E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১৪ ভাদ্র, ১৪৩০

পার্টি ও গণসংগঠনের সম্পর্কে মৌলিক ধারণা ও তার বাস্তবায়ন (প্রথম পর্ব)

নৃপেন চৌধুরী


গণফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা

পার্টির প্রয়োজনীয়তা, পার্টি ও গণসংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়গুলি বুঝতে গেলে যে প্রশ্নগুলির সম্যক উপলব্ধি প্রয়োজন তা হচ্ছে -

১) পার্টির গণ সংগঠনগুলির মাধ্যমে কাজ করার প্রয়োজন কেন? অর্থাৎ গণসংগঠনের প্রয়োজনীয়তা।
২) গণ সংগঠনের চরিত্র কী হবে? গণসংগঠনের ক্ষেত্রে পার্টির পরিচালন ভূমিকা কেমনভাবে সম্পন্ন করতে হবে? গণসংগঠনের অভ্যন্তরে যে সমস্ত পার্টিসভ্য কাজ করেন তাদের কাজের ধরন কেমন হওয়া উচিত (স্টাইল অব ফাংশনিং)?

পার্টির গণসংগঠনগুলি পরিচালনা সম্পর্কে ক্ষতিকারক ঝোঁকগুলি কী যা গণসংগঠন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই প্রশ্নগুলির সমাধানসূত্র সঠিক উপলব্ধির জন্যে এই সম্পর্কে গৃহীত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ১৯৮১ ও ২০০৪ সালে যথাক্রমে ‘গণসংগঠন প্রসঙ্গে’ও ‘গণসংগঠনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে,’ দুটি দলিলের মর্মবস্তু উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন পার্টি কংগ্রেসের ২৩ তম কংগ্রেস সহ এবং সালকিয়া ও কলকাতা প্লেনামে গণসংগঠন সম্পর্কে যে পর্যালোচনা হয়েছে তার সারমর্মকে ভিত্তি করেই গণসংগঠনের কাজকে পার্টির সর্বস্তরে আন্তরিক, সংগঠিত ও ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করা উচিত। না হলে পার্টির গণসংগঠনগুলি গড়ে তোলার বৈপ্লবিক উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমান রাজনৈতিক ও আদর্শগত সংগ্রামের প্রেক্ষিতে গণসংগঠনগুলির কাজের গুরুত্ব অপরিসীম।

আমাদের পার্টির বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শ্রেণি ও গণসংগঠন গড়ে তোলা এবং প্রসারিত করার প্রয়োজন কেন? “গণসংগঠনগুলির প্রয়োজন রয়েছে, কারণ বিপ্লব, ক্ষমতা দখল ইত্যাদি মৌলিক পরিবর্তন সম্পর্কে পার্টির প্রত্যক্ষ েস্লাগানগুলি তাড়াতাড়ি জনগণকে জাগ্রত করতে সক্ষম নয়। ব্যাপক জনসাধারণ এমনসব আংশিক বা জরুরি দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে দ্রুত আকৃষ্ট হয়, যা সমাজ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ব্যতিরেকেই আদায় করা সম্ভব। এসব সংগ্রামে অর্জিত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা পার্টির পরিচালনায় জনগণের সচেতনতাকে শিক্ষিত করা হয় এবং তা পরিচালনা করা হয় বিপ্লবী পথে। জনগণের মধ্যে গণসংগঠনগুলির কাজকর্মের সঙ্গে এ-ব্যাপারে পার্টির কাজকর্ম চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। এটা হলে জনগণের সঙ্গে যে যোগাযোগ তা ভেঙে যাবে। গণসংগঠনগুলি পরিচালনায় এটাই হচ্ছে চিরায়ত নিয়ম। গণসংগঠন নিজেই যদি পার্টির মুখপাত্রের বিকল্প ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তবে তা ক্ষতিকর পরিণতির দিকে যেতে বাধ্য।”

তাহলে গণসংগঠনের মধ্য দিয়ে পার্টির লক্ষ্যকে পূরণ করতে হলে সংগঠনগুলি যত ব্যাপক হবে তাদের উপর পার্টির প্রভাব বাড়াতেও সহায়ক হবে। তাই “গণসংগঠনগুলির কাজকর্ম এবং তাদের মধ্যে পার্টির অংশগ্রহণ পার্টি নেতৃত্ব এবং সংগঠনের মধ্যে যেসব পার্টি কর্মী কাজ করেন তাদের গণসংগঠনগুলির কাজকর্ম হাজার হাজার শোষিত মানুষ যারা রাজনীতির এবং বিপ্লবের কথা বোঝে না তাদের মধ্যেও প্রসারিত করতে হবে এবং তা করা সম্ভব, কারণ গণসংগঠনগুলির গণচরিত্রের ও অ-রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে লক্ষ লক্ষ শোষিত মানুষের মধ্যে কাজ করা সম্ভব হয় যারা পার্টির রাজনীতির আঙিনা থেকে তাদের প্রাথমিক অর্থনৈতিক চেতনা নিয়ে অবস্থান করছে। শুধুমাত্র পার্টির আওতার মধ্যে আছেন বা পার্টিকে সমর্থন করেন তাদের মধ্যেই গণসংগঠনের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। যদি এই ধরনের মানসিকতা থাকে তা সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট হবে এবং গণসংগঠনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে পার্টির প্রভাব বৃদ্ধির অন্তরায় হবে। এক কথায় গণসংগঠন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।

গণফ্রন্টের কার্যধারা

ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পার্টির অভ্যন্তর থেকে অনেক সময় এমন মন্তব্য করা হয় যে, প্রাথমিক এত সভ্য করে কী হবে? যারা সভ্য হয় তারা আমাদের পার্টির রাজনীতিকে সমর্থন করে না এই যুক্তি দেখানো হয়। এই যুক্তিও সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট। কারণ গণসগঠন প্রসারিত করার প্রাথমিক শর্ত এতে লঙ্ঘন হয়। সুতরাং গণসংগঠনের কাজকে বিস্তৃত করতে হবে সেই সংগঠনের সভ্য সংগ্রহের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটাতে হবে। গণসংগঠনের সভ্য সংগ্রহের বৃদ্ধির মধ্য দিয়েই একদিকে যেমন অরাজনৈতিক শোষিত অংশের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটবে তেমনই তাদের জীবন্ত ও আদায়যোগ্য দাবিগুলিকে আদায়ের সংগ্রামে যুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে পার্টি সদস্য যারা এই সংগঠনে কাজ করেন তাদের সামনে লড়াইয়ের ময়দান থেকে নতুন নতুন শোষিত মানুষকে পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার দরজা বেশি বেশি করে বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখতে হবে গণসংগঠনগুলি জনসাধারণের যে অংশকে সংগঠিত করে তাদের প্রাথমিক চেতনার উপর ভিত্তি করে এবং তেমনই এর মাধ্যমে পার্টির কাজকর্মের সঙ্গে পশ্চাদপদ জনগণের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ বজায় রাখে অর্থাৎ সংগঠনের দিকে জনগণের পশ্চাদপদ অংশগুলির প্রবাহ বন্ধ না করা ছাড়াই সংশ্লিষ্ট অংশগুলির সচেতনতা ক্রমাগত বৃদ্ধিতেই পার্টির পরিচালন ভূমিকা নিহিত। নতুবা সংগঠন শুধুমাত্র পার্টির কাছাকাছির জঙ্গি কর্মীদের সংগঠনে পরিণত হবে এবং সংখ্যাশক্তি থাকা সত্ত্বেও তা মূল জনমত থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ও তাদের সক্রিয় করতে সক্ষম হবে না”। প্রতি বৎসর গণসংগঠনগুলিকে সভ্য সংগ্রহ করতে হয়। নূতন নূতন সভ্য যেমন করতে হয় তেমনই পুরাতন সদস্যের পুনর্নবীকরণ করতে হয়। গণসংগঠনগুলির ক্ষেত্রে এই কাজটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই পড়ে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবং গণসংগঠনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার ক্ষেত্রে পার্টির গণসংগঠনের স্বাভাবিক কাজের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। সংগঠনের সভ্য সংগ্রহ, নিজ উদ্যোগে জনসভা, মিছিল, নীতি মেনে বক্তা নির্বাচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে পার্টির হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ এই হস্তক্ষেপ সংগঠনের স্বাধীন চরিত্র ও গণসংগঠনের গণতান্ত্রিক কাজকর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাস্তব ক্ষেত্রে প্রায়শই এই ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে গণসংগঠনের চরিত্র অবশ্যই হতে হবে পার্টি বহির্ভূত সংগঠন। বাড়ি বাড়ি থেকে সভ্য সংগ্রহ, প্রাথমিক সভ্যদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের প্রাথমিক চেতনার উপর ভিত্তি করে সংগঠনের গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার সংগ্রামে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা সংগঠনের পরিচালনমণ্ডলীকে করতে হবে। অবশ্যই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এই কাজের সীমাবদ্ধতা এবং কিছু অবাঞ্ছিত ঝোঁক দূরীভূত করার চেষ্টা পার্টিকে অবশ্যই করতে হবে। তবে তা করতে হবে বিভিন্ন স্তরের পার্টি সাব-কমিটি/ফ্রাকশন/পার্টি টিম বসে বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনার ভিত্তিতে সেই স্তরের দুর্বলতা এবং ঝোঁকগুলি পরিহার করার জন্য সেই স্তরের পার্টি সদস্য যারা সংগঠনের কাজ করছেন তাদের অবাঞ্ছিত ঝোঁক সম্পর্কিত দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে তোলার জন্য পরামর্শ দেবেন এবং গণসংগঠনের কমিটিগুলিকে পরামর্শের পক্ষে নিয়ে এসে গণতান্ত্রিক পথেই কমিটির সাহায্যেই সেই দুর্বলতাগুলি কাটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করার পদ্ধতি অবলম্বন ধারাবাহিকভাবে গ্রহণ করা উচিত। তাহলে গণসংগঠনগুলির কমিটির চেতনা ও সক্রিয়তা বৃদ্ধির সহায়ক হবে।

পার্টি ও গণফ্রন্টের সম্পর্ক

পার্টি ও গণসংগঠনের মধ্যে সঠিক সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কেন? গণসংগঠনগুলি ব্যাপক ভিত্তিতে গড়ে তোলার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ১৯৮১ এবং ২০০৪ সালের গণসংগঠন সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির দলিলে আলোচিত হয়েছে, তার মূল বিষয় ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। গণসংগঠনগুলির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রেখেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তা পরিচালিত হবে। আবার গণসংগঠনগুলি স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হলেও তাদের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্যের অধীনে কাজ করতে হবে। পার্টির পরিচালন ভূমিকা অবশ্যই থাকতে হবে, গণসংগঠনের পার্টি বহির্ভূত গণচরিত্র বজায় রেখে। গণসংগঠনগুলি যত ব্যাপক হবে তাদের উপর আমাদের প্রভাবও তত ব্যাপক হবে। এই প্রভাব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংগ্রামের “স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের জন্য নয়, তা হবে কমরেডদের প্রভাবিত করার সমাজতন্ত্রী ট্রেড ইউনিয়নের কর্মীদের সরাসরি সচেতন প্রচেষ্টার ফলেই” অর্থাৎ অামাদের গণসংগঠনগুলিতে যে সমস্ত পার্টি সদস্য কাজ করেন তাদের লেনিনের এই বক্তব্যের মর্মার্থ উপলব্ধি করেই গণসংগঠনের অভ্যন্তরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। পার্টির পরিচালনা করার অর্থ আদেশ করা, নিয়ন্ত্রণ করা কিংবা কার্যকরী কমিটি বানিয়ে দেওয়া নয় পার্টির সঙ্গে যাদের মতপার্থক্য আছে এমন পার্টি বহির্ভূত (নন পার্টি) সদস্যদের কাছে আস্থা অর্জন করা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে গণসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্টির অভ্যন্তরে যে সমস্ত পার্টি সদস্য কাজ করছেন গণসংগঠন পরিচালনার বিষয়ে তারা মৌলিক নির্দেশ সম্যক উপলব্ধি করে তা গণসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারছেন? বাস্তব অভিজ্ঞতায় বলা যায় সঠিকভাবে তা হচ্ছে না। গণসংগঠনসমূহের সঙ্গে পার্টির সম্পর্কের প্রশ্নটি সর্বভারতীয় মহিলা সংগঠন ও যুব সংগঠন গঠনের সময় আলোচনাকালে উত্থাপিত হয়। গণসংগঠন ও পার্টির মৌলিক সম্পর্ক বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। সেইসময় কারো কারো মত ছিল গণসংগঠনগুলিকে কার্যত পার্টির প্রতিমূর্তি হতে হবে। পার্টির মৌল স্লোগানকেই গণসংগঠনের স্লোগানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাদের মত ছিল গণসংগঠন হচ্ছে কেবল পার্টির একটি প্লাটফর্ম এবং এর পৃথক অস্তিত্ব খুব কমই আছে। ১৯৮১ সালের কেন্দ্রীয় কমিটির দলিল এই ধারণাকে নস্যাৎ করেছিল। এইসব ধারণা ত্রুটিপূর্ণ ও ভ্রান্ত এবং বিপ্লবী সংগ্রামে গণসংগঠনগুলির ভূমিকা সম্পর্কে পার্টির দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী। ১৯৭৮ সালের সালকিয়া প্লেনামও গণসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে পার্টির মধ্যে দু’ধরনের ঝোঁকের উল্লেখ করেছে। প্রথমত, গণসংগঠনগুলি পার্টির প্রতিমূর্তি হিসাবে দেখার ও পরিচালনার ঝোঁক, দ্বিতীয়ত স্বতন্ত্র সংগঠনের অজুহাতে পার্টিকে এড়িয়ে চলার ঝোঁক। প্লেনামে এই ঝোঁকই গণসংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যকে গুরুতরভাব ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এই মর্মে পর্যালোচনা হয়েছিল। পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির দ্বারা এবং গণসংগঠনের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র পরিচালিত হয় গণসংগঠনের নিজস্ব গঠনতন্ত্র এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর দ্বারা। আবার সংগঠনের অভ্যন্তরে যে সমস্ত পার্টি সদস্য কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে পার্টির নীতির দ্বারা যে বন্ধনী তার মধ্য থেকেই কাজ করতে হবে। তাই পার্টির পরিচালনা এবং গণসংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য না মানলে গণসংগঠন গড়ে তোলা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক ঝোঁক দেখা দেবে। যারা সংগঠনকে স্বাধীন সংগঠন হিসাবে মনে করবেন তারা গণসংগঠনকে গড়ে তোলার বৈপ্লবিক উদ্দেশ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবেন।

স্বতঃস্ফূর্তভাবে অর্থনৈতিক সংগ্রাম উন্নত চেতনার জন্ম দেয় না। পার্টি সদস্যদের যারা পার্টি সিদ্ধান্ত মতো গণসংগঠনের মধ্যে কাজ করেন তাদের সচেতন প্রচেষ্টার মধ্যেই তা করা সম্ভব। গণসংগঠনের কাজের মধ্য দিয়েই তারা পার্টিতে নূতন পার্টি সদস্যকে নিয়ে আসেন। নূতন নূতন সদস্য কতগুলি সেই ফ্রন্ট যুক্ত করতে পারল সেই বিষয়টিও পার্টি সদস্য যারা সংশ্লিষ্ট গণসংগঠনে কাজ করেন ও সাব-কমিটি/ফ্রাকশন কমিটি কাজের পর্যালোচনার মধ্যে পড়ে। তার অর্থ হচ্ছে গণসংগঠনের নেতৃত্বে বড়ো বড়ো জমায়েত ও গণআন্দোলন এবং বিভিন্ন সংগ্রামে সংগঠিত হলেই শুধু হবে না সেই সংগঠন পরিচালনায় যে সমস্ত পার্টি সদস্য ও নেতৃত্ব রয়েছেন এই সংগ্রামগুলির মধ্য দিয়ে কতগুলি কর্মীকে রাজনৈতিক চেতনায় উন্নীত করে পার্টির অভ্যন্তরে যুক্ত করতে পারলেন সেই বিষয়টিও পর্যালোচনায় আনা দরকার। এই বিষয়টি পার্টির কোনো স্তরেই আলোচনায় খুব একটা গুরুত্ব পায় না।

গণসংগঠনের কমিটিগুলিতে পার্টির নেতৃত্ব ও পার্টির সদস্যদের প্রাধান্যের ফলে সাধারণ মানুষ অনেক সময়ই পার্টি ও গণসংগঠনের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করতে পারেন না। ফলে, পার্টির রাজনীতির বাইরে যারা রয়েছে তারা গণসংগঠনে আসার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। গণসংগঠনের স্বরূপ সম্পর্কে জনমানসে পার্টিরই প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে এবং তার ব্যাপ্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকসময় গণসংগঠনের কাজের অভিজ্ঞতাই নেই এবং গণসংগঠনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন কমরেডকে সেই সংগঠনের শুধুমাত্র পার্টির দায়িত্বপূর্ণ কমরেড হিসাবে নেতৃত্বে বসিয়ে দিলে গণসংগঠন পরিচালনায় কোনো লাভ হয় না ৷ এই ঝোঁক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিজাত নয়। গণসংগঠনে কাজ করার মধ্য দিয়ে পার্টিতে নেতৃত্বদায়ী অথবা পার্টি সদস্য গণসংগঠনের নেতৃত্বে আসা স্বাভাবিক। আসল বিষয় হচ্ছে তারা সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন কিনা।

গণসংগঠনের সভাগুলি যাতে জনমানসে গণসংগঠনেরই সভা হিসেবেই পরিগণিত হয় সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। পার্টির পরিচিত নেতৃত্ব যাঁদের কখনোই ওই গণসংগঠনের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না, তাঁদের সেইসব সভার বক্তা হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত না থাকাই বাঞ্ছনীয়। পার্টির মিছিলে সমাবেশে গণসংগঠনের পতাকা অথবা গণসংগঠনের কর্মসূচিতে পার্টির ঝান্ডার ব্যবহার একদমই পরিহার করা দরকার। গণসংগঠ‍‌নের পৃথক অস্তিত্ব, তাদের নেতৃত্ব স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করার সচেতন উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন, যা শেষ পর্যন্ত পার্টিকে উন্নতমানের কর্মী ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব পেতে সাহায্য করবে। পার্টির বৃত্তের বাইরে বৃহত্তর জনগণের একটা বড়ো অংশের মধ্যে গণসংগঠনের প্রসার ঘটাতে তাদের পৃথক অস্তিত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে যে বাধা, অসঙ্গতি, দুর্বলতা আছে পার্টিকে তা সচেতন ভাবেই পরিহার ক‍‌রে চলতে হবে।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)