্রামে জনসভা করতে গিয়ে প্রতিবাদের মুখে পড়েন। এলাকার বেহাল রাস্তাকে সামনে রেখে গ্রামবাসীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘না রাস্তা, না ভোট। গো ব্যাক গো ব্যাক’। আগের বারের প্রতিশ্রুতি অনুসারে কোনো কাজ না হওয়ায় মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে গালিগালাজও করা হয়। দু’বার প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছে সিনহাকে। জেডিইউ নেতা ও বিহারের মন্ত্রী মহেশ্বর হাজারিকেও পুসার পথে আটকে দেয় এলাকার প্রতিবাদী মানুষ। এলাকায় উন্নয়নের কাজ কেন হয়নি প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যে প্রাক্‌ নির্বাচনী সমীক্ষা করেছে তাতে জয়ী দেখানো হয়েছে এনডিএ-কে। এবিপি-সি ভোটারের ২৪ অক্টোবরের সমীক্ষা অনুযায়ী এনডিএ পাবে ১৩৫-১৫৯ আসন। মহাজোট পাবে ৭৭ থেকে ৯৮ আসন। অন্যান্যরা ৫ থেকে ১৩ আসন। ২০ অক্টোবর ইন্ডিয়া টুডে-লোকনীতির সমীক্ষা অনুসারে এনডিএ পেতে পারে ১৩৩ থেকে ১৪৩ আসন। মহাজোট ৮৮ থেকে ৯৮ আসন এবং অন্যান্যরা ৮ থেকে ১৬ আসন। ১২ অক্টোবর টাইমস নাও-সি ভোটারের সমীক্ষা অনুসারে এনডিএ পেতে পারে ১৬০ আসন এবং মহাজোট ৭৬। অন্যান্যরা ৭ আসন।

তবে প্রাক্‌ নির্বাচনী সমীক্ষা যাই বলুক না কেন - ২০২০ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মহাজোট প্রথম থেকে যে মাত্রায় সুর বেঁধে দিয়েছে তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে এনডিএ শিবিরকে। জাতপাতের রাজনীতির পরিচিত বিহারে এবার অপরিকল্পিত লকডাউনে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা, রাজ্যের অর্থনীতি, বিহারের জন্য স্পেশাল প্যাকেজ, রাজ্যের ক্রমবর্ধমান বেকারি জাতীয় বিষয়গুলো বারবার প্রতিটি জনসভায় তুলে এনেছেন মহাজোটের প্রার্থীরা। যা সামলাতে এনডিএ-র প্রচারের হাতিয়ার সেই রামমন্দির, পুলওয়ামা জঙ্গি হানা, ব্যক্তি আক্রমণ এবং অবশ্যই বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি। তেজস্বী যাদবের ১০ লক্ষ স্থায়ী চাকরির প্রতিশ্রুতির ধাক্কা সামলাতে এত চাকরি দেওয়া সম্ভব নয় বলেও পাল্টা ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি। যেখানে যেখানে মহাজোটের নির্বাচনী সভা হয়েছে তার প্রতিটি জায়গাতেই সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে। কোনো জায়গাতেই জনতা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী যাদবের দিকে পেঁয়াজ ছুঁড়ে মারেনি বা ‘পালটুরাম’ বলে টিটকিরি দেয়নি। জনসভার ভিড় যদি ভোটের দিকনির্ণয়ের ইঙ্গিত হয় তাহলে মহাজোটের জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। তা সে প্রাক্‌ নির্বাচনী সমীক্ষা যাই বলুক না কেন। যদিও শুধুমাত্র জনসভার ভিড় দিয়ে নির্বাচনী ফলাফলের আগাম সম্ভাবনার কথা বলাও ঠিক নয়। তাই আপাতত অপেক্ষা ১০ নভেম্বরের জন্য।