৬০ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৭ এপ্রিল, ২০২৩ / ২৩ চৈত্র, ১৪২৯
তিলজলায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যাঃ কাঠগড়ায় পুলিশি উদাসীনতা
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গত ২৬ মার্চ ২০২৩, তিলজলা এলাকার ২১, শ্রীধর রায় রোডের বাসিন্দা সাত বছরের এক শিশুকন্যাকে অপহরণ করার পর যৌন নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করে তারই প্রতিবেশী যুবক অলোক কুমার। শিশুটির বাবা শ্রমিক, মা গৃহবধূ। এলাকার একটি ছ’তলা বাড়ির চারতলার ছোটো ফ্ল্যাটে তাঁদের বসবাস।
সকালবেলা থেকে শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা, মা এবং প্রতিবেশীরা বারেবারে তিলজলা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা দেখানো হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজে শিশুটিকে নিজের বাড়িতেই ঢুকতে দেখা গেলেও পুলিশ দায়সারাভাবে তল্লাশি করে চলে যায়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম শিশুটির পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও ঠিকমতো খোঁজ করেনি পুলিশ। এরপর প্রায় ১২ ঘণ্টা বাদে এলাকার মানুষ সন্দেহভাজনের দোতলার ফ্ল্যাট থেকে একটি বড়ো সুটকেসের মধ্যে সাত বছরের শিশুকন্যাটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।
স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের এই চূড়ান্ত গাফিলতি ও অসহযোগিতার ফলে একটি নিষ্পাপ প্রাণ চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে স্থানীয় মানুষ। রাতে তিলজলা থানায় বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশ জনতার ওপর লাঠিচার্জ করলে মানুষ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসের আঞ্চলিক কর্মীরাও জনগণকে মারধর করে।
ঘটনার পরের দিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বন্ডেল গেট সংলগ্ন পিকনিক গার্ডেন রোড। পুলিশের সাথে জনতার সংঘর্ষ হয়। দফায় দফায় রেল অবরোধ চলে, বিপর্যস্ত হয়ে যায় জনজীবন। পুলিশ আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য ধরপাকড় চালালে বেশ কয়েকজন নিরপরাধ মানুষও কারারুদ্ধ হন।
শিশু অপহরণের মতো গুরুতর অভিযোগের পর পুলিশ সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ফুটফুটে শিশুটিকে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার সুযোগ পেয়ে যায় আততায়ী। ধৃত অলোক কুমার প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিল যে, কোনো তান্ত্রিকের পরামর্শে সে এই কাজ করেছে। কিন্তু তদন্তকারীদের মতে সে নিজের বিকৃত যৌন লালসা আড়াল করতে এই অজুহাত দিয়েছে।
বর্তমান জমানায় শাসকদলের পদলেহন করতে করতে পুলিশ প্রশাসন তার যাবতীয় দক্ষতা ও কর্তব্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া গরিব শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান হওয়ায় আরও বেশি গা ছাড়া মনোভাব দেখায় পুলিশ। লক্ষণীয় যে, যখন এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে তখন এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খান ও এলাকার কাউন্সিলর বিধায়ক পুত্রের দেখা মেলেনি।
এরই মধ্যে নিহত শিশুটির পরিবারের সাথে দেখা করতে এসে তীব্র বচসায় জড়িয়ে পড়েন জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধান ও রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা। তিলজলা থানায় জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধানকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বিতর্ক ধামাচাপা দিতে তিলজলা থানার ওসি-কে তড়িঘড়ি বদলি করেছে রাজ্য সরকার।
শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ ও স্থানীয়স্তরে পুলিশি উদাসীনতার প্রতিবাদে, অপরাধীর কঠোরতম শাস্তির দাবিতে এবং পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের পর ধৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কল্লোল মজুমদারের নেতৃত্বে পার্টির কসবা-৩ এরিয়া কমিটির ডাকে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত হয় এবং তিলজলা থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এছাড়া সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও কলকাতা নাগরিক সম্মেলন এই নারকীয় ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করেছে।