৬০ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৭ এপ্রিল, ২০২৩ / ২৩ চৈত্র, ১৪২৯
কমরেড সুনীত চোপরার জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রবীণ কমিউনিস্ট কমরেড সুনীত চোপরার জীবনাবসান হয়েছে। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের অন্যতম সংগঠক সুনীত চোপরা ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিসে যাওয়ার সময়ে মেট্রো রেল স্টেশনের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ৮১ বছর বয়সি চোপরা গুরগাঁও থেকে দিল্লি আসছিলেন। ৫ এপ্রিল দিল্লিতে বিশাল মজদুর-কিষান রালির শেষবেলার প্রস্তুতির কাজেই তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিসে আসছিলেন। প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন সংগঠন। শোক প্রকাশ করেছেন পার্টির প্রবীণ নেতা বিমান বসু, পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্য মিশ্র, মহম্মদ সেলিম।
এদিন তিনি গুরগাঁওয়ের সিকন্দরপুরের মেট্রো স্টেশনে আসেন দিল্লি আসার জন্য। সেখানেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেট্রো স্টেশনে তাঁর চিকিৎসার চেষ্টা চলে। সেখানেই মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে খেতমজুর ইউনিয়ন এবং পার্টির নেতা, কর্মীরা সিকন্দরপুর ছুটে যান। এদিন স্থানীয় একটি হাসপাতালের মর্গে তাঁর দেহ রাখা হয়।
৫ এপ্রিল দুপুরে কমরেড সুনীত চোপরার মরদেহ নিয়ে আসা হয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর এ কে জি ভবনে। সেখানে তাঁর মরদেহে ফুল-মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সহ পলিট ব্যুরোর অন্যান্য সদস্যরা। শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর ছাত্র, যুব, মহিলা প্রভৃতি বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা অর্পণ করা হয়। মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্ত। এদিন সমাবেশ থেকেও বিভিন্ন রাজ্যের নেতা-কর্মীরা এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। পার্টি অফিস থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিগমবোধ ঘাটে। সেখানেই প্রয়াত কমরেড সুনীত চোপরার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে পড়ার সময়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হন কমরেড সুনীত চোপরা। সেখানের পড়াশোনা শেষ করার পরে কমরেড চোপরা প্যালেস্তাইন মুক্তি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন রিজিওনাল ডেভেলপমেন্টে যুক্ত হন এবং ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। জেএনইউ ছাত্র সংসদের সংবিধানের খসড়া তৈরির অন্যতম কারিগর তিনি। ছাত্র আন্দোলনের পথ বেয়েই এসএফআই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য থেকেই সিপিআই (এম)’র সদস্যপদ অর্জন করেন ১৯৭২ সালে। কমরেড সুনীত চোপরা ডিওয়াইএফআই’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৮০ সালে সর্বভারতীয় যুব সংগঠন তৈরি হলে তিনি সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।
ছাত্র-যুব আন্দোলনের পরে কমরেড সুনীত চোপরা খেতমজুর আন্দোলনের একনিষ্ঠ সংগঠক হয়ে ওঠেন। বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে খেতমজুরদের সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘদিন কমরেড চোপরা সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্প্রতি হাওড়ায় অনুষ্ঠিত সংগঠনের দশম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন।
কমরেড সুনীত চোপরা সিপিআই (এম)’র ১৫তম কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি সিপিআই (এম) কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। শিল্পকলা সম্পর্কে কমরেড চোপরার বিপুল জ্ঞান এবং পড়াশোনা ছিল। শিল্প সমালোচক হিসাবে তিনি সমাদৃত ছিলেন। জাতীয় সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনগুলিতে এই বিষয়ে তাঁর নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হতো। সারা ভারত ইন্দো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের পদেও ছিলেন তিনি।
সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো এক শোকবার্তায় বলেছে, পার্টি একজন নিবেদিতপ্রাণ মার্কসবাদীকে হারালো। তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ের শোকবার্তায় বলা হয়েছে, শুধু কমিউনিস্ট আন্দোলনের ক্ষেত্রে নয়, তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতি হলো ভারতের সমগ্র গণতান্ত্রিক এবং প্রগতিশীল আন্দোলনের। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সহযোদ্ধার মৃত্যুতে টুইট করে বলেছেন, অর্ধশতকের সম্পর্ক। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে গণআন্দোলনের চড়াই-উতরাই পথে একসঙ্গে চলছি। তিনি ছিলেন মনেপ্রাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মার্কসবাদী। ক্লান্তিহীনভাবে তিনি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করে গিয়েছেন।
কমরেড সুনীত চোপড়ার মৃত্যুতে খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দপ্তরে এক শোক সভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি তুষার ঘোষ ও সম্পাদক নিরাপদ সরদার এক বিবৃতিতে কমরেড সুনীত চোপড়ার স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।