৬১ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ৬ অক্টোবর, ২০২৩ / ১৮ আশ্বিন, ১৪৩০
ফ্যাসিবাদী কায়দায় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের মরিয়া উদ্যোগ
বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড়
আদালতের নির্দেশে ইডি-সিবিআই’র হাতে থাকা সমস্ত দুর্নীতির তদন্তের নিরপেক্ষ স্বচ্ছ ও দ্রুত নিষ্পত্তির দাবিতে ৫ অক্টোবর
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ডাকে সিজিও কমপ্লেক্স (সল্টলেক) অভিযান।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম। উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র প্রমুখ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নজিরবিহীনভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় সাংবাদিক লেখক এবং সমাজকর্মীদের ওপর হামলা নামিয়ে আনলো মোদি-অমিত শাহর পুলিশ। দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের সরকার কেবল বিরোধীদেরই নয়, সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও হামলার শিকারে পরিণত করেছে। গত ৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার ভোররাতে দিল্লি পুলিশ প্রায় ৫৬ জন সাংবাদিক সংবাদকর্মী ও লেখকের বাড়িতে অতর্কিতে হানা দেয় এবং তাঁদের অনেককেই গ্রেপ্তার করে। নিউজক্লিক ওয়েবসাইটের সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থ এবং ওই সংবাদমাধ্যমের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধেই ইউএপিএ ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
শুধু দিল্লি নয়, এদিন ৫টি শহরের প্রায় ১০০টি জায়গায় একযোগে হানা দেওয়া হয়। নয়ডা, গুরগাঁও, গাজিয়াবাদ ছাড়াও মুম্বাইয়ে সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদের বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির দিল্লির বাড়িতে নিউজক্লিক-এর এক কর্মী থাকেন। এদিন সকালে তাঁর ঘরে তল্লাশি চালিয়েও বেশকিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ওই বাড়িতে সাধারণত সীতারাম ইয়েচুরি থাকেন না। ওখানে সারা ভারত কৃষক সভার দপ্তর। সেখানে নিউজক্লিকের যে কর্মীকে পুলিশ আটক করার জন্য যায়, তাঁর বাবা সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তরে কর্মরত। বস্তুত কারো নামে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ এই অভিযান চালায়।
এছাড়াও পুলিশ যাঁদের আটক করেছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, জনবিজ্ঞান কর্মী ডি রঘুনন্দন, ভিডিয়ো সাংবাদিক অভিসার শর্মা, ভাষা সিং, বরিষ্ঠ সাংবাদিক ঊর্মিলেশ, লেখিকা গীতা হরিহরণ, সাংবাদিক আনন্দ চক্রবর্তী, সমাজকর্মী সোহেল হাসমি, অনুরাধা রমন, সত্যম তিওয়ারি, অদিতি নিগম, সুমেধা পাল, সাংবাদিক সুবোধ ভার্মা, কার্টুনিস্ট ইরফান, কমেডিয়ান সঞ্জয় রাজাউরা প্রমুখ। জানা গেছে প্রায় ৫০০ পুলিশকর্মীকে এই অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছিল।
দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও সমাজকর্মীদের বাড়িতে এই স্বৈরাচারী কায়দায় হামলা এবং তাঁদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বামপন্থী সহ বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন গণসংগঠন। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে সাংবাদিক, কমেডিয়ান, ব্যঙ্গচিত্র শিল্পী, বিজ্ঞানী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবিদ এবং বিশ্লেষকদের বাড়িতে দিল্লি পুলিশের তল্লাশি অভিযানের তীব্র নিন্দা করে বলেছে, দানবীয় ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা এফআইআর-এর ভিত্তিতে এই অভিযান চালায় দিল্লি পুলিশ। পলিট ব্যুরো বিবৃতিতে বলেছে, এই ঘটনা সংবাদমাধ্যম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারের ওপর নির্লজ্জ এক হামলা। গত ৯ বছর ধরে মোদি সরকার তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে বিবিসি, নিউজ লন্ড্রি, দৈনিক ভাস্কর, ভারত সমাচার, দ্য কাশ্মীরওয়ালা, দ্য ওয়ার’র মতো বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে দমিয়ে রাখা, হেনস্তা এবং ভয় দেখানো চালিয়ে যাচ্ছে। এবার ‘নিউজক্লিক’-এর সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক-কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলো যে সমস্ত সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিক সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে ভয় পান না, তাঁদের উপরই ব্যাপক মাত্রায় কর্তৃত্ববাদী হামলা চালানো হচ্ছে, যা অবাঞ্ছিত।
সমাজের বিবেক রক্ষাকারী হিসাবে চিহ্নিত সংবাদমাধ্যমকে দমন, নিশানা এবং আইনি জালে বেঁধে ফেলার পরিকল্পিত চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয়, দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র তরফ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে ইচ্ছাকৃতভাবে আইনি জালে ফাঁসানো এবং দমনের চেষ্টা ৯ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে মোদি সরকার। বলা হয়েছে, ধান্দার পুঁজিপতিদের দিয়ে সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠীকে কিনিয়ে তাদেরকে বিভাজনের রাজনীতি এবং নিজেদের মতাদর্শ প্রচারের মুখপত্রে পরিণত করছে মোদি সরকার। নির্ভীক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সরকার এবং তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী সংগঠনগুলি প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই সঙ্গে সংবাদমাধ্যম যাতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরতে না পারে, সেইজন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মতো দমনমূলক আইন এনেছে বিজেপি সরকার। এসব করেই বিজেপি সরকার নিজেদের ভুল-ত্রুটি, পাপ জনগণের থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এক অভিজ্ঞ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গেও আপোশ করছে এই সরকার। অথচ যে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক বিদ্বেষ এবং বিভাজনের বিষ ছড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পঙ্গু হয়ে যায় মোদি সরকার। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ বন্ধ করে দেশ তথা মানুষের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে মোদি সরকারকে মাথা ঘামানোর পরামর্শ দিয়েছে ‘ইন্ডিয়া’।
গত ৩ অক্টোবর ভোর থেকেই একের পর এক সাংবাদিক, লেখকের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশের শীর্ষস্তরের সাংবাদিকরা। মূলত ‘নিউজক্লিক’ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত, সেখানে যাঁদের লেখা প্রকাশিত হয়, এমন সাংবাদিকদেরই দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যায়। ওই ওয়েবসাইটের কয়েকজন কর্মীর বাড়িতেও পুলিশ তল্লাশি চালায়। প্রবীর পুরকায়স্থ এবং অমিত চক্রবর্তী ছাড়া সবাইকে রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘নিউজক্লিক’ দপ্তরে পুলিশ তালা লাগিয়ে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রবীর পুরকায়স্থ শুধুই সাংবাদিক নন, দেশের জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সামনের সারির সংগঠক। জরুরি অবস্থার পুরো সময়কালে তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ধৃত অমিত চক্রবর্তী মূলত নিউজক্লিকের প্রশাসনিক দিক দেখাশোনা করেন। শারীরিকভাবে তিনি প্রতিবন্ধী। তাঁর বিরুদ্ধেও ইউএপিএ ধারা দেওয়া হয়েছে। প্রমাণ ও বিচার ছাড়াই আটক করে রাখা যায় এই আইনে।
‘নিউজক্লিক’-এর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রতি চরম অশ্রদ্ধ দেখানো সহ ‘নিউজক্লিকের সাথে যুক্ত সাংবাদিকদের দেশবিরোধী তকমা দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
‘নিউজক্লিক’ বলেছে, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা আছে এবং ভারতের সংবিধান অনুযায়ী তারা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও তাদের জীবনের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।
জানা গেছে এবছরের ১৭ আগস্ট দায়ের হওয়া একটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে এই অভিযান। ধর্ম-ভাষার ভিত্তিতে সম্প্রীতি নষ্ট করা, ষড়যন্ত্রের অভিযোগের সঙ্গে ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে যোগাযোগ’র মতো ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাঁদের ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ - তিনভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। ২৫টি পূর্ব-নির্ধারিত প্রশ্ন করা হয়েছে তাঁদের। এই প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে বিদেশে কাউকে ফোন করেছিলেন কিনা, কৃষক আন্দোলনের প্রতিবেদন লিখেছিলেন কিনা,শাহিনবাগ এবং নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে কিছু লিখেছিলেন কিনা ইত্যাদি।
কিন্তু পুলিশ এবং বিজেপি অন্য অভিযোগ সামনে নিয়ে আসে। এই বছরের আগস্টেই নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিনি এক বিনিয়োগকারী ভারতের কিছু সংবাদ সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে। আসলে সেই টাকা চীনের। চীনের হয়ে প্রচার করার জন্য এই টাকা দেওয়া হয়েছে এবং এই টাকায় নাকি ভারত-বিরোধী প্রচার চালানো হয়েছে। ‘নিউজক্লিক’কে এই প্রতিবেদনের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পুলিশ ‘চীনের টাকা’র তত্ত্ব সামনে আনছে। বিজেপি’র সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলেও এই অভিযোগ আনা হয়েছে। তার সঙ্গে আবার জুড়ে দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসকেও। অথচ ‘নিউজক্লিক’-এর নিয়মিত পাঠকরা জানেন ওই ‘ওয়েবসাইটে’ ‘চীনের হয়ে সওয়াল করা’ হয় না। সম্প্রীতির পক্ষে ও ঘৃণ্য ভাষণের বিরুদ্ধে ওই ওয়েবসাইটে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আদানি-আম্বানি গোষ্ঠীর ধান্দার কারবারের বহু তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে। ‘নিউজক্লিক’-এর বিরুদ্ধে ২০২১ সালেও অভিযান চালানো হয়েছিল। ইডি এবং আয়কর দপ্তর সেই অভিযান চালিয়েছিল। আদালতে মামলা চললেও, এখনও পর্যন্ত কোনো বেনিয়মের অভিযোগই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই নতুন করে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। বিশেষ করে বামপন্থা অভিমুখী সাংবাদিক ও লেখকদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
এদিন সকালে প্রায় ১৫ জন পুলিশ প্রবীর পুরকায়স্থের বাড়িতে হানা দেয়। তাঁর সঙ্গী লেখিকা গীতা হরিহরণের সমস্ত ইলেট্রনিক যন্ত্র তারা বাজেয়াপ্ত করে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এদিন এই বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময়ে কোনো সার্চ ওয়ারেন্ট এবং এফআইআর-এর কপিও পুলিশ দেখাতে পারেনি। এছাড়া কী নেওয়া হলো তার কোনো কাগজ বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় হ্যাশ ভ্যালু তাঁদের দেওয়া হয়নি। বাড়িতেই দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে প্রবীর পুরকায়স্থকে লোদি রোডে দিল্লি পুলিশের দপ্তরে নিজে যাওয়া হয়। পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার গুরগাঁওয়ের বাড়ি থেকে সকালে পুলিশ তুলে আনে। সন্ধ্যার পর তাঁকে আপাতত ছেড়ে দেওয়া হয়।
এডিটর্স গিল্ড সহ প্রায় সমস্ত সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অভিযানকে গণতন্ত্র ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরে আক্রমণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে কংগ্রেস দল। কংগ্রেস মনে করে, বিহার সরকারের জাত-ভিত্তিক গণনায় বিস্ফোরক তথ্য সামনে চলে আসায় তার থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই এদিন ভোর থেকে হানা দেওয়া হয় ‘নিউজক্লিক’র সাংবাদিকদের বাড়ি, আটক এবং গ্রেপ্তার করা হয় রাতে।
এছাড়াও পিডিপি, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই, আপ, সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকেও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
একইভাবে নির্ভীক সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দায় সরব হয়েছে সিআইটিইউ, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এবং এসএফআই। সংযুক্ত কিষান মোর্চার পক্ষ থেকেও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
নিইজক্লিক ওয়েবসাইটের সম্পাদক, সাংবাদিক সহ অন্যান্য সাংবাদিক ও সমাজকর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে ৪ অক্টোবর সোচ্চার হন দেশের ১৬টি মিডিয়া সংগঠন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন গণসংগঠন। এদিন বিকালে দিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া দপ্তরের প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিক্ষোভ সভায় বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন অংশের মানুষ অংশ নেন। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের উদ্দেশ্যে এই পুলিশি হানা রুখতে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচুড়কে মিডিয়া সংগঠনের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ নাকভি, এইচ কে দুয়া, লেখিকা অরুন্ধতি রায়, রামচন্দ্র গুহ, মুকুল কেশবন, সিদ্ধার্থ বরদারাজন, স্নেহাশিস শূর, রাজেন্দ্র শর্মা, উমিলেশ, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ প্রমুখ। এদিন প্রেম ক্লাবের বাইরে পুলিশ সভা করতে না দিলেও যন্তরমন্তরে একটি পৃথক বিক্ষোভ সভায় অংশ নেন ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
৫ অক্টোবর কলকাতায় প্রেস ক্লাব কলকাতা, ক্যালকাটা জার্নালিস্ট ক্লাব সহ সমস্ত অংশের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের এক প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়। এছাড়া দিল্লি পুলিশের স্বৈরাচারী ও বর্বোরোচিত হামলার প্রতিবাদে আগামী ৭ অক্টোবর আকাদেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে রানুচ্ছায়া মঞ্চে নাগরিক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, এআইসিসিটিইউ, ইউটিইউসি, টিইউসিসি, এইচএমএম এবং ১২ জুলাই কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ঘটনা একদিকে মোদি সরকারের বিপর্যয়ের নীতির বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করার নির্লজ্জ প্রয়াস এবং অন্যদিকে গোদি মিডিয়া দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিষ ও ঘৃণা ছড়ানোর প্রচেষ্টা। এদিকে দিল্লির ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন দেশের বিশিষ্ট লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ এবং ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গও এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।