৬১ বর্ষ ৪ সংখ্যা / ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ১৪ ভাদ্র, ১৪৩০
আপ সমঝোতা কা ‘ক্রোনোলজি সমঝ লিজিয়ে’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথমে ভেবেছিলাম কপালকুণ্ডলার ‘পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?’ দিয়েই শুরু করি। তারপরেই মনে পড়লো চার বছর আগে, ২০১৯ সালে মাহেশের রথের মেলায় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ - ‘এই মাহেশের রথেই হারিয়ে গেছিল কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে।... বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে কপালকুণ্ডলা উপন্যাস লিখেছিলেন তাতে রাধারানি হারিয়ে গেছিল এই মাহেশের রথযাত্রায় এসেই। অনেক ইতিহাস।’ সময়টা যেহেতু খুব একটা ভালো নয়, দেশ জুড়ে, রাজ্য জুড়ে ইতিহাস, উপন্যাস, পুরাণ, সাহিত্যের জগাখিচুড়ি রান্না চলছে সর্বক্ষণ, তাই নবকুমারের পথ হারিয়ে ফেলার কাহিনি সযত্নে বাদ দেওয়া গেল। বেকার বেকার বঙ্কিম চাটুজ্যেকে নিয়ে টানাটানি করে কমলাকান্ত হয়ে লাভ নেই। তবে নবকুমারেরা যেহেতু যুগে যুগেই আগুপিছু না ভেবেই কাঠ কাঠতে এগিয়ে যান, তাই কাঠ কাটার কাজ বরং চলুক। পথ হারালে নতুন পথের সন্ধান করা যাবে। তা অনেক বেশি বিজ্ঞান ও বাস্তবসম্মত।
শুধুমুধু রাধারানি বনাম কপালকুণ্ডলার দ্বন্দ্বে না ঢুকে কী নিয়ে লেখাটা এগোনো যায় ভাবতে ভাবতেই এবার নজরে পড়লো গিরগিটির ছবি। স্থলবাসী সরীসৃপ। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুসারে রঙ বদলাতে ওস্তাদ। বিজ্ঞানের ছাত্র নই। তাই বিষয়টা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় একটু এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে জানতে পারলাম গিরগিটির বাইরের স্বচ্ছ চামড়ার স্তরের নিচেই থাকে ক্রোমাটোফোর কোষের স্তর। তারও নিচে থাকে মেলানোফোর এবং ইরিডোফোর কোষ। এসবের মাধ্যমেই নাকি গিরগিটি রং বদলাতে পারে দ্রুত। আত্মরক্ষা এবং শিকার ধরার কাজ ছাড়াও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম হিসেবেও নাকি গিরগিটি রং বদল করে। সত্যিই এই পৃথিবীতে ‘কত কিছু জানিবারও আছে, কত কিছু বুঝিবারও আছে’। তার জন্য আমার ছোট্ট ভাগনার ভাষায় ‘লেখিব্রিটি’ হবার প্রয়োজন পড়ে না।
‘গিরগিটির মতই শত্রুকে মিত্র বানিয়ে এগোই স্ট্রাগল করে করে...’ - এটা কবি ফল্গু বসুর ‘গিরগিটি’ কবিতার একটা লাইন। প্রবল টানাপোড়েনে শত্রু মিত্র এখন সবই কেমন গুলিয়েছে। আজকের শত্রু, কালকের মিত্র। কালকের মিত্র, পরশুর শত্রু। বিষয়গুলো বেশ কিছুদিন ধরে এভাবেই চলছে বেশ। গেছোদাদা স্টাইলে কে কখন কোথায় ছিলেন, কোথায় আছেন, কাল কোথায় থাকবেন বলা মুশকিল। দল, শিবির, মত, পথ, আদর্শ, বোধ - সবই এখন এতটাই খোলামকুচি যে, পালটে ফেলা যায় যখন তখন। সকালের লাল পাঞ্জাবি বিকেলে গেরুয়া হয়ে রাতে সবুজ। টিকে থাকার লড়াই কখন যে বদলে গিয়ে দু-হাত ভরে কামাই হয়ে যায় বুঝতে পারা যায় না। মাঝখান থেকে ডিকশনারির পাতায় ‘স্ট্রাগল’ শব্দটা দাঁত বের করে বিচ্ছিরি রকমের হাসতেই থাকে। আর সত্যিকারের লড়ে যাওয়া, লড়বার ইচ্ছে বুকে নিয়ে রাস্তা হাঁটা মানুষগুলো দিনভর বদলাবদলি আর এই শিবির বনাম ওই শিবিরের বাইনারি শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে ক্লান্তির গ্রাসে আটকা পড়ে নিজেদের একটা বড়ো শূন্য ভাবতে শুরু করে। ঝাঁ চকচকে হাতছানিতে কানাগলি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানোর রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে যায়। শত্রু মিত্র গুলিয়ে যায়। তলায় তলায় কানামাছি খেলে যাওয়াদের মাঝে পড়ে চোখে সবসময়েই ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ’ হয়ে পট্টি বাঁধা। ‘যাকে পাবি তাঁকে ছোঁ’ হয়েও হয়ে ওঠে না। সবই ধরাছোঁয়ার বাইরে হয়ে যায়।
কিছুদিন হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা খেলা বেরিয়েছে। ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে। ৭৫ শতাংশ চোখ বন্ধ করে ছবিটা দেখুন। আপাতদৃষ্টিতে কিছু মনে না হলেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে খেলাচ্ছলে আপনার দৃষ্টিশক্তির মাত্র ২৫ শতাংশ খুলিয়ে রাখবার চেষ্টা শুরু করেছে তা বুঝতে হয়তো আরও একটু সময় লাগবে। তবে এখন যে ছবির কথা বলব তা দেখতে হলে ৭৫ শতাংশ বন্ধ রাখলে হবে না। পুরো চোখ এবং কান খুলে দেখতে এবং শুনতে হবে।
এটা ২০০৬-এর ছবি। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তখন ধর্মতলায় টাটা তাড়ানোর অনশনে। শিল্প তাড়ানোর অনশন মঞ্চে সমর্থন জানাতে ২৫ ডিসেম্বর সেই মঞ্চে এলেন বিজেপি'র তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং। তার আগে দফায় দফায় ঘর এবং রং পালটানোর খেলা চলেছে তৃণমূলের। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বিজেপি। ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস। আবার ওই বছরেই কলকাতা করপোরেশন নির্বাচনে বিজেপি। ২০০৪ এবং ২০০৬-এর লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি। ২০০৯ এবং ২০১১-র দুই নির্বাচনে কংগ্রেস এবং ২০১২-র সেপ্টেম্বর থেকে আই ওয়াশের 'একলা চলো’।
এর মাঝে ২০০৩-এর সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে এক বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে একগুচ্ছ প্রথম সারির আরএসএস নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর সুপ্রিমোর বিখ্যাত উক্তি - “একসঙ্গে এতজন আরএসএস নেতার সঙ্গে আমি আগে বৈঠক করিনি, তবে ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজনের সাথে দেখা করেছি।” আর সেদিনই তিনি বলেছিলেন, “আপনারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক।” এইচ ভি শেষাদ্রি, মোহন ভাগবত, মদন দাস দেবীর উপস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছিলেন, “আপনারা যদি আমাদের মাত্র ১ শতাংশ সমর্থন দেন তাহলে আমরা এই লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব।” “কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে আপনাদের লড়াইতে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।” ১৫.৯.২০০৩-এই দ্য টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনের হেডিং ছিল ‘Appeased RSS calls Mamata Durga’. যে বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে এত কথা হয়েছিল সেই বই-এর নাম ছিল ‘কমিউনিস্ট টেররিসম’। এবং সবশেষে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দিয়েছিলেন বিজেপি'র রাজ্যসভা সাংসদ বলবীর পুঞ্জ - ‘হামারি পেয়ারি মমতাদিদি, সাক্ষাৎ দুর্গা’।
বামেদের করা লাগাতার অভিযোগে আপনি পাত্তা না দিতেই পারেন। রুটি কাপড় বাসস্থানের লড়াই ভুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৭৫শতাংশ-২৫শতাংশ চোখ বন্ধ করে ছবি দেখার খেলা খেলতেই পারেন। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি'র গোপন আঁতাত আছে কী নেই তা নিয়ে এখন বোধহয় আর বিতর্ক না করাই ভালো। কারণ ঘটনা পরম্পরা বারবার প্রমাণ করেছে যে যোগাযোগ আছে এবং ‘পোবোল’ভাবেই আছে। তৃণমূলকে বিপদ থেকে বাঁচাতে বিজেপি-আরএসএস-এর আকুতি, ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়া এত ঘন ঘন সামনে এসে যাচ্ছে যে ঝুলি থেকে বারবার বেড়াল বেরিয়ে পড়ছে। শাক দিয়ে মাছ আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে কোমরে দড়ি পরিয়ে ঘোরানোর সুপ্রিমো হুঙ্কার বা বিস্মৃতিতে চলে যাওয়া সিদ্ধার্থ নাথ সিং-এর ‘ভাগ মুকুল ভাগ’-এর হুঙ্কার আসলে যে একই গেমপ্ল্যানের অংশ তা ক্রমশ ক্রমশ আরও প্রকাশ্য হবে।
যেমন ধরুন, ২০০৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর-এর কথা। আরএসএস-এর পশ্চিমবঙ্গীয় মুখপত্র স্বস্তিকা’র দ্বিতীয় পাতায় এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল - “সিঙ্গুর ধর্না বুঝিয়ে দিল দিল্লিতে বিজেপি ছাড়া হালে পানি পাবেন না মমতা।” যে প্রতিবেদনের একদম শেষে বলা হয়েছিল, “বিজেপি ছুঁয়ে না দেখলে রাজধানীতে তাঁকে কেউ পাত্তা দেবে না।” আবার ২০১১-তে ক্ষমতায় আসার পর গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল সুপ্রিমোকে অভিনন্দন জানিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন “প্রথম রাতেই বেড়াল মেরে দিন।” বেড়াল কে এবং কাকে মারতে হবে সেটা বোঝার জন্য নিশ্চই ‘চন্দ্রবিন্দুর চ, বেড়ালের তালব্য শ এবং রুমালের মা’ মিলিয়ে তৈরি হওয়া চশমা পরতে হবেনা, অথবা বোঝার জন্য ‘কলকেতা, ডায়মন্ডহারবার, রাণাঘাট’ হয়ে ‘তিব্বত’ যেতে হবেনা। এমনি এমনিই বোঝা গেছে। এরপর ২০১৪-র ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় এক সমাবেশে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, “৩৫ বছর ধরে যে দল এই রাজ্যকে শেষ করেছে, সেই দলকে বিদায় করেছেন আপনি। এর জন্য অভিনন্দন জানাই।”
উদাহরণ চাইলে আরও আছে। যেমন, একদা তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্যের মন্ত্রী বর্তমানে রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর, পূর্বস্থলীর জনসভায় বলেছিলেন - “১৯৯৮ সালে বিজেপি আশ্রয় না দিলে তৃণমূল দলটাই উঠে যেত। আমাকে যারা বিশ্বাসঘাতক বলছেন তাদের বলব - অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি না থাকলে তৃণমূল আজ এই জায়গায় আসতে পারত না।” ১১ নভেম্বর, ২০২১। সেদিন নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশনকে কটাক্ষ করে তাঁর সেইসময়কার ছায়াছঙ্গী শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, “নেপোয় মারে দই, না? যখন চকোলেট আর স্যান্ডউইচ খেয়ে অনশনের নামে নাটক করেছিলেন তখন শরবত খাওয়াতে এসেছিল কে? রাজনাথ সিং। নন্দীগ্রামের রাস্তাগুলো কে পরিষ্কার করেছিল? লালকৃষ্ণ আদবানি।”
নাম যখন গেছো দাদা তখন তাঁর গাছেই থাকার কথা। কিন্তু বিধি এমনই বাম যে গেছো দাদা সবসময়েই ধরাছোঁয়ার বাইরে। সামনে এলেও ধরা যায় না। তুমি যখন যাবে কালীঘাট তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, তখন তিনি থাকবেন দুবাই। যদি দুবাই যাও, তাহলে শুনবে তিনি আছেন ধুপগুড়ি। আবার সেখানে গেলে দেখবে তিনি গেলেন দিল্লি। কিছুতেই দেখা হবার যো নেই। তাঁকে ধরতে গেলে আগে দেখতে হবে, “দাদা কোথায় কোথায় নেই; তারপর হিসেব করে দেখতে হবে, দাদা কোথায় কোথায় থাকতে পারে; তারপর দেখতে হবে, দাদা এখন কোথায় আছে। তারপর দেখতে হবে, সেই হিসেব মতো যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছব, তখন দাদা কোথায় থাকবে।” এর সঙ্গে বাস্তবের কোনো ঘটনা মিলে গেলে ‘হ-য-ব-র-ল’ সবটা জানে বলে ধরে নিতে হবে। সব দায় ৪১ নং গেছোবাজার, কাগেয়াপটির ‘সনাতন বায়স বংশীয় দাঁড়ি কুলীন,’ শ্রীকাক্কেশ্বর কুচকুচের।
গেছো দাদাকে ধরার চেষ্টা না করে আপাতত সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের দু’একটা লাইন এক নিঃশ্বাসে পাঠ করে নেওয়া যাক। ধরে নিন এটা দ্রুতপঠনের একটা টাস্ক। বোঝাপড়ার চরম সূত্র বুঝে নিতে এটুকু কষ্ট করা যেতেই পারে। ‘সিঙ্গুর হইতে টাটারা চলিয়া যাইবার পর পশ্চিমবঙ্গে শিল্পবাণিজ্যের চিরস্থায়ী মন্বন্তর শুরু হইয়াছে’ (১২ ডিসেম্বর, ২০২২)। ‘অনেকদিন থেকেই তৃণমূলের অন্দরে কানাঘুষো চলছে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছে ইডি আর সিবিআই। অভিষেকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কেবল সাক্ষী হিসেবে তাঁকে ১৭ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে’ (১২ ডিসেম্বর, ২০২২)। ‘মমতার দলের দুর্নীতি এতটাই গভীরে যে দায়িত্বশীল নেত্রী হিসেবে তিনি রেহাই পেতেই পারেন না যদি না তদন্তে তিনি বা তাঁর দল আর পরিবার নির্দোষ প্রমাণিত হয়’ (২ জানুয়ারি, ২০২৩)। ‘মমতার ‘জিয়ন আর মরণ কাঠি’ রয়েছে রাজার হাতে...। রাজাকে রাজ্য নির্বিষ করতেই হবে’ (১৭ জুলাই, ২০২৩)। “অনেকে ভুলে গিয়েছেন দু’বছর আগেই মমতা ‘কংগ্রেস মুক্ত’ ভারত গড়তে নিঃশব্দে বিজেপি'র সঙ্গী হয়েছেন।” ‘বহু রাজ্যে দল ভাঙিয়ে রাজনৈতিক চাতুরির সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। সেখানে নৈতিকতা কাজ করেনি। অথচ এ রাজ্যে বিজেপি নৈতিক। নীরব। কেন? তারা বাম আর কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোটের বিরুদ্ধে’ (৩১ জুলাই, ২০২৩)। ‘এ রাজ্যের অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন না অভিষেকবাবু বা মলয় ঘটকের মত নেতারা দুর্নীতির দায়ে ধরা পড়তে পারেন। এখনও পর্যন্ত তদন্তে কোনও লাভ হয়নি’ (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)। ‘অনেকের কাছে অভিষেকবাবুর যেন-তেন প্রকার আটক ইন্দ্রিয়সুখের শামিল। কেন তিনি আটক হবেন নির্দিষ্টভাবে তারা তা জানেন না’ (২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩)। এগুলো সবই আরএসএস-এর এই রাজ্যের মুখপত্রের বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশ। এতগুলো লাইন এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার শেষে বলা যেতেই পারে আপ সমঝোতা কা ‘ক্রোনোলজি সমঝ লিজিয়ে’।
পরম যত্নে যারা মাত্র ১ শতাংশ সাহায্য করে রাজ্য থেকে বাম উৎখাতে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে, যারা তাদের দুর্গা ও তাঁর চ্যালা চামুণ্ডাদের যত্নে লালিত পালিত করে নিজেদের ফুলে ফলে বাড়িয়ে নিয়েছে মাত্র ১২ বছরে, এত সহজে তারা সেই মৌতাত ছেড়ে যাবে ভেবে নেবার কোনও কারণ নেই। বরং আগামী দিনে রাজ্যে মাত্র দুটো রাজনৈতিক শক্তি আছে, সেই বাইনারির প্রচার আরও বাড়বে। দু’একটা লোকদেখানো গ্রেপ্তারির আড়ালে পারিষদ মিডিয়া শির ফুলিয়ে চিল্লিয়ে যাবে কাউকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। আর মানুষ থেকে যাবে সেই তিমিরেই। ৭৫ শতাংশ চোখ বন্ধ করে ছবি দেখা এখনই ত্যাগ করে ১০০ শতাংশ চোখ খুলে দেখার অভ্যাস করতে না পারলে আশা থেকে হতাশায় ডুবে যেতে বেশি সময় লাগবে না।